Wednesday, August 26, 2015

মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বন্দী

Kamrul Hassan

আমার এক আত্মীয়া ঢাকার এক স্বনাম ধন্য কলেজে পড়ে। গতকাল সে আমার বাসায় এসেছিল। এক পর্যায়ে জানতে এবং ভালোভাবে বুঝতে চাইল gradient, divergence ও curl সম্মন্ধে। তো আমি জিজ্ঞেস করলাম মাত্রতো ক্লাস শুরু হলো এত জলদি তোমাদের এত কিছু পড়িয়ে এখানে চলে এসেছে? ও বলল শেষ ক্লাসে এগুলো পড়িয়েছে। তো আমি আগে শুনতে চাইলাম ক্লাসে কিভাবে এবং কতটুকু বুঝিয়েছে। উত্তর শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম আর কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। ফিরে গেলাম আমার কলেজ জীবনে। আমার সেই গ্রামের কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক যিনি আমাকে পড়িয়েছেন কত ভালো ছিল আর কত ভালো পড়াতেন। কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা জানালাম আমার সেই স্যারকে। ঢাকার ওই নামী কলেজের শিক্ষক বোঝালেন ১) যে পদ্ধতিতে একটি স্কেলার রাশিকে ভেক্টর রাশিতে রূপান্তর করা হয় তাকে গ্র্যাডিয়েন্ট বলে, ২) যে পদ্ধতিতে একটি ভেক্টর রাশিকে স্কেলার রাশিতে রূপান্তর করা হয় তাকে ডাইভার্জেন্স বলে আর ৩) ভেক্টর অপারেটর আর ভেক্টর রাশির ক্রস গুণনকে কার্ল বলে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটা খুবই খারাপ দিক হলো সব কিছুকেই সজ্ঞায়িত অর্থাৎ ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা কে X বলে। আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের একটা ধারণা জন্মেছে যে, এইভাবে না শিখলে বিষয়টি শেখা হয় না আর এইভাবে না বোঝালে বিষয়টি ভালোভাবে বোঝানো হয় না। এগুলোর জন্য অনেকাংশে আমাদের কোচিং সেন্টারগুলো দায়ী। তাদের কাজই হলো সব কিছুকে সজ্ঞার ছকে ফেলা। আর আমরা পরীক্ষার প্রশ্নও করি "কাহাকে বলে" টাইপের। দোষ আমাদের ছেলেমেয়েদের না। আমাদের।

Gradient, divergence ও curl এইভাবে বোঝানোর মানের শিক্ষকরাই এখন আমাদের কলেজে পড়ান। এদের কাছে পড়ে তারপর আমাদের কাছে আসে। প্রথম বর্ষ আর দ্বিতীয় বর্ষে অনেক কিছুই আমরা পড়াই যা আমাদের ইন্টারমিডিয়েটেও পড়ানো হয়। ওদেরকে ওগুলো জিজ্ঞেস করলে ওদের উত্তর gradient, divergence ও curl-এর উত্তর থেকে খুব যে better উত্তর দেয় তা কিন্তু নয়। তাই বিষয়টা অত্যন্ত সিরিয়াস। আমাদেরকে ভাবতে হবে। এই লেভেলের শিক্ষক নিয়োগ বা দলীয় চিন্তা ধারা থেকে শিক্ষক নিয়োগ হলে এর ফল খারাপ থেকে খারাপতর হবে। অর্থাত এই জাতি সার্টিফিকেট ধারী যারা নিজেদের শিক্ষিত ভাববে কিন্তু প্রকৃত অর্থে অশিক্ষা আর কুশিক্ষায় আকন্ঠ নিমজ্জিত।

আমি ভাবছিলাম কি দরকার আছে gradient, divergence ও curl ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে রাখার। ইংরেজি মাধ্যমের A-লেভেলের syllabus দেখলাম তাদেরতো এগুলো পড়ানো হয় না। আমি ইন্টারমিডিয়েটের syllabus দেখে ভাবছিলাম আর একটু পড়ালেতো তাদের undergraduate ডিগ্রী দেওয়া যায়। কারা এই syllabus করছে? যারাই করুক তাদের এত পন্ডিতি দেখাতে বলেছে কে? নিজে যা যা জানে বা পড়েছে তার প্রায় পুরোটাই সিলেবাসে ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো এই syllabus কারা তৈরী করে? যতটুকু জানি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই করেন কিন্তু যারা ওসব কমিটিতে থাকেন তাদের অধিকাংশই more politicians than they are teachers এবং এই কমিটি নির্বাচনেই গলদ। এই কমিটি তৈরী করেন সচিব লেভেলের মানুষগুলো। তাদের মাথায় আছে কিভাবে মন্ত্রী বা সরকারকে খুশি করা যায়। তাই তারা সরকার দলীয় শিক্ষক রাজনীতির সাথে যারা জড়িত তাদেরকেই শুধু ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে যা হবার তাই হয়। ওই শিক্ষকরা সচিবালয়ে গিয়ে মিটিং করতে পেরেই খুশি। ওখানে গিয়ে syllabus তৈরিতে যতনা মনোযোগী তার চেয়ে বেশি মনোযোগী অন্য কোন favour পাওয়াতে বা অন্য কোন তদ্বিরে। এখানেও এই সচিবরাই মূলত দায়ী। তারা যদি সঠিক মানুষদের কমিটিতে রাখত তাহলে সবকিছু অন্যরকম হত। তাই আমি বলি আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে মন্ত্রনালয় থেকে বের করে এনে এগুলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিসন বানাতে হবে। যতদিন এগুলো শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে থাকবে ততদিন এরকম অবস্থা চলতেই থাকবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

0 comments:

Post a Comment