আভাস, পূর্বাভাস বা সর্বনাশ... কোন খবরই পাওয়া যাচ্ছে না। বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকারের বিষয়ে। পে- স্কেলের আলোচনা কেমন যেনো ডুব মেরেছে। ঈদের আনন্দে আমরা অনেকে নেশাতুর। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের মনে প্রচ- ভাঙচুর। এই বুঝি, শিক্ষকদের ¤্রয়িমান কণ্ঠকে আরও খাদে নামিয়ে দেয়া হলো- এই শঙ্কায়। শিক্ষকগণ যেটুকু ভদ্রোচিত প্রতিবাদ বা আন্দোলন করেছে, সেজন্য উপহাসের পাত্র হবার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবীগুলোর প্রতি কোনরূপ সম্মান দেখানো না হয়, তাহলে আমলা বা সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে মুখ তুলে দাঁড়ানোর কোন মুখ থাকবে? তারা দাঁত কেলিয়ে বলবে বা ইশারা-ইঙ্গিতে প্রকাশ করবে- আন্দোলন করে কী ছিঁড়তে পেরেছ? আমরা যা দিয়েছি তা নিয়েই তো মুখ বুজে থাকতে হলো। এ লজ্জা কি তখন আমাদের শিক্ষক নেতৃবৃন্দের বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের বা বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের গায়ে লাগবে না? আমাদের ভিসি মহোদয়গণ মেয়াদ শেষে তো অধ্যাপক হিসেবেই অবসরে যাবেন, তারা কি এই অমর্যাদার শিকার হবেন না? একটু ভেবে দেখুন, সবাই মিলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় সিনেট, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে, কারও নির্দেশ বা কর্তৃত্বে নয়। অ্যাকাডেমিক ডিসিপ্লিন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শিক্ষার পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককদের বেতনের উদাহরণ দিয়ে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, স্বতন্ত্র বেতন স্কেল এবং উচ্চশিক্ষার অন্যান্য সুবিধার আলোকে আমরা উল্লিখিত দেশসমূহের অনুরূপ বেতন কাঠামো প্রত্যাশা করি।
আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নেতৃবৃন্দ দাবী আদায়ে অটল আছেন তো? অন্ততঃ দু’টি দাবী: স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ও উচ্চশিক্ষার অন্যান্য সুবিধার আলোকে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা। এবং রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে পদমর্যাদাগত অবস্থান নিশ্চিত করা। আমরা কোন নেতিবাচক অভিযোগ বা ভাবনার সহায়ক হতে চাই না। আমরা চাই শিক্ষক সমাজের মর্যাদা রক্ষায় পিছুটানহীন কার্যকর কর্মসূচি। আমরা কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চাই না, আমরা চাই ন্যায্য অধিকার আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। আমরা আপনাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রত্যাশায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে আমরা যুথবদ্ধ হতে চাই।
মর্যাদা না বাড়লে বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত হবে: ভিসিদের হুঁশিয়ারি [সূত্র: বিডিনিউজ২৪ডটকম] পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়েছেন। তারপরও কি দাবী আদায় হবে না? সাধারণ শিক্ষকদের মনে সংশয় ও শঙ্কা। দ্বিধা নিয়ে কি কোন সফলতা পাওয়া যায়?
বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন লেকচারার নিয়োগ পাওয়ার পর প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার ন্যায় শুধুমাত্র বেতন স্কেল ছাড়া আর কিছু কি পান? অথচ একজন বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ পেয়েই সমপর্যায়ের বেতন স্কেলের পাশাপাশি গাড়ি, কোয়ার্টার, পিয়ন-সেপাই, ড্রাইভার, আরও নানাধরণের বিভাগীয় সুযোগ-সুবিধা পান। আর লেকচারার নিয়োগ পেয়ে বসার জন্য আলাদা রুম দূরের কথা চেয়ার-টেবিল পেতেই মাস-বছর পেরিয়ে যায়। গাড়ি, কোয়ার্টার, ড্রাইভার, পিয়ন-আরদালি পাওয়া তো সুদূরের কল্পনা মাত্র। ক্লাসের সেরা ছাত্র ও ভালো রেজাল্ট করে বিসিএস না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করায় লেকচারার আজ সুবিধা বঞ্চিত। এই লেকচারারের বেতন স্কেলের গ্রেড এক ধাপ উন্নীত করা কি যৌক্তিক দাবী নয়?
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে শিক্ষকতা পেশা বাদে বেশ কিছু পেশায় নানারূপে-আকৃতিতে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের সুযোগ-সুবিধা চালু রয়েছে। নামমাত্র বা প্রতীকী মূল্যে প্লট, ফ্ল্যাট, খাদ্যসামগ্রী, স্বাস্থ্যসেবা, নানা নামে ভাতা, উচ্চ হারে সিটিং অ্যালাউন্সসহ নানা প্রান্তিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বেশ কিছু সরকারি চাকরিতে ছদ্মরূপে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু রয়েছে। এমনকি প্রশাসনের যুগ্ম সচিব হলে গাড়ি ক্রয়ে বিনা সুদে ঋণ সুবিধা ও গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসিক ৪৫ হাজার টাকা প্রদানের বিধান রয়েছে, যা একজন অধ্যাপকের বেতনের সমান। কিন্তু শিক্ষকদের বেলায় যত কার্পণ্য আর শর্ত আরোপ। স্বতন্ত্র বেতন স্কেল পেতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাবলম্বী হতে হবে। প্রশাসন কি স্বাবলম্বী, না জনগণের অর্থে চলে? [মো. জাকির হোসেন, শিক্ষার অনাদর ও শিক্ষকের অপমান, দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৮ শে মে ২০১৫]
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সঙ্গে আমলাগণের তুলনা করা তো অবান্তর। কেউ কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, শিক্ষকরা বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকা- ও রাজনৈতিক ধান্দাবাজিতে ব্যস্ত। তাই তাদের উচ্চ বেতন স্কেল দেয়া যাবেনা। এ খোঁড়া যুক্তি কি সকল শিক্ষকের সঙ্গে যায়? আর এ ধরণের অনৈতিক ও লেজুড়বৃত্তির সঙ্গে আমলাগণ আরও বেশি যুক্ত নয় কি? সাদা কাপড়ের (শিক্ষক) দাগটা অল্প হলেও একটু বেশিই নজরে আসে- এটাই বাস্তবতা। আর আমলাগণ বৈধ-অবৈধ যত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, শিক্ষকগণ কি সেই সুযোগ-সুবিধা আদৌ পান? চাকুরির শুরু থেকে গাড়ি-বাড়ি, ড্রাইভার-আরদালি পান। শিক্ষকরা কি এসব পেয়েছেন নাকি পাওয়ার দাবী করছেন? অথচ ক্লাসের অপেক্ষাকৃত মেধাবীরাই (ব্যতিক্রম ছাড়া) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হন।
এদিকে সচিবেরা একই গ্রেডে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের না রাখার পক্ষে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সচিব প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলনের হুমকিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এতে সচিবদের মর্যাদা ক্ষুণœ হবে। দৃষ্টান্ত হিসেবে একজন সচিব বলেন, শিক্ষাসচিব এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক নম্বর গ্রেডে বেতন পাওয়ায় সচিবের কর্তৃত্ব বা নির্দেশ মানতে তিনি বাধ্য না-ও হতে পারেন। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যেও এমন ঝামেলা তৈরি হতে পারে। [সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ১৫ই জুন ২০১৫]
সচিব মহোদয়ের উক্ত ভাষ্য অনুযায়ী, সচিবরা কি তারই একসময়ের শিক্ষককে শাসন করতে বা তার কর্মচারি ভাবতে চান? নাকি সচিব হওয়ার পর শিক্ষকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা নীতি-নৈতিকতা অনুসরণের দরকার হয়না। আমার জানা মতে, সচিব সরকারের একজন বার্তাবাহক মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সরকারের বা রাষ্ট্রের নির্দেশনা মেনে চলে, মেনে আসছে। সচিবের কর্তৃত্ব বা নির্দেশ মানতে হবে কেন? অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, সচিবগণের স্বেচ্ছাচারী এ মনোভাবই বেতন স্কেলে শিক্ষকদের অবমূল্যায়নে সাহস যুগিয়েছে। বর্তমান শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব সরকারের মৌলিক মনোভাবের বিপরীত এই ষড়যন্ত্রমূলক নীতি গ্রহণের দুঃসাহস হয় কী করে? শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেশন কি যথাযথ প্রতিকারের উদ্যোগ নেবে না?
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আমলাতন্ত্রের প্রশাসনিক অংশ প্রবল প্রভুত্ব ও একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতার দম্ভে পিষ্ট হয়েছে শিক্ষার কদর আর শিক্ষকের সম্মান। নানা ছলাকলায় আর তেলেসমাতিতে আমলাতন্ত্রের একটি অংশ রাজনীতিবিদদের মনে এ দৃঢ় বিশ্বাসের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে যে চাকরিরত অবস্থায়ই কেবল তারা অপরিহার্য নন, বরং ‘হাতি মরলেও লাখ টাকা’ নীতির মতো অবসর গ্রহণের পরও তারা অপরিহার্য। তাই আমলাতন্ত্র থেকে কেউ অবসর নিলে বড় দুই দলই হামলে পড়ে দলে ভেড়ানোর জন্য। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও অবসর গ্রহণের অব্যবহিত পরই দলের কিংবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের বসিয়ে দেয়া হয়। একেই বোধ করি বলে ‘গাছেরটা খাওয়া, তলেরটা কুড়ানো’। [মো. জাকির হোসেন, শিক্ষার অনাদর ও শিক্ষকের অপমান, দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৮ শে মে ২০১৫]
শিক্ষক সমাজের চিরায়ত সজ্জন, ভদ্র ও বিনয়ী ভাবকে আমলাগণ বোধ হয় প্রতিবাদী ভাবের অভাব ঠাওরেছেন। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সুবিধাভোগী আমলারা কৌশলে শিক্ষকগণের সম্মান-মর্যাদা অবমূল্যায়নে দুঃসাহস দেখিয়েছে। আমলাগণের (ইশ্, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারলাম না...) মৌন আক্ষেপ থেকে শিক্ষক সমাজকে ব্যাকপুটে নিক্ষেপের এই অপচেষ্টা। ইতোমধ্যে খবরে প্রকাশ, কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই মন্ত্রীসভায় অষ্টম পে-স্কেলের ফাইলটি আলোচনার টেবিলে উঠতে যাচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত প্রতিবাদী আন্দোলনে কোন জোশ পরিলক্ষিত হয়নি। নামকাওয়াস্তে কয়েকটি কর্মসূচি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে কি আদৌ? একবার কোন নিয়ম-নীতি পাশ হয়ে গেলে, তা পরিবর্তন আরও সময়সাপেক্ষ। এখনই সময়, পাশাপাশি বসে যৌক্তিক সুরাহার অথবা অধিকার আদায়ে পথ আগলে দাঁড়াবার।
ড. মইনুল ইসলাম স্যার লিখেছেন, এ পর্যায়ে ১৯৮৬ সালে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল থাকার সময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা আলাদা বেতন স্কেলের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ, ওই সময়ে সংসদে বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে তিনি আমাদের দাবির সপক্ষে অবস্থান নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছিলেন। [সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০১৫] এ আন্দোলনের ফসল শিক্ষকগণের বর্তমান মর্যাদা। আমরা কি সেই আশির দশকের আন্দোলনের শিক্ষায় শাণিত হতে পারি না? এখন আমাদের সম্মানীয় শিক্ষক নেতৃবৃন্দ কী করবেন? প্রভাবশালী অধ্যাপকগণ কী ভাবছেন? বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেশন কী পরিকল্পনা করছে? ভিসি মহোদয়গণ প্রত্যেকেই অধ্যাপক, স্বাভাবিক মেয়াদান্তে তারা অধ্যাপক পদেই ফিরে আসবেন, তারা সাধারণ শিক্ষকদের জন্য কিছুই কি ভাববেন না? শুধু অফিসে, বাসে বা চায়ের টেবিলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে এ অবমূল্যায়ন রুখে দেয়া অসম্ভব।
অষ্টম পে-স্কেল নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ পত্রিকায় যেসব কলাম লিখেছেন, সেসব কলামের কমেন্টগুলোর উপর কি আমাদের চোখ পড়েছে? সাধারণ পাঠক-জনতা কী ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণের পে-স্কেল নিয়ে? এখানে অনেক শিক্ষকদের নিয়ে অনেক সম্মানহানিকর মন্তব্য চোখে পড়ে। সেসব কি আমরা পড়েছি? [ড. মইনুল ইসলাম, নতুন বেতন কাঠামো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতাকে কেন এই অবমূল্যায়ন?, দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০১৫]
এই কলামের কমেন্টে জনৈক শাহেদ লিখেছেন, শিক্ষক নিয়োগের সময় হাসি মুখে স্বজন প্রীতি, দলীয়করণ করে ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রকে বাদ দিয়ে পেছনে ছাত্রকে নিয়োগ দিতে আপনাদের অন্তর একটুকুও কাপে না। সরকারের নির্লজ্জ দালালির কথা অকপটে লিখে ফেলতে একটুকুও বাধ সাধে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ পর্যায়ে নিয়ে গর্ব বোধ করেন! এখন বেতন বাড়ানোর জন্যে কান্না কাটি করছেন! সহানুভূতি জানাতে পারলাম না বলে দুঃখিত। তবে বৈষম্যকে সাপোর্ট করিনা! তবে বেতনের জন্যে কান্না কাটি করলে খুব একটা লাভ এখন হবে বলে বিশ্বাস করি না।
জনৈক মোহাম্মদ সোলায়মান লিখেছেন, মুদ্রার বিপরীত দিকেও একটি গল্প আছে। আমি মইনুল স্যারের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিন বছরের অনার্স আমি শেষ করেছি ৬ বছরে। কারন আমার ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান আর পরীক্ষা কমিটির প্রধানেরা প্রায়শই দুটি ভিন্ন গ্রুপের ছিলেন। এই দুই গ্রুপের পরীক্ষা নেয়া এবং নিতে না দেয়ার দ্বৈরথে আমাদের জীবন থেকে ঝরে গেছে অনেক বছর। আমার বেশিরভাগ শিক্ষক ক্লাসে আসতেন না। ক্লাসে আসলে আমাদের নিয়ে কটুকাটব্য করতেন। অথচ সেই একই শিক্ষকেরা চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোলায়েম কন্ঠে খ্যাপের পড়া পড়াতেন। স্বীকার করি বেতন কাঠামোতে তাদের যেখানে রাখা হয়েছে তা হয়তো পুনর্বিবেচনার দরকার আছে, কিন্তু এই বোধটি কেন যেন মন থেকে আসে না। আর সরকারের এই কয়টি টাকার জন্য কোন ইউনিভার্সিটি শিক্ষক না খেয়ে মরবেন না। উনাদের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাপের খনি আছে।
জনৈক রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, কি আর করবেন স্যার ? সরকার যদি নিতান্তই সাড়া না দেয়, তাহলে আদাজল খেয়ে সরকারের পক্ষে লিখতে শুরু করে দিন। তাহলে একদিন আপনিও ভিসি আর ইউজিসির চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন। তখন পুষিয়ে যাবে। [ফাহমিদুল হক, বেতন কাঠামো অপমানিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১৫, ২০১৫]
এই কলামের কমেন্টে জনৈক শাহেদ লিখেছেন, সব মানি, তবে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে যা বোঝায় তা কি বাংলাদেশে আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের কাজ হচ্ছে স্টাডি-টিচিং-রিসার্চ। কিন্তু আপনারা করেন রাজনিতি, সেই সুবাদে ছাত্র-নেতাদের সাধারনের তুলনায় সমীহ করেন। এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম-কা- যদি বিদেশের প্রফেসরগণ শুনেন তবে তাজ্জব বনে যাবে, এই ভেবে যে, শিক্ষক করে রাজনিতি, ছাত্র মহড়া দেয় অস্ত্র নিয়ে। অবাক কারবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লিখেছেন, শিক্ষক সমাজের নোংরামি নিয়ে অনেক কথা বললেও এটা স্পষ্ট যে আপনি সেই সমাজের বেতন কাঠামো নিয়েই অপমানিত বোধ করেছেন। শিক্ষক সমাজের রাজনৈতিক নোংরামি, নিয়োগ বানিজ্য, নিম্নমানের শিক্ষা প্রদান নিয়ে আপনি অপমানিত বোধ করেননি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক শিক্ষক পাওয়া যাবে যারা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা রাখেনা, বিশ্বাস করেন? আশা করি বেতন কাঠামোর মতো এরকম অন্যান্য অসংগতি নিয়েও তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন। জনৈক ইউনূস লিখেছেন, আপনারা রাজনীতি করেই তো ঢের কামান, আবার বেতন কেন?
জনৈক দেবু সরকার লিখেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া হলো কিন্ডার গার্টেনের নিয়োগ প্রক্রিয়ার মতো। ভাইভা বোর্ডে বসে একটু খেজুরে আলাপ হলো, তাতেই হয়ে গেলো চাকরি। পেছনে অবশ্য চলে অস্বাভাবিক লেজুড়বৃত্তি আর চাটুকারিতা। পরীক্ষিত মেধাবীর চেয়ে পরীক্ষিত চাটুকাররাই এখন বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে কোনো কোনো ডিপার্টমেন্টের মান হয়ে উঠেছে খুবই কৌতুককর। এখানে এমন কিছু শিক্ষকও নিয়োগ পাচ্ছেন, যারা শুদ্ধ করে গরুর রচনাও লিখতে পারেন না। ফলে তাদের যে লোকে শ্রদ্ধা করবে না, এটাই স্বাভাবিক। আইন করে বা টাকা বাড়িয়ে কি শ্রদ্ধা বা লেখাপড়ার মান বাড়ানো যায়!
উল্লিখত পাঠক মন্তব্যগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হেয় করা হয়েছে। মন্তব্যকারীগণ হয়তো সাধারণ পাঠক নয়। হতে পারে তারা কেউ কেউ সরকারী কর্মকর্তার প্রতিনিধি (ছদ্মবেশে), কেউ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারেনি বা কোনভাবে সুযোগ বঞ্চিত। তাই সুযোগ পেয়ে তাদের এই নেতিবাচক ও হীনমনা মন্তব্য। এবার শিক্ষক সমাজকে ভাবতে হবে, যদি শিক্ষকদের দাবীর যৌক্তিক কোনো সমাধান না হয়, তাহলে পথে-ঘাটে, অফিস-আদালতে শিক্ষকদের কতটুকু প্রতিকুল পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। পে-স্কেল নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন হবে হাসির খোরাক আর শিক্ষকরা হবেন উপহাসের পাত্র।
শিক্ষকদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিক্তি অনিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গের হাতে যতদিন থাকবে, ততদিন কি শিক্ষকরা সুবিচার পাবেন? শিক্ষক নেতৃবৃন্দের বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের উচিত নিয়মতান্ত্রিক তবে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা। আমরা জানি ও বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার শিক্ষা-শিক্ষক বান্ধব সরকার। শিক্ষকদের এ অবমূল্যায়ন সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রও হতে পারে। বিষয়টি যৌক্তিকভাবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিতে নিয়ে আসতে পারলে দ্রুতই সুরাহা সম্ভব। এখন প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দের এক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক মহোদয় সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছেন, তারা উদ্যোগ নিলে বিষয়টি আরও সহজে সমাধানযোগ্য। শিক্ষা ও শিক্ষকের ন্যায়সঙ্গত মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আর শিক্ষক নেতৃবৃন্দের নিকট অনুরোধ, শিক্ষকদের উপহাসের উপাদানে পরিণত হওয়া থেকে বাঁচান।
লেখক: কামরুল ইসলাম জুয়েল
প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
Published in: http://www.mzamin.com/details.php?mzamin=ODc0MDQ
Prime Minister last bamboo ta diya dilen shesh porjonto...
ReplyDelete