Saturday, September 19, 2015

আন্দোলন-আলোচনা একসঙ্গে চালিয়ে যাবেন শিক্ষকেরা

আন্দোলনরত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেতনবৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী একা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।
গতকাল রাতে শিক্ষকনেতারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁরা আন্দোলন ও আলোচনা একসঙ্গে চালিয়ে যাবেন। দাবি পূরণ ছাড়া তাঁরা আন্দোলন থেকে পিছপা হবেন না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিটির সভায় একজন সদস্য হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর সক্রিয় ভূমিকা থাকবে। তবে খুব শিগগির ওই কমিটির সভা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এ-সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ অক্টোবর বিদেশে থাকবেন। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন, ফিরবেন ৩ অক্টোবর।
দেশে ফেরার পরদিনই কাল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কার্যত শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের বক্তব্য শুনেছেন। একপর্যায়ে শিক্ষকনেতারা শিক্ষামন্ত্রীর কাছ জানতে চান, তাঁরা এখান থেকে কী বার্তা নিয়ে শিক্ষকদের কাছে যাবেন। তখন শিক্ষামন্ত্রী সুনির্দিষ্ট বার্তা না দিয়ে খুব শিগগির আলোচনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে শিক্ষকনেতারা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলবে, আলোচনাও চলবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, অষ্টম বেতন স্কেল অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। আর মন্ত্রিসভাই বেতনবৈষম্য নিরসন কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে। তাই ওই কমিটিকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারণ পর্যায় থেকে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে আন্দোলন থামতে পারে।
একাধিক শিক্ষকনেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, আলোচনার পাশাপাশি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। তাঁরা এখন আনুষ্ঠানিক আলোচনা চান। তাঁদের দাবি, শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেলের জন্য একটি কমিশন গঠন করে দেওয়া হোক। এর আগ পর্যন্ত অষ্টম বেতন স্কেলে পদমর্যাদায় যে অবনমন হয়েছে, সেটি পরিবর্তন করে সপ্তম বেতন স্কেলের মতোই বহাল করা হোক। কারণ, সপ্তম গ্রেডে শিক্ষকদের গ্রেড-১-এ (সচিবদের সমান) যাওয়ার সুযোগ ছিল। সিলেকশন গ্রেড বাদ হওয়ায় এখন আর এই সুযোগ থাকল না।
পৃথক বেতনকাঠামো ও পদমর্যাদা-সংক্রান্ত বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলন করছেন। ৭ সেপ্টেম্বর সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দিয়ে অষ্টম বেতন স্কেল অনুমোদন হওয়ায় আন্দোলন জোরদার করেন তাঁরা। ইতিমধ্যে তিন দিন পূর্ণদিবস এবং আরও কয়েক দিন তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা।
কাল রাজধানীর মিন্টো রোডে শিক্ষামন্ত্রীর সরকারি বাসায় বেলা ১১টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনা করেন শিক্ষকেরা। আলোচনায় শিক্ষক প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল। এই আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দুই পক্ষই বলছে, এটা ‘অনানুষ্ঠানিক আলোচনা’।
শিক্ষকেরা বলেছেন, তাঁরা আশা করছেন, সরকার শিগগিরই আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবেন। আর শিক্ষামন্ত্রী আশা করেছেন, খুব শিগগির এ ব্যাপারে একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো যাবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি প্রথমে জানতে চান। তখন শিক্ষকেরা মন্ত্রীকে বলেন, তাঁরা শিক্ষকদের জন্য পৃথক একটি বেতন স্কেল দাবি করেছেন। এ জন্য দ্রুত একটি আলাদা কমিশন গঠন করতে বলেছেন। দাবি পূরণ না হলে আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ভর্তি পরীক্ষাও হুমকির মুখে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কার কথাও শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন। এ সময় মন্ত্রীকে তাঁরা অনুরোধ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিতে নিউইয়র্কে যাওয়ার আগেই যেন আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন। বেতনবৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাজও যেন দ্রুত শুরু করা হয়। পারলে ঈদের আগে কমিটিকে বৈঠকে বসার জন্য তাঁরা অনুরোধ জানান। অর্থমন্ত্রী বিদেশে যাওয়ায় তাঁর অনুপস্থিতিতে ওই কমিটির সদস্য হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী যেন আলোচনার ব্যবস্থা করেন, সেই অনুরোধও করেন শিক্ষকনেতারা।
পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষকেরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সরকারও সেটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। শিক্ষকদের মূল দাবি অনুযায়ী পৃথক বেতনকাঠামো করা হবে কি না—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সরকার এটি প্রত্যাখ্যান করেনি। আলোচনা হবে। তবে শিক্ষকদের মর্যাদা কোনোভাবেই ছোট করে দেখা হচ্ছে না।
এ সময় শিক্ষকনেতা ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের প্রথম ও প্রধান দাবি স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো। শিক্ষকনেতা এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, পৃথক বেতনকাঠামোর জন্য অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
পরে শিক্ষামন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিশ্চিত, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।

Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/636943

0 comments:

Post a Comment