Wednesday, September 9, 2015

ভাবমূর্তি ও আত্মমর্যাদা

Mahmudul Hasan Raju


সমালোচনা করা সহজ, সহ্য করা কঠিন। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিই আমার মত অর্বাচীন কারো সমালোচনা করার সাহস করছি বলে। বিগত কয়েকদিনে আমার অনেক সহকর্মী ও বন্ধুদের ফেসবুকীয় গরমে-গরম, নরমে-গরম ইত্যাকার স্ট্যাটাস দেখে দুরুদুরু বুকে কিছু লিখার প্রয়াস পাচ্ছিলাম। আজ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের বাণী শুনে ভাবলাম কিছু লিখি।
বর্তমান মন্ত্রী সভায় যে কয়জন মন্ত্রী স্বমেধায় ও যোগ্যতায় তাঁদের অতীত কর্মের জন্য জন নন্দিত ও ঈর্ষনীয় মেধাবী বলে পরিচিত ছিলেন তাঁদের অগ্রজ জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত। একাধারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের তুখোড় ছাত্র,পরে অক্সফোর্ড ও হার্ভাডে সে মেধার আরও নিদর্শন রাখেন। তিনি নিজে অতি মেধাবী বলে অনেক সময় অন্যের মেধাকে অবমূল্যায়ন করার একটা প্রবনতা থাকতেই পারে। তবে এ কথাওতো অকাট্ট যে, তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখে আজ আবুল মাল হয়েছেন সেখানে তাঁর সমান বা চাইতেও অনেক বড় বড় মাল (মেধাবী) সৃষ্টি হয়েছেন যুগে যুগে, এখনো আছেন বহাল তবিয়তে। এক্ষেত্রে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পিছিয়ে নেই। তাই কাওকে হেয় করে নিজেকে বড় করার হীন মানসে যদি তিনি এটা বলেন তবে তা 'দুঃখজনক ও অপ্রয়োজনীয়'। তাঁর মত দায়িত্বশীল পদে আসীন কেও নিশ্চয় নিজ পদের জন্য বোঝা (রাবিশ, বোগাস) হবেন না, যদিও নিকট অতীতে অনেক অনাহূত বক্তব্যে তাঁর স্যাডিস্ট মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

ইদানিং রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসনে আসীন কিছু (খুবই নগন্য সংখক) নবীন কর্মকর্তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর বিরূপ মনোভাবের প্রকাশ দেখছি। আমি প্রথমেই আমার অবস্থান পরিষ্কার করি, আমরা প্রতেকেই রাষ্ট্রের সহযোগী অনুষংগ। কেও কারো মনিব নই, প্রতিদ্বন্দ্বী নই। কারো উন্নতিতে কারো কমতির সুযোগ নেই বরং পিছিয়ে পড়লে সামগ্রিকের অগ্রগমন ব্যাহত হবে। আমরা স্বীকার করেতে বাধ্য জনাব মুহিতের ন্যায় বহু প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান অধিকারী প্রশাসনে কর্মরত। কিন্তু এটা ভুল্লে চলবেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীর নূন্যতম যোগ্যতাই চারটি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান নতুবা এস এস সি এবং এইস এস সি দুটোতেই ৪.২৫ নূন্যতম আর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে দুটোতেই ৩.৬ নূন্যতম। কেও হয়ত বলবেন ওইখানে অমুক এর ব্যাতিক্রম। আমি মানছি ব্যাতিক্রম আছে। প্রশাসনে কর্মরত যেমন প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান অধিকারী ব্যাতিক্রম আছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়েও দ্বিতীয় স্থান পাওয়া ব্যাতিক্রম আছে। সে ব্যাতিক্রম নোংরা রাজনীতির সৃষ্টি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। আর ব্যাতিক্রমতো নিশ্চয় উদাহরন নয়, কোন জায়গায়ই।


আমার এক বন্ধু বললো তোরাতো ১২ বছরেই প্রফেসর হয়ে যাস!! কি দুর্নিতি ! ! ! আরে আমি কোন হরিপদ যে বার বছরে প্রফেসর হব ! একটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত জার্নালের অভাবে আমার অনেক বন্ধু সহকারী অধ্যাপকই হতে পারে নাই সাড়ে চার বছরে, অধ্যাপকতো কোন গ্রহে। দূর থেকে সকল গ্রামকেই সবুজ লাগে। কাছে গেলেই বুঝা যায় কত বালি। অন্তত হলপ করে বলতে পারি পি এইস ডি ও প্রয়োজনীয় সংখক প্রকাশনা ছাড়া ২৫ বছরেও কেও একটা প্রমোশন পাবেনা। যা অন্য কোন চাকুরীতে এত কঠিন শর্ত নেই, যেখানে অন্তত একটা টাইম প্রমোশন থাকে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী, প্রফেসর বানানোর কল বসিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, এ অনাচার বন্ধ করে দিন ! ! ! আমার মত কোন এক নাবালক বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আনপ্রোডাক্টিভ ! ! ! এরা বেকার গ্রাজুয়েট তৈরি করে ! ! ! তাহলেতো বলতেই হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই বন্ধ করে দিন । রোগ রোগী সব শেষ। কি হবে এই মিথ্যা ভাবমূর্তি ও আত্মমর্যাদা দিয়ে।

মাহমুদুল হাসান রাজু
শিক্ষক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

0 comments:

Post a Comment