Saturday, September 19, 2015

মেধাবীরা কি আর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখবেন?

Fazlul Karim

জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে আমি কিছুটা অস্থির প্রকৃতির। আমি কখনই শিক্ষক হতে চাইনি। এরকম একটি একগুয়েমি পেশাকে আমার জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহন করবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। অথচ আমি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভাগ্যের চাকা ঘুরে এ পেশায় আসিনি। এক সময় মনে হল জীবনকে উপভোগ করতে হলে এমন একটি পেশা খুঁজতে হবে যেখানে আমি আমার মত সব করতে পারব সততার সাথে। তখন মনে হল বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক হলেই ভাল। সম্মান প্লাস স্বাধীনতা দুটোই পাব।

সম্মান নিয়ে যখন কথা বলতে শুরু করলাম তখন মনে হল বাংলাদেশ কি এ পেশাকে একটি সম্মানের জায়গায় রাখতে পেরেছে? বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকদের রাষ্ট্র কি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করছে? তারা আসলে কি ভাবছে এ উচ্চ শিক্ষিত এবং এলিট সমাজের মানুষগুলোকে নিয়ে?


এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে খুব বেশী গবেষণা করার প্রয়োজন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আজ সম্মান উদ্ধারের জন্য লড়তে হচ্ছে। আমার ধারনা এ পেশায় যারা এসেছেন তাঁরা কেউ টাকার জন্য আসেননি। একটি বনেদী সম্মানের জন্যেই বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা ছাত্রগুলো এ পেশায় আসেন। কারন তারা জানতেন টাকা থাকুক আর না থাকুক তাদের জায়গা ১ নং পজিশনে।

এই ১ নং পজিশন কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র আসলে কি ধরনের সিগন্যাল দিল আমার মাথায় আসে না। একমাত্র ১ নং দক্ষ লোকই কি নতুন সম্ভানাময়ী আগামীর ১নং মানব সম্পদ তৈরী করে না? নাকি এখন আর তাদের দরকার নেই। কারন এর পর থেকে কোন সেরা ছাত্রের আর বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থাকবে না। কোন মতে পাশ করা কোন জায়গায় চাকুরী না পাওয়া মানুষগুলো এ পেশায় আসবেন। তারা কি তৈরী করবেন? দক্ষ শ্রমিকই ভাল মানের প্রোডাক্ট তৈরী করতে পারেন। তার মানে আমাদের আর ভাল মানের প্রোডাক্ট এর দরকার নেই? মনে হয় দরকার নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কে একটি সাধারন মানের স্কুল করতে আজ বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকদের অপমানিত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকদের অসম্মানের মত যে মহা ধ্বংসাত্বক পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে তা দেশকে কখনই সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেনা। এটা বুঝার মত জ্ঞানী একটি লোকই কি আমাদের সরকারে নেই?

বোধ হয় জ্ঞানী লোক খুব বেশী নেই। নিচের দিক থেকে নেওয়া যে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হচ্ছে দেখা গেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু অসতর্ক হলেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থর্ীদের উপর আরোপিত VAT নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা তার বড় প্রমাণ। শেষ পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তবে জল অনেক ঘোলা করে।

তবে কি আমাদেরও বেসরকারী শিক্ষার্থীদের মত একই পথে হাঁটতে হবে? পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে আমাদের তাই করতে হবে। কারন আমাদের ভদ্র অসন্তোষ বুঝার মত লোক আসলেই সরকারে নেই। যদি থাকত আমাদের গত ৪ মাসের আন্দোলনে সরকারের টনক নড়ত।

আসলে সরকারে তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাইরে চিন্তা করবার মত খুব বেশী লোক নেই। সবাই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। তাই আবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচাতে পারে। আশা করছি আর কেউ না বুঝলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাস্তবতা উপলব্ধি করে সঠিক সিদ্বান্ত গ্রহন করবেন।

ড: মো: ফজলুল করিম
সহকারী অধ্যাপক, কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান


0 comments:

Post a Comment