Wednesday, September 16, 2015

অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বেই 'বেতন বৈষম্য দূরীকরণ' কমিটি- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা মানবে না

সাবি্বর নেওয়াজ ও শরীফুল ইসলাম

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আহ্বায়ক করে 'বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি' পুনর্গঠন করায় তা ফের প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সদ্য ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, আপত্তি, পরামর্শ আমলে নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করে গতকাল বুধবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু এ কমিটিকেও মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর সমন্বিত জোট 'বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন' এর আগে অর্থমন্ত্র্পীর এক মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে এই বৈষম্য দূরীকরণ কমিটি থেকে তাকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। তবে বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে কমিটির আহ্বায়ক পদে অর্থমন্ত্রীকেই বহাল রাখা হয়েছে। ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সমকালকে গতকাল জানান, তিনি (অর্থমন্ত্রী) ইতিমধ্যেই শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন। শিক্ষকদের নিয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ বক্তব্য দিয়ে নিজেকে বিতর্কিত করেছেন। তার নেতৃত্বাধীন কোনো কমিটি শিক্ষকরা মানবেন না। তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার আবারও দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন করে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা।

বেতন-ভাতা ও মর্যাদার প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা গত জুন থেকেই আন্দোলন করছেন। নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর তা আরও তীব্র হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পাশাপাশি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি কলেজশিক্ষক, মাধ্যমিক শিক্ষক, এমনকি প্রাথমিক শিক্ষকরাও রয়েছেন আন্দোলনে। সরকারি কর্মচারীদের একটি অংশও টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সরকারি সূত্রগুলো জানায়, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকরা আন্দোলনে নামায় সরকার এটি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে। এ জন্যই এ কমিটি পুনর্গঠন করা হলো।
গতকাল বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত পুনর্গঠিত এই মন্ত্রিসভা কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিব বা ভারপ্রাপ্ত সচিব এ কমিটিকে সহায়তা করবেন। আর অর্থ বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে 'অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো' পর্যালোচনা এবং বেতন স্কেলের বিষয়ে বৈষম্যের অভিযোগগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে এই কমিটিকে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিটির বৈঠক প্রয়োজন অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে। বেতন বৈষম্য দূর করতে ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল গঠিত আগের মন্ত্রিসভা কমিটি বাতিল করা হলো।
এর আগে অর্থমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল সরকার যে 'বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি' গঠন করেছিল, তাতে তথ্য ও শিক্ষামন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে সদস্য করা হয়েছিল। এবার এ কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। নতুন করে যোগ হয়েছেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সমকালকে বলেন, নতুন বেতন কাঠামো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর পরও এ নিয়ে নানা ধরনের আপত্তি পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিবেচনা করতেই এ কমিটি। কমিটি পর্যালোচনা করবে, বেতন নিয়ে যেসব আপত্তি ও দাবি আসছে, তা কতটুকু যৌক্তিক। এর পরই সুপারিশ করা হবে। তিনি জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর অক্টোবরের মাঝামাঝি এ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা গতকাল সমকালকে বলেন, বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটি সব সময়ই ছিল। এখন শুধু এটাকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। বেতন স্কেল ঘোষণার দুই বছর পরও যদি কোনো সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে, সেটাকেও এ কমিটি বিবেচনায় নেবে। কমিটির কার্যপরিধি বিষয়ে তিনি বলেন, কোনটি বৈষম্য, কোনটি নয় তা নির্ধারণ করা ওই কমিটির এখতিয়ার। তারাই নির্ধারণ করবেন, পে স্কেলের কোন বিষয়গুলো পর্যালোচনা প্রয়োজন। কেউ দাবি করলেই কমিটি সেটা বিবেচনায় নেবে না। কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে আর সেটি অনুমোদন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, জনসমক্ষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে তাদের দাবি মেটানোর বিষয়ে ঘোষণা শুনতে চান। তা ছাড়া এক ইঞ্চিও আন্দোলন থেকে নড়বেন না তারা। চলমান আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে আরও কঠোর করা হবে।
যেভাবে বেতন বৈষম্য :সপ্তম বেতন কাঠামোয় বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সচিব, সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে মেজর জেনারেল এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপকরা প্রশাসনের সচিবের সমান গ্রেড-১ স্কেলে বেতন পেতেন। আর জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা গ্রেড-২ এবং অধ্যাপকরা গ্রেড-৩ পেতেন।
অষ্টম বেতন কাঠামোতে 'সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক' পদটি বিলুপ্ত করে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের সচিবদের সমান গ্রেড-১ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য নতুন একটি বিশেষ গ্রেড তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া টাইম স্কেল নিয়েও শিক্ষকদের রয়েছে অসন্তুষ্টি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, আমলারা নিজেদের জন্য বিশেষ গ্রেড তৈরি করলেও শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ফলে অধ্যাপকরা আমলাদের নিচের স্কেলে থাকছেন।
এ অবস্থায় বেতন বৈষম্য দূর, মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া, স্বতন্ত্র বেতন স্কেলসহ চার দফা দাবিতে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল সমকালকে বলেন, 'নতুন বেতন কাঠামোতে সিনিয়র অধ্যাপকের পদ অবলুপ্ত করা হয়েছে। শিক্ষকদের গ্রেড-১-এ যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। এতে শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি শিক্ষকদের মৌলিক অধিকারের ওপর হামলা, যা শিক্ষকদের জন্য অমর্যাদাকর।' তিনি জানান, ২২ ধাপবিশিষ্ট নতুন অষ্টম বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের চার ধাপ নিচে নামানো হয়েছে। বর্তমানে যারা সিলেকশন গ্রেডে অধ্যাপক আছেন, তারা গ্রেড-১-এ সচিবদের সমতুল্য বেতন পাবেন ঠিকই, কিন্তু যারা সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপক নন কিংবা নতুনভাবে অধ্যাপক হবেন, তাদের পক্ষে গ্রেড-১-এ যাওয়ার আর সুযোগ থাকল না। সিলেকশন গ্রেড অবলুপ্তির মধ্য দিয়ে অধ্যাপকদের গ্রেড-১-এ যাওয়ার অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হলো। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অধ্যাপকরা আগের মতো সচিবদের সঙ্গে অবস্থান করছেন, সেই গ্রেডের মাসিক বেতন ৭৮ হাজার টাকা। মন্ত্রী কি ব্যাখ্যা করবেন_ যারাভবিষ্যতে অধ্যাপক হবেন, তারা কীভাবে গ্রেড-১-এর বেতন পাবেন? মন্ত্রীর বক্তব্য যদি সঠিক বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় শিক্ষকদের মর্যাদা কোথায় থাকবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নেতা বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বেতন কমিশনের সুপারিশে এ পর্যন্ত সাতটি বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হয়েছে। কোনো বেতন কাঠামোতেই সুপার গ্রেড রাখা হয়নি। দুটি সুপার গ্রেড রাখার মধ্য দিয়ে এই বেতন কাঠামোকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অন্যদের জন্য অবমাননাকর এবং বিতর্কিত করে তোলা হয়েছে_ রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে বিভাজন। প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চার ধাপ অবনমিত হবেন আর সিলেকশন গ্রেড রাখা হলে দুই ধাপ অবনমিত হবেন।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী সমকালকে বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে এ সরকারের অবদান অনেক। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে আলোচনা করেই সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের সম্মান করেন। তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করার উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির ব্যাপারে নিশ্চয়ই তিনি গুরুত্ব দেবেন।
বেতন বৈষম্য স্কুল-কলেজ শিক্ষকদেরও :শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নন, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করায় চরম বেতন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও। আন্দোলন শুরু করেছেন তারাও। সরকারি কলেজে শিক্ষকদের সংগঠন 'বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি'র মহাসচিব আই কে সেলিমউল্লাহ খন্দকার সমকালকে বলেন, সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় তারা আগামী ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর পুনরায় পূর্ণ দিবস কর্মসূচি পালন করবেন। তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি কলেজের অধ্যাপকরা (সর্বোচ্চ পদ) চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। সিলেকশন গ্রেড থাকায় এতদিন আংশিক অধ্যাপক গ্রেড-৩-এ যেতে পারতেন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় এখন এ পথ বন্ধ হয়ে গেল। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গ্রেড-৫ থেকে পদোন্নতি পেয়ে সরাসরি গ্রেড-৩-এ উন্নীত হন। অথচ শিক্ষকদের বেলায় গ্রেড-৫ থেকে পদোন্নতি হওয়ার পর গ্রেড-৪-এ উন্নীত করা হয়। এই বৈষম্য নিরসনেরও দাবি করে আসছেন তারা। কিন্তু সেটা নিরসন না করে উল্টো সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় শিক্ষকরা আরও বৈষম্যের শিকার হবেন। এর প্রতিবাদেই তাদের আন্দোলন। অন্যদিকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও চরম বেতন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ধানমণ্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইনছান আলী। তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইকবাল সমকালকে বলেন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ যে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে, তাতে ওই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলনের মাঠে রয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকরাও। সদ্য ঘোষিত বেতন কাঠামোতে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে পুনর্নির্ধারণ, সরকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বন্ধ করে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করাসহ ১১ দফা দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার তারা প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবেন। দাবি পূরণ না হলে প্রাথমিক শিক্ষকরা এরই মধ্যে নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ব্লক পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বৈষম্যের শিকার :সচিবালয়ের বাইরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বেতন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। সরকারি চাকরির প্রায় সবাই প্রথম চার বছরের মধ্যে সিলেকশন গ্রেড পেতেন। নিচের স্তরের ও ব্লক পদধারীরা (যাদের পদোন্নতির সুযোগ কম বা নেই) ৮, ১২ ও ১৫ বছরের মাথায় তিনটি টাইম স্কেল পেতেন। কিন্তু এখন এই সুবিধা দুটি বাতিল করে প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট গ্রেডে নির্দিষ্ট হারে বেতন বাড়ানোর নিয়ম করা হয়েছে। নতুন এই বেতন কাঠামো অনুযায়ী, নিচের স্তরের কর্মচারী ও ব্লক পদধারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টি যে শুভঙ্করের ফাঁকি, তা হিসাব করে দেখিয়েছেন এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নতুন পে স্কেলের সঙ্গে সিলেকশন গ্রেড থাকলে ১৬ হাজার টাকার (মূল বেতন) চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর চার বছরের মাথায় প্রতিবছর ৯০০ টাকা হারে ইনক্রিমেন্টসহ তার বেতন হতো ২৩ হাজার ৪৮০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, নতুন পে স্কেলে সিলেকশন গ্রেড তুলে দিয়ে ৫ শতাংশ হারে বেতন বাড়ানোর কারণে চার বছর পর তার বেতন দাঁড়াবে ১৯ হাজার ২০০ টাকা। এ কর্মকর্তার দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, নতুন বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড না থাকায় তিনি চার হাজার ২৮০ টাকা কম পাচ্ছেন।
দ্বিতীয় শ্রেণীর এই কর্মকর্তার মতো তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীসহ সব শ্রেণীর ব্লক পদধারী চাকুরেদেরও একই অবস্থা। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ব্লক পদে চাকরি করা ব্লক পদধারীদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হলে নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে কোনো আপত্তি থাকত না। কারণ, বাতিল হওয়া সুবিধা দুটি তাদের মতো পদোন্নতিবঞ্চিতদের সান্ত্বনার সম্বল ছিল।
Published in: http://www.samakal.net/2015/09/17/162672

0 comments:

Post a Comment