মানুষ যদি মানুষ না হয় তখন সেই মানুষের চেয়ে নিকৃষ্ট বর্জ্য পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না। পরিবেশ সবচেয়ে বেশি দুষিত হয় মানুষের মোড়কে মানুষ নামক বর্জ্যে। শিক্ষাই কেবল মানুষকে বর্জ্যে পরিনত হওয়া থেকে শুধু রক্ষাই করে না বরং মানুষকে মানুষ বানায় এবং সেই মানুষ পরিবেশকে অন্যান্য বর্জ্য থেকে মুক্ত রাখতে সহায়ক ভুমিকা রাখে।
গোটা দেশ এখন মানুষ বর্জ্যের ভাগারে পরিনত হয়েছে। এই মানুষকে মানুষে রুপান্তরিত করার স্বীকৃত কারখানা একটাই আর সেটা হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর সেই কারখানার স্বীকৃত কারিগর হলো শিক্ষক। ভালো কারিগর এবং ভালো ভৌতকাঠামো ব্যতিত এই কারখানার কথা ভাবাই যায় না। সারা পৃথিবীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরের চেহারা এবং ভিতরের চেহারা একবার দেখে আসুন। তারপর আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকান দেখবেন তখন এগুলোকে বস্তির সাথেই কেবল তুলনীয় মনে হবে। আমাদের সরকারগুলো এমন কি স্বাধীনতার পরও এর গুরুত্ব বুঝে পর্যাপ্ত ব্যয় কখনো করেনি বরং জিডিপির শতাংশের দিক থেকে বিবেচনা করলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বছরান্তে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এখন বাজেটের পরিমান বছরান্তে বাড়ে ফলে জিডিপির শতাংশে বরাদ্দ কমলেও টাকার পরিমান বা অংক automatic বাড়ে। আর আমাদের সরকারগুলো টাকার অংক বাড়ছে দেখিয়ে বা শুনিয়ে মানুষকে প্রকারন্তরে বোকা বানিয়ে চলছে।
গতকাল শুনলাম ৬,৪০০ কোটি টাকার যুদ্ধবিমান কিনবে বাংলাদেশ। কি সাংঘাতিক কথা! কি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত!! আমরা কি পাগল হয়ে গেলাম নাকি? আমাদেরতো জনসংখ্যা সমস্যাকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করার জন্য যা যা করার দরকার তা করার চেষ্টা করার কথা। কিন্তু আমরা একি করছি? যেই দেশে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়কে বছরে বরাদ্দ দেয় মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা সেই দেশে এত টাকা খরচ করে যুদ্ধবিমান কিনা কি মানায়?? এই টাকা যদি শিক্ষা খাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যয় করা হতো তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে দেশে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যেত। এই বিশ্ব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখত বাংলাদেশকে। উন্নত দেশগুলোতো চাইবেই আমরা আমাদের টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনে, যুদ্দ্বজাহাজ কিনে খরচ করি কারণ এতে তাদের লাভ। আর বলদের ঘরের বলদ। আমরা কিনা এগুলোই করছি? আর তাদের ক্ষতি হবে যদি বেশি বেশি টাকা শিক্ষা খাতে ব্যয় করি। কারণ তখন তারা আর আমাদের বোকা বানাতে পারবে না।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 comments:
Post a Comment