Sunday, September 13, 2015

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে


শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল ও গ্রেড-সমস্যা নিরসনের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন আরও জোরদার হচ্ছে। কর্মবিরতি চলার মধ্যেই গতকাল রোববার শিক্ষকেরা সংবাদ সম্মেলন করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ থেকে প্রকাশ্যে আলোচনার উদ্যোগের কথা শোনা না পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন থেকে এক ইঞ্চিও সরে আসবেন না বলে জানিয়েছেন।
অথচ শিক্ষকদের বেতন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিসভা যে কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে, তার আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী। বেতনবৈষম্য দূরীকরণ-সংক্রান্ত এই মন্ত্রিসভা কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন তথ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। আর এতে সাচিবিক সহায়তাকারী হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসনসচিব, অর্থসচিব ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা। তবে গতকাল পর্যন্ত এই কমিটি বসতে পারেনি। কমিটির দুই সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিদেশে অবস্থান করছেন।
এদিকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহালের দাবিতে ডাকা আজ সোমবারের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতির জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বেতনবৈষম্য নিরসন কমিটির প্রধান। কিন্তু তাঁর সঙ্গে শিক্ষকেরা বসবেন না।
কারণ তিনি থাকলে শিক্ষকেরা ন্যায়বিচার পাবেন না। এ জন্য কমিটি পুনর্গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি উদ্যোগ না নিলে আলোচনা শুরু হবে না। প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে “পাবলিকলি” শুনতে চাই। না হয় আন্দোলন থেকে এক ইঞ্চিও সরব না।’ অর্থমন্ত্রীকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফেডারেশনের মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে বয়স্ক অর্থমন্ত্রী দেশের উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করা এবং শিক্ষাঙ্গনকে অশান্ত করার নীলনকশা বাস্তবায়নে নেমেছেন। আমরা অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি, যেখানে শিক্ষকেরা তাঁদের ন্যায়সংগত অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।’
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনার জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মাকসুদ কামাল। তবে পূর্বঘোষিত ১৭ সেপ্টেম্বরের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। আর বাস্তবমুখী ও গঠনমূলক পদক্ষেপ না নিলে ঈদের পরে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
কর্মবিরতি: পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। এর ফলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হয়নি। তবে পরীক্ষা হয়েছে। কর্মবিরতির পাশাপাশি নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকেরা কোনো শ্রেণিকক্ষে যাননি। শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের একটি অবস্থান ছিল, সেখান থেকে আরও নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘খোঁচানো’ ঠিক না।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, ‘৩৮ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় বলছি, দাবি পূরণ না হলে সর্বক্ষেত্রে অশান্তি বিরাজ করবে।’ তিনি বলেন, সপ্তম বেতনকাঠামোর মতো পদ ও মর্যাদা বহাল রাখলেই সমস্যার সমাধান হবে। কারণ অষ্টম বেতনকাঠামোর বাকি বিষয় ভালো হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতির জন্য কোনো ক্লাস হয়নি। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অবস্থান করেন শিক্ষকেরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কর্মবিরতির পাশাপাশি সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের পাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলন জটিল হতে থাকলেও গতকাল পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনার উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। এ বিষয়ে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, শিক্ষামন্ত্রী দেশে ফিরলে করণীয় ঠিক করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, শিক্ষামন্ত্রীর ১৮ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার কথা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানও এই মুহূর্তে বিদেশে আছেন।
মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার: গতকাল বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুনের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। দেশের ৩৩২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আজ এই কর্মসূচি পালনের কথা ছিল।
সমিতির সভাপতি ইনছান আলী প্রথম আলোকে বলেন, মহাপরিচালক তাঁদের ডেকেছিলেন। তিনি বলেছেন, এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাসচিবের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলবেন। এ জন্য মহাপরিচালক কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন।
অষ্টম বেতনকাঠামোয় সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিলের প্রতিবাদে সমিতি গত শুক্রবার এই কর্মসূচির ঘোষণা করেছিল।
কলেজশিক্ষকদের কর্মসূচি বহাল: ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিলেকশন গ্রেড বহালে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে দ্বিতীয়বারের মতো ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর কর্মবিরতি পালন করবেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। দেশে এখন ৩০৫টি কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ জন্য কর্মসূচি বহাল রয়েছে।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরা)

Published in: http://goo.gl/z7Pzrd




0 comments:

Post a Comment