Friday, September 4, 2015

বাংলাদেশের আন্দোলনের সংস্কৃতিঃ প্রেক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আন্দোলন


আমাদের দেশে যেকোন দাবি আদায় করতে হলে civilized পথে দাবি জানালেই হয় না। দাবি আদায় করতে হলে আন্দোলন করতে হবে। আবার প্রতিকী আন্দোলন করলে হবে না। কোন কিছুকে জিম্মি করে আন্দোলন করতে হবে যেমন রাস্তাঘাট আটকে দিতে হবে। অথবা ডাক্তার হলে রোগী দেখবনা, শিক্ষক হলে ক্লাস নিব না এ জাতীয় কর্মসূচী নিতে হবে। আবার এ জাতীয় কর্মসূচি শুধু প্রতিকী হিসাবে নিলে কর্তিপক্ষ মেনে নিবে না। আন্দোলনকে লাগাতার চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলনে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হবে। তারপরও কর্তিপক্ষ অনড় থাকবে, অপেক্ষা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না damage ম্যাক্সিমাম না হয়। তবে সবার কি সব রকম আন্দোলন মানায়? আমরা শিক্ষকরা যদি ভাবি আমরা অন্য সকল প্রফেসন থেকে ভিন্ন তো আমাদের আচরণও হবে ভিন্ন। আমরা কি সেরকম ভিন্ন আচরণ করছি? শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ইনসিডেন্টটি বার বার ভিডিওতে দেখছি। এ পর্যন্ত অনেকবার দেখেছি। দেখে আমার অন্তর্দাহ হয়েছে। অনেকবার দেখে আমার মনে হয়েছে আমার প্রাথমিক রিঅ্যাকশন ভুল ছিল। আমি শুধু একতরফা ভাবে উপাচার্য্য এবং ছাত্রলীগকে দায়ী করেছি।

বার বার ভিডিও ফুটেজ দেখে মনে হয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আনদোলনের ধরনটিও civilized ছিল না। একজনকে দেখলাম ভিসিকে দারিয়াবাধা খেলার মত করে পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করতে। এমনকি উপাচার্যের শরীরে touch লেগেছে বলেও আমার মনে হয়। আর উপাচার্য্যও কম যায় কিসে? উনিও শারীরিক শক্তি ব্যয় করে অফিসে ঢুকার চেষ্টা করেছেন। এগুলো কি পৃথিবীর কোন শিক্ষক সম্প্রদায় করতে পারে? আইনে হয়ত বাঁধা নেই কিন্তু সব কিছুই আইন দিয়ে চলে? সরকার পারত অনেক আগেই ঘটনার একটা civilized সমাধান দিতে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও দেখেছি সরকারকে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে যতক্ষণ না ঘটনার চরম অবনতি হয়। সরকার কেন বুঝতে পারে না যে, একটা বড় গ্রুপ (তারাও সরকার দলীয়) যখন ভিসির অপসারণ চায় তখন এটার সফল পরিনতি ঘটবেই। সরকারের উচিত এটা বুঝা। তাহলে সকলের জন্যই উইন-উইন ব্যাপার হয়। এসব ঘটনার মাধ্যমে শিক্ষক সমাজের মান সম্মান নিচে নামছে। কিছুদিন আগে দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষকরা একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন। তারপর তারা নিঃগৃহীত হয়েছেন। ওই শিক্ষক কে দেখেছিলাম উনি যে নিগৃহীত হয়েছিলেন সেটাকে ব্যবহার করে কিভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা লুটা যায় তার চেষ্টা করতে। যেভাবে উনাকে অপদস্ত করা হয়েছিল তাতে উনার লজ্জিত বা ধরণী দিখন্ডিত হোক উনাকে আড়াল করুক এরকম একটা ভাব আসা। আপনারা শিক্ষক। আপনি কেন একটি দলকে সমর্থন করে তার আন্দোলনের পার্ট হবেন? এগুলো করেই শিক্ষকদের অবস্থান উনারা তলানিতে ঠেকিয়েছে।

এগুলো কাম্য নয় কারণ শিক্ষক যদি উচু অবস্থানে না থাকে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মাঝে কোন gradient থাকবে না। আর জ্ঞানের flow হলো fluid ফ্লো এর মত উচু থেকে নিচে যায়। আর মর্যাদা কখনো দানের বিষয় না এটা আর্ন করার বিষয়। আসুন আমরা সবাই বিষয়টার গুরুত্ব অনুভব করি।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

0 comments:

Post a Comment