মুসতাক আহমদ
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পুনরায় আন্দোলনে নামছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এই দফার আন্দোলনে ভর্তি পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি অচল করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দায়িত্বশীল সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
দাবি-দাওয়া আদায় না হলে ঈদের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা পুনরায় আন্দোলনে নামবেন- আগে থেকেই এমন ঘোষণা ছিল। এ পরিস্থিতিতে ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বেতন ও পদমর্যাদা ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মন্ত্রিসভা কমিটির ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ জানান। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষামন্ত্রী এ অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল রোববার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর ওপর আমাদের আস্থা আছে। মন্ত্রিসভা কমিটির অন্য সদস্যদের উপরও আস্থা আছে। কিন্তু কমিটি প্রধান এ বিষয়ে আস্থা রাখার মতো কোনো পদক্ষেপ এখনও নেননি। গত ৭ সেপ্টেম্বর কমিটির ওপর দায়িত্ব দেয়া হল। কমিটি প্রধান এখন পর্যন্ত এ নিয়ে একটি সভাও ডাকতে পারেননি। উপরন্তু তিনি একমাসের জন্য দেশের বাইরে চলে গেছেন। এটা শিক্ষকদের প্রতি চরম অবহেলার একটি দৃষ্টান্ত। শিক্ষকরা একমাস অপেক্ষা করবেন কিনা বা সাধারণ শিক্ষকদের আমরা বিষয়টি বোঝাতে পারব কিনা, জানি না। তবে আমাদের ওপর অনেক চাপ আছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি।
জানা গেছে, ৫ অক্টোবরের মধ্যে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদুল আজহার ছুটির শেষ হবে। এরআগে ১ অক্টোবর দাফতরিক কাজ শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আগামী ৬ অক্টোবর ফেডারেশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওইদিনই পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ভর্তি মৌসুম চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ভর্তিচ্ছুদের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ৯ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। অক্টোবর মাসেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে। এই পরীক্ষা নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকরা ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। একই সঙ্গে লাগাতার কর্মবিরতি ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি অচল করে দেয়ার পক্ষেও তাদের অবস্থান। ৯ অক্টোবরের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখেই এই দুটি কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে।
পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক কামাল যুগান্তরকে বলেন, কর্মসূচি কী হবে তা আমরা এখনও জানি না। তবে আমাদের ওপর ট্রিমেন্ডাস (প্রচণ্ড) চাপ আছে। শিক্ষকরা ভর্তি পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি অচল করে দেয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে একবার সুবিধা দিয়ে তা কেড়ে নেয়ার দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তি সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তারা রাষ্ট্রে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চান। বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে চান। এজন্যই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা ওইসব ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছি। তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়া হবে। শিক্ষকরা এই আন্দোলন থেকে সরবেন না।
উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভায় অষ্টম পে স্কেল অনুমোদিত হয়। পরদিনই প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আন্দোলনে নামেন। সব শিক্ষকের অভিন্ন দাবি সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করা। এছাড়া স্তর অনুযায়ী দাবি আলাদা দাবিও আছে।
Published in: http://www.jugantor.com/first-page/2015/09/28/328974
0 comments:
Post a Comment