ফিদা হাসান
সংবাদপত্রে মাধ্যমে জানতে পারলাম বহুল প্রতিক্ষিত সরকারী চাকুরীজীবিদের বেতন স্কেল (অস্টম পে স্কেল)-এর আলোর মুখ দেখতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। কারন হিসাবে অর্থ মন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, স্কেলকে আরো পর্যবেক্ষন করতে হবে। প্রস্তাবিত স্কেলে ‘টাইম স্কেল’ এবং ‘সিলেকশন গ্রেড’ না থাকাতে কিছু গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষতির সম্মুখিন হবে একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষকেরা মানব বন্ধন সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কিন্তু কি কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেটা খতিয়ে দেখাটাই হবে বিচক্ষনতা। দেখা যায় সপ্তম বেতন স্কেলে সচিব, সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক ও মেজর জেনারেল পদের ব্যক্তিদের ‘এক নম্বর’ গ্রেডে রাখা হলেও প্রস্তাবিত অস্টম গ্রেড স্কেলে সিলেকশন গ্রেড না থাকায় সিনিয়র অধ্যাপকদের সেই গ্রেড প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকছে না। একই সাথে ‘গ্রেড এক’ এ সচিবদের রেখে কমিটি তার উপরে আরো দুটি অদৃশ্যমান গ্রেড তৈরি করেছে, যার একটিতে আছে মুখ্যপরিষদ সচিব/মুখ্য সচিব, পরেরটিতে আছে সিনিয়র সচিব। বিষয়টা এখন দাড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক জুনিয়র সচিবের ক্যাটাগরিতে থাকছে একই সাথে অধ্যাপকের অবস্থান আরো অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে।
সমস্যাটি কেনো ঘটেছে তা কিছু ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষন করলে বোঝা যাবে। ২০০৭-এ আর্মি যখন কেয়ারটেকার গভর্মেন্টের সাথে দেশের ক্ষমতায় আসলো, তৎকালীন আর্মি চিফ, লেফট্যানেন্ট জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ তার পদবী আপগ্রেড করলেন, তিনি জেনারেল হলেন। একই সাথে আর্মির নিজেস্ব ব্যাংকের কার্যক্রম প্রশস্ত হলো , বিশ্ববিদ্যালয় হলো, সুযোগ সুবিধা আরো বাড়লো। বর্তমান সরকারের গত টার্মের শেষের দিকে যখন দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নাজুক, বাংলাদেশ পুলিশ তাদের র্যাঙ্ক বাড়ালো, দ্বিতীয় শ্রেনীর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) হলেন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা। এখন তারা নিজেস্ব বিশ্ববিদ্যালয় দাবী করেছে। আবাসন ব্যবস্থা সহ আরো অনেক সুযোগ সুবিধা প্রকৃয়াধীন রয়েছে। এবার প্রশাষন (এডমিন ক্যাডার) এর দিকে তাকানো যাক, এই অস্টম পে স্কেল-র প্রথমদিকে অসমাঞ্জস্য মুলত তারাই তৈরি করেছে। তারা সুযোগ সুবিধা বাড়াতে বাড়াতে তাদের প্রথম দুটি গ্রেড, গ্রেড-১ থেকেও উপরে উঠিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি এই প্রফেশনে যারা চাকুরি করে , অপরাধ করার পরেও পুলিশ অনুমতি ছাড়া তাদের গ্রেফতার করতে পারবে না এমন ধারার আইন করে নিচ্ছে। বিচারপতিরাও পিছিয়ে নেই, সম্প্রতি এক রিপোর্ট থেকে জানতে পারি তারা তাদের ডিস্ট্রিক জজকে সচিবের পদমর্যাদায় এনে একটা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স করে কার্যালয়ে চিঠি চালাচালি শুরু করেছে, যে বিষয়টা নিয়ে মহান জাতীয় সংসদেও কথা হয়েছে।
এখন যদি প্রফেশন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একই ধারায় বিশ্লেষন করি তাহলে দেখি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক ইয়াজুদ্দিন আহমেদ দীর্ঘমেয়াদে (২০০২-২০০৭)বাংলাদেশের মহামান্য রাস্ট্রপতি ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য কিছু করেছে? ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য তার ক্ষমতা ব্যবহার করে কিছু করেছে বলে কোন রেকর্ড নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপদেস্টা হিসেবে এই কিছু দিন আগেও বেশ কয়েকজন শিক্ষক/প্রাক্তন শিক্ষক ছিলেন, তারা কি শিক্ষকদের জন্য কিছু করেছেন? তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা তা করেন নি। প্রফেসর মহাব্বত খান, সাবেক পি এস সি র সদস্য এবং বর্তমান ইউ জি সি-র সদস্য , সম্প্রতি এক পত্রিকার কলামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উপর বিষাদগার করেছে। যদিও তিনি নিজেই শিক্ষক। শুধু ইউ জি সি কিংবা পি এস সি নয় অন্যন্য প্রতিষ্টানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা গুরুত্বপুর্ন দায়িত্বে থাকে। কিন্তু, রেকর্ড সেই এক। এই কমিউনিটির জন্য তারা আলাদা করে কিছু করে না, কারন সেটা তাদের দায়িত্ব নয়, নৈতিকতার সাথেও সেটা যায় না। অধিকন্তু সাবেক ব্যাঙ্ক গভর্নর জনাব ড. ফরাস উদ্দিন যিনি এই অস্টম পে স্কেল কমিশনের প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেছেন ১৮ বছর, সেই প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সহ ওই কমিশনে থাকা আরো কয়েকজন শিক্ষক সুযোগ পেয়েই শিক্ষকদের বেতন আর মর্যাদায় হাত দিয়েছেন। কিন্তু কেন দিলেন এটা সরকারসহ সবাইকে ভাবতে হবে। বিগত কয়েকদিন আমি বেশ কিছু সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে কথা বলে তাদের অভিমত জানতে পারলাম। তাদের মতামত, বেতন কাঠামো নিয়ে যে অবমাননা হচ্ছে তা কাম্য নয় কিন্তু একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিগত সময় ধরে যা ঘটে চলেছে তাও কোনভাবেই কাম্য নয়। বেশ কিছু সিনিয়র শিক্ষকদের মতমতটা এতটাই স্ট্রং যে তারা তাদের বেতন অবনমন থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এই ধারাতেই যে বেতন কমিশনের শিক্ষক সদস্যরা শিক্ষকদের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অনুমান করা যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই দৃষ্টিকোন থেকে কমিশনের সচিবেরা তাদের নিজেদের বিচার করতে পারে নি। বরং তারা সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। এবার যদি মোরাল দৃষ্টিকোন থেকে কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে অন্য সব প্রথম গ্রেডকে পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন, কন্সটিটিউশনকে ভায়োলেট করে আর্মি যখন ক্ষমতা নেয়, তারা কি রিগ্রেট করে? এমন কোন নজির নেই যেখানে তাদের মনোবেদনা প্রকাশ পেয়েছে। পুলিশের অহরহ ঘুস কেলেঙ্কারী কিংবা অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি অথবা তাদের অফিসে যখন নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তখন কি তারা মনো যাতনায় ভোগে? সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির সমতানে কোন অনুতাপের নজির আমরা দেখতে পাই না। একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন সচিবের ঘুস কেলেঙ্কারী ফাস করতে আত্মহুতি দেয় তখন কি তাদের মনো পীড়ন শুরু হয়, কিংবা একজন শিক্ষককে যখন তাদের পায়ে হাত দিতে বাধ্য করে, তখন? এখন পর্যন্ত কোন নজির দেখা যায় নি। বিচার বিভাগ নিয়ে কথা না বলি। দেশের এনার্কির ভিতরে তারা আদালত অবমাননা নামক এক হাইলি সিকিউর্ড প্লেস তৈরি করে রেখেছে, হয়ত বা সেটা তাদের জন্য ভালো এবং দেশেরও জন্য দরকার! এই বিষয়ে মন্তব্য তাই নিস্প্রয়োজন।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকুল শিক্ষার পরিবেশ না থাকা্র মনো বেদনা কিন্ত এই শিক্ষকদের ই আছে। সত্যিকারের অর্থেই তারা তাদের ছাত্রছাত্রীদের উন্নতি জন্য ভাবিত হয় এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়, ঠিক যেমনটা পিতামাতা তাদের সন্তানের জন্য ভাবিত হয়। এই শিক্ষকেরা দেশের জন্যও ভাবিত হয় কেননা এখানেই তাদের সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীরা বসবাস করবে। তাই তারা এই স্কেল অবমাননার পরেও দ্বিধান্বিত, স্কেল ফিরে পাবার বেশি তারা কিছু চায় না। তারা অন্যদের মত দেশটা কে শুধু ভোগ করে যাচ্ছে না। বরং তারাও চাচ্ছে পরিবেশ পরিবর্তিত হোক, শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক। সত্যি বলতে কি, বিগত এক দশক ধরে সুপরিকল্পিত ভাবে গুটি কয়েক আনফিট এই প্রফেশনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা শিক্ষক নয় শুধুই মাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যারা বিভিন্ন ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রুটি পুর্ন নিয়োগ প্রকৃয়ার পরিবর্তন এনে তাই যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক, এখন সকলের দাবী। একই সাথে গবেষনার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হোক। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শুধু ক্লাসরুম একটিভিটিজের মোহে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি বরং শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি গবেষনা করার মোহেই এসেছিলো। মোহ যখন ভেঙ্গে যায়, বিভ্রান্ত হয়ে বিপথগামী হতে তখন বেগ পেতে হয় না। ঘটনা পরম্পরার এই দায়ভার তাই রাস্ট্র এড়াতে পারে না, রাস্ট্রকে অবশ্যই এই দায়ভার নিতে হবে, রাস্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি অংশের ভিতরে সরকারকে আন্তরিক সমন্বয় ঘটাতে হবে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সমাধানে আশু পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। কেননা সময় এখনো শেষ হয়ে যায় নি।
লেখক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়া থেকে
Email: k.fidahasan@yahoo.com
সংবাদপত্রে মাধ্যমে জানতে পারলাম বহুল প্রতিক্ষিত সরকারী চাকুরীজীবিদের বেতন স্কেল (অস্টম পে স্কেল)-এর আলোর মুখ দেখতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। কারন হিসাবে অর্থ মন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, স্কেলকে আরো পর্যবেক্ষন করতে হবে। প্রস্তাবিত স্কেলে ‘টাইম স্কেল’ এবং ‘সিলেকশন গ্রেড’ না থাকাতে কিছু গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষতির সম্মুখিন হবে একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষকেরা মানব বন্ধন সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কিন্তু কি কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেটা খতিয়ে দেখাটাই হবে বিচক্ষনতা। দেখা যায় সপ্তম বেতন স্কেলে সচিব, সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক ও মেজর জেনারেল পদের ব্যক্তিদের ‘এক নম্বর’ গ্রেডে রাখা হলেও প্রস্তাবিত অস্টম গ্রেড স্কেলে সিলেকশন গ্রেড না থাকায় সিনিয়র অধ্যাপকদের সেই গ্রেড প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকছে না। একই সাথে ‘গ্রেড এক’ এ সচিবদের রেখে কমিটি তার উপরে আরো দুটি অদৃশ্যমান গ্রেড তৈরি করেছে, যার একটিতে আছে মুখ্যপরিষদ সচিব/মুখ্য সচিব, পরেরটিতে আছে সিনিয়র সচিব। বিষয়টা এখন দাড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক জুনিয়র সচিবের ক্যাটাগরিতে থাকছে একই সাথে অধ্যাপকের অবস্থান আরো অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে।
সমস্যাটি কেনো ঘটেছে তা কিছু ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষন করলে বোঝা যাবে। ২০০৭-এ আর্মি যখন কেয়ারটেকার গভর্মেন্টের সাথে দেশের ক্ষমতায় আসলো, তৎকালীন আর্মি চিফ, লেফট্যানেন্ট জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ তার পদবী আপগ্রেড করলেন, তিনি জেনারেল হলেন। একই সাথে আর্মির নিজেস্ব ব্যাংকের কার্যক্রম প্রশস্ত হলো , বিশ্ববিদ্যালয় হলো, সুযোগ সুবিধা আরো বাড়লো। বর্তমান সরকারের গত টার্মের শেষের দিকে যখন দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নাজুক, বাংলাদেশ পুলিশ তাদের র্যাঙ্ক বাড়ালো, দ্বিতীয় শ্রেনীর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) হলেন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা। এখন তারা নিজেস্ব বিশ্ববিদ্যালয় দাবী করেছে। আবাসন ব্যবস্থা সহ আরো অনেক সুযোগ সুবিধা প্রকৃয়াধীন রয়েছে। এবার প্রশাষন (এডমিন ক্যাডার) এর দিকে তাকানো যাক, এই অস্টম পে স্কেল-র প্রথমদিকে অসমাঞ্জস্য মুলত তারাই তৈরি করেছে। তারা সুযোগ সুবিধা বাড়াতে বাড়াতে তাদের প্রথম দুটি গ্রেড, গ্রেড-১ থেকেও উপরে উঠিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি এই প্রফেশনে যারা চাকুরি করে , অপরাধ করার পরেও পুলিশ অনুমতি ছাড়া তাদের গ্রেফতার করতে পারবে না এমন ধারার আইন করে নিচ্ছে। বিচারপতিরাও পিছিয়ে নেই, সম্প্রতি এক রিপোর্ট থেকে জানতে পারি তারা তাদের ডিস্ট্রিক জজকে সচিবের পদমর্যাদায় এনে একটা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স করে কার্যালয়ে চিঠি চালাচালি শুরু করেছে, যে বিষয়টা নিয়ে মহান জাতীয় সংসদেও কথা হয়েছে।
এখন যদি প্রফেশন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একই ধারায় বিশ্লেষন করি তাহলে দেখি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক ইয়াজুদ্দিন আহমেদ দীর্ঘমেয়াদে (২০০২-২০০৭)বাংলাদেশের মহামান্য রাস্ট্রপতি ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য কিছু করেছে? ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য তার ক্ষমতা ব্যবহার করে কিছু করেছে বলে কোন রেকর্ড নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপদেস্টা হিসেবে এই কিছু দিন আগেও বেশ কয়েকজন শিক্ষক/প্রাক্তন শিক্ষক ছিলেন, তারা কি শিক্ষকদের জন্য কিছু করেছেন? তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা তা করেন নি। প্রফেসর মহাব্বত খান, সাবেক পি এস সি র সদস্য এবং বর্তমান ইউ জি সি-র সদস্য , সম্প্রতি এক পত্রিকার কলামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উপর বিষাদগার করেছে। যদিও তিনি নিজেই শিক্ষক। শুধু ইউ জি সি কিংবা পি এস সি নয় অন্যন্য প্রতিষ্টানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা গুরুত্বপুর্ন দায়িত্বে থাকে। কিন্তু, রেকর্ড সেই এক। এই কমিউনিটির জন্য তারা আলাদা করে কিছু করে না, কারন সেটা তাদের দায়িত্ব নয়, নৈতিকতার সাথেও সেটা যায় না। অধিকন্তু সাবেক ব্যাঙ্ক গভর্নর জনাব ড. ফরাস উদ্দিন যিনি এই অস্টম পে স্কেল কমিশনের প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেছেন ১৮ বছর, সেই প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সহ ওই কমিশনে থাকা আরো কয়েকজন শিক্ষক সুযোগ পেয়েই শিক্ষকদের বেতন আর মর্যাদায় হাত দিয়েছেন। কিন্তু কেন দিলেন এটা সরকারসহ সবাইকে ভাবতে হবে। বিগত কয়েকদিন আমি বেশ কিছু সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে কথা বলে তাদের অভিমত জানতে পারলাম। তাদের মতামত, বেতন কাঠামো নিয়ে যে অবমাননা হচ্ছে তা কাম্য নয় কিন্তু একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিগত সময় ধরে যা ঘটে চলেছে তাও কোনভাবেই কাম্য নয়। বেশ কিছু সিনিয়র শিক্ষকদের মতমতটা এতটাই স্ট্রং যে তারা তাদের বেতন অবনমন থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এই ধারাতেই যে বেতন কমিশনের শিক্ষক সদস্যরা শিক্ষকদের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অনুমান করা যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই দৃষ্টিকোন থেকে কমিশনের সচিবেরা তাদের নিজেদের বিচার করতে পারে নি। বরং তারা সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। এবার যদি মোরাল দৃষ্টিকোন থেকে কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে অন্য সব প্রথম গ্রেডকে পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন, কন্সটিটিউশনকে ভায়োলেট করে আর্মি যখন ক্ষমতা নেয়, তারা কি রিগ্রেট করে? এমন কোন নজির নেই যেখানে তাদের মনোবেদনা প্রকাশ পেয়েছে। পুলিশের অহরহ ঘুস কেলেঙ্কারী কিংবা অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি অথবা তাদের অফিসে যখন নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তখন কি তারা মনো যাতনায় ভোগে? সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির সমতানে কোন অনুতাপের নজির আমরা দেখতে পাই না। একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন সচিবের ঘুস কেলেঙ্কারী ফাস করতে আত্মহুতি দেয় তখন কি তাদের মনো পীড়ন শুরু হয়, কিংবা একজন শিক্ষককে যখন তাদের পায়ে হাত দিতে বাধ্য করে, তখন? এখন পর্যন্ত কোন নজির দেখা যায় নি। বিচার বিভাগ নিয়ে কথা না বলি। দেশের এনার্কির ভিতরে তারা আদালত অবমাননা নামক এক হাইলি সিকিউর্ড প্লেস তৈরি করে রেখেছে, হয়ত বা সেটা তাদের জন্য ভালো এবং দেশেরও জন্য দরকার! এই বিষয়ে মন্তব্য তাই নিস্প্রয়োজন।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকুল শিক্ষার পরিবেশ না থাকা্র মনো বেদনা কিন্ত এই শিক্ষকদের ই আছে। সত্যিকারের অর্থেই তারা তাদের ছাত্রছাত্রীদের উন্নতি জন্য ভাবিত হয় এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়, ঠিক যেমনটা পিতামাতা তাদের সন্তানের জন্য ভাবিত হয়। এই শিক্ষকেরা দেশের জন্যও ভাবিত হয় কেননা এখানেই তাদের সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীরা বসবাস করবে। তাই তারা এই স্কেল অবমাননার পরেও দ্বিধান্বিত, স্কেল ফিরে পাবার বেশি তারা কিছু চায় না। তারা অন্যদের মত দেশটা কে শুধু ভোগ করে যাচ্ছে না। বরং তারাও চাচ্ছে পরিবেশ পরিবর্তিত হোক, শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক। সত্যি বলতে কি, বিগত এক দশক ধরে সুপরিকল্পিত ভাবে গুটি কয়েক আনফিট এই প্রফেশনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা শিক্ষক নয় শুধুই মাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যারা বিভিন্ন ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রুটি পুর্ন নিয়োগ প্রকৃয়ার পরিবর্তন এনে তাই যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক, এখন সকলের দাবী। একই সাথে গবেষনার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হোক। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শুধু ক্লাসরুম একটিভিটিজের মোহে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি বরং শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি গবেষনা করার মোহেই এসেছিলো। মোহ যখন ভেঙ্গে যায়, বিভ্রান্ত হয়ে বিপথগামী হতে তখন বেগ পেতে হয় না। ঘটনা পরম্পরার এই দায়ভার তাই রাস্ট্র এড়াতে পারে না, রাস্ট্রকে অবশ্যই এই দায়ভার নিতে হবে, রাস্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি অংশের ভিতরে সরকারকে আন্তরিক সমন্বয় ঘটাতে হবে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সমাধানে আশু পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। কেননা সময় এখনো শেষ হয়ে যায় নি।
লেখক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়া থেকে
Email: k.fidahasan@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment