Monday, September 21, 2015

শিক্ষকদের দাবি ও বেতন স্কেল পর্যালোচনা: দুই মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী


চলমান শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন, কলেজ শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে বিশদ জানানো হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এ দুই মন্ত্রীকে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেন। বৈঠক শেষে দুপুরে অর্থমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেড় ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার সভা করেন। আন্দোলনরত শিক্ষকরা এর আগে তাদের দাবির ব্যাপারে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দুই মন্ত্রীকে বেতনবৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আলোচনা করে সমাধানের পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে এ বিষয়ে কোনো কমিশন করা যায় কি না তা-ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেন তিনি। জানা গেছে, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে সরকারের এ দুই মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। নতুন করে এ দুই সুবিধা ফের পুনর্বহাল করা সম্ভব নয় বলেও সেখানে আলোচনা করা হয়। শিক্ষক ছাড়া অন্যরাও একই দাবিতে নতুন করে মাঠে নামতে পারেন বলেও বৈঠকে অভিমত আসে।
তাই বিকল্প কী উপায়ে শিক্ষকদের সন্তুষ্ট করা যায়, তার উপায় খুঁজে বের করতে মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। একাধিক সূত্র জানায়, হঠাৎ করেই একাধিক শিক্ষক সংগঠন আন্দোলনে নেমে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী কিছুটা অসন্তোষও প্রকাশ করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী গত রাতে সমকালকে বলেন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে সরকারের উচ্চ মহলে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী দু'জনের সঙ্গেই তিনি কথা বলেছেন। সামগ্রিকভাবে সরকারের মনোভাব ইতিবাচক। 'আলোচনায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে'- প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ সমাধান হবে। শিক্ষকরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সময়মতো নেন, ঠিকভাবে ক্লাস নেন, সে অনুরোধ জানাচ্ছি।' সরকারি কলেজ শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা আগে কোনোরকম আলোচনা করা ছাড়াই সরাসরি আন্দোলনে গেছেন। তাদের সঙ্গে সরকারের তরফে উদ্যোগী হয়েই আলোচনা করা হবে।
জানা গেছে, ঈদের পর আন্দোলনরত সব শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। এ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে এবং তা অব্যাহত রাখা হবে।
জানা গেছে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের চলমান আন্দোলন গভীর পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। সরকারের দৃষ্টিতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদাকেন্দ্রিক এ আন্দোলনের মূল ইস্যু মূলত দুটি। জাতীয় বেতন স্কেল থেকে 'টাইম স্কেল' ও 'সিলেকশন গ্রেড' বাদ দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের পাশাপাশি পদমর্যাদার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তাদের দাবিতে তুলে ধরেছেন। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের সুবিধা বিকল্প কী উপায়ে দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়েই এখন ভাবছে সরকার।
এক মাস ধরে দেশজুড়ে শিক্ষক আন্দোলন চললেও এতদিন কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছিল, সংকট সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আসন্ন ঈদের পর লাগাতার কর্মবিরতি ও ধর্মঘটেরও ডাক দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন শিক্ষক নেতারা। এ অবস্থায় শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দুটি মন্ত্রণালয় থেকে আলোচনার উদ্যোগের খবর এলো।
শিক্ষক আন্দোলনে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সরব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সমকালকে বলেন, পদমর্যাদার বিষয়ে তারা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল তুলে দিয়ে আমলাদের তুলনায় শিক্ষকদের নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই ক্ষোভ ঝরেছে সরকারি কলেজ শিক্ষক নেতাদের বক্তব্যেও। জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানী খান সমকালকে বলেন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড না থাকলে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্য সব ক্যাডারের সদস্যরা বঞ্চিত হবেন।
Published in: http://www.samakal.net/2015/09/22/163770

0 comments:

Post a Comment