মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১.
এই দেশের শিক্ষকদের জন্য এখন খুবই খারাপ একটা সময় যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সবাই এখন কোনো না কোনো আন্দোলনে আছেন। যেহেতু আন্দোলন শব্দটা এখন মোটামুটি একটা অশালীন শব্দ তাই দেশের প্রায় সব শিক্ষক দেশের সব মানুষের কাছে এখন একটা রীতিমতো অপরাধী গোষ্ঠী। শিক্ষকদের জন্য যেহেতু এই দেশে কোনো সম্মানবোধ নেই তাই কেন তারা আন্দোলন করছে সেটি কেউ খুঁচিয়ে দেখেছে কিনা সেটা নিয়েও আমাদের সন্দেহ আছে। ছাত্রলীগের কর্মী এখন অবলীলায় তাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে পারে, একজন সাংসদ প্রকাশ্যে চাবুক মারার ঘোষণা দিতে পারেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে খোঁটা দিতে পারেন, কেউ কিছু মনে করেন না। আমাদের দেশের কিছু পত্র পত্রিকা বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পুরো বিষয়টি এক ধরনের আমোদ বলে মনে হতে পারে।
আমি একজন শিক্ষক তাই খুবই সঙ্কোচের সঙ্গে শিক্ষকদের জীবন নিয়ে দুটি কথা বলতে বসেছি। শিক্ষকরাও যে মনুষ্য জাতীয় প্রাণ, তাদেরও যে ক্ষুধা-তৃষ্ণা থাকতে পারে এবং তারাও যে দেশের মানুষের কাছে একটুখানি সম্মান চাইতে পারেন বিষয়টি জেনে কেউ যদি অবাক হয়ে যান তাহলে তার জন্য অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কিন্তু যখনই কোনো শিক্ষক নিয়ে কথা বলতে যাই তখনই কেন জানি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের কথা মনে পড়ে। দেশের মানুষ কি জানে এই দেশে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা হচ্ছেন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী? নতুন বেতন কাঠামোতে তারা কোথায় গিয়ে ঠেকেছেন খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
আমি এরকম একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে চিনি যিনি তার স্কুলে পৌঁছে প্রথমেই একটা ঝাড়ু এবং এক বালতি পানি নিয়ে স্কুলের টয়লেটে ঢুকে সেটা পরিস্কার করতেন। আমি যতদূর জানি এখন স্কুলে স্কুলে একজন করে কর্মচারী দেওয়া হয়েছে। আগে স্কুল চালাতেন শুধু শিক্ষকেরা, টয়লেট পরিস্কার থেকে স্কুলের ঘণ্টা বাজানো সবকিছুই করতে হতো শিক্ষকদের। স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কম, ক্লাসরুমও কম। দুই ব্যাচে পড়াতে হয় তাই সেই কাকভোর থেকে একেবারে বেলা পড়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো অবসর নেই। তারা যদি ক্লাসে পড়াতে পারেন, তাহলে নিজেদের রীতিমতো সৌভাগ্যবান মনে করেন, কারণ বেশিরভাগ সময়েই তারা ক্লাশে পড়ানোর সুযোগ পান না। এই দেশের যত ‘ফালতু’ কাজ সবকিছু এই শিক্ষকদের দিয়ে করিয়ে নেওয়া হয়। গ্রামের স্যানিটারি ল্যাট্রিন গোনা থেকে শুরু করে ভোটার তালিকা তৈরি করা-এমন কোনো কাজ নেই যা তাদের করতে হয় না।
এই দেশে সম্ভবত প্রায় আশি হাজার প্রাইমারি স্কুল আছে- এই স্কুলের শিক্ষকদের থেকে অসহায় কোনো গোষ্ঠী এই দেশে আছেন বলে আমার জানা নেই। তাই আমি যখনই শিক্ষকদের নিয়ে কিছু বলতে চাই তখনই প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের কথা একটিবার হলেও স্মরণ করে নেই।
২.
আমার ধারণা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর গত কয়েকদিন থেকে খুব মন খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাদের মর্যাদার জন্য আন্দোলন করছেন, আন্দোলনটি যেহেতু শুরু হয়েছে বেতনের স্কেল ঘোষণার পর তাই সবারই ধারণা আন্দোলনটি বুঝি টাকা পয়সার জন্য! আমি জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাকা পয়সা খুব বেশি নেই (আমার মনে আছে একজন লেকচারারের বেতন কত সেটি উল্লেখ করে একবার খবরের কাগজে একটি লেখা ছাপানোর পর আমার একজন তরুণ সহকর্মীর বিয়ে ভেঙে গিয়েছিলো!)।
সত্য মিথ্যা জানি না, শুনেছি আমরা মাসে যত টাকা বেতন পাই একজন সচিব তার গাড়ির তেলের জন্য তার থেকে বেশি টাকা পান! বেতনের বাইরে একজন শিক্ষক কী পরিমাণ সুযোগ পান সেটা লিখলে আমার আরো তরুণ সহকর্মীর বিয়ে ভেঙে যেতে পারে। তবে একবার একজন সচিবের গাড়িতে ঢাকা শহরের ভেতর দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। সচিব মহোদয় যেন দ্রুত নিরাপদে যেতে পারেন সেজন্য যে প্রক্রিয়ায় ট্রাফিক থামিয়ে তাকে যাবার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছিলো সেটি চমকপ্রদ! এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমার এক ধরনের বিস্ময় আছে কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষকদের কয়েকদিন থেকে মন খারাপ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষকদের নিয়ে কিছু খোলামেলা কথার কারণে। সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি ‘কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না’, সেই হিসেবে এই কথাটিও নিশ্চয়ই সত্যি যারা টাকা পয়সা নিয়ে এক ধরণের টানাটানির মাঝে থাকেন তাদেরকে টাকা পয়সা নিয়ে খোঁটা দিলে তারা কানা এবং খোঁড়ার মতই অপমানিত বোধ করেন।
এই দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে আমরা এখন মোটামুটিভাবে অনুমান করতে পারি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন কত হওয়া উচিৎ! গত সেমিস্টারে আমাকে পাঁচটি কোর্স নিতে হয়েছে (না, এটি মুদ্রণ প্রমাদ নয়, সংখ্যাটি সঠিক, পাঁচ), আমার পরিচিত একজন একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে মাত্র একটি কোর্স নেয়ার জন্যে প্রতি মাসে আমার বেতন থেকে বেশি টাকা পান! কাজেই কোন কাজের জন্যে কতো টাকা বেতন হওয়া উচিৎ সেটি কখনোই সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না, আমি শুধুমাত্র বিনয় সহকারে সবাইকে বলার চেষ্টা করতে পারি আমাদের যত টাকা বেতন দেয়া হয় আমরা সেই বেতন পাবার যোগ্য নই- আমাদের আরো কম টাকা বেতন দিয়ে আমাদের একটা শিক্ষা দেয়া উচিৎ ছিল কথাটি আমাদের জন্যে সম্মানযোগ্য নয়।
নতুন বেতন স্কেল দেবার পর সাংবাদিকেরা মাঝে মাঝেই এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য জানতে চেয়েছে, আমাকে বাধ্য হয়ে তখন বেতন স্কেলটি খুঁজে বের করে সেটি দেখতে হয়েছে। বেতনের টাকার পরিমাণ নয় বিভিন্ন পদের মানুষ কে কোথায় অবস্থান করছেন সেটি দেখে আমি আঁতকে উঠেছি।‘পদমর্যাদা’ বলে একটি বিচিত্র শব্দ আছে। বাংলাদেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত ক্ষমতাশালী একজন সচিব আছেন। কোনো একটি সভায় কোনো একটি বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্যে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ধর্ষিত হতে যাচ্ছে এরকম একটি মেয়ে যদি আবিষ্কার করে তার বাঁচার কোনো উপায় নেই তাহলে তার জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ধর্ষণটি উপভোগ করার চেষ্টা করা। (এটি এই সচিবের নিজের উক্তি নয়, ক্লেটন উইলিয়াম নামে একজন আমেরিকান রাজনীতিবিদের উক্তি)। পদমর্যাদায় এই সচিব নিশ্চয়ই প্রফেসরদের থেকে উপরে, কাজেই আমি জানার চেষ্টা করছি কোনো একটি সভায় যদি এই সচিব এসে উপস্থিত হন তাহলে কি আমাকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে একটা স্যালুট দিতে হবে? এই দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে আমার নাম আছে, এতোদিন এই দেশের কালচারে একে অন্যকে সম্মান দেখানোর যে বিষয়টি আছে আমি সেভাবেই চালিয়ে এসেছি।
পদমর্যাদা’ নামে এই বিষয়টি আবিষ্কার করার পর এখন আমি খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। তাহলে কি সভায় একজন একজন করে ঢোকার পর আমাকে কি কখনো কখনো উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট করতে হবে? বিষয়টি কে আমাকে বুঝিয়ে দেবে? এই ধরণের সকল সভা থেকে একশ হাত দূরে থাকা সম্ভবত আমাদের জন্যে একমাত্র সম্মানজনক সমাধান।
আমি যদি ঠিকভাবে বুঝে থাকি, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই আন্দোলনটি বেতনের টাকা বাড়ানোর জন্যে আন্দোলন নয়, ‘পদমর্যাদা’ নামক বিভাজন প্রক্রিয়া থেকে উদ্ধার পাওয়ার আন্দোলন। সময়ে অসময়ে উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট দেওয়ার বিড়ম্বনা থেকে উদ্ধার পাওয়ার আন্দোলন!
‘পদমর্যাদা’ শব্দটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। আমরা সবাই যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণে শেরপুরের সোহাগপুরে তৈরি বিধবাপল্লীর নাম শুনেছি। বেশ কয়েক বছর আগে বেগম মতিয়া চৌধুরী আমার সাথে যোগাযোগ করে বিধবাপল্লী এলাকায় একটা কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি দেশের বাইরে ছিলাম। দেশে ফিরেই খুবই আনন্দের সাথে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। রওনা দেবার পর আবিস্কার করলাম এটি অনেক বড় অনুষ্ঠান। সেখানে শুধু যে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী আছেন তা নয়, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদও আছেন। এতো গুরুত্বপূর্ণ দুজন মন্ত্রী এক সাথে, বলা যেতে পারে সেই এলাকায় রীতিমত আলোড়ন তৈরি হয়ে গেল। কোনো একটা অনুষ্ঠানে সবাই মিলে স্টেজে উঠবে, এই বড় বড় দুজন মন্ত্রীর সাথে আমিও আছি। স্থানীয় নেতাকর্মীর ভীড়, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সবকিছু মিলিয়ে আমি একটু জবুথবু অবস্থায় পড়ে গেলাম।
হঠাৎ শুনতে পেলাম মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী উপস্থিত সবাইকে বিশাল একটা ধমক দিয়ে আমাকে দেখিয়ে বলরেন, ‘এই যে, ইনি একজন শিক্ষক। উনাকে সবার আগে যেতে দাও। আমরা সবাই তার পিছনে যাব।’
অবিশ্বাস্য ব্যাপার, আমাকে সবার সামনে নিয়ে আসা হল। আমি বিব্রতভাবে হেঁটে যাচ্ছি, দুই দুইজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আমার পিছনে পিছনে হেঁটে যাচ্ছেন। সারা জীবনই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে সম্মান এবং ভালোবাসা পেয়ে আসছি কিন্তু দুইজন এতো বড় বড় মন্ত্রী একজন শিক্ষককে এভাবে সম্মান দেখাবেন সেটি আমি কল্পনা করিনি। শিক্ষকদের কতো জায়গায় কতোভাবে অসম্মান করা হয়েছে, কিন্তু এই ঘটনাটির কথা মনে করে জীবনের অনেক দুঃখ এবং ক্ষোভের কথা আমি ভুলে যেতে পারি।
৩.
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে এই অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই সত্যি। তারপরও একটু দুঃখ হয় যখন দেখি কিছু শিক্ষকের জন্যে ঢালাওভাবে সকল শিক্ষককে অবমাননা সইতে হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের ছাত্রছাত্রীদের না পড়িয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে টাকা উপার্জন করতে ব্যস্ত থাকেন, এই অভিযোগটি প্রায় সবসময়ই শোনা যায়। কিন্তু কেউ কখনো একটা বিষয় লক্ষ্য করেন না, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য বিভাগ রয়েছে, তার মাঝে শুধুমাত্র হাতে গোনা দুই একটি বিভাগের শিক্ষকেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পড়াতে পারেন। এই দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আছেই মাত্র অল্প কয়েকটি বিভাগ, অথচ অপবাদটি ঢালাওভাবে সব বিভাগের সব শিক্ষকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়।
আমি মোটেও অস্বীকার করবো না, বিশ্ববিদ্যালযের অনেক শিক্ষকেরই অনেক বড় ধরণের সমস্যা আছে। কিন্তু তারপরেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে এই দেশের অনেক বড় সম্পদ। একটা সময় ছিল যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে থাকতো, কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলা হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যখন একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থানীয় রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে তখন তার মৃত্যুঘণ্টা বেজে যায়। একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে অনেকদিন লাগে। কিন্তু সেটাকে ধ্বংস করতে খুব বেশি সময় লাগে না।
শুরুতেই বলেছি শিক্ষকদের এখন খুব খারাপ একটা সময় যাচ্ছে! অথচ এরকমটি হওয়ার কথা ছিল না। এই দেশের প্রায় চারকোটি ছাত্রছাত্রী, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের মোট জনসংখ্যাই হচ্ছে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ লাখ। যদি আমাদের সব ছাত্রছাত্রীকে ঠিক করে লেখাপড়া করানো যেতো তাহলে দেশটা চোখের সামনে একটা স্বপ্নের দেশ হয়ে যেতো! লেখাপড়া করানোর জন্যে জিডিপির ছয় শতাংশ খরচ করার কথা, অথচ সেই অংশটুকু কমতে কমতে দুই শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। যদি সত্যি সত্যি এই দেশের সব ছেলেমেয়েকে ঠিকভাবে লেখাপড়া করানো হতো তাহলে সবচেয়ে আনন্দে কে থাকতো? এই দেশের শিক্ষকেরা।
আমাদের শিক্ষকদের যথেষ্ট অসম্মান করা হয়েছে, শুধু তাই না শিক্ষক এবং আমলাদের একেবারে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দেশের একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের মন খারাপ করার যথেষ্ট কারণ আছে।
কিন্তু যখন এক টুকরো চক হাতে নিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আমি ছাত্রছাত্রীদের মুখের দিকে তাকাই তখন আমার সমস্ত মন খারাপ দূর হয়ে যায়। যখন ছাত্রছাত্রীরা এসে বলে তাদের তৈরি রকেট সারা দেশে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে তখন আনন্দে আমার বুকটি ভরে যায়। যখন দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ টেলিফোন করে আমাদের ছাত্রদের তৈরি ড্রোনটি দেশের সত্যিকার কাজে ব্যবহার করার জন্যে আগ্রহ দেখায় তখন আমার বুকটি একশ' হাত ফুলে যায়। যখন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ছাত্রছাত্রীরা সারা দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে ফিরে আসে আমার মনে হয় এই পৃথিবীতে আমার চাইতে সুখী কে আছে? যখন কয়েকশ ছেলেমেয়ে এসে বলে তাদের গবেষণা পেপার জার্নালে ছাপার জন্যে মনোনীত হয়েছে তখন আমার মনে হয় বেঁচে থাকার মতো এতো আনন্দ আর কোথায় আছে?
চারপাশে সবাই মিলে আমাদের মন খারাপ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা শিক্ষক, যতদিন আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সাথে আছে, কার সাধ্যি আছে আমাদের মন খারাপ করিয়ে দেবে?
Published in: http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/sub-editorial/2015/10/09/76588.html
0 comments:
Post a Comment