Kamrul Hassan
এই দেশে আন্দোলন না করে আলোচনার মাধ্যমে কেউ কোন দাবি আদায় করতে পেরেছে বলে মনে পরে না। আমার ছোট ভাই কাপড় পুড়িয়ে, প্লেট ভেঙ্গে ঘরের ছোট্ট পরিসরে আন্দোলন করে তারপর প্রতিটি দাবি মিটাতে হয়েছে। Thanks God যে আমাকে কখনো এরকম করতে হয়নি। আমার কোন কিছু প্রয়োজন হলে মাকে বলতাম। না পেলে একটা কৌশল apply করতাম সেটা হলো আমার মাকে গল্পের বই এনে দিলে আমার ছোট খাটো আবদার মেনে নিত। কিন্তু আমার ছোট ভাইয়ের আবদার গুলো একটু বড় ছিল। তাছাড়া পড়াশুনায় মনোযোগ ছিল না বলে অর দাবিগুলো এমনিতে পাত্তা পেত না। তাই তার কৌশল ছিল ওয়াইল্ড। ও যা বলছিলাম, আমার ছাত্রদের পরীক্ষার একটা রুটিন দেওয়া হয়েছে। রুটিনটা এমন ভাবে করেছে যে তাদের একটা পরীক্ষা পরেছে দূর্গা পূজার দশমীর পরদিন। কেন রে বাবা রুটিনটা করার সময় calendar-টা একটু দেখে করা যায় না? এইসব খামখেয়ালির কারণে অনেক অযাচিত আন্দোলন হয় যেগুলো একটু careful হলে avoid করা যায়।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। এটা সরকারের দায়িত্ব সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরে তারা প্রায় বিনামূল্যে পড়বে আর যারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাদের জন্য চড়ামূল্য। কেন? তারা কি এই রাষ্ট্রের নাগরিক না। যারা এসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন তারা এটাকে বিনিয়োগ হিসাবে দেখে। পৃথিবীর কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ ব্যক্তিগত মুনাফা নেয় না। এক্ষত্রে বিনিয়োগকে দেখা হয় philanthropic বিনিয়োগ হিসাবে। আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের কোন বিনিয়োগ নেই অথচ এইবার শিক্ষার্থীদের উপর 7.5% VAT চাপিয়ে দেওয়া হলো। সরকারের এহেন কোন প্রকার বিনিয়োগ ছাড়া আয়ের মানসিকতা মোটেও যুক্তিযুক্ত না। যেখানে সরকারের উচিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে facilitate করা যেন তারা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠতে পারে। আমার ধারণা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হত সরকারও তখন এগিয়ে আসতো কিন্তু তা হয়নি কারণ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয্গুলো যেন মালিকের অধীন। যতদিন এরকম মালিকের অধীন থাকবে ততদিন সরকারও এখানে ইনভেস্ট করবে না কারণ একই প্রতিষ্ঠানের দুটো মালিক থাকতে পারে না। তথাপি আমি মনে করি এই vat চাপিয়ে দেওয়া পুরোপুরি অনুচিত। বুঝতে হবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল মাত্র উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে না। অনেক মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্তের ছেলেমেয়েরাও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে জমি জমা বিক্রি করে কোনরকমে পরে। অনেক ছাত্রের এই আর্থিক অসঙ্গতিকে কাজে লাগিয়ে অনেক উগ্রপন্থী ধর্মভিত্তিক দল আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে। এ বিষয়টিও সরকারের নজরে রাখতে হবে। তাই আমি জোর দাবি জানাচ্ছি সরকার যেন অতিসত্বর এই অযুক্তিক VAT প্রত্যাহার করে।
আমার ধারণা আমলারা ইচ্ছে করেই ঝামেলা তৈরী করে। ওরা যে এই\কাজটি অত্যন্ত সফলভাবে করতে পারে এটা তারা বারবার প্রমান করেছে। বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা চলছে সেটার জন্য দায়ী আমাদের অতি জ্ঞানী আমলারা। সরকারকে তাই বুঝতে হবে। চারিদিকে যে ভাবে অসন্তুশের দানা জমাট বাঁধছে সেটা কিন্তু একসময় মহীরুহ হয়ে উঠতে পারে। এরকম জনসন্তুশের সুযোগ কিন্তু অনেকেই নিতে পারে। তাই সময় থাকতে সাবধান।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 comments:
Post a Comment