শিক্ষকের অবনমন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সব পর্যায়েই শিক্ষকদের অবনমন করা হয়েছে আর এই অবনমন এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এক শ্রেণীর জ্ঞানী লোক যারা আমলা কেন্দ্রিক মানসিকতার ধারক ও বাহক তারা এমন এক গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন যেখানে অদূরভবিষ্যতে দরিদ্র ছাত্রদের মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থাকবে না। কিন্তু কিভাবে?
এই জ্ঞানী লোকেরা ইচ্ছে করেই শিক্ষকদের অবনমনের মতন বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন যাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকরা অপমানিত হয়ে এমন কোন কর্মসূচীতে যান যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যায় দীর্ঘদিনের জন্য। আর যদি খোলা রাখা হয় তাহলে মানসম্মত শিক্ষকগণ যেন অপমান সইতে না পেরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী ত্যাগ করে সেখানে আমলাদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেন। আর যদি কোন আন্দোলন নাও হয় কিংবা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার যদি নীরব ভুমিকা পালন করেন তাহলে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় নয়, স্কুল কলেজের শিক্ষকদেরকেও সমাজের কোথাও আর কোন দিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেখা যাবে না।
দীর্ঘদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে পারলেই অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার তাদের সন্তানদের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিবেন। প্রশ্ন থেকেই যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানে শিক্ষকদের সম্মানের আসনে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসনের মতন বিষয় সামনে নিয়ে এসেছিলেন সেখানে তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কেনই বা শিক্ষকদের অবনমনের মতন বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন? উত্তর একটিই হতে পারে, হয়তঃ আত্ন-বিশ্বাসের অভাব, তারা মনে করছেন আমলারাই সরকারকে চিরদিন ক্ষমতায় বসিয়ে রাখবে।
এক শ্রেণীর অর্ধ শিক্ষিত ব্যক্তিদের বলতে শুনেছি শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবনমন করা হয়েছে এবং এটি ভালই হয়েছে কারণ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষকদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখা যায়নি। এইসব মূর্খরা বর্তমান ইস্যুকে পাস কাটিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন, কারণ শিক্ষকরা সব সময়ই শিক্ষকদের পাশে ছিলেন যা পত্র-পত্রিকায় তাদের লেখনি দেখলেই বুঝা যাবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এই মূর্খ লোকগুলো কি এক বারের জন্যও পড়াশুনা করে দেখবে না যে স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকদেরকেও এই পে স্কেলে অবনমন করা হয়েছে? তাদের অবস্থান আগে কোথায় ছিল আর এখন কোথায়? অবশ্য কিছু লোকের স্বভাবই হচ্ছে না বুঝে, পড়াশুনা না করেই মন্তব্য করা। মূর্খরা না বুঝলেও শিক্ষকরা ঠিকই বুঝেছেন আর বুঝেছেন বলেই তারাও এখন আন্দোলনে।
শিক্ষকের সম্মান কখনো শুধুমাত্র কদমবুচিতে থাকতে পারে না, প্রকৃত সম্মান রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে তাদের অবস্থান কোথায় তা নিশ্চিতের মাধ্যমেই দেখানো সম্ভব। তাই সবাইকে শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে পাশে চাই, শিক্ষকদের সম্মান পুনঃউদ্ধারে গঠনমূলক আলোচনা ও ভূমিকা চাই, সরকারের ভিতরে এবং বাইরে থাকা শিক্ষানুরাগী যারা ইতিমধ্যেই সোচ্চার হয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
শিক্ষায় ভ্যাট:
যদি প্রশ্ন করি শিক্ষাখাতের ৭.৫% ভ্যাট আদায় না করলে কি এমন অসুবিধা হবে? আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ইগো চালিত কতিপয় আমলা এবং আমলা সদৃশ কতিপয় মন্ত্রী ছাড়া আর সবাই এক কথায় বলবে কোন অসুবিধা নেই। তাহলে আমলা এবং কতিপয় মন্ত্রী কেন এই ভ্যাট নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চান? কেউ কেউ বলছেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হতে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ পূর্বের ন্যায় বাংলাদেশী ছাত্র পাচ্ছে না, আর এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তাদের যারা প্রতিনিধি তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন আমার দেশে কম খরচে উচ্চ শিক্ষার সুযোগের বিষয়টি। এই ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ফিতে অনেকটা তেল ঢেলে দেওয়া হল যাতে ছাত্র এবং অভিভাবকরা ভাবতে শুরু করেন আবারো পার্শ্ববর্তী দেশ নিয়ে। এই কথার প্রমাণ পাওয়া যায় অতি সাম্প্রতিক কালে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক ভর্তি কার্যক্রম যা মূলতঃ বিগত দশ বছরে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। জাতি হিসাবে এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষার সুযোগ শুধু বাড়াতেই হবে, কোন অবস্থাতেই কমানো নয়। তাই শিক্ষার্থীদের দাবীর সাথে এক মত হয়ে বলছি শিক্ষার উপর ভ্যাট নয়।
লেখক: তানভীর এম এইচ আরিফ,
সহযোগী অধ্যাপক এবং সিন্ডিকেট সদস্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব)
published in: http://dhakarnews.com/index.php/mukto/item/34921-2015-09-13-14-10-10
0 comments:
Post a Comment