Wednesday, September 16, 2015

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে চাই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা, চাই শিক্ষকের যথাযথ মর্যাদা

Kamrul Hassan

পৃথিবীতে এমন কোন উদাহরণ আছে যে, একটা দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হয়েছে একটা বিশ্ব মানের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া? চীন, ভারত ইত্যাদি দেশ উন্নত হচ্ছে কারণ ওখানে আগে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে তারপর দেশ এগিয়েছে। এটা আমাদের নতুন করে গবেষণা করে বুঝতে হবে না। চোখ কান খোলা রেখে পৃথিবীর ইতিহাস পড়লেই বোঝা যাবে। একটা দেশকে এগিয়ে নেয় সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষ আর সেই মানুষ তৈরির কারখানা হলো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। এই কারখানাগুলোকে দুর্বল, রুগ্ন রাখলে ওখান থেকে প্রোডাক্টও সেই রকম রুগ্ন আর দুর্বল হবে। আমরা কিন্তু আমাদের আমলাদের কথা বার্তা বা চিন্তা ভাবনা শুনলে তারই প্রমান পাই কারণ তারাতো এই রুগ্ন কারখানারই প্রোডাক্ট। শিক্ষা একটা ফিড ব্যাক সার্কিটের মত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো প্রোডাক্ট তৈরী হবে, তারা আবার আরো ভালো প্রোডাক্ট তৈরিতে সাহায্য করবে।
আমার মনে হয় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কি এবং কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়ে অনেকেরই পরিস্কার ধারণা নেই। "বিশ্ববিদ্যালয়" এই শব্দটির মধ্যে "বিশ্ব" থাকায় এর একটা বিশ্বজনীনতা আছে। অর্থাত বিশ্ববিদ্যালয় বললে আমাদের (যারা বিশ্ববিদ্যালয় কি জানে) মানসপটে যে চিত্র ভেসে উঠে তার সাথে বাংলাদেশের কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় যায়? বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হলো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মত যেখানে নানান দেশের, নানান বর্ণের, নানান ধর্মের মানুষ থাকবে? আমাদের কি তা আছে? অর্থাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হবে শহরের মধ্যে সত্যিকারের কসমোপলিটান জায়গা। এখানে এমন একটা পরিবেশ বিরাজ করবে যেখানে ছেলেমেয়েরা পড়াশুনার বাহিরের আরো অনেক কিছু শিক্ষার সুযোগ থাকবে।

অনেকেই বলেন শিক্ষকদের বেতন বা সম্মান বাড়াব কেন? তারা কি ঠিকমত ক্লাসে পড়ায়, গবেষণা করে? তারা করে রাজনীতি, তারা করে consultancy, তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে করে খন্ডকালীন শিক্ষকতা। আরে মুর্খ গবেট এই জন্যইতো শিক্ষকদের মান এবং সম্মানী বাড়াতে হবে যেন তাদের ওসব করতে না হয়। যেই আমলারা এসব বলে তারা বেতনের বাহিরেও সরকারের নানারকম সুবিধা নেয় যেমন গাড়ী, গাড়ী বাবদ মাসিক ন্যুনতম ৪৫০০০ টাকা, বাসা ইত্যাদি। তাছাড়া বেতনের বাহিরেও আমাদের অর্থমন্ত্রীর ভাষায় "স্পিড মানি" নিয়ে নিজেদের বেতন নিজেরা বানিয়ে নেন।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে না আছে বিদেশী ছাত্রছাত্রী না আছে বিদেশী faculty বা শিক্ষক এবং গবেষক। বিদেশী শিক্ষকতো বহু দুরের কথা নিজ দেশেরই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে শিক্ষক হিসাবে নেইনা বললেই চলে। আমাদের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞাপনে লিখে দেই "বাংলাদেশী নাগরিক" হতে হবে। অর্থাত বিদেশী কেউ দরখাস্ত করতে চাইলেও করার পথ আমরা রুদ্ধ করে ফেলেছি। আমাদের বেদেশী ছাত্র নেই, বিদেশী গবেষক নেই, বিদেশী শিক্ষক নেই তো সেই ক্যাম্পাসতো আর কসমোপলিটান হলো না।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হলো একটা মনোরম পরিবেশ। চারিদিকে সবুজ গাছপালা, বাগান, লন, সুন্দর রাস্তা, মনোরম ছাত্রাবাস, লাইব্রেরি ইত্যাদি সব মিলিয়ে হয় বিশ্ববিদ্যালয়। মানুষ তৈরির এই কারখানাগুলো যতদিন না সত্যিকারের বিশ্বজনীন কারখানা হবে ততদিন এই দেশের উন্নতি সুদুরপরাহত। আমাদের মূলেই সমস্যা। কারখানার মূল যোগানদাতা হলো প্রাইমারি শিক্ষা। অথচ এই শিক্ষা এবং শিক্ষকদের কি দুরবস্থা!! কিছুদিন আগে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এদের দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা হিসাবে উন্নীত করা হয়েছিল। ঠিক তার কিছুদিন পরই আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আগের প্রজ্ঞাপন withdraw করা হয়। এর মাধ্যমে আমরা কি মেসেজ দিলাম? আমরা কি ওই শিক্ষকদের আরো frustrated করলাম না? আর উনাদের বেতনের কথা এবং উনাদের পাওয়ার গল্প যত কম বলা হয় ততই মঙ্গল।

আমরা উন্নত দেশ হব কিভাবে? শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট শুধুই আফগানিস্থানের সাথে তুলনা করা যায়।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

1 comments:

  1. Foreigners will not join any BD university as faculty members. What they earn in one day, you cannot give in one month.

    ReplyDelete