Showing posts with label ফেডারেশন. Show all posts
Showing posts with label ফেডারেশন. Show all posts

Saturday, October 17, 2015

ভর্তি পরীক্ষা নেবে না শিক্ষক সমিতি

শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ও অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণের দাবিতে ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তবে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন।
এ ছাড়া শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন ওরফে দীপুকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে উপাচার্যকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এই দুটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
সমিতির কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে দুই নভেম্বর পর্যন্ত ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু আজ সমিতির সভায় এই পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অধ্যাপক খবির বলেন, সভায় ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে—এটা ঠিক। কিন্তু আমরা দ্রুত সমিতির জরুরি সভা ডেকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার চেষ্টা করব।
এ দিকে শিক্ষকদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে ফয়সালকে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দেওয়া নিয়োগ, বাতিলের দাবিতে উপাচার্যকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে নিয়োগ বাতিল করা না হলে ১৯ অক্টোবর থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার।
গত ১৩ জুলাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে চার ছাত্রলীগ নেতাসহ ছয়জনকে অ্যাডহক (অস্থায়ী) ভিত্তিতে নিয়োগ দেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ফয়সালকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ফলে নিয়োগ পেলেও শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে তিনি কাজে যোগ দিতে পারেননি।
এরপর গত ২৩ আগস্ট তাঁর ওই নিয়োগ বাতিল করে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে পুনরায় তাঁকে অ্যাডহক ভিত্তিক নিয়োগ দেন উপাচার্য। এরপর থেকেই শিক্ষকেরা তাঁর নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

Published in: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/657562

Tuesday, October 13, 2015

পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত স্থগিত জগন্নাথ শিক্ষক সমিতির


Published in: http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1039877.bdnews

Monday, October 12, 2015

একাত্তর সংযোগঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মোঃ ফরাসউদ্দিন



আরো পড়ুনঃ
মর্যাদার প্রশ্নেই মতভিন্নতা - বেতন কমিশন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আন্দোলন
হুমকির মুখে সুষ্ঠু আলোচনা হতে পারে না - বিশেষ সাক্ষাৎকার : মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

মর্যাদার প্রশ্নেই মতভিন্নতা - বেতন কমিশন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আন্দোলন

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন , ফরিদ উদ্দিন আহ​মেদ
অষ্টম জাতীয় বেতন কমিশনে শিক্ষকদের মর্যাদার অবনমন হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতা ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ যে অভিযোগ করেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, যে কমিশনের সুপারিশে এ রকম কিছু ছিল না। নতুন বেতন কমিশনের পর সংক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা যে আন্দোলন করছেন, তার পটভূমিতে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁরা দুজন এসব কথা বলেন।


অষ্টম জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ফরাসউদ্দিন বলেছেন, বেতন কমিশনের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অভিযোগ যৌক্তিক নয়। কমিশন কোনোভাবেই তাদের পদমর্যাদা ক্ষুণ্ন করেনি। কমিশনের দায়িত্ব ছিল কোন গ্রেডে কী বেতন হবে সেটি ঠিক করা। কোন গ্রেডে কারা থাকবেন, সেটি নির্ধারণ করেছে সরকার।


বেতনকাঠামো পুনর্বিবেচনায় মন্ত্রিসভা কমিটি গঠনের পর শিক্ষকদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তবে, তিনি বলেন যে বেতনকাঠামোয় যদি শিক্ষকদের পদমর্যাদার অবনমন ঘটে থাকে, সেটি ঘোরতর অন্যায় এবং তার যৌক্তিক মীমাংসা হওয়া দরকার।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন যে অন্যান্য দেশে কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা করে মন্ত্রিসভা কমিটি, এখানে করেছে সচিব কমিটি। সচিবেরাও একটি পক্ষ।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, তাঁদের এ আন্দোলন বেতন-ভাতা নিয়ে নয়, শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। সপ্তম বেতন কমিশনে তাঁদের যে মর্যাদা ছিল, অষ্টম কমিশনে তা কয়েক ধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য শূন্য গ্রেড এবং সুপার গ্রেড সৃষ্টি করে শিক্ষকদের দৃশ্যত চার ধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।


শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করে আন্দোলন করার বিষয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ছেলেমেয়েদের জিম্মি করে কিছু করতে চাইছি না। সরকার যে কমিটি করে দিয়েছে সেই কমিটিতে আলোচনা হলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে, আমরা পাঁচ মাস অপেক্ষা করেছি।’ সে জন্য আর বিলম্ব না করে এটি সমাধান করা হবে বলেও তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।

শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যই আন্দোলন; বিশেষ সাক্ষাৎকার : ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম
প্রথম আলো : অষ্টম জাতীয় বেতনকাঠামো ঘোষণার পর থেকে আপনাদের যে আন্দোলন চলছে, তাতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আপনারা বলছেন, দাবি মানা না হলে অচিরেই আন্দোলনের আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে। তাহলে কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : আসলে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে এ বছরের ১৪ মে থেকে, যখন সচিব কমিটির বেতনকাঠামো পর্যালোচনার বিবরণ নিয়ে সংবাদপত্রে খবর ছাপা হলো এবং আমরা জানতে পারলাম যে শিক্ষকদের মর্যাদার অবনমন ঘটতে যাচ্ছে। শিক্ষকেরা মর্যাদার যে জায়গায় ছিলেন, সেখানে আর থাকতে পারবেন না।
প্রথম আলো : কীভাবে অবনমন ঘটতে যাচ্ছিল?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : শিক্ষকদের জন্য যে সিলেকশন গ্রেড ছিল, অষ্টম বেতনকাঠামোতে সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে, উপরন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য শূন্য গ্রেড ও সুপার গ্রেড সৃষ্টি করে শিক্ষকদের দৃশ্যত চার ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সপ্তম বেতনকাঠামোতে কিন্তু সিনিয়র সচিব বলতে কিছু ছিল না, দুনিয়ার কোথাও নেই। তারপর আরেকটা করা হলো পদায়িত সচিব। এভাবে শিক্ষকদের মর্যাদার অবনমন করা হয়েছে।
প্রথম আলো : কিন্তু নতুন বেতনকাঠামোতে আপনাদের বেতন-ভাতা তো ৯১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবু আন্দোলন কেন?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে বেতন-ভাতা বাড়ানো অবশ্যই প্রয়োজন। সেটা করা হয়েছে, ভালো হয়েছে। আবার এটাও দেখার বিষয় যে নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রব্যমূল্য যেভাবে বাড়তে শুরু করেছে, তাতে এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সুফল বাস্তবে কতটা পাওয়া যাবে, সেটাও চিন্তার বিষয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে বেতন-ভাতার বিষয়টি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আন্দোলন হচ্ছে মর্যাদার প্রশ্নে। বাড়তি মর্যাদা আমরা দাবি করছি না, মর্যাদার অবনমনের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যে মর্যাদা ছিল, তা রক্ষার জন্য আন্দোলন করছি। শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেড ছিল, তাতে কী সমস্যা হচ্ছিল? সেটা বাতিল করা হলো কেন? কী প্রয়োজন ছিল বাতিল করার?

প্রথম আলো : কিন্তু সে জন্য শিক্ষকদের আন্দোলন, কর্মবিরতি—এসবের ফলে তো শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে। আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়টি কি আপনাদের বিবেচনায় আছে?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : অবশ্যই আছে। আমরা কখনোই আমাদের ছেলেমেয়েদের ক্ষতি করে আন্দোলন করতে চাই না। সে জন্য আমরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, পরীক্ষা ইত্যাদির ব্যাঘাত ঘটিয়ে কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি খুব একটা দিইনি। মাত্র তিন দিন ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে, কারণ আমাদের মানববন্ধন ছিল, শিক্ষকেরা সেখানে যোগ দিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তারপরে একদিন মাত্র আমরা ক্লাস বিরতি দিয়েছি পূর্ণ দিন, তার মধ্যে পরীক্ষাও ছিল। ওই তিন দিন আর এই ছয় ঘণ্টা ছাড়া আমরা কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে কিছু করিনি।
প্রথম আলো : কিন্তু আপনারা তো ঘোষণা দিয়েছেন যে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন, তখন কী হবে?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : আন্দোলন-কর্মসূচির নানা রকম পদ্ধতি আছে, তার মানে এটা নয় যে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আমরা আন্দোলনে যাব।
প্রথম আলো : তাহলে আপনাদের ‘কঠোর কর্মসূচি’র বাস্তব রূপটা কী হবে?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : সেটা এখন বলতে চাইছি না। আমাদের কিছু উদ্ভাবনী ভাবনা আছে। সমস্যাটা এখন যে পর্যায়ে আছে, তাতে আমরা আশাবাদী যে অচিরেই একটা সমাধান হবে। মন্ত্রিপরিষদ এ বিষয়টা দেখার জন্য একটা মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করেছে, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীও সেই উপকমিটির সদস্য, ৫ অক্টোবর আমরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে তুলে ধরেছি।
প্রথম আলো : বেতন কমিশন কিন্তু বলেছে, নতুন বেতনকাঠামোতে শিক্ষকদের প্রতি বৈষম্য করা হয়নি।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : এর আগে সাতটি বেতন কমিশন হয়েছে, কিন্তু অষ্টম বেতন কমিশন শিক্ষকদের বেতন যতটা বাড়িয়েছে, আগের কোনো কমিশনই ততটা বাড়ায়নি। সেদিক থেকে এই বেতন কমিশন অবশ্যই বেশি দিয়েছে। কিন্তু আপনাকে আগেই বলেছি, শিক্ষকেরা বেতন-ভাতা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন, আমাদের সবার উদ্বেগের জায়গাটা হলো আমাদের মর্যাদার অবনমন।
প্রথম আলো : আপনারা সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখতে বলছেন?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : বিষয়টি শুধু সিলেকশন গ্রেড নিয়ে নয়। সুপার গ্রেড যেটা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব—এ দুটি কিন্তু আগে গ্রেডিংয়ের মধ্যে ছিল না। আগে ছিল একটা ফুটনোট হিসেবে, এখন এটাকে ওপরে রাখা হয়েছে। তারপর আরেকটা হলো সিনিয়র সচিব। যদি তাঁদের ওপরে রাখতেই হয়, গ্রেড হিসেবে রাখলে কী ক্ষতি ছিল? এটাকে সুপার গ্রেড বা জিরো গ্রেড করার কী প্রয়োজন ছিল? আরেকটা কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই,শিক্ষকেরা যখন অধ্যাপক হন, সেখান থেকে সিলেকশন গ্রেড বা গ্রেড-১ পেতে ১৬-১৭ বছর লেগে যেত। আর সিলেকশন গ্রেড পেতেন অধ্যাপকদের মাত্র ২৫ শতাংশ। অধিকাংশই সিলেকশন গ্রেড না পেয়ে অবসরে চলে যেতেন। কিন্তু কিছুসংখ্যক তো পেতেন। এখন সিলেকশন গ্রেড বাতিল করার কারণে অধ্যাপকেরা কোনো দিনই আর ওই জায়গায় যেতে পারবেন না। অধ্যাপকেরা এখন শুরু করবেন তৃতীয় গ্রেড থেকে। আমাদের কথা হচ্ছে, শিক্ষকদের একটা মর্যাদা দেওয়ার পরে তো আপনি সেটা ফিরিয়ে নিতে পারেন না, নেওয়া উচিত নয়। সিনিয়র সচিব, মুখ্য সচিবদের বেতন বাড়ানো হয়েছে ১০০ শতাংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষকদের বেতন বেড়েছে ৯১ শতাংশ, সব মিলিয়ে। কিন্তু আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই, বেতন একটু কম-বেশি হতে পারে। আমাদের কথা হচ্ছে, শিক্ষকেরা এই পেশায় আসেন সম্মানের জন্য, মর্যাদার জন্য। সেই সম্মান দিয়ে আপনি কেড়ে নেবেন—এটা তো হয় না, এটা ন্যায়বিচার হতে পারে না। ওপরের দিকের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার বেতন-ভাতা দিগুণ বাড়ানো হলো, মর্যাদা বাড়ানো হলো, নতুন নতুন পদ তৈরি করা হলো, আর শিক্ষকেরা যে মর্যাদা পেয়ে আসছিলেন, সেটা কেড়ে নিয়ে তাঁদের অবমানিত করা হলো—এটা তো হতে পারে না।
প্রথম আলো : আপনারা আপনাদের দাবিনামার এক জায়গায় বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের বেতনকাঠামো সপ্তম গ্রেডে নির্ধারণ করা হোক। কিন্তু বিসিএস ক্যাডারদের চাকরি তো শুরু হয় নবম গ্রেড থেকে। আপনারা বাড়তি দাবি করছেন কেন?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : এর মূল উদ্দেশ্য দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট করা। আমরা যদি দেশ-জাতির আরও উন্নয়ন-অগ্রগতি চাই, তাহলে ভালো শিক্ষক দরকার। শিক্ষকদের হাতেই তৈরি হন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, সচিবসহ অন্যান্য সব পেশাজীবী। সুদক্ষ সচিব তৈরির জন্য মেধাবী শিক্ষক দরকার। এটাই আমাদের এই দাবির মৌলিক ভাবনা। এটা সরকারের বা একটা রাষ্ট্রের জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হওয়া উচিত। বিশ্বের যেসব দেশ এগিয়ে গেছে, তারা শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছে সবচেয়ে বেশি; সবচেয়ে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য তারা সবকিছু করে।
প্রথম আলো : আপনাদের আন্দোলন কিন্তু এক মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। আর কত দিন চালাবেন?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : সরকার একটা মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করেছে, সেখানে অত্যন্ত সুবিবেচক অনেকে আছেন। আমি মনে করি, সমস্যাটা সমাধানের জন্য আর বেশি সময় লাগার কথা নয়, একটি-দুটি বৈঠক হলেই কিন্তু সমাধান হয়ে যায়। আমরা পাঁচ মাস ধরে অপেক্ষা করছি, আমরা কঠোর আন্দোলনে যাইনি। যাইনি এ জন্য যে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের জিম্মি করে কিছু করতে চাইছি না। আমরা অনেক কষ্ট করে তাদের সেশনজট দূর করেছি। এখন আমরা মনে করি, অনেক সময়ক্ষেপণ হয়েছে, আর বিলম্ব না করে সমস্যাটার সমাধান করা হোক।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।
  • সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি
 Published in: http://www.prothom-alo.com/opinion/article/65242
আরো পড়ুনঃ

Sunday, October 11, 2015

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সাধারন সভার সিদ্ধান্তসমূহ

আজ ১২/১০/২০১৫ তারিখ সোমবার বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় বিশ্বাবিদ্যালয়ের সাইন্স বিল্ডিং এ শিক্ষক সমিতির এক সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ৮ম জাতীয় বেতন কাঠামো সম্পর্কে আলোচনা হয়। শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সজিব স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মারফত এ তথ্য জানা যায়।

আলোচনার শুরুতে শিক্ষকগন ৮ম জাতীয় বেতন কাঠামো প্রনয়নের জন্য বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।কিন্তু ৮ম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দের মর্যাদাহানি হয়েছে বলে সকলে মনে করেন। উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ মনে করেন যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দের মর্যাদার সংগে দেশ ও জাতীর ভবিষ্যত জড়িয়ে আছে। তাই মর্যাদার প্রশ্নে তারা ছাড় দিতে রাজি নন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগনের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রনয়নের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। চলমান আন্দোলনকে সফল করার লক্ষে জাককানবি শিক্ষক সমিতি নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত সমুহে একমত হনঃ 

১। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগনের জন্য সম্মান জনক স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রনয়নের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেয়া পদক্ষেপের সঙ্গে নীতিগত একাত্মতা প্রকাশ ও সমর্থন জানানো হয়।

২। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কে ফেডারেশন হতে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানানো হয়।

৩। জাককানইবি শিক্ষক সমিতির কার্যকরি পরিষদ, নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য, চলমান আন্দোলন এবং অন্যান্য বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নের্তৃবৃন্দের সঙ্গে ঢাকায় একটি বৈঠক করবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এ নিমিত্তে জাককানইবি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নের্তৃবৃন্দের সঙ্গে পূর্বেই যোগাযোগ করে সময় নির্ধারণ করবে।

৪। ৩১ শে অক্টোবরের পুর্বে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দাবি সমূহ উপেক্ষা করে যদি কোন গেজেট প্রকাশ হয় তবে, তা প্রকাশের পরের কার্যদিবস হতে জাককানইবি শিক্ষকগন লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবেন।

৫। যদি ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগনের এই যৌক্তিক দাবিসমূহ মেনে নেয়া না হয় তবে, ১লা নভেম্বর হতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে একাত্ম হয়ে আন্দোলন কর্মসূচী পালন করবেন। তবে বিষয়টির সুরাহা না হলেও যদি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ১লা নভেম্বর হতে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণায় ব্যর্থ হয়, জাককানইবি শিক্ষক সমিতি ২রা নভেম্বর হতে লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতি সহ আরো অন্যান্য কর্মসূচী পালন করবে। 

৬।৮ম বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগনের অবনমনের প্রতিবাদে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জাককানইবি শিক্ষকগন কালো ব্যাচ ধারণ করে স্বাভাবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহন করবে।

Wednesday, October 7, 2015

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে জবি বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে জবি বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে জবি শিক্ষক সমিত। এর আগে গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এক জরুরী সাধারন সভায় আসন্ন প্রথম প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় ৩১ অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহন করবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা, স্বতন্ত্র পে-স্কেল, শিক্ষা ব্যাবস্থার উন্নয়ন ও উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিল।

তবে পরবর্তী পরীক্ষাসমূহ বর্জনের ব্যাপারে তারা এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছেন।



আরো পড়ুনঃ
অক্টোবরে ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত জবি শিক্ষক সমিতির

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা দুই ভাগ - ফেডারেশন-সমিতি মুখোমুখি, ফেডারেশন থেকে জগন্নাথকে বহিষ্কার

শরীফুল আলম সুমন

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার বৈঠকের পর আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা। এর মধ্যে দাবির পক্ষে ঘোষণা না এলে ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতির হুমকিও দিয়ে রেখেছিল ফেডারেশন। কিন্তু এক দিন যেতে না যেতেই ফেডারেশনের বাইরে গিয়ে আলাদাভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাচ্ছে না। শিগগিরই তারাও কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে। এতে ফেডারেশন ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিগুলো মুখোমুখি অবস্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অথচ চলতি মাসের পুরোটাজুড়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা। ফলে সেই পরীক্ষাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, ফেডারেশন তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকরা ফেডারেশনের এই নমনীয়তা মেনে নিতে চান না। তাই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতাদের ওপরই চাপ বাড়ছে। ফলে ফেডারেশনের বাইরে গিয়েও কর্মসূচির চিন্তাভাবনা করছেন শিক্ষকরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ফেডারেশনের গত মঙ্গলবারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা। ফলে গতকাল বুধবার জরুরি সভা আহ্বান করে শিক্ষক সমিতি। এতে প্রায় আড়াই শ শিক্ষক অংশ নেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় সব ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী শুক্রবারই 'বি' ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমেই শুরু হওয়ার কথা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভর্তি পরীক্ষা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রত্যেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও নিজস্ব। তাই আমাদের সাধারণ শিক্ষকরা যদি চান তাহলে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণার অধিকার রয়েছে। ফলে সব শিক্ষকের সম্মতিক্রমেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষকরা পরীক্ষা নেবেন না, তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই ঠিক করবে তারা কী করবে?'

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখনো আগামী শুক্রবারে অনুষ্ঠিতব্য ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করে নাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কাল (আজ বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করা হয়েছে।'

জানতে চাইলে ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি আমাদের না জানিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটা ফেডারেশনের নিয়মনীতিবহির্ভূত। তাই ফেডারেশন তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

গতকাল রাতে ফেডারেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানানো যাচ্ছে যে ফেডারেশনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে ফেডারেশন থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। আজ (গতকাল) থেকেই এটি কার্যকর হবে।

জানা যায়, ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তের পর ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ শিক্ষকরা। একই দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে এভাবে বহিষ্কার কারোই কাম্য নয় বলে জানান শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশ না করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নেতা বলেন, 'ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা তাঁদের নিজেদের মতো কর্মসূচি দিতে চান। সাধারণ শিক্ষকদের মতামতের মূল্য তাঁরা ঠিকমতো দেন না। অথচ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নিয়েই এই ফেডারেশন। আসলে ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা এমনভাবে চলতে চান, যাতে সরকারের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক নষ্ট না হয়।'

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক দুলাল নন্দী চন্দ্র গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরাও পৃথক কর্মসূচির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছি। শিক্ষকদের পদমর্যাদার যেভাবে অবনমন করা হয়েছে সেটা অশনিসংকেত। আসলে শিক্ষাকেই অবনমন করতে একটা গোষ্ঠী এজেন্ডা নিয়ে নেমেছে। তবে এখনো প্রধানমন্ত্রী আমাদের শেষ ভরসা। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আমাদেরও বিকল্প চিন্তা করতে হবে। ১১ অক্টোবর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। এরপর সাধারণ সভা আহ্বান করে কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খসরুল আলম কুদ্দুছী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে সাধারণ শিক্ষকদের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। সরকারের এই আচরণে আমরা খুবই মর্মাহত। ফেডারেশনের বাইরে কর্মসূচি দেব কি না তা সাধারণ শিক্ষকদের ওপরই নির্ভর করবে। জগন্নাথের শিক্ষকদের স্বতঃস্ফূর্ততার কারণেই তাঁরা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমি তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে স্যালুট করি।'

ফেডারেশনের সহসভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা গতকাল বলেন, 'শিক্ষকদের আন্দোলন অবশ্যই লিগ্যাল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাই তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কিছুটা হলেও এই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।'

ফেডারেশনের অন্য সহসভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের দাবির পক্ষে সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসলে আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে এর চেয়ে বড় কর্মসূচি তো হতে পারে না। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি হয়তো তাদের সাধারণ শিক্ষকদের ম্যানেজ করতে পারেনি। কিন্তু আমরা পেরেছি। তাই ফেডারেশনের বাইরে কিছু করছি না।'

গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষক নেতারা পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন। এগুলো হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের জন্য বেতন কমিশন; স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত অষ্টম বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে (পদমর্যাদা ক্রম) শিক্ষকদের প্রত্যাশিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী পদমর্যাদা নিশ্চিতকরণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিতকরণ।

ঢাবির সাদা দলের বিবৃতি : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ এবং তাঁদের চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে গতকাল বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক সংগঠন সাদা দল। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আমিনুর রহমান মজুমদার ও অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, 'অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন এবং তাঁদের মর্যাদাহানির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন এবং শিক্ষকদের সম্পর্কে গত ৪ অক্টোবর গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা বিস্মিত, লজ্জিত ও হতাশ। তাঁর এ অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যে গোটা শিক্ষক সমাজ অপমানিত ও মর্মাহত হয়েছে।'


Published in: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-age/2015/10/08/276775

অক্টোবরে ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত জবি শিক্ষক সমিতির

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এক জরুরী সাধারন সভায় আসন্ন প্রথম প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় ৩১ অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহন করবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা, স্বতন্ত্র পে-স্কেল, শিক্ষা ব্যাবস্থার উন্নয়ন ও উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।

এছাড়াও ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত ৩১ অক্টোবর ২০১৫ তারিখের মধ্যে প্রস্তাবিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচী গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়।





আরো পড়ুনঃ
বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষদকের নিয়ে সাম্প্রতিক রাস্ট্রীয় অনাকাঙ্খিত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া
আমলাতন্ত্রের আমলনামা ও শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন

Tuesday, October 6, 2015

সরকারকে অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা


পৃথক বেতন কাঠামো ও অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে গ্রেড সমস্যা নিরসনে সরকারকে অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনরত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এ সময়ের মধ্যে সমাধান না হলে ১ নভেম্বর থেকে শিক্ষকেরা লাগাতার কর্মবিরতিতে যাবেন।

আজ মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষকেরা তাঁদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। বেলা তিনটায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক হবে। তাই বৈঠকে মন্ত্রীকে কী বলা হবে, তা নিয়ে বৈঠক করে এসব সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা।

ফেডারেশনের মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কথাগুলো প্রধানমন্ত্রীকে বলার জন্য সময় চাইব। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাদে বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বাকি ছয় সদস্যের সঙ্গেও বৈঠকে বসা হবে। এ মাসের মধ্যে সম্মানজনক সমাধান না হয় আগামী ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতিকে যাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।’

পৃথক বেতন কাঠামো ও গ্রেড সমস্যা নিরসনের দাবিতে প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এর মধ্যে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এরপর শিক্ষকদের আন্দোলন আরও জোরদার হয়। এরই মধ্যে গত রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

Published in: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/647731

Saturday, September 19, 2015

আন্দোলন-আলোচনা একসঙ্গে চালিয়ে যাবেন শিক্ষকেরা

আন্দোলনরত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেতনবৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী একা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।
গতকাল রাতে শিক্ষকনেতারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁরা আন্দোলন ও আলোচনা একসঙ্গে চালিয়ে যাবেন। দাবি পূরণ ছাড়া তাঁরা আন্দোলন থেকে পিছপা হবেন না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিটির সভায় একজন সদস্য হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর সক্রিয় ভূমিকা থাকবে। তবে খুব শিগগির ওই কমিটির সভা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এ-সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ অক্টোবর বিদেশে থাকবেন। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন, ফিরবেন ৩ অক্টোবর।
দেশে ফেরার পরদিনই কাল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কার্যত শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের বক্তব্য শুনেছেন। একপর্যায়ে শিক্ষকনেতারা শিক্ষামন্ত্রীর কাছ জানতে চান, তাঁরা এখান থেকে কী বার্তা নিয়ে শিক্ষকদের কাছে যাবেন। তখন শিক্ষামন্ত্রী সুনির্দিষ্ট বার্তা না দিয়ে খুব শিগগির আলোচনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে শিক্ষকনেতারা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলবে, আলোচনাও চলবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, অষ্টম বেতন স্কেল অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। আর মন্ত্রিসভাই বেতনবৈষম্য নিরসন কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে। তাই ওই কমিটিকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারণ পর্যায় থেকে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে আন্দোলন থামতে পারে।
একাধিক শিক্ষকনেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, আলোচনার পাশাপাশি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। তাঁরা এখন আনুষ্ঠানিক আলোচনা চান। তাঁদের দাবি, শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেলের জন্য একটি কমিশন গঠন করে দেওয়া হোক। এর আগ পর্যন্ত অষ্টম বেতন স্কেলে পদমর্যাদায় যে অবনমন হয়েছে, সেটি পরিবর্তন করে সপ্তম বেতন স্কেলের মতোই বহাল করা হোক। কারণ, সপ্তম গ্রেডে শিক্ষকদের গ্রেড-১-এ (সচিবদের সমান) যাওয়ার সুযোগ ছিল। সিলেকশন গ্রেড বাদ হওয়ায় এখন আর এই সুযোগ থাকল না।
পৃথক বেতনকাঠামো ও পদমর্যাদা-সংক্রান্ত বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলন করছেন। ৭ সেপ্টেম্বর সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দিয়ে অষ্টম বেতন স্কেল অনুমোদন হওয়ায় আন্দোলন জোরদার করেন তাঁরা। ইতিমধ্যে তিন দিন পূর্ণদিবস এবং আরও কয়েক দিন তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা।
কাল রাজধানীর মিন্টো রোডে শিক্ষামন্ত্রীর সরকারি বাসায় বেলা ১১টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনা করেন শিক্ষকেরা। আলোচনায় শিক্ষক প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল। এই আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দুই পক্ষই বলছে, এটা ‘অনানুষ্ঠানিক আলোচনা’।
শিক্ষকেরা বলেছেন, তাঁরা আশা করছেন, সরকার শিগগিরই আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবেন। আর শিক্ষামন্ত্রী আশা করেছেন, খুব শিগগির এ ব্যাপারে একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো যাবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি প্রথমে জানতে চান। তখন শিক্ষকেরা মন্ত্রীকে বলেন, তাঁরা শিক্ষকদের জন্য পৃথক একটি বেতন স্কেল দাবি করেছেন। এ জন্য দ্রুত একটি আলাদা কমিশন গঠন করতে বলেছেন। দাবি পূরণ না হলে আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ভর্তি পরীক্ষাও হুমকির মুখে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কার কথাও শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন। এ সময় মন্ত্রীকে তাঁরা অনুরোধ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিতে নিউইয়র্কে যাওয়ার আগেই যেন আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন। বেতনবৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাজও যেন দ্রুত শুরু করা হয়। পারলে ঈদের আগে কমিটিকে বৈঠকে বসার জন্য তাঁরা অনুরোধ জানান। অর্থমন্ত্রী বিদেশে যাওয়ায় তাঁর অনুপস্থিতিতে ওই কমিটির সদস্য হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী যেন আলোচনার ব্যবস্থা করেন, সেই অনুরোধও করেন শিক্ষকনেতারা।
পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষকেরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সরকারও সেটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। শিক্ষকদের মূল দাবি অনুযায়ী পৃথক বেতনকাঠামো করা হবে কি না—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সরকার এটি প্রত্যাখ্যান করেনি। আলোচনা হবে। তবে শিক্ষকদের মর্যাদা কোনোভাবেই ছোট করে দেখা হচ্ছে না।
এ সময় শিক্ষকনেতা ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের প্রথম ও প্রধান দাবি স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো। শিক্ষকনেতা এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, পৃথক বেতনকাঠামোর জন্য অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
পরে শিক্ষামন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিশ্চিত, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।

Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/636943

Thursday, September 17, 2015

Work abstention of Bangladesh’s teachers may disrupt admission tests


Public university teachers have threatened that the upcoming admission tests to the universities will be disrupted if their four-point demand is not met soon.
"Teachers at almost all the public universities want to boycott the scheduled admission tests. We will take a decision after holding a meeting," said Prof ASM Maksud Kamal, secretary general of Federation of Bangladesh University Teachers Association (FBUTA).

FBUTA, a platform for public university teachers, yesterday observed daylong stoppage at all 37 state-run universities.

During a two-hour sit-in in front of the Oporajeyo Bangla at Dhaka University yesterday morning, the federation leaders said they will go for a tougher movement in the form of continuous work stoppage after the Eid holiday if the government does not hold any discussion soon with them about fulfilling their demands.

Rejecting the finance minister, FBUTA President Prof Farid Uddin Ahmed said, "From his speech in the media it seemed that the minister is a representative of the bureaucrats, not of the people. Therefore, we don't think the teachers would get justice from him."

An FBUTA press release yesterday said that in place of the finance minister, teachers want a public representative who is accepted by all.

Federation leaders also said they will sit with Education Minister Nurul Islam Nahid tomorrow to discuss their demands.

"The minister has requested us over the phone to sit with him," said Prof Maksud.

Teachers will continue demonstrations till their demands, which include immediate revision of the 8th national pay scale and a separate salary structure for them, are met, he added.

Teachers under the banner of FBUTA have been demonstrating since May 14 to press their four-point demand.

Things, however, turned for the worse after the government approved the new pay scale for all government employees on September 7 with retrospective effect from July 2015.

FBUTA leaders have intensified their agitation programmes since then.

They complained that the post of selection grade professors (senior teachers) has been abolished in the new pay scale although bureaucrats have got a special grade for themselves.

Their four-point demand includes keeping senior professors and senior secretaries at an equal level of payment and benefits as enjoyed by the same grade of government officials.

There are over 13,000 teachers at 37 public universities in the country.

Tuesday, September 15, 2015

অষ্টম বেতন কাঠামো ও শিক্ষকদের অবস্থান

অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল
চলমান আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বেতন-ভাতা ও মর্যাদা ছাড়াও শিক্ষাব্যবস্থা তথা উচ্চশিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, সরকারের ভিশন পূরণে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ জাতির অবস্থান সুদৃঢ় করা। এই আন্দোলনকে নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমি বিস্মিত যে শিক্ষকরা সরকারি সিদ্ধান্ত জানার আগেই আন্দোলনে নেমে যান।' অথচ বাস্তবতা হচ্ছে_ ১৮ জুন ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামোতে মর্যাদা ও বেতন-ভাতার অবনমনের আশঙ্কা জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তখন শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক বলে মত প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে নীতিনির্ধারণী মহলে অনেকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও প্রতীক কর্মসূচির মাধ্যমে এই বৈষম্যের বিষয়টি তাদের দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করেন ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ। এমতাবস্থায় শিক্ষকদের আশঙ্কাকে সঠিক প্রমাণপূর্বক তাদের মর্যাদা এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিকে গুরুত্ব না দিয়ে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো যখন অনুমোদন করা হয়, তখন আমরা বিস্মিত হই। বস্তুত বাজেট পাসের আগে আমরা কোনো মহল থেকে আলোচনার প্রস্তাব পাইনি।
বেতন কমিশন সরকার অনুমোদিত একটি প্রতিনিধিত্বশীল কমিশন। ১৮ সদস্যবিশিষ্ট অষ্টম বেতন কমিশন ১৩ জন অস্থায়ী ও ৫ জন স্থায়ী সদস্য নিয়ে গঠিত, যেখানে শিক্ষক প্রতিনিধি ছিলেন ৪ জন। তাদের মাধ্যমে জেনেছি যে, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে খণ্ডকালীন 'শিক্ষক' সদস্যদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। কমিশন কর্তৃক প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর পুনর্মূল্যায়নের নামে ৫ সদস্যবিশিষ্ট সচিব কমিটি স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে অন্যদের অবমূল্যায়নের কাজটি নিশ্চিত করেছেন। তাই বলা যায়, এই বেতন কাঠামো সচিবদের তৈরি, যেখানে অন্যদের মতামত ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি। মূলত দুটি সুপার গ্রেডসহ গ্রেড হলো ২২টি, যা অর্থমন্ত্রী প্রায়শ এড়িয়ে যান। 
২২ ধাপবিশিষ্ট এই বেতন কাঠামোতে চতুরতার সঙ্গে শিক্ষকদের ৪ ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যারা সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপক আছেন তারা গ্রেড-১-এ সচিবদের সমতুল্য বেতন পাবেন ঠিকই; কিন্তু যারা সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপক নন কিংবা নতুনভাবে অধ্যাপক হবেন তাদের পক্ষে গ্রেড-১-এ যাওয়ার আর সুযোগ থাকবে না, যা সপ্তম বেতন কাঠামোতে ছিল। সিলেকশন গ্রেড অবলুপ্তির মধ্য দিয়ে অধ্যাপকদের গ্রেড-১-এ যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলো। অর্থমন্ত্রী বলেন, অধ্যাপকরা আগের মতো সচিবদের সঙ্গে অবস্থান করছেন, সেই গ্রেডের মাসিক বেতন ৭৮ হাজার টাকা। কিন্তু এটা কি জানাবেন যে, যারা ভবিষ্যতে অধ্যাপক হবেন তারা কীভাবে গ্রেড-১-এর বেতন পাবেন? 
তিনি বলেছেন, 'শিক্ষকদের পদোন্নতির করাপট প্র্যাকটিস নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।' বাস্তবতা হলো, সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হতে নূ্যনতম ১০ বছর চাকরি করতে হয়; এই মেয়াদে স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা হতে হবে নূ্যনতম ৭টি এবং সর্বমোট ১৫টি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় কার্যকাল নূ্যনতম ২৫ বছর। পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে উলি্লখিত শর্তপূরণসাপেক্ষে ১২ বছর সক্রিয় কার্যকালের পর অধ্যাপক পদের জন্য দরখাস্ত করা যায়। সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকতার চাকরির বয়স হতে হবে নূ্যনতম ২০ বছর। অধ্যাপক হিসেবে ৫ বছর, সর্বশেষ বেতন স্কেলে এক বছর স্থিতাবস্থায় থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট অধ্যাপকের ২৫ শতাংশের মধ্যে থাকলেই কেবল এই পদ পাওয়ার যোগ্য হন। মূলত ৬০ বছরের কাছাকাছি বয়সে সব শর্তপূরণসাপেক্ষে একজন অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেডে উন্নীত হন, যা সচিবদের অবসর গ্রহণের বয়সের প্রায় সমান। সুতরাং 'যেভাবে পদোন্নতি পান তা বেশ অস্বচ্ছ'_ মন্ত্রীর এমন বক্তব্য সঠিক নয়। উল্লেখ্য, জনপ্রশাসনে প্রয়োজনের তুলনায় বা অনুমোদিত পদের চেয়ে সুপার নিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ্ধতির মাধ্যমে অধিকসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন অধিদপ্তর ও সংস্থায় প্রেষণে পদায়ন করা হয়। বর্তমানে উপসচিবের ৮৩০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১,২৯৪ জন, যুগ্ম সচিবের ৩৫০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৯১৭ জন, অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত ১২০টি পদের বিপরীতে আছেন ৪২৯ জন এবং সচিবের ৬০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে আছেন ৭২ জন। এভাবে শুধু প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংখ্যাতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করে প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। অথচ মন্ত্রী এ বিষয়ে নিশ্চুপ।
মন্ত্রী বলেছেন, 'সচরাচর যে পিরামিড ক্যারিয়ার সার্ভিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা তেমন নয়; এখানে নিম্ন শ্রেণীর পদের তুলনায় উচ্চ শ্রেণীর পদ খুব বেশি।' বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রমোশন হয় উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণাকর্মের ভিত্তিতে; বয়সের ভিত্তিতে নয়। এখানে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের ক্রমধারায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রভাষক থেকে শুরু করে অধ্যাপক পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ নেই। সচিবালয়ে পদোন্নতির জন্য নিম্নপদস্থ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ পর্যন্ত যেভাবে ফাইল চালাচালি হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সুযোগ নেই। একটি মন্ত্রণালয়ে একজন সচিব থাকেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগে একাধিক অধ্যাপক থাকতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে সচিবালয় বানানো যাবে না। এখানে বসিংয়ের স্থান নেই, সিনিয়র ও জুনিয়র স্কলারের স্থান এটি। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানসৃষ্টি ও বিতরণের পাদপীঠ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোয় প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের মতো পিরামিড হওয়ার সুযোগ নেই। তবুও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মন্ত্রীর ব্যাখ্যানুযায়ী শিক্ষকদের স্তরবিন্যাসে পিরামিড আকৃতি রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় যত পুরাতন, অধ্যাপকের সংখ্যাও তত বেশি। বাংলাদেশে নতুন ও পুরাতন এবং ভারতের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রীর বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে মোট শিক্ষক ৬৫ জন; অধ্যাপক একজন, সহকারী অধ্যাপক ৮ জন এবং অন্যরা প্রভাষক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ১৫২ জন; অধ্যাপক দু'জন, সহযোগী অধ্যাপক ১২ জন, সহকারী অধ্যাপক ৭৪ জন, প্রভাষক ৬৪ জন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ১১২ জন; অধ্যাপক একজন, সহযোগী অধ্যাপক ৯ জন, সহকারী অধ্যাপক ৪৪ জন, প্রভাষক ৫৮ জন। এ হলো নতুন গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র_ যেখানে পিরামিড আকৃতি রয়েছে। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন ১২টি বিভাগে শিক্ষক ছিলেন ৬০ জন, ছাত্র ৮৭৭ জন, যা উলি্লখিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতোই। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা ১৯৭০ জন; অধ্যাপক ৬৮৯ জন, মোট শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপকের হার ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশের পুরাতন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রও প্রায় অনুরূপ। ভারতের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের তুলনায় অধ্যাপক ৪৭ শতাংশ। ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের হার ৪৮ শতাংশ। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত দিলি্ল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের হার ৪৮ শতাংশ। উলি্লখিত তথ্যাবলির আলোকে দেখা যায়, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যাপকদের সংখ্যা মোট শিক্ষকের প্রায় ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অধ্যাপকের হার অনেক কম। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পিরামিড আকৃতি নেই। তাহলে মাননীয় মন্ত্রী কি বলবেন যে, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুপার করাপট প্র্যাকটিস করছে? 
আমরা জেনেছি, বেতনবৈষম্য নিরসনের জন্য যে কমিটি রয়েছে তার প্রধান মাননীয় অর্থমন্ত্রী। আমরা বলতে চাই, ইতিমধ্যেই যিনি শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন এবং শিক্ষকদের ব্যাপারে অসম্মানজনক বক্তব্য রেখে নিজেকে বিতর্কিত করেছেন, তার নেতৃত্বাধীন কোনো কমিটি শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আলাপ-আলোচনার জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবসহ বাস্তব ও গঠনমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করুন_ যেখানে শিক্ষকরা তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরতে সক্ষম হবেন। আমাদের উদ্দেশ্য একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো। এ লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে একটি কমিশন গঠনেরও দাবি জানাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে শিক্ষকদের মর্যাদা, বেতনভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পুনঃমূল্যায়নের দাবিও আমরা ব্যক্ত করছি। মূলত উচ্চশিক্ষাকে অবহেলা করে বা শিক্ষাব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে কোনো জাতি তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে উন্নীত হতে পারে না। তাই আমরা দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা ও জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থে অবিলম্বে শিক্ষকদের উত্থাপিত সব দাবি-দাওয়া পূরণের জোর দাবি জানাই। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। 
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল
মহাসচিব, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও সাধারণ সম্পাদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি
Published in: http://www.samakal.net/2015/09/15/162188

Saturday, September 12, 2015

নির্বিঘ্নে শিক্ষকতা করার জন্য স্বতন্ত্র স্কেল দরকার;বিশেষ সাক্ষাৎকার: ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতীক বর্ধন

ভ্যাট বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। অন্যদিকে বেতনবৈষম্য দূর করার দাবিতে আন্দোলন করছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
প্রথম আলো : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল দাবি কী?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : আমাদের মূল দাবি হচ্ছে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল। আমরা অন্য কোনো ক্যাডারের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে চাই না। কিন্তু এবারের অষ্টম পে-স্কেলে আমাদের মর্যাদার অবনমন করা হয়েছে, যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সপ্তম পে-স্কেলে একজন শিক্ষক অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার পর তৃতীয় গ্রেডে তাঁর মূল বেতন হতো ২৯ হাজার টাকা, যেখানে সচিবদের মূল বেতন ছিল ৪০ হাজার টাকা। এরপর সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পেয়ে তাঁদের মূল বেতন ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত উঠত। কিন্তু এই সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল উঠিয়ে দেওয়া এবং আগামী দিনে আর পে-স্কেল করা হবে না—এমন ঘোষণা দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আর সে জায়গায় যেতেই পারবেন না। অর্থাৎ সচিবদের সঙ্গে অধ্যাপকদের বৈষম্য আগে থেকেই ছিল, কিন্তু সপ্তম পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড থাকার কারণে কিছুটা প্রতিকার পাওয়া যেত, কিন্তু এখন আর সে সুযোগ রইল না। এটা কাম্য নয়। ফলে অন্য কারও সঙ্গে যেন প্রতিযোগিতায় যেতে না হয়, সে কারণেই আমরা স্বতন্ত্র স্কেল দাবি করছি।
প্রথম আলো : সিলেকশন গ্রেড তো আবার সবাই পেতেন না?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : না, সিলেকশন গ্রেড সবাই পেতেন না। বয়সের কারণে অনেকেই তা পাওয়ার আগে অবসরে চলে যেতেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য এই কিছুদিন আগে সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, এর ফলে সপ্তম পে-স্কেলে তাঁর মূল বেতন সচিবদের সমান ৪০ হাজার টাকা হয়েছে।
প্রথম আলো : তাহলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল কি বৈষম্যমূলক ব্যাপার ছিল না? আর এখন নির্দিষ্ট হারে ইনক্রিমেন্টের হার নির্ধারণ করার কারণে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার জন্য কিছু মানদণ্ড ছিল: ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আর অধ্যাপক হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা। আবার শেষ ধাপে এসে এক বছর অপেক্ষা করতে হতো। ২৫ শতাংশ অধ্যাপক সেটা অর্জন করতেন। আবার এসব মানদণ্ড পূরণ করার পরেও যে-কেউ সিলেকশন গ্রেড পাবেন, তারও নিশ্চয়তা ছিল না।। তবে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় খুশিই ছিল। এটা বৈষম্যমূলক ছিল কি ছিল না, সে ব্যাপারে আমি কিছু বলব না। ইনক্রিমেন্টের হার নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণে বেতন বাড়বে, কিন্তু এই সিলেকশন গ্রেড অবলুপ্ত করার কারণে শিক্ষকেরা অন্য কোথাও যেতে পারবেন না। অর্থাৎ স্রেফ শিক্ষক হিসেবেই তাঁদের জীবনপাত করতে হবে।
প্রথম আলো : সিনিয়র সচিব পদ সৃষ্টি ও মন্ত্রিপরিষদ/মুখ্য সচিবকে আলাদা স্কেল দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের অবস্থান কী দাঁড়াল?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : সে কথা যদি বলেন, তাহলে বলতে হয়, আমাদের অবস্থান এখন পঞ্চম। প্রথমে মুখ্য সচিব/মন্ত্রিপরিষদ সচিব, দ্বিতীয় অবস্থানে সিনিয়র সচিব, এরপর প্রথম গ্রেড, দ্বিতীয় গ্রেড ও তারপর তৃতীয় গ্রেড, আমরা অধ্যাপকেরা এই তৃতীয় গ্রেডভুক্ত। অর্থাৎ আমরা এখন পঞ্চম স্থানে চলে গিয়েছি। আর সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল অবলুপ্ত করার কারণে আমাদের মর্যাদা ও বেতন বৃদ্ধির কোনো সুযোগ আর রইল না। আগে শুধু মুখ্য ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পেতেন। এখন থেকে অধ্যাপকদের চাকরি তৃতীয় গ্রেড থেকে শুরু হবে, আর শেষও হবে সেখানে।
প্রথম আলো : এর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কী প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। ধারণা করি, এর ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসতে চাইবেন না। যে পেশায় মর্যাদা ও বেতন বেশি, মেধাবীরা সাধারণত সে পেশাতেই যেতে চান। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষককে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অধ্যাপক হতে হয়। তাঁকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চাকরি করতে হয়, পাশাপাশি তাঁর অন্তত ১৭টি প্রকাশনা থাকতে হয়। ফলে এত কিছু করার পর যদি তাঁর অবস্থান সচিবদের নিচে হয়, তাহলে তিনি কেন এই পেশায় আসতে চাইবেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় মেধাশূন্য হয়ে যাবে। এমনিতেই মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় এখন আসতে চান না, এর ফলে এখন আরও আসতে চাইবেন না। এর ফল জাতির জন্য ভালো হবে না।
প্রথম আলো : তাহলে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে আপনাদের অবস্থা কী দাঁড়াল?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : সপ্তম পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অবস্থান ছিল ১৭তম, আর সচিবদের অবস্থান ছিল ১৬তম। যে অধ্যাপকেরা সিলেকশন গ্রেড পেতেন, তাঁদের অবস্থান ছিল ১৯তম, আর যাঁরা তা পেতেন না, তাঁদের অবস্থান ছিল ২২তম। আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা বলা মুশকিল।
প্রথম আলো : বিশ্বের আর কোন দেশে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র পে-স্কেল আছে?
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ l আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেল আছে, আরও অনেক দেশেই আছে। সেখানকার শিক্ষকেরা আমাদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেতন পান। আবারও বলছি, আমরা কারও সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে চাই না, নিজেদের মতো করে থাকতে চাই, পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করতে চাই। আর তার জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেল হওয়া জরুরি।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।

Sunday, August 23, 2015

আন্দোলনরত শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামোর দাবিসহ চার দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

আজ রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বেতন কমিশনের সুপারিশে এ পর্যন্ত সাতটি বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু কোনো বেতনকাঠামোই অষ্টম বেতন কাঠামোর মতো বিতর্কিত হয়নি। এ পর্যন্ত কোনো বেতন কাঠামোতেই ‘সুপারগ্রেড’ রাখা হয়নি। দুটি সুপারগ্রেড রেখে রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি শিক্ষকদের জন্য মর্যাদাহানিকর বলে উল্লেখ করা হয়।
নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য পরিষদের সঙ্গে ফেডারেশনের যৌথসভা করে আন্দোলন ও দাবি আদায়ে উপাচার্যদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন আদায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা ও তাঁর সঙ্গে দেখা করে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সই সংবলিত দাবিনামা পেশ করা, দাবি না মেনে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হলে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে শিক্ষকদের জাতীয় কনভেনশন করে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা।
শিক্ষকদের অন্য দাবিগুলো হলো: স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো প্রবর্তনের জন্য অবিলম্বে বেতন কমিশন করা, আলাদা কাঠামো হওয়ার আগ পর্যন্ত অষ্টম বেতনকাঠামোতে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদার বৈষম্য দূর করা এবং রাষ্ট্রীয় ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’-এ পদমর্যাদাগত অবস্থান ও সুবিধা নিশ্চিত করা
এক প্রশ্নের জবাবে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্চশিক্ষাকে অবহেলা করে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কখনোই সম্ভব না। অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের আন্দোলন ও বেতন ভাতা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তাই তাঁর কথার ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। এখানে শুধু শিক্ষকদের বেতন-ভাতার কথাই বলা হচ্ছে না, উচ্চশিক্ষার স্বার্থে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হচ্ছে।
Source: http://goo.gl/F41yBP

Friday, August 7, 2015

উপেক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা

এ এস এম মাকসুদ কামাল 

গত ৮ জুলাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি-দাওয়া ও প্রস্তাবিত অষ্টম বেতনকাঠামোতে অবমাননার বিষয় তুলে ধরেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদনমতে, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম দাশ মন্ত্রীকে জানান, একবার সার্কিট হাউসে শিক্ষাবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তিনি এক সচিবের পাশে বসেন। জেলা প্রশাসক দেরিতে সভায় উপস্থিত হয়ে উপাচার্যকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে সেই আসনে নিজে বসেন। একজন উপাচার্যের প্রতি একজন
আমলার এ আচরণে শিক্ষক সমাজ ক্ষুব্ধ, অপমানিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের যথার্থতা এই আমলার আচরণেও নিহিত। প্রস্তাবিত বেতনকাঠামো ঘোষণার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শিক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন, আলোচনা করেছেন। সবাই দাবিগুলোর পক্ষে মতামত দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী উত্থাপিত দাবিগুলোর পক্ষে সংশ্লিষ্ট সচিবদের ডিও লেটার দিয়েছেন, জবাবে মন্ত্রী উত্তর পেয়েছেন কি না, জানি না। ডেইলি স্টার-এ ২৭ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে জনৈক সচিব বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ব্যাপকভাবে প্রমোশন পেয়ে থাকেন, তাঁদের দাবি পূরণ হলে অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা বইতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়। অথচ সচিব মনে করেন, শিক্ষার বিনিয়োগ বোঝা।

শুধু বিএ পাস করে এমনকি শিক্ষাজীবনে একটি তৃতীয় শ্রেণি পেয়েও অনেকে সরকারি চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। আমলাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ কোটাভিত্তিক। বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমেও আমলা নিয়োগ করা হয়। গত কয়েক বছরে আমলাদের ব্যাপক প্রমোশন হয়েছে, তাই সিনিয়র সচিব, পদায়িত-অপদায়িত সচিবসহ নতুন পদের নাম যেমন শোনা যাচ্ছে, তেমনি আমলাতন্ত্রের অন্যান্য স্তরে প্রমোশনের ভারে জট লেগে যাওয়ার বিষয়ও আলোচিত। জীবনের সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে মেধাতালিকায় শীর্ষস্থান অর্জনকারী সেরারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। নির্দিষ্টসংখ্যক গবেষণা প্রবন্ধ থাকার পরেও ডক্টরাল ডিগ্রি না থাকায় অধ্যাপক হতে ন্যূনতম ২৫ বছর লাগে। ডক্টরাল ডিগ্রি থাকলে এবং স্বীকৃত দেশি-বিদেশি জার্নালে ন্যূনতম ১৫টি গবেষণা প্রবন্ধ থাকলে অন্যান্য শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কিছু কম সময়ে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদোন্নতি জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞানসৃজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট—চাকরির বয়সসীমার সঙ্গে নয়। সচিব আরও বলেছেন, শিক্ষকদের চাকরিতে অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ বছর, আমলাদের ৫৯—শিক্ষকেরা একজন আমলার থেকেও বেশি সময় বেতন-ভাতা পান। একজন শিক্ষক বেশি বয়স পর্যন্ত চাকরি করেও আর্থিকভাবে একজন আমলা থেকে কতটুকু স্বাবলম্বী, তা এই সমাজ জানে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাজ, মেধা-অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ; করণিকের কাজ নয়। ভারত ও শ্রীলঙ্কায়ও শিক্ষকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ বছর।
শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানে মেধাবীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় প্রতিটি স্তরে শিক্ষকেরা মূল বেতনের প্রায় আড়াই গুণ ভাতা পান। ভারতে বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও ইনক্রিমেন্টের কারণে সমতুল্য আমলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বেশি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হন, এটি বলা হয়। কিছু শিক্ষকের এ রকম সুবিধা আছে, যার অনুপাত ৭ শতাংশেরও কম। জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে সৎ পথে অর্থ উপার্জন করা কি অপরাধ? সরকারি অনেক কর্মকর্তাও বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। এতে প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জ্ঞান ব্যবস্থাপনার একটি সেতুবন্ধ গড়ে উঠছে।

প্রস্তাবিত বেতনকাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান সপ্তম থেকে দুই ধাপ নামানো হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড বাতিল হলে তা আরও নামবে। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের ১৬ ধাপের প্রতিবেদন সচিব কমিটিতে যাওয়ায় তাঁরা সপ্তমের ন্যায় ২০ ধাপের প্রস্তাব করেন। যুগান্তর-এ প্রকাশিত ১৪ মের তথ্যমতে, সচিব কমিটির প্রস্তাবিত বেতনকাঠামোতে ধাপ ২২টি। সপ্তম বেতনকাঠামোতে সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকেরা গ্রেড-১-এ ছিলেন, যেখানে ৪০ হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল, বেতন স্কেলের মূল কাঠামোতে মুখ্য সচিব বা মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সিনিয়র সচিবের মতো সুপার-গ্রেড ছিল না, যা এখন রাখা হয়েছে। এই বেতন স্কেলের ৩ অনুচ্ছেদের (২) পাদটীকায় ভাতা যোগ করে ৪৫ হাজার টাকা (নির্ধারিত) হবে। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালে একটি প্রজ্ঞাপনে সিনিয়র সচিব পদ উল্লেখ করে মূল বেতনের সঙ্গে দুই হাজার টাকা ভাতা প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা সপ্তম বেতন স্কেলে ছিল না। তাই প্রস্তাবিত বেতনকাঠামোতে ২০টি গ্রেডের বাইরে দুটি সুপার গ্রেড রাখায় এখন ধাপ ২২টি, যা পাকিস্তানের চলমান বেতনকাঠামোর অনুরূপ। সচিব কমিটি সুপার গ্রেডের বেতন-ভাতা সরাসরি দ্বিগুণ বৃদ্ধি এবং অন্যদের ক্ষেত্রে দ্বিগুণের কম বৃদ্ধির সুপারিশ করে, যা পক্ষপাতপুষ্ট ও নীতি-নৈতিকতায় অগ্রহণযোগ্য। স্বার্থসংশ্লিষ্টতা নেই এমন কমিটি অষ্টম বেতনকাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করলে সবাই সুবিচার পাবেন।

শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানে মেধাবীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় প্রতিটি স্তরে শিক্ষকেরা মূল বেতনের প্রায় আড়াই গুণ ভাতা পান। ভারতে বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও ইনক্রিমেন্টের কারণে সমতুল্য আমলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বেশি। পাকিস্তানে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত উচ্চশিক্ষা কমিশন টেনিউর ট্র্যাক পদ্ধতি চালু করে উচ্চ মানের গবেষক-শিক্ষকদের উচ্চ বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে। এই পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা বেসিক পে-স্কেলের শিক্ষকদের থেকে ন্যূনতম তিন গুণ বেশি বেতন পান। এমনকি দক্ষতা ও গবেষণার মান অনুযায়ী পাকিস্তানে বেসিক পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ অধ্যাপককে বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ ২২তম ধাপ প্রদান করা হয়, যা মুখ্য সচিবের সমতুল্য। অধ্যাপকদের গ্রেড ২১তম, যা সচিবদের সমতুল্য। দেশটিতে একজন প্রভাষক চাকরি শুরু করেন ১৮তম ধাপে, যেখানে প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার প্রারম্ভিক ধাপ ১৭তম।

এসব উদাহরণের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানাই। স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যবর্তী সময়ে প্রস্তাবিত অষ্টম বেতনকাঠামো পুনর্নির্ধারণ করে সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা সিনিয়র সচিবের সমতুল্য; অধ্যাপকদের সচিবের সমতুল্য; সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের বেতন ক্রমানুসারে নির্ধারণ করারও প্রস্তাব জানাই। এভাবে বেতন-ভাতা নির্ধারিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের জন্য আনুমানিক সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি টাকা প্রতিবছর বিনিয়োগ করতে হবে, যা হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে লোপাট হওয়া অর্থের ৮ শতাংশ মাত্র।

রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন স্কেল অনুযায়ী সম্মান দেওয়া হয়নি। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের অবস্থান ১৯তম সমবেতনের সচিবদের অবস্থান ১৬তম। এমনকি উপাচার্যদের ১৭তম অবস্থানে রাখা হয়েছে। জনগণের করের টাকায় প্রাপ্ত একই বেতনের একজনের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বেশি, অন্যজনের কম—এ কেমন বিচার? তাই, বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে, ওই সাপেক্ষে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করা হোক।

যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার আমলা গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হিসেবে পান মাসিক ৪৫ হাজার টাকা। জনগণের করের টাকায় আমলারা যদি এ সুবিধা পেতে পারেন, তাহলে অন্যরা কেন পাবেন না? শ্রীলঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আট বছর চাকরির পর শুল্কমুক্ত গাড়ি কিনতে পারেন, যা পাঁচ বছর অন্তর নবায়নযোগ্য।

আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধার কথাই শুধু বলছি না, শিক্ষকদের জবাবদিহির দিকেও নজর রাখা উচিত। ২০১৫-উত্তর বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডায়ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে কেন?

অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল: সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও মহাসচিব, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন