Kamrul Hassan
উন্নতি সেখানে জ্ঞান যেখানে আর জ্ঞান সেখানে জ্ঞানী যেখানে। আবার জ্ঞানী তৈরী হয় সেখানে জ্ঞানীর কদর যেখানে। ইতিহাস তারই সাক্ষী দেয়। আমরা যদি সময়ের অক্ষ ধরে হাটি তাহলে এই কালকে নানা civilization-এ ভাগ করা যায় যেমন Incas civilization, Aztecs civilization, Roman civilization, Persian civilization, Greek civilization ইত্যাদি। এই প্রাচীন civilization-গুলোর মধ্যে Greek civilization সর্বাধিক কাল বেপিয়া ছিল এবং ইতিহাসে সবচেয়ে আলোকিত কাল ছিল। প্রাচীন এই গ্রীকরাই প্রথম অলিম্পিকের ধারণা, গণতন্ত্রের এবং সেনেটের ধারণা জন্ম দিয়েছিল। এই সময়ই বিজ্ঞানের অনেকগুলো শাখার জন্ম এবং বিস্তৃতি লাভ করে যেমন তারাই প্রথম আধুনিক জ্যামিতি, জীববিজ্ঞান, গণিত, পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা সৃষ্টি করে। এই যে গ্রিক civilization এত প্রসিদ্ধ সেটা কাদের জন্য? এটা কি তখনকার আমলাদের জন্য? নাকি একঝাক শিক্ষক গবেষকের জন্য? ইতিহাস পড়লেই পাওয়া যাবে যাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে তারা হলেন Pythagoras, Archimedes, Socrates, Euclid, Plato, Aristotle, Alexander the great প্রমুখ।
Civilization এটা কোন স্ট্যাটিক জিনিস না বরং এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তরিত হয়েছে অর্থাত এটা একটা ডাইনামিক বা চলমান quantity। এটা চলার গতিপথ নির্ণয় হয় একটা দেশে শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রসার কেমন হয়েছে তার মাধ্যমে। আর শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রসারের মূলে রয়েছে শিক্ষক এবং গবেষক। বর্তমানে পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রভাশালী দেশের সাথে তার জ্ঞানের অবস্থানের একটা নিবির সম্পর্ক রয়েছে। নিকট অতীতে জার্মানি তথা ইউরোপ ছিল জ্ঞান বিজ্ঞানে সবচেয়ে প্রভাবশালী। কারণ আধুনিক সেরা বিজ্ঞানী যেমন আইনস্টাইন থেকে শুরু করে স্টেফান হকিং পর্যন্ত প্রায় সবাই ইউরোপিয়ান। এসবের পেছনে ছিল কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর সেন্টার অফ গ্রাভিটি শিফট হয় আমেরিকার দিকে। তার পেছনেও ছিল ওখানকার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এই সেন্টার অফ গ্রাভিটি আবার এশিয়া অর্থাত চীন-জাপান-ভারতের দিকে শিফট হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এবং এর মূলেও রয়েছে এইদেশগুলোর কিছু বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়। আবার জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে অর্থনৈতিক উন্নতিরও নিবির সম্পর্ক আছে। বড় পর্দায় দেখলে দেখা যাবে জ্ঞান তৈরীর কারখানা অর্থাত বিশ্ববিদ্যালয়ই হলো সত্যিকারের উন্নতির চালিকা শক্তি।
এখন দেখা যাক আমাদের দেশে কি ঘটছে? এখানে শিক্ষা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে দিন দিন বরাদ্দ কমছে। অর্থাত জ্ঞান তৈরির কারখানাগুলো রুগ্ন শিল্পের মত রুগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলে আমাদের শিক্ষকদের বেতন কেন বাড়াতে হবে? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং-এ কোন সম্মানজনক অবস্থানে আছে? প্রশ্ন তুলে আমাদের শিক্ষকরা কি গবেষণা করে? এখন ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং-এ নেই আর শিক্ষকরা গবেষণা করে না এই অজুহাতে কি বরাদ্দ কমিয়ে দিযে টাকা সাশ্রয় করব? তাতে কি আমদের উন্নতি হবে? আরে, এই সবকিছুর জন্যই তো বরাদ্দ অনেক অনেক বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে হবে। একটা ভিশন নিয়ে আগাতে হবে তবেইতো আমরা উন্নতি করব। শিক্ষা এবং শিক্ষককে অবমূল্যায়ন করে কখনো কোন জাতি উন্নতি করে নি ভবিষ্যতে কখনো করতে পারবেও না। এটা যত দ্রুত আমাদের সরকার বুঝবে তত দ্রুত আমাদের উন্নতি হবে। নচেত উফফফফফ ওটা ভাবতেই পারছি না।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 comments:
Post a Comment