Monday, September 14, 2015

নিরস্ত্র বলেই কি অপমানিত হতে হবে? (দুই কিস্তি একত্রে)

মুনতাসীর মামুন

টেলিভিশন সংবাদে যেদিন সন্ধ্যায় দেখলাম অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রগড়াচ্ছেন, সেদিন গায়ে খানিকটা লেগেছিল কিন্তু আমোদও পেয়েছিলাম। তাঁর বক্তব্যের প্রথম অংশটা থেকে মারাত্মক ছিল দ্বিতীয় অংশটি, যেটিতে তার বিশাল ক্রোধ ফুটে উঠেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রথমটি নিয়ে মেতে উঠেছিলেন, দ্বিতীয়টির কথা প্রায় ভুলে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়টি ভুলে না গেলে যে কী লঙ্কাকা- হতো তা ভাবতেই কাহিল লাগছে। কবে যে শিক্ষকরা স্মার্টফোনের মতো স্মার্ট হবেন! যা হোক, আমোদ লেগেছিল অন্য কারণে। কারণ, তার বক্তব্য অর্থমন্ত্রীর মতো ছিল না। বোঝা যাচ্ছিল তিনি একটি গ্রুপের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলছেন এবং অনেক তথ্য না জেনে। আমাদের সমস্যা হলো আমরা পরের মুখের ঝাল খাই।
এ ঘটনার পর, আমি বিভিন্ন জনবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফোন পেয়েছি। তখন ছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার মতো সেখানেও দেখি প্রধান আলোচ্য এমএ মুহিত। জানা কথা যে, কোথাও তার পক্ষে একটি বাক্যও শুনিনি। কনিষ্ঠরা এই বলে অভিযোগ করেছেন, আপনি কিছু লিখছেন না কেন? সরকারের যে কেউ যা তা বলে পার পেয়ে যাবে! ভাবটা এমন, যেন, আমি লিখলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ও রকম হলে তো প্রধানমন্ত্রী আমাকে তাঁর উপদেষ্টা বানাতেন। তারা আমাকে তাতাতে চাইলেও তখনই কলম নিয়ে বসে পড়িনি। বয়স শিখিয়েছে ধৈর্য ধরতে। আগে, এরকম কিছু শুনলে ঝাঁপিয়ে পড়তাম তৎক্ষণাৎ। যে বয়সের যে ধর্ম। তা’ছাড়া আর কয়েক মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় হবে আমার পুরনো কর্মক্ষেত্র। কে কী বেতন পাবে না পাবে তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা কী? আর বৃদ্ধ বয়সে সরকারের প্রভাবশালীদের কোপে পড়ে লাভ কী? তারপরও কেন লিখছি। প্রশ্ন করতে পারেন। কারণ, চার দশকেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নুন খেয়েছি। আমরা যতই মিরজাফরের কথা বলি না কেন, মিরজাফর খুব বেশি লোক হয় না। নেমকহারাম শব্দটা আমাদের ভাষায়ই আছে। এই অত্যাশ্চর্য শব্দটির উদ্ভব বোধহয় এ কারণে যে, ধরে নেয়া হয় নুন খেলে গুণ গাইতে হয়। কেউ গাইবে না সেটি আশ্চর্যজনক। তাই নেমকহারাম!

নুনের গুণ গাইতে গিয়ে সমাধান হলো সেই প্রশ্নের যে, কেন অর্থমন্ত্রী এত উত্তেজিত হলেন। কারণ, তিনিও নুন খেয়েছেন আরেক প্রতিষ্ঠানের। তিনি মন্ত্রী হন আর যাই হন, তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না। তাদের স্বার্থই তিনি দেখবেন, মন্ত্রী হলেও এবং এটাও স্পষ্ট হলো যে, তিনি এখনও রাজনীতিবিদ হয়ে উঠতে পারেননি। জনপ্রতিনিধি হতে পারেন, রাজনীতিবিদ হননি। আর এ বয়সে তা সম্ভবও নয়। তিনি কি লক্ষ্য করেননি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন নিয়ে আন্দোলনে কোন রাজনীতিবিদ মন্তব্য করেননি। এমনকি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও, যিনি প্রতিদিন কিছু না কিছু বলেন। কারণ, তিনি যে প্রতিষ্ঠান থেকে উঠে এসেছেন তার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশে সেটিই সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান আমলের সেই ধারণাটা রয়ে গেছে হয়ত। এ ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়েছে সরকারের আমলা তোষণ নীতির কারণে। কিন্তু যারা রাজনীতি করেন বা জীবন শুরু করেছেন রাজনীতি দিয়ে তারা জানেন, বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্নিহিত শক্তি কী। সরকার হয়ত দেখছে, গুটিকয় শিক্ষক ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে থাকছেন, এদের আবার শক্তি কী! তারা ছাত্রদের হিসেবের মধ্যে আনেননি। বিশ্ববিদ্যালয় মানে ছাত্র-শিক্ষক। ১৯৫২ থেকে সমরশাসক মঈনউদ্দিন পর্যন্ত যত আন্দোলন হয়েছে তা শুধু ছাত্র বা শুধু শিক্ষকের নয়। ছাত্র শিক্ষক মিলিয়েই। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে একটি ঘটনার কথা বলি। 

১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী, খুনী মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সাক্ষাতকার নিচ্ছিলাম তার ডেরা রাওয়ালপি-িতে। কথায় কথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উঠল। দেখলাম তিনি বলা নেই কওয়া নেই ক্ষেপে গেলেনÑ তার মূল বক্তব্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! এখানকার মাস্টাররা হিন্দু ভাবাপন্ন, পাকিস্তানের বিরোধী। তারা ছাত্রদের মন বিষিয়ে দিচ্ছে। আর বাঙালীরাও পারে বটে। ছাত্রদের কথা, মাস্টারদের কথা শোনে। আর মানুষ কেন, ছাত্রনেতা যদি বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে পাখি উড়ে যাবে না তাহলে পাখিও তা মানবে। আসলে কথাটা অতিরঞ্জিত; কিন্তু পাকিস্তানীরা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর প্রচ- ক্ষিপ্ত তা ফরমান আলীর বক্তব্যই প্রমাণ।

এ তো পাকিস্তান আমলের কথা। কিন্তু স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর আমল ছাড়া এসব বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি অস্বচ্ছ রয়ে গেছে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় এদের সমর্থন করেনি। তাদের আস্থা রাখতে হয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠান আমলাতন্ত্রের ওপর যা বহন করছে পাকিস্তানী ঐতিহ্য। আমরা যে সব আমলকে গণতান্ত্রিক সরকার বলে অভিহিত করি তারাও নানা কারণে নিজেদের শক্তিশালী মনে না করে পুরনো রীতিই বজায় রেখেছে। এ কারণে, উন্নয়ন হচ্ছে; কিন্তু মানসিক বিকাশ বা মুক্তচিন্তা হচ্ছে না। এটা কি আশ্চর্য নয় যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ধারণা পাকিস্তান আমলে রেখে দিয়েছি, ১৯৭১-এর পর তা শুধু রেখে দেয়া নয়, তার সঙ্গে ফিউশন হয়েছে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক চিন্তা-ভাবনা। এ থেকে রাজনীতিবিদ, আমলা বা শিক্ষক কেউই সম্পূর্ণভাবে বেরুতে পারছেন না। এটাই হচ্ছে ঔপনিবেশিকোত্তর উপনিবেশিক মন।

যাক, পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে আসি। এ লেখা যখন লিখছি তখনও নানা অনুরোধ আসছে। এক সময় মনে বিভ্রম জাগছে, আরে লেখা ব্যাপারটা কি এতই শক্তিশালী! না, পরে বিভ্রম কেটে যাচ্ছে। তবে, একেবারে শক্তিহীন তাও ভাবি না। আমি তাদের বলেছি, জনাব মুহিতের বিরুদ্ধে আমি কিছু লিখতে পারব না। আমাদের পরিচয় চার দশক, ড. ফরাসউদ্দিনের সঙ্গেও। তারা আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। এবং গুরুজন হিসেবে আমি তাদের শ্রদ্ধা করি। আরেকটি কথা বলি, জনাব মুহিত সব ধরনের সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। এদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তার ধারণা গভীর। এবং আমার জানা মতে তিনি জ্ঞানত কোন ব্যক্তির অপকার করেননি। ড. ইউনূসের সঙ্গে যখন সরকারের বোঝাপড়ার অভাব, তখন প্রথম বছরটি তিনি ড. ইউনূসের পক্ষেই ছিলেন। এরপর ড. ইউনূসের কর্মকা-ের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু কোন ক্ষতি করতে এগোননি। আমি এবং আমরা যখন তার কাছে গেছি, সমাদরই পেয়েছি। আমরা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় আছি, কিন্তু যখন কোন আলোচনা করছি তখন কোন সমস্যা হয়নি। এখন কেন আমরা মুখোমুখি? ব্যাপারটা ভেবে দেখেছি।

আসলে, আমাদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদের পেশাগত স্বার্থ। এবং সে চিন্তাটা গতানুগতিক, যেটি ড. ফরাসউদ্দিন বা জনাব মুহিতের মতো এনলাইটেন্ট মানুষের কাছে আশা করা যায় না। আজ যদি অর্থমন্ত্রী হতেন কক্সবাজারের জনাব বদি তাহলে মানুষ আর যাই হোক এনলাইটেনমেন্ট আশা করত না। ঝামেলাটা এখানেই হয়ে গেছে। যে পেশায় জীবন শুরু করেছি সেটি প্রথম প্রেম। ঝাড়ি খেলেই কি সেই প্রেম উধাও হয়ে যাবে? সে জন্য আমি তাদের সমালোচনা করব না, সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করব মাত্র।

দুই.

জনাব মুহিত শিক্ষকদের সম্পর্কে, বিরুদ্ধে বললে বোধহয় আরও নির্দিষ্ট হয়, যে কথা বলেছেন, তার দুটি ভাগ আছে। প্রথমটি বাংলায়, দ্বিতীয়টি ইংরেজীতে। পুরোটা ইংরেজীতে বললে তিনি শুধু নয়, সরকারও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ত। কারণ, তাহলে অবশ্যম্ভাবী যে তিনি বলতেন, এইসব স্টুপিডরা কি সব রাবিশ বলছে। ভাগ্যিস তিনি বলেননি।

প্রথম ভাগে তিনি বলছেন, শিক্ষকরা বুঝতে পারছে না তাদের অজ্ঞতার কারণে। আমি স্বদেশকে ফোনে বললাম, আমাদের প্রিয় অর্থমন্ত্রীতো সবাইকে বিপদে ফেললেন। অতীশ দীপঙ্করকে বলা হতো শ্রী জ্ঞান। নিজেকে তা না ভাবলেও, চিন্তাটা ছিল শ্রী তো বটেই। এখন দেখা যাচ্ছে, আমরা ভুল করেছি। সরকার তো আমাদের অজ্ঞান ভাবছে। এখন আমি অজ্ঞান মুনতাসীর মামুন। বাকিরা শ্রী জ্ঞান এএমএ মুহিত, শ্রী জ্ঞান স্বদেশ রায় বা শ্রী জ্ঞান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া।

আসলে অর্থমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, বেতন স্কেলের পুরো বিষয়টা শিক্ষকরা বুঝতে পারেননি। কিন্তু সেটা বোঝাতে গিয়ে হয়ে গেছে শিক্ষকদের সামষ্টিক অজ্ঞতা। এতে শিক্ষকদের ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ, অজ্ঞতা যদি আমাদের ভূষণ হয় তাহলে শিক্ষকতার ভিত্তিটাই থাকে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে, শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন যদি বলেন, আমি অর্থনীতির শিক্ষক, অর্থনীতি আমি অর্থমন্ত্রীর থেকে বেশি বুঝি। উনি ইংরেজীর ছাত্র, উনি অর্থনীতির কি বোঝেন? আসলে অর্থমন্ত্রী হলে তো আমারই হওয়া উচিত। তিনি সাহিত্যচর্চা করুন অথবা অধ্যাপনা করুন। তাহলে ব্যাপারটা কোথায় গড়ায়? কিন্তু, মূল বিষয় সেটি নয়। আমরা বাঙালী মুসলমান নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে সবে সচ্ছল মধ্যবিত্তে রূপান্তরিত হয়েছি। গরিব তার স্বার্থ বোঝেন না; কিন্তু মধ্যবিত্তের স্বার্থজ্ঞান টনটনে। শিক্ষকরা নিম্ন/সচ্ছল/ একেবারে গরিব পরিবার থেকে এসেছেন। তারা নিজেদের স্বার্থ বোঝেন না সেটি হয়।’ একজন আমলা তার স্বার্থ বুঝলে অন্যরা বুঝবে না তা হয় না। বুঝতে হয়ত একটু সময় লাগে। কিন্তু মধ্যবিত্ত তার স্বার্থ বোঝে। 

পে-কমিশন যখন হয় তখন কমিশনের সদস্যরা তো শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেছিলেন। তাদের মতামত নিয়েছেন। তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল তাদের গ্রেড ঠিক থাকবে। কিন্তু, গ্রেডেরও যে মারপ্যাঁচ আছে সেটি তারা উপলব্ধি করতে পারেননি। 

এমনকি এতে তাদের যে ক্ষতি তাও তারা বোঝেননি। পে-কমিশনের কয়েকদিন পর আমি একজন শিক্ষক নেতাকে ফোন করে বললাম, কী হে ছিলাম কোথায়, তোমরা আনলে কোথায়? যারা সরকারী দল করেন নিষ্ঠভাবে কিছুর আশায় [না, আদর্শের মিশ্রণও আছে] তারা নিজেদের সরকারী প্রতিনিধি ভাবেন। আমাকে তিনি জানালেন, কেন স্যার সব তো ঠিকঠাক আছে। আমি বললাম, তোমার উত্তরটা বোধহয় ঠিক না। তিনি জানালেন, কী যে বলেন স্যার, আপনি বোঝেননি ব্যাপারটা। আমাদের বলা হয়েছে, অবস্থান ঠিক থাকবে, তাই তো আছে। আমি বললাম, তোমার চাকরি হয়েছে কয় বছর? জানাল, বিশ বছর। বললাম, তুমি আমার থেকে ২৩ বছর পিছিয়ে আছ। আমি ফরিদের সঙ্গে কথা বলি। তার সঙ্গে আমার তফাৎ এক বছরের। সে হয়ত বুঝবে। আমার অনুজ সহকর্মী পরদিন উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়ে চলে যান। তার সঙ্গে আর আলোচনার সুযোগ হয়নি। ফরিদও প্রথমে একই উত্তর দিয়েছিল। শিক্ষকদের অজ্ঞতা যেটা সেটা হলো, আমলাতন্ত্রের ও তাদের প্রতিভুদের মারপ্যাঁচ অতটা বুঝতে পারে না। এক ধরনের সারল্য তাদের মধ্যে কাজ করে। কারণ তারা কাজ করে ১৭ থেকে ২২ বছরের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। চিরজীবন এডলোসেন্টই থেকে যায়। এই পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখলে, শিক্ষকদের অজ্ঞ বলা যায় বটে। 

এএমএ মুহিত আমার শ্রদ্ধার পাত্র হলেও বলতে হচ্ছে, দ্বিতীয় ভাগে তিনি যা বলেছেন তা আপত্তিকর। কেননা, সামষ্টিকভাবে আমরা যদি ‘করাপ্ট’ হই তা’হলে সামষ্টিকভাবে ‘মন্ত্রী’, ‘আমলা’ ও ‘রাজনীতিবিদরা’ও করাপ্ট। তিনি শিক্ষকদের করাপ্ট বলবেন, অন্যদের বলবেন না কেন? আমি বিভিন্ন জনের কাছে যা শুনেছি ও জনাব মুহিতের যে বক্তব্য পত্রিকায় ও টিভিতে এসেছে তাতে বুঝেছি, অভিযোগটা হলো প্রফেসরের সংখ্যা এত বেশি কেন? এবং এই যে প্রফেসরের সংখ্যা বেশি তাই হলো ‘করাপ্ট প্র্যাকটিস’।

এখানে বলে রাখা ভাল, আমলাদের সামরিক-বেসামরিক যে ধরনেরই হোক না কেন, তাদের প্রমোশনের ক্ষেত্রে নিজস্ব রীতিনীতি মানা হয়। সেখানে নিশ্চয় অন্যদের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, তা’ হবে না। জনপ্রশাসন সচিব নিশ্চয় সামরিক আমলাদের প্রমোশন নির্ধারণ করেন না, বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (বা পরবর্তীকালে সমূহের জন্য) জন্য যে আইন দিয়ে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার দ্বারা পরিচালিত। প্রমোশনেরও নিয়ম-কানুন আছে। যেটি বলা যায়, তা হলো, এই নীতি অনেক ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়। তারপরও কথা থাকে। সিন্ডিকেট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি। সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ সিন্ডিকেটে যায়। সিলেকশন কমিটিতে প্রেসিডেন্ট/চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি থাকেন। সিন্ডিকেটে সরকার ও চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি থাকেন। এবং উপাচার্য সিন্ডিকেটের সভাপতি। উপাচার্য এখন রাজনৈতিক নিয়োগ অর্থাৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বারা সুপারিশকৃত ও চ্যান্সেলর দ্বারা অনুমোদিত। যেখানে নীতিমালা শিথিল করা হচ্ছে সেখানে তারা বাধা দেন না কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতি তো সাধারণ শিক্ষকরা দেন না। এর জন্য অবশ্য দায়ী সরকার নিযুক্ত উপাচার্য ও সদস্যবৃন্দ। ‘করাপ্ট প্র্যাকটিস’ যদি হয়ে থাকে তাহলে দায় তাদের। তারপরও অনেক শিক্ষক এবং আমি একজন সিনিয়র অধ্যাপক এই জনকণ্ঠে বার বার লিখেছি, এখন সময় এসেছে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের বসে এই আইনের কিছু কিছু ধারা সংশোধন করে সময়োপযোগী করা। এসব ব্যবস্থা না নিয়ে ঢালাও অভিযোগ করা কতটা যুক্তিযুক্ত? 

আরও আছে। ঔপনিবেশিক আমলে শিক্ষা নীতির বৈশিষ্ট্য ছিল সঙ্কোচন। সারা বিভাগে একটি হয়ত প্রফেসরের পদ। একজন সেই পদে গেলে তার অবসর না নেয়া পর্যন্ত কোন যোগ্য ব্যক্তি প্রমোশন পেতেন না। সহযোগী, সহকারীর ক্ষেত্রেও তাই ছিল। ড. শহীদুল্লাহর মতো প-িত প্রফেসর হতে পারেননি। এটি কি খুব গৌরবের কথা, না ন্যায্য বিচার? এখন যোগ্যতা অর্জন করলে প্রফেসরের পদ না থাকলে আপগ্রেডেশন করা হয়। হ্যা, এই ক্ষেত্রে অনেক সময় ছাড় দেয়া হয়; কিন্তু সিন্ডিকেট তাতে বাধা দেয় না কেন? যেমন, আমার পদটি সহকারী অধ্যাপকের পদ। সহযোগী ও অধ্যাপকের পদ না থাকায় আমি ঐ পদ্ধতিতে প্রফেসর হয়েছি। আমি অবসর নিলে সেটি আবার সহকারী অধ্যাপকের পদ হয়ে যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কিন্তু পররাষ্ট্র সচিব একজন। অনেক রাষ্ট্রদূত কি সচিবের যোগ্যতা অর্জনের পর সচিব হচ্ছেন না? অনেক সংখ্যক প্রফেসর যদি চক্ষুশূল হয় তা’হলে প্রশ্নÑ সচিবালয়ে সচিব/অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবের পদ কয়টি এবং সেখানে অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম ও উপসচিব কয়জন আছেন? এ আমলে কি ঢালাও প্রমোশন তাদের হয়নি? মাননীয় অর্থমন্ত্রী কি সেটিকে ‘করাপ্ট প্র্যাকটিসের অন্তর্গত করবেন?’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে এবং তা প্রমাণিত হলে শুধু শাস্তি নয়, চাকরিচ্যুত হন। সরকারী কর্মচারীদের [রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ] দুর্নীতির খবর প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় দেখি [বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নয়], তাদের কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? এমনকি সোনা জালিয়াতি প্রমাণের পরও? ব্যাংকের কয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া গেছে। এসব প্রশ্ন আসবে। আরও আসবে ধানম-ি থেকে শুরু করে গুলশান-বনানী-বারিধারা এমনকি নতুন আবাসিক এলাকাগুলোতে ক’জন সরকারী কর্মচারী [উপসচিব থেকে সচিব] জমি পেয়েছেন ও বাড়ি করেছেন আর ক’জন শিক্ষক করেছেন? সামরিক কর্মকর্তাদের যে পাকিস্তানের মতো প্রায় সবাইকে জমি দেয়া হয় নামমাত্র মূল্যে তা কতজন শিক্ষককে দেয়া হয়? এগুলো কোন্ ধরনের প্র্যাকটিসের মধ্যে পড়ে? সুতরাং, ঐসব কথা না তুললে ভাল। 

যোগ্যতার প্রশ্নটিও আকার ইঙ্গিতে তোলা হয়েছে। বাস্তব যে পরিস্থিতি তাতে যোগ্যতার পুরনো মাপকাঠি মার খাচ্ছে। কেন মার খাচ্ছে, আমাদের প্রভুরা তা ভাল জানেন। আমরা কখনও বলিনি, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই যোগ্য। কিন্তু ন্যূনতম যোগ্যতা সবার আছে। তারপরও দেখা যায়, কারও কারও গবেষণা ভাল, কারও শিক্ষকতা ভাল, কারও বা আছে প্রশাসনিক দক্ষতা। আমলাতন্ত্রেও তো তাই। মাননীয় অর্থমন্ত্রী কি আমলাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। বছর কয়েক আগে মানবজমিনে অর্থমন্ত্রীর এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। বাংলায় একটি খসড়া স্বল্প সময়ে একজন কর্মকর্তা লিখতে যে কত কসরৎ করেন তা আমাদের জানা নেই বললে ভুল হবে। এই যদি হয় অবস্থা তা’হলে তাদেরই বা বেতন বৃদ্ধির দরকার কি? সুপার স্কেলেরই বা দরকার কী? সে জন্য বলি প্যানডোরার বাক্স না খুললেই ভাল।

তিন.

এই জনকণ্ঠেই কয়েক সপ্তাহ আগে লিখেছিলাম, একেকটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে গড়ে উঠেছে এবং কেন সমাজ আমলাদের থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে মর্যাদা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি। যত গালাগাল আমাদের দেন অসহায় সময়ে আমরাই ভরসা। বাংলাদেশের ওপর সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অধিকার আছে, ঋণখেলাপীদের অধিকার আছে, বণিকদের অধিকার আছে, আমাদের থাকবে না? আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, এবং জোর গলায় বলছি, যখন সৈনিকদের মার খেয়ে আমরা রক্তাক্ত, তখন অধিকাংশ মন্ত্রীকে আমরা পথে দেখিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জেলে থাকার কারণে তা জানতে না পারেন, কিন্তু পত্রিকা দেখুন। তখন শুধু গণমাধ্যম বঙ্গবন্ধুর দুঃখিনী কন্যার পাশে ছিলেন। এবং তারা কোন পুরস্কার চাননি। কিন্তু আমলাতন্ত্র চেয়েছে। পেয়েছেও। আমরা কি তার বিরোধিতা করেছি? সার্কভুক্ত অধিকাংশ দেশে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো থাকলে আমাদের দেশে কেন তা হতে পারে না। আমি তো মনে করি কৃষিবিজ্ঞানীদের জন্য আলাদা পে-স্কেল থাকা উচিত এবং আমাদের চেয়ে বেশি বেতন পাক তারা। গত দু’দশকে বাংলাদেশকে তারা কোথায় নিয়ে গেছেন! 

সার্ক দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জিডিপির সবচেয়ে কম অংশ দেয়া হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর উন্নয়নে গত ২০ বছরে এবং এ সরকারের আমলে কত খরচ হয়েছে আর উচ্চশিক্ষার পেছনে কত খরচ হয়েছে। আমাদের মতো নিরস্ত্রদের অর্থমন্ত্রী অবশ্যই চাবকাতে পারেন। প্রকাশ্যে পারবেন না, বাজেটেও দেখি উত্তরের বাজেট হ্রাসের ক্ষমতা রাখেন কিনা? বা এ্যাকাউনট্যাবিলিটি? 

মাননীয় অর্থমন্ত্রী মর্যাদার প্রশ্ন তুলেছেন। একটি দেশ সভ্যতার নিরিখে কতোটা এগুলে তা নির্ধারিত হয় সে দেশের শিক্ষকদের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করা হয় তা দিয়ে। আজ ভারতে একজন স্কুল শিক্ষকের বেতন আমাদের কলেজ শিক্ষকদের থেকে কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বাদ দিলাম। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, এমনকি পাকিস্তান? এবং বাংলাদেশ থেকে তারা পিছিয়ে নেই। ইউএনডিপির অর্থনীতিবিদ মাহবুবুল হক একসময় বলেছিলেন, স্কুল শিক্ষক আর দারোয়ানের বেতন যদি এক হয় তাহলে সেই দেশে দারোয়ানী শিক্ষাই হয়। 

সরকার গ্রেড অনুযায়ী রাষ্ট্রে মর্যাদা ঠিক করছেন। সে ক্ষেত্রেই মর্যাদার প্রশ্ন আসছে। সচিব আর অধ্যাপক সমতুল্য হোকÑ এই বিবেচনা আমাদের নয়। সর্বোচ্চ গ্রেডই দাবি। কেননা তাই বহাল ছিল। যদি নাও থাকে দিতে কার্পণ্য কেন? কারও ব্যক্তিগত টাকা কি খরচ হচ্ছে? যে রাষ্ট্র শিক্ষকদের গালাগাল করে সে রাষ্ট্র আর যাই হোক তা ভব্য রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হয় না।

আমরা কেউ ফেরেশতা নই। আমলাতন্ত্রে, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রে এমন অনেক আছেন, যারা আমাদের থেকে ভাল জানেন এবং যোগ্য। তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ জানেন শোনেন নিজ বিষয়ে এবং যোগ্য। ঘাটতি সব পেশায়ই আছে। জোর করে সশস্ত্ররাই আমাদের পদানত করতে পারেনি আর অন্যরা পারবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি হাত দিয়েছেন তার হাতই পুড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ না থাকলে আমলা হওয়া যাবে? আমরাই যদি অযোগ্য হই তাহলে প্রতিবছর যারা আমলাতন্ত্রে যাচ্ছে তারা আমাদের থেকে যোগ্য হয় কীভাবে? 

প্রধানমন্ত্রী অনেক দুর্যোগ পেরিয়ে একটি স্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। সেখানে জেদ করে, ভুল ব্যাখ্যা করে, ভুল তথ্য দিয়ে বিভিন্ন পক্ষ সৃষ্টি করার অর্থ কী? আমলাতন্ত্র যা বোঝাবে একজন রাজনীতিবিদকে তাই বুঝতে হবে? 

আমি আগেই বলেছি, অর্থমন্ত্রীর প্রতি আমাদের কোন বিদ্বেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপক থেকে তার বইয়ের সংখ্যা বেশি, গুণগত দিক থেকেও। তিনিইতো বুঝদার হবেন আমাদের অনেক ‘অজ্ঞান’ ব্যক্তি থেকে। ব্যক্তিগতভাবেও তো তিনি সৎ যা তার বিশেষ মূলধন। তাহলে তিনি কেন এ রকম জেদ ধরবেন যা এক অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। এবং এর সুযোগ অনেকে নেবে স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ করে বিরোধীরা। জনাব হান্নান শাহ ইতোমধ্যে শিক্ষকদের দাবি সমর্থন করে সরকারকে জ্ঞান বিতরণ করেছেন। কই ১৪ দলের কেউ তো বললেন না, তার সময়ে শিক্ষকদের গ্রেফতার করে লাঞ্ছনা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে অন্তত তা তো হয়নি। এ লেখা যখন শেষ করছি তখন অর্থমন্ত্রী ভুল স্বীকার করে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন, যদিও মূল বিষয় একই থেকে যাচ্ছে। ভুল স্বীকার করা মহত্ত্বের লক্ষণ। আশা করি অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আর বিতর্ক হবে না।

আমি ক’দিন আগে ক্লাসে গেছি, এক ছাত্র বলে উঠল, আমরা স্যার আপনাদের দাবি সমর্থন করি। বললামÑ ভাল, কিন্তু সেদিকে নজর না দিয়ে ক্লাসের দিকে নজর দাও। শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে একটা অদৃশ্য বন্ধন আছে আগে যা ছিল খুব দৃঢ়, এখন তা শিথিল। আমাদের শিক্ষকদের হত্যা করেছিল নিজামী ও মুজাহিদের আলবদর বাহিনী। চার দশক মাটি কামড়ে পড়ে আমরা তাদের বিচার চেয়েছি। শিক্ষকের অমর্যাদা হচ্ছে যদি ছাত্ররা এটি অনুধাবন করে তাহলে অবস্থা গুরুতর হবে। এক দুপুরে বেসরকারী কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই অচল করে দিয়েছিল ঢাকা শহর। সেখানে তো অনেক আমলার ছেলেও ছিল। পরিস্থিতি নিছক দাবি থেকে এখন রাজনৈতিক হয়ে উঠতে পারে। আমরা অবশ্যই তা চাই না। সরকারে অনেকে ক্ষুব্ধ হতে পারেন শিক্ষকদের ওপর, কিন্তু আগে এটি বিবেচনা করা দরকার শিক্ষকদের দাবি ন্যায্য কিনা। এবং ন্যায্য হলে কেন তা মেটানো হবে না? মুক্তিযুদ্ধের সরকার কোন একটি গ্রুপের জন্য বিপদে পড়ুক তা নিশ্চয় আমরা চাই না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছুই বলেননি, আম্পায়ারের ভূমিকায় আছেন। তিনি আউট দিলে শিক্ষকরা তা মেনেও নেবেন এবং বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা [ভারতের বিরুদ্ধে] যেমন প্রতিবাদ না করে বেদনাহতভাবে ফিরে এসেছিল প্যাভিলিয়নে, সেভাবে বেদনাহতভাবে হয়ত ফিরে যাবে; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিপর্যস্ত হবে যার অভিঘাত তীব্র হবে। এবং যে ক্ষতের সৃষ্টি হবে তা উপশম করা সম্ভব নাও হতে পারে। এটি আমাদের সবার বিবেচনায় রাখতে হবে। 

আজ রাষ্ট্রে ক্ষমতাধর সশস্ত্ররা। ব্যাপক অর্থে তা ব্যবহার করছি। যেমন ভূমিদস্যু বা ঋণখেলাপীরা, আমলারা, এমনকী স্থানীয় ক্ষেত্রে সরকার সমর্থক রাজনীতিবিদরা। তাদের কোন সমালোচনা মন্ত্রীরা করতে পারেন বা পারবেন এত তীব্রভাবে! বেতন স্কেল না হলে নাই দেবেন। সর্ব অর্থে আমরা নিরস্ত্ররা হয়ত কিছুই করতে পারব না বা হয়ত কিছুই করব না। কিন্তু নিরস্ত্র বলেই কি আমাদের অপমান করার অধিকার সবার থাকবে?

Published in:
 1. http://www.dailyjanakantha.com/details/article/142745/   2. http://www.dailyjanakantha.com/details/article/142908

আরো পড়ুনঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাপুরুষ সৃষ্টি করেনি কখনও (ছয় কিস্তি একত্রে)

0 comments:

Post a Comment