Thursday, April 11, 2013

শিক্ষকদের প্রস্তাব গৃহীত হবে কি?

সাইফুদ্দীন চৌধুরী

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আলাদা বেতনকাঠামো তৈরি এবং চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর থেকে দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের ওই প্রস্তাব আন্তবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মাধ্যমে দাবি আকারে সরকারের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে। 
সার্কভুক্ত দেশগুলোর, বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন হার বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। সে আলোকে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও বেতনকাঠামো প্রবর্তনের জন্য প্রস্তাব করেছেন। বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বছর তিনেক আগে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছিলেন, শিক্ষকদের জন্য আলাদা একটি বেতনকাঠামো প্রদানের বিষয় বিবেচনা করা হবে। তিনি এমনও বলেছিলেন, সার্কভুক্ত অন্য সব দেশে বিদ্যমান বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করেই বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনক্রম প্রণীত হবে। কার্যত তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় অনেকেই ভাবছেন, তা আমলাতন্ত্রের কুদৃষ্টিতে পড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আরও প্রস্তাব করেছেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতগুলোতে দায়িত্ব পালনরত বিচারপতিদের মতো তাঁদেরও বয়সসীমা দায়িত্ব পালনরত বিচারপতিদের মতো বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৭ করতে হবে। 

শিক্ষকদের পক্ষ থেকে যুক্তি হলো, বিশ্বের বহু খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান কৃৎকৌশল সুসংবদ্ধ অবস্থায় পেতে প্রবীণদের মর্যাদা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট রাখা হয়। সাম্প্রতিক কালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমাদের দেশেও মানুষের গড়পড়তা আয়ুষ্কাল অনেকটা বেড়েছে। ৬৭ কেন? এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ৭০ বছরেও প্রায় এঁরা সবাই কর্মক্ষম থাকেন। অবসর নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এমন অনেক তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে অনুসন্ধান করলে পাওয়া যাবে। কাজেই ৬৫ থেকে ৬৭ বছর করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ওই সব একাডেমিশিয়ানের বড় রকমের সহযোগিতা যে পেতে থাকবেন, তাতে সন্দেহ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ই অধিক লাভবান হবে। 

এখানে একটি কথা অবশ্য উল্লেখ করতে হবে, ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেসকো ও আইএলওর উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে শিক্ষকদের জন্য একটি সনদ ঘোষণা করা হয়। ১৪৬টি ধারা ও উপধারাসংবলিত ওই সনদে বলা হয়েছে, শিক্ষকেরাই সব কর্মকাণ্ডের কারিগর, জাতি গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা তাঁদেরই। আগামী দিনের মর্যাদা ও উপযুক্ত নাগরিক তাঁরাই তৈরি করেন। এই শিক্ষকদের মর্যাদার ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের ত্রুটি না ঘটে, রাষ্ট্রকে তা দেখতে হবে। ওই প্যারিস ঘোষণার ৭-এর (চ) উপধারায় বলা হয়েছে—

‘জীবনধারণের ব্যয় বৃদ্ধি ও বর্ধিত উৎপাদনশীলতার কারণে জীবনযাত্রার উচ্চতর মান অথবা বেতন ঊর্ধ্বমুখী গতি বিবেচনায় মাঝে মাঝে বেতন স্কেল পুনর্বিবেচনা করা।’ আদতে সেখানে শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল প্রদানের কথাই ব্যক্ত করা হয়েছে। প্যারিস কনভেনশন সূত্রে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকেরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে কতটা অধিকার ভোগ করেন, তার জবাব অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। কতটা লজিস্টিক সুবিধা পান রাষ্ট্রের কাছ থেকে শিক্ষকেরা। এই শিক্ষকদের যথার্থ একাডেমিশিয়ান হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে প্রধান অন্তরায় হলো অর্থসংকট। শিক্ষকেরা যাতে সেসব দায় মেটাতে বহির্মুখী না হন, অর্থাৎ কর্মসংস্থানের জন্য অন্য কোথাও নিয়োজিত না হন এবং প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য দেশত্যাগ না করেন, রাষ্ট্রের উচিত সে প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করা।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভালো অবস্থার জন্য দরকার দক্ষ শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা। লক্ষ রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কাজের যেন ব্যত্যয় না ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই পরিবেশ না থাকার কারণে অনেক কৃতী, জ্ঞানবৃদ্ধ ও খ্যাতিমান শিক্ষক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, এমন নজির অনেকই আছে আমাদের দেশে। আলবার্ট আইনস্টাইন একবার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে বলেছিলেন, ‘ইয়োর ইমাজিনেশান ইজ মোর ইম্পর্টেন্ট দ্যান নলেজ।’ আমার ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষকেরাই ওই ইমাজিনেশান তৈরি করতে সমর্থ, তখন তাঁরা নিজেরাই কেউ কেউ ইনস্টিটিউশন হয়ে ওঠেন। জ্ঞানের নতুন নতুন উৎসের জন্য, বিজ্ঞানের অভিনব উদ্ভাবনের জন্য, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, প্রবীণ শিক্ষকদের কর্মকাল প্রলম্বিত করার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রকে এসব বিষয় নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।

ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী: গবেষক। অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
pr_saif@yahoo.com

Published in: http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-11/news/343994

Wednesday, April 10, 2013

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ

অনুমতি ছাড়া ছুটিতে থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কমিটি। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
শিক্ষকেরা হলেন আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদ বিন সাঈদ এবং একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনুপ চৌধুরী। গত সোমবার স্থায়ী কমিটির সভায় তাঁদের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সিন্ডিকেটের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করতে অনুপ চৌধুরী ২০০৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই দফায় ছয় বছর শিক্ষা ছুটি নেন। এর মধ্যে চার বছর তিনি সবেতনে ছুটি ভোগ করেন। এরপর অনুমতি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকায় ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে আট সপ্তাহের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ সময়ের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে তাঁর চাকরির পরিসমাপ্তি হবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু তিনি চাকরিতে যোগ না দিয়ে আবারও এক বছরের ছুটির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সিন্ডিকেট সেই আবেদন অনুমোদন না করে পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাকরির পরিসমাপ্তির বিষয়ে মতামত দিতে স্থায়ী কমিটিতে পাঠায়।

অন্যদিকে আরবি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইংল্যান্ডে পিএইচডি করতে মাহমুদ বিন সাঈদ ২০০৬ সালের ২২ এপ্রিল থেকে দুই দফায় ছয় বছর শিক্ষা ছুটি নেন। ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে আট সপ্তাহের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে চাকরিতে যোগ না দিলে চাকরির পরিসমাপ্তি হবে বলেও জানানো হয়। 

স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অননুমোদিত ছুটিতে থাকায় তাঁদের চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করা হয়েছে।

Source: http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-10/news/343741