আবুল মাল একজন জ্ঞানী মানুষ। জ্ঞানী মানুষ সেই যিনি নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করেন। গতকাল তিনি তার এক বক্তৃতায় ঘুষের একটা নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন কারো কাজ দ্রুত করে দিলে কেউ যদি তাকে উপহার হিসেবে কিছু দেয় তবে তা অবৈধ নয়। wow!wow!!wow!!! তিনি আরো বলেন, উন্নত দেশে এটার বৈধতা দেওয়া হয়েছে ভিন্ন নামে। তারা এটার নাম দিয়েছে স্পিড মানি। অর্থাৎ যে টাকা কোনো কাজে গতি সঞ্চার করে কেউ যদি কাউকে উপহার হিসেবে কিছু দেয় সেটা ঘুষ নয় সেটা হলো "Speed money"। মনে হয় উনি "Speed" একটু বেশিই পান করে ফেলেছিলেন। আবুল মাল সাহেব বলবেন কি কোন দেশে এটার বৈধতা দিয়েছে?
গতকাল জ্ঞানতীর্থ, জ্ঞানরত্ন, জ্ঞানমবোধি, জ্ঞানচূড়ামণি আবুল মাল আরো বলেছেন শিক্ষকরা নাকি জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছেন। তার কথায় এবং body language clearly reveal করে উনি শিক্ষক সমাজকে কেমন চোখে দেখেন। উনি বললেন শিক্ষকরা নাকি corrupt প্রাকটিস করে। তারা নাকি শুধু অধ্যাপক হতে চায়। হ্যা চাই কিন্তু এর মধ্যে corrupt প্রাকটিসের সম্পর্কটা ঠিক বুঝতে পারিনি। ধরে নিলাম উনি বোঝাতে চেয়েছেন আমরা আমাদের প্রমোসন নীতিমালাকে অযৌক্তিকভাবে শিথিল করে দ্রুত প্রফেসর হয়ে যাচ্ছি। কথাটার পিছনে সত্যতা যে নেই তা কিন্তু না এবং আমি এই বিষয়ে বহুবার লিখেছি। সম্ভবত এই বিষয়ে আমার চেয়ে ভোকাল খুব কম মানুষকেই পাওয়া যাবে। কিন্তু এটাকি শুধু শিক্ষকদের বেলায়ই ঘটেছে? পার্থক্য আছে এক জায়গায়। আমরা আমাদের অনেক নিয়ম নিয়ে কঠিন সমালোচনা করি। কিন্তু কোন আমলা কি তা করে? উনি একসময় আমলা ছিলেন। আমাদের প্রশাসনে যে ভাবে কোন ধরনের নিয়ম নীতি না মেনে ঢালাওভাবে প্রমোসন হচ্ছে উনিতো সেই বিসয়ে একটি কথাও বললেন না। বরং আমলাদের ঘুষ খাওয়াকে বৈধ বললেন, আমলাদের অনৈতিক রাজনীতির সম্পৃক্ত হওয়া এবং আলোর গতিতে প্রমোসন পেয়ে স্বল্প সময়ে সচিব হয়ে যাওয়া নিয়ে উনার কোন বক্তব্যতো নেই।
আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকদের একটি অংশ সচিবদের সমপর্যায়ে ছিলেন। বর্তমান যে স্কেল তৈরী করা হয়েছে তাতে মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং সিনিয়র সচিব নামে দুটো নতুন ধাপ তৈরী করে তাদের ক্রম এবং বেতন শিক্ষকদের জন্য untouchable করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাত উনারা এখন ব্রাহ্মন বা untouchable। দেখা যাবে যারা সিনিয়র সচিব তাদের অনেক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সিনিয়র শিক্ষক। অর্থাত ছাত্র হবে শিক্ষকের উপরে। তাতে কোন সমস্যা নেই। আমরা তো চাই আমাদের ছাত্ররা আমাদের ছাড়িয়ে যাক। প্রশ্ন হলো এই সিনিয়র সচিবদের একাডেমিক ডিগ্রী, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা কোন ক্ষেত্রে কি তাদেরই এক সময়কার সরাসরি শিক্ষকদের ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন? বরং উল্টো হয়েছে। প্রশাসনে যোগ দেওয়ার ফলে অভিজ্ঞতা হয়ত বেড়েছে কিন্তু জ্ঞান খুব কম বেড়েছে। অন্যদিকে শিক্ষকরা অনবরত পড়ছে, পড়াচ্ছে, শিখছে, শিখাচ্ছে আবার জ্ঞান সৃষ্টি করছে এবং তা disseminate করছে। ফলে তারাতো আমাদের ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। শিক্ষা জীবনেও তারা পেছনের সারিতে ছিল আর চাকুরী জীবনেও তারা ওই gap পুরন করতেতো পারেনইনি বরং gap আরো wider হয়েছে। তাহলে কেন এবং কি যুক্তিতে তাদের উপরে তোলা হলো। আবার বলা হলো এখন থেকে প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী, তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেনীর কর্মকর্তা বা কর্মচারী বলতে কিছু থাকবে না। এখন রাষ্ট্রের কর্মচারীরা তাদের গ্রেড দ্বারা ক্লাসিফাইড হবেন। কি চাতুর্জ্যতার সাথে শিক্ষকদের অবমাননা করার চেষ্টা। এখন আমরা তাদের এই দুরভি চাতুরী বুঝে ফেলাতে বলে আমাদের জ্ঞানের অভাব!
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 comments:
Post a Comment