প্রথম আলো: এখন বছরের শেষ ভাগ। এক-দেড় মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষা ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা। এরপর বার্ষিক পরীক্ষা। শিক্ষক আন্দোলনে শিক্ষার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কি?
নুরুল ইসলাম: শিক্ষকেরা শিক্ষার নিয়ামক শক্তি। তাঁরা অসন্তুষ্ট থাকুক, এটা কারও কাম্য নয়। ক্লাস বা পরীক্ষা না হলে শিক্ষার ক্ষতি তো হবেই। সেই ক্ষতির যুক্তি বা প্রয়োজন আছে কি না, তা বিবেচনা করার অনুরোধ করব। তাঁদের দাবি কীভাবে পূরণ করা যায়, সরকার সেই পথ খোঁজার চেষ্টা করছে।
প্রথম আলো: সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, আন্দোলন ও আলোচনা একসঙ্গে চলবে। এ প্রসঙ্গে সরকারের মনোভাব কী? তাঁদের মধ্যে কি আস্থার অভাব রয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
নুরুল ইসলাম: আন্দোলন, আবেগ ও উত্তেজনার আর প্রয়োজন নেই। তবে আলোচনার আরও প্রয়োজন আছে। সরকার শিক্ষকদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়েই মন্ত্রিসভার যে বৈঠকে জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদন হয়েছে, সেই বৈঠকে বেতনবৈষম্য নিরসনসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করেছে। আর তাঁদের মধ্যে আস্থার অভাব আছে কি না, এটা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা তাঁদের বলেছি যুক্তিসংগত প্রস্তাব দিতে। সেটি দিয়ে তাঁরা সরকারকে সহায়তা করবেন, না আন্দোলন করবেন—এটাও তাঁদের বিবেচ্য বিষয়।
প্রথম আলো: ২১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে শিক্ষকদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন?
নুরুল ইসলাম: শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার বিষয়গুলো কীভাবে সমাধান করা যায় এবং কীভাবে এগোনো যায়, প্রধানমন্ত্রী সে বিষয়ে কথা বলেছেন। তা ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকেই বেতনবৈষম্য নিরসনসংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে আন্তরিক না হলে তো এই কমিটি হতো না।
প্রথম আলো: শিক্ষকেরা তাঁদের দাবি পূরণে বিলম্বের আশঙ্কা করছেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অভিযোগও রয়েছে তাঁদের। কত দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান মিলতে পারে?
নুরুল ইসলাম: শিক্ষকেরা কেন এমন আশঙ্কা করছেন, সেটি তাঁরা বলতে পারবেন। তবে কিছুটা সময় তো দিতেই হবে। জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদন হওয়ার পর বেতন বুক তৈরির কাজ চলছে। এটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তবে এ কাজের জন্য আমরা বসে থাকছি না। ওই কাজও চলবে, অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটি বেতনবৈষম্য নিরসনের কাজটিও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রথম আলো: আপনি বলছেন, সরকার শিক্ষকদের দাবির প্রতি আন্তরিক। কিন্তু সেই আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটাতে একটু বেশি সময় লাগছে কি না।
নুরুল ইসলাম: শিক্ষকদের দাবির প্রতি আন্তরিকতা না থাকলে তো আর নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হতো না। বলা হতো, মন্ত্রিসভা যেটা অনুমোদন করেছে সেটাই চূড়ান্ত। তা কিন্তু বলা হয়নি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, শিক্ষকেরা কিন্তু এখনো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। সবার মতো তাঁদেরও বেতন বা অন্য সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। গ্রেড পরিবর্তন বন্ধ হওয়া বা মর্যাদা অবনমন হওয়ার কারণে তাঁরা আর্থিকভাবে এখনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এমনটি নয়। আর পৃথক বেতন স্কেল না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান সব সুবিধাই তাঁরা পেতে থাকবেন। কিন্তু এসব বিষয় চট করে সমাধান করা যায় না। এ জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে।
প্রথম আলো: বিসিএস (শিক্ষা) শিক্ষকেরা এরই মধ্যে কয়েক দিন ধর্মঘট করেছেন, আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁদের বিষয়টি নিয়ে সরকারের ভাবনা কী?
নুরুল ইসলাম: বিসিএস শিক্ষকেরা আনুষ্ঠানিকভাবে দাবিদাওয়া পেশ করার আগেই ধর্মঘট করলেন। ট্রেড ইউনিয়নও কিন্তু ধর্মঘটের আগে সরকারকে সময় বেঁধে দেয়। কিন্তু সরকারি শিক্ষকেরা ধর্মঘট করার আগে আমরা ভালোভাবে তাঁদের দাবিদাওয়া জানতে পারলাম না। পরে অবশ্য খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল না থাকায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা এ বিষয়টি নিয়েও মন্ত্রিসভা কমিটিতে আলোচনা করব।
প্রথম আলো: শিক্ষার অন্য স্তরের দাবিদাওয়াগুলোর কী হবে?
নুরুল ইসলাম: বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরাও গত জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো জাতীয় বেতন স্কেলে বেতন পাবেন। তাঁদের মধ্যে এখন আর অসন্তুষ্টি নেই। প্রাথমিক শিক্ষকদের বিষয়গুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখবে। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড না থাকায় সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের যে সমস্যা হবে, তা নিয়েও পর্যালোচনা হচ্ছে।
প্রথম আলো: শিক্ষকদের প্রতি আপনার শেষ কথা কী?
নুরুল ইসলাম: শিক্ষা পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে শিক্ষকদের বলব, আমাদের কাজ করার সুযোগ দিন। আপনাদের দাবি পূরণে আমাদের সহযোগিতা করুন, পরামর্শ দিন। আমরাও চেষ্টা করছি, করে যাব। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যান।
Sunday, September 27, 2015
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment