Saturday, August 15, 2015

"বাংলাদেশ কে মেধাশূন্য করতেই নতুন বেতন কাঠামো"

(ড: মো: ফজলুল করিম সহকারী অধ্যাপক কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান)

বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মাঝে নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করেন নতুন বেতন কাঠামোর মাধ্যমে তাদের সম্মানহানি করা হয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক মানদণ্ডে নয়, সামাজিকভাবেও
তাদেরকে হেয় করা হয়েছে।

এ কথা সত্যি বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন এমনিতেই দক্ষিন এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। তার উপর নতুন বেতন স্কেলের মাধ্যমে তা আরও অবনমন করা হয়েছে। ফরাসউদ্দিন কমিশন নাকি নানা দিক বিবেচনা করে এ রকম প্রস্তাব করেছেন। তাদের যুক্তি হল একজন শিক্ষক কয়েক বছরের মধ্যে অধ্যাপক হয়ে সচিব সমতুল্য বেতন স্কেলে চলে আসে, যেখানে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একজন সরকারি কর্মকর্তা কে সচিব হতে হয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকদের অনেক কম পরিশ্রম করতে হয়। তারা একটিবা দুটি ক্লাস নিয়ে সারা দিন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তে ক্লাস নেন। যেখানে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এরকম আরও অনেক ছোটখাট বিষয়ে তারা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। ফরাসউদ্দিন কমিশন কে শুধু এতটুকু বলব যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে আসেন তারা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা ছাত্র। প্রথম থেকে শেষ অবধি খুব ভাল রেজাল্ট করার পর তাদের স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার। গবেষনার মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা করবার গুরু দায়িত্ব তারা নিজের কাঁধে তুলে নেন সব ধরনের লোভ লালসা ত্যাগ করে। তাই তারা অতুলনীয়। তাদের অন্য পেশার সাথে তুলনা করা কতটা বিবেচনা প্রসূত আমি জানি না। আমার দেশের বিজ্ঞ জনেরা এ বিষয়ে বুঝতে না পারলেও অন্যরা বুঝেন বলেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক তাদের কাছে পূজনীয়। জাপানে তিনটি পেশার লোকদের বাধ্যতামূলক সেনসি (স্যার) বলতে হয়। পেশাগুলো হল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ডাক্তার আর প্রকৌশলী। কেন তারা এটা করেন তা বিশ্লেষন করার জন্য খুব বেশী মাথা ব্যয় করবার প্রয়োজন নেই। তারা ভাল করেই জানেন সমাজ পরিবর্তনের জন্য এরাই মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। সেদিন এক সমীক্ষায় দেখলাম চীনের টপ লেভেলের ৯০ ভাগ লোক প্রকৌশলী শিক্ষক এবং ডাক্তার। যদিও জাপান বা চীনের মত দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া খুব কঠিন কাজ। প্রভাষক হতে অধ্যাপক হতে হলে প্রচুর কষ্ট করতে হয়। ছাত্র পড়াশুনার পাশাপাশি ভাল মানের গবেষনা করতে হয়। একটি কঠিন নীতিমালা পাড় হয়ে তাদের অধ্যাপক হতে হয়।


মানছি আমাদের দেশে চিত্র জাপান বা চীনের মত নয়। এখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক শিক্ষক নিয়োগ হয়। গবেষনা না করেই অধ্যাপক হয়ে যায়। নীতিমালা যে যার মত তৈরী করে নানা ধরনের সুবিধা ভোগ করেন। যদি এগুলো হয় তবে সিস্টেমের সমস্যা। সিস্টেম কে আপগ্রেড করার জন্য প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত। আপনি বলতে পারেন ভাল মানের গবেষনা ছাড়া পদোন্নতি হবে না। আপনি বলতে পারেন সরকার যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু সরকারি টাকায় চলে সেহেতু সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক রকম আইন থাকবে। শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি সময়োপযোগী আইন প্রনয়ন করা যেতে পারে। আপনি শিক্ষকদের গবেষনার মান কিভাবে উন্নতি করা যায় সে বিষয়ে কথা বলতে পারেন। রাজনৈতিক নিয়েগ বন্ধ করতে পারেন। এ সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের প্রস্তাবনা সকলের কাছে অধিক গ্রহনযোগ্য।

এগুলো কোন কিছু না করেই সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অপমান করা হল। এর মাধ্যমে মেধাবীদের শিক্ষকতার পেশায় আসবার চিন্তাকে নিরুৎসাহিত করা হল। যারা সত্যিকার দেশের জন্য কিছু করতে চান তাদের ভাবতে বাধ্য করা হল এ দেশ আমার জন্য নয়। এর ফল যা হবে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। এ সত্যিটি অনুধাবন করবার মত মানুষ ইতিমধ্যে কমে গেছে। ভবিষ্যতে আর থাকবে বলে মনে হয় না।

এখনও সময় আছে আমাদের আরও ভালভাবে চিন্তা করবার। আমাদের দেশের উন্নতি করতে হলে মেধাবীদের মূল্যায়ন করতেই হবে। নতুবা জাহিদ হাসান এর মত অনেক জাহিদ হাসান দেশ ছেড়ে খুঁজে নিবেন নতুন ঠিকানা।

Source: http://newsoftheworld24.blogspot.kr/2015/08/blog-post_53.html

0 comments:

Post a Comment