Tuesday, August 25, 2015

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষায় বিপ্লব ঘটাতে পারে


বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে উচ্চশিক্ষায় বিপ্লব সম্ভব। কৃষি, মাঝারিশিল্পের পর উদীয়মান এ সেক্টরে একদিন বিপ্লব ঘটবে। বিশ্বের প্রথিতযশা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। তবে সবকিছুর জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সঠিক তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। এটি করতে পারলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডসহ প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি। তারা জ্ঞান আহরণ, গবেষণা, শিক্ষা বিতরণ করে এ অবস্থানে এসেছে। তবে তাদের বয়স কারও ৪০০ বছর, কারও ২০০ বছর। সেই তুলনায় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও শিশু। আর শিশুদের সঠিক নার্সিং করলে তারা যেমন সুসন্তান হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিক নার্সিংয়ের মাধ্যমে এর সুফল পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডসহ বিশ্বের নামীদামি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি। এ ছাড়া উন্নত দেশগুলোতে গবেষণামুখী বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশির ভাগ গবেষণামুখী হয়। পাবলিকগুলো শিক্ষাদানমূলক। বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিকভাবে নার্সিং করতে পারলে সেটি সম্ভব হবে। বেসরকারি শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি শিক্ষা দিতে পারলে এরা দেশের সম্পদে পরিণত হবে, সঙ্গে সঙ্গে তারা বিদেশে কর্মসংস্থানের যোগ্য হয়ে বিশ্বের সম্পদেও পরিণত হবে। বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু ১৯৯২ সালে। মাত্র ২২ থেকে ২৩ বছরে তাদের দিয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৪০০ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করি, তবে তা সঠিক হবে না। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় তথা উচ্চশিক্ষার বয়স মাত্র ৯৪ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৯৪ বছর বয়সে অনেক বিশ্বমানের পণ্ডিত তৈরি করেছে। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন ৯৪ বছর বয়স হবে, তখন তাদের বলা যাবে আপনারা কী করছেন? এখন তাদের বলার সময় হয়নি। কারণ বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় তারা এখনও শিশু। শিশুদের নার্সারি করতে হয়। এখন তাদের নার্সিং করতে হবে। এই নার্সিং করার দায়িত্ব শুধু আমাদের ওপর বর্তায় না, যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে তাদেরও রয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এই উপমহাদেশে যে কয়টি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তার বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই ছিলেন সমাজে বিত্তবান বা ব্যবসায়ী। আগের জমিদাররা জনকল্যাণ হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। এখনও বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা জনকল্যাণ কাজ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন এ রকম একাধিক উদাহরণ আছে। তবে কিছু লোক মনে করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কারণ অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা জড়িত। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে উল্লেখ করে আবদুল মান্নান বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই এই সার্টিফিকেট বাণিজ্য হয়। বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও অহরহ শিক্ষা বাণিজ্য, সার্টিফিকেট বাণিজ্য হচ্ছে। সেসব দেশ থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট এনে আমাদের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষকতা করছেন। আমরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা খুবই সীমিত। আমরা কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শ, নজরদারি সর্বোপরি সরকারকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিতে পারি। 

উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করলেই আমরা কিছু করতে পারবো। উচ্চশিক্ষা কমিশনের নামে আমরা পদপদবি চাই না। ইউজিসি যুগোপযোগী ও শক্তিশালী হোক সেটি চাই। তিনি বলেন, ইউজিসিকে শক্তিশালী করা মানে হচ্ছে শিক্ষা খাতে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করা। সরকারকে আমরা কার্যকর সহায়তা করতে পারি। ফিজির মতো ছোট দেশ সেখানে উচ্চশিক্ষা কমিশন থাকলে আমাদের কেন থাকবে না। ইউজিসি একটি নখদন্তহীন বাঘ বলতে চাই না। তবে ইউজিসির ক্ষমতা সীমিত সেটি সত্য। আমরা নখ চাই না, বাঘ চাই না, আমরা চাই ইউজিসি একটি কার্যকর কমিশন হোক। ক্রমবিকাশমান একটি সেক্টরকে আরও অগ্রসর করতে এর কোন বিকল্প নেই। কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে, মাঝারিশিল্পে বিপ্লব ঘটেছে। আমরা চাই বাংলাদেশে উদীয়মান শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটুক। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে কয়টি কমিশন আছে তার মধ্যে ইউজিসির সম্ভবত সবচেয়ে দুর্বল কমিশন। ১৯৭৩ সালে মাত্র ৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য যে আইন ছিল ২০১৫ সালে ১২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য এখন একই আইন বহাল রয়েছে। এটি কোনভাবেই হতে পারে না। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে মঞ্জুরি কমিশনের অনুদান বণ্টন ছাড়াও এখন অনেক কাজ করতে হয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা সরকারি ও বেসরকারি বলতে চাই না। বিশ্বের কোথাও এ ধরনের শব্দ ব্যবহৃত হয় না। আমরা সবাইকে এক চোখে দেখি। কাস্টমার কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি খোঁজেন না। যেখানে ভাল সেবা পাবেন তিনি সেখানেই যাবেন। বিশ্বের সব জায়গায় একটি প্রচলিত ধারণা, সরকারি মানেই খারাপ সেবা। আর ভাল সেবা মানেই বেসরকারি। কিন্তু বাংলাদেশের বিচিত্র ঘটনা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। এখানে উল্টো। সরকারি খাত ভাল আর বেসরকারি খাত খারাপ। আমাদের চোখে সবাই সমান। পাবলিক হোক আর প্রাইভেট হোক তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কি না- সেটি আসল বিষয়। 

তিনি বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হতে হলে ৩টি শর্ত পূরণ করতে হয়। জ্ঞান সৃষ্টি, গবেষণা ও জ্ঞান বিতরণ করা। এ কাজগুলো যারা পূর্ণাঙ্গভাবে করতে পারে তারাই বলতে পারে আমরা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

Published in: http://www.mzamin.com/details.php?mzamin=ODkzMjQ=&s=MTM=

0 comments:

Post a Comment