প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে সাংবিধানিক পদধারী ছাড়া অপর সবাই সরকারি কর্মচারী। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরাও সরকারি কর্মচারী। সব সরকারি কর্মচারীর বেতনভাতা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেয়া হয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থের মূল জোগানদাতা জনসাধারণ। তাদের দেয়া কর এর উৎস।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় সরকারি কর্মচারীদের এমন বেতনভাতা দেয়া হয়, যাতে সে বেতনভাতা দিয়ে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবারের ভরণপোষণের জন্য অত্যাবশ্যক সব ব্যয় নির্বাহ করে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে। আমাদের দেশ গরিব হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের আশানুরূপ বেতনভাতা দিতে না পারলেও সম্প্রতি ঘোষিত অষ্টম বেতন স্কেলে ভূতপূর্ব প্রথম শ্রেণী এবং বর্তমান ৯ নম্বর গ্রেড থেকে ঊর্ধ্বমুখী গ্রেডগুলোয় যে বেতনভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা তাদের আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ বিবেচনায় নিলে ভদ্রোচিতভাবে চলার জন্য মানসম্মত বিবেচিত হয়।
অষ্টম বেতন স্কেলে যদিও ১-২০ পর্যন্ত ২০টি গ্রেডের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এক নম্বর গ্রেডের ওপর আরো দু’টি গ্রেড রাখা হয়েছে, এর একটি হলো সিনিয়র সচিব যাদের মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২ হাজার টাকা আর অপরটি হলো মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধামন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও তিন বাহিনীর প্রধান। এ পাঁচজন কর্মকর্তার মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬ হাজার টাকা। গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত এক নম্বর গ্রেডে সচিবের মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার টাকা। মূলত সিনিয়র সচিব ও সচিব একই পদ। পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের একই পদের দু’টি নাম নেই এবং দুই ধরনের বেতনভাতাও নেই। অপর দিকে উপরোল্লিখিত যে পাঁচজন কর্মকর্তার সর্বোচ্চ মূল বেতন নির্ধারণপূর্বক তাদের গ্রেডবহির্ভূত রাখা হয়েছে, এটিও আইন, বিধি, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানের পরিপন্থী।
সরকারের সচিবালয় সংশ্লেষে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদমর্যাদার যে চারটি পদ রয়েছে এ পদগুলো উচ্চতর চাকরি কাঠামোর পদ। এ পদগুলো এককভাবে কোনো ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত নয়। এ পদগুলোর কয়টি পদ কোন ক্যাডার পাবে তা এতদসংক্রান্ত আইন ও বিধির অনুপস্থিতিতে প্রশাসনিক আদেশে নির্ধারিত হয়ে আসছে; তবে সংখ্যার দিক থেকে এ চারটি পদে প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। এ চারটি পদকে মানদণ্ড গণ্যে সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার মানক্রম নির্ধারণ করা হয়। অতীতে সেনাপ্রধান যখন মেজর জেনারেল পদমর্যাদার ছিলেন, তখন সচিব ও মেজর জেনারেল পদধারী সেনাপ্রধান সমমর্যাদা ভোগ করতেন। পরে সেনাপ্রধানের পদমর্যাদা লে. জেনারেল পদমর্যাদায় উন্নীত করা হলে সচিবরা সিনিয়র সচিবের পদ সৃষ্টি করে তাদের সমমর্যাদায় আসার প্রয়াস নেন। অতঃপর সেনাপ্রধানের পদ জেনারেল পদমর্যাদায় উন্নীত করা হলে সচিবরা তিন বাহিনীর প্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এ পাঁচটি পদকে একই পদমর্যাদায় উন্নীত করেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ে পদমর্যাদার এ লড়াই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং উঁচু পদে আসীন এ সব কর্মকর্তা পদমর্যাদার লড়াইয়ের পরিবর্তে নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে যদি নিজ নিজ কার্য সম্পাদন করতেন তাহলে দেশ বহু আগেই সম্মানজনকপর্যায়ে পৌঁছে যেত।
অতীতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী নামক চারটি শ্রেণী ছিল। অষ্টম বেতন স্কেলে এ চারটি শ্রেণীর বিলোপ ঘটিয়ে বলা হয়েছে এখন থেকে সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ গ্রেডের মাধ্যমে পরিচিত হবেন। অষ্টম বেতন স্কেলের গ্রেড নম্বর ১০-এ কর্মরতরা অতীতে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা নামে অভিহিত হতেন। অষ্টম বেতন স্কেলের গ্রেড নম্বর ১১-১৬ এ কর্মরতরা অতীতে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নামে পরিচিত ছিলেন; অপর দিকে একই বেতন স্কেলের গ্রেড নং ১৭-২০ এ কর্মরতরা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে পরিগণিত হতেন।
অষ্টম বেতন স্কেল প্রবর্তন-পূর্ববর্তী পদোন্নতিযোগ্য পদ নয় এবং বিলম্বিত পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের হতাশা প্রশমনের জন্য সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল প্রথা চালু ছিল। বর্তমান অষ্টম বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল প্রথার অবসান ঘটানো হয়েছে। উভয় প্রথার অবসানের কারণে পদোন্নতিযোগ্য পদ নয় এমন সব পদে কর্মরত এবং পদোন্নতিযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বিলম্বিত পদোন্নতির কারণে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অথচ সচিবালয় সংশ্লেষে সরকারের উচ্চতর চাকরি কাঠামোয় যে চার ধরনের পদধারী রয়েছেন এদের ক্ষেত্রে বিগত এক যুগেরও অধিক সময় ধরে দেখা গেছে পদোন্নতিযোগ্য পদ না থাকা সত্ত্বেও পূর্বের পদে বসিয়ে রেখে অথবা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে পদোন্নতি কার্যকর করা হয়েছে। এতে সরকার ও দেশ অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে ও হয়ে চলছে। কিন্তু যাদের কারণে এ ধরনের পদোন্নতি তারাই তো সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর। সুতরাং এ ধরনের ক্ষমতাধরেরা কোনো অন্যায় করলেও এদের বিরুদ্ধে অধস্তন কেউ অবস্থান গ্রহণ করে চাকরি জীবনে অহেতুক হয়রানি ও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে চান না। পদ না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পৃথিবীর অপর কোনো দেশে নেই এবং এটি আইন, বিধি, নীতি ও নৈতিকতাবিরোধী। আমাদের দেশে দীর্ঘ দিন লালিত এ অন্যায় কাজটি অব্যাহত রেখে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের অবলুপ্তি পদোন্নতিযোগ্য পদ নয় এমন পদে এবং বিলম্বিত পদোন্নতির কারণে একই পদে যারা দীর্ঘকাল অবস্থান করছেন, তাদের স্বার্থকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
সচিবালয় এবং সরকারের বিভিন্ন কার্যালয়ে সবচেয়ে নিম্ন পদে বেশ কয়েক ধরনের কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এগুলোর একটি পদ হলো পূর্বেকার এমএলএসএস, যাকে সচরাচর পিয়ন নামে অভিহিত করা হতো। বর্তমানে এ পদটির পদবি পরিবর্তন করে অফিস সহায়ক করা হয়েছে। সচিবালয়ে কর্মরত জনৈক অফিস সহায়ক, যিনি একটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সাথে সংযুক্ত তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পদোন্নতির বঞ্চনায় এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে সমমর্যাদাভুক্ত করার প্রয়াসে আমার স্যার যদি সচিব থেকে সিনিয়র সচিব হয়ে উচ্চতর বেতন পেতে পারেন, সেখানে আমাদের (অফিস সহায়ক) ক্ষেত্রে ৩০ বছর একই পদে কর্মরত থেকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পাব না, এটা কেমন বিচার? আর সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বন্ধ করেছেন ভালো কথা; কিন্তু আপনি যদি সচিব থেকে সিনিয়র সচিব হতে পারেন সে ক্ষেত্রে আমাদের অফিস-সহায়ক হতে উচ্চতর বেতনে সিনিয়র অফিস সহায়ক করতে অসুবিধা কোথায়?
বর্তমান অষ্টম বেতন স্কেল নির্ধারণকালে প্রতিটি গ্রেডে কর্মরত ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবারের মাসিক ব্যয় কত হতে পারে তা বিবেচনায় নেয়া হয়। সে হিসেবে দেখা যায়, সর্বোচ্চ বেতনধারী ও এক নম্বর গ্রেডে বেতনপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু মাসিক ব্যয় যথাক্রমে ১৪ হাজার ৩৩৩ টাকা ও ১৩ হাজার টাকা। এ হিসাবে ২০ নম্বর গ্রেডে কর্মরতদের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু ব্যয় দাঁড়ায় ১৩৭৫ টাকা। যারা বেতন স্কেল নির্ধারণের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের কাছে বিনীত প্রশ্ন, সর্বনিম্ন গ্রেডভুক্ত কর্মচারীর পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু ১৩৭৫ টাকা দিয়ে মাসিক সাকুল্য ব্যয় মেটানো কতটুকু সম্ভব?
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে অষ্টম বেতন স্কেলের বর্ধিত বেতন জুলাই, ২০১৫ হতে এবং ভাতাগুলো জুলাই, ২০১৬ হতে কার্যকর হবে। বেতন স্কেল ঘোষণা-পরবর্তী এখনো বর্ধিত স্কেলে বেতন দেয়ার কাজ শুরু হয়নি, যদিও সম্প্রতি অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন ১ নভেম্বর, ২০১৫ হতে বকেয়া বেতনসহ বর্ধিত বেতন দেয়ার কাজ শুরু হবে। বেতন স্কেল পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রেডে সর্বনিম্ন ৯১ ও সর্বোচ্চ ১০১ ভাগ হারে মূল বেতনের বৃদ্ধি ঘটেছে। বেতন বৃদ্ধি যদিও এখনো কার্যকর হয়নি, ইতোমধ্যে বাজারে এর অশুভ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মাছ, মুরগি, তরিতরকারিসহ ভোগ্যপণ্যের অন্য কোনো কারণ ছাড়াই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। আর যদি বলা হয় মূল্যবৃদ্ধির কারণ সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি, তবে সেটি অমূলক হবে না। দেশের সামগ্রিক জনসংখ্যার তুলনায় সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা এক ভাগেরও কম। এ এক ভাগ কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির জন্য দেশের ৯৯ ভাগ জনগণের যদি দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় তবে সেটা হবে দুঃখজনক।
সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর জন্য যে বিপুল বাড়তি অর্থের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, তা মেটাতে সরকার বিভিন্ন খাতে কর আরোপের চিন্তাভাবনা করছে। এ খাতগুলোর একটি ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এ কর আরোপের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। বর্তমানে পাসপোর্ট নবায়ন ফি দ্বিগুণ, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়িয়ে ঘাটতি পূরণের প্রয়াস নেয়া হচ্ছে। উপরোল্লিখিত বৃদ্ধিগুলো যে সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কারণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে উঠবে সে প্রশ্নে কোনো দ্বিমত নেই।
ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ জনসাধারণের এক বিরাট অংশ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। বেতন বাড়ানো কার্যকর করার আগেই দেখা গেল বাসাভাড়া উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণসহ বাসাভাড়া বাড়ার ক্ষেত্রে লাগাম টেনে ধরতে না পারার কারণে জনসাধারণের এক বিরাট অংশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ বিষয়ে যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।
অষ্টম বেতন স্কেলে সব গ্রেডভুক্তসহ গ্রেড-বহির্ভূতদের যে বেতনভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি নির্মূলে সহায়ক হবে কিনা আমাদের অর্থমন্ত্রীকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি নেতিবাচক উত্তর দেন। এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের সরকারের উচ্চ পদধারীরা বেতনভাতার বাইরে যে সুযোগসুবিধা পান তা অর্থের মানদণ্ডে পরিমাপ করলে বেতনভাতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। উচ্চ পদে কর্মরতরা বেতনভাতা ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ অতীতে যা পেতেন এবং বর্তমানে যা পেতে যাচ্ছেন তাতে তারা কোনোরূপ দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত না হলেও বেশ ভালোভাবে তাদের সংসার চলার কথা; কিন্তু আমাদের উচ্চ পদে কর্মরত কয়জন হলফ করে বলার সাহস রাখেন যে, তারা সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত?
মানুষের জীবনধারণের জন্য যেসব মৌলিক উপকরণ অপরিহার্য তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। এ কথাটি বিবেচনায় নিয়েই সরকার সরকারি কর্মচারীদের দুই সন্তান পর্যন্ত শিক্ষার ব্যয় বাবদ নির্ধারিত শিক্ষাভাতা দিয়ে আসছে। এমন অনেক কর্মচারী রয়েছেন যারা অবিবাহিত অথবা নিঃসন্তান। এদের পোষ্য হিসেবে ছোট ভাইবোনদের পড়ালেখার ব্যয়ভার তারা বহন করলেও এরূপ কর্মচারীরা যখন শিক্ষাভাতা পান না, তখন দেখা যাচ্ছে একজন কর্মচারীর সন্তানের শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হওয়ার পরও শিক্ষাভাতা গ্রহণ অব্যাহত আছে।
অতীতের বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সচিবরা একই পদমর্যাদা ও একই বেতনভুক্ত ছিলেন। বর্তমানে গ্রেড-বহির্ভূত দু’টি পদ সৃষ্টি করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে পদমর্যাদার শিক্ষকেরা অবমূল্যায়িত হয়েছেন। শিক্ষাকে একটি জাতির মেরুদণ্ড বিবেচনা করা হলে শিক্ষকদের এরূপ অবমূল্যায়ন কোনোভাবে কাম্য নয়। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পদোন্নতিযোগ্যদের সংখ্যার তুলনায় পদের সংখ্যা স্বল্প হওয়ায় একই পদে একজন শিক্ষককে দীর্ঘকাল অতিবাহিত করতে হয়। এরূপ ক্ষেত্রে হতাশা ও বঞ্চনা প্রশমনে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল কার্যকর বিবেচিত হতো; কিন্তু এ দু’টির বিলোপসাধন করায় এখন শিক্ষকদের হতাশা ও বঞ্চনা প্রশমনের পথও রুদ্ধ।
অষ্টম বেতন স্কেল পূর্ববর্তী সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত পেশাজীবীদের মধ্যে সমতাভিত্তিক ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল এবং এ কারণে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও পেশাজীবীদের মধ্যে স্বস্তির ভাবও ছিল। বর্তমান বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বিলোপের কারণে কার্যত সে কৌশল অনুপস্থিত যদিও পেশাজীবীদের ধারণা এরূপ কৌশলের অনুপস্থিতি, পদ না থাকা সত্ত্বেও সচিবালয়ে চারটি বিশেষ পদে কর্মরতদের পদোন্নতিতে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে না। সচিবালয় সংশ্লেষে সরকারের উচ্চতর চাকরি কাঠামোর চারটি উচ্চ পদে যারা কর্মরত রয়েছেন, তারা সরকারের নীতিনির্ধারণীর সাথে সম্পৃক্ত। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদে কর্মরত মুখ্য নির্বাহী এদের পরামর্শ অনুযায়ী সরকারের যাবতীয় কাজ সমাধা করে থাকেন। এরা সার্বক্ষণিক মন্ত্রীদের সান্নিধ্যে থাকেন। আর তাই বেতন স্কেল নির্ধারণকালে তা যেন বিভেদ নিরসনে সহায়ক হয় সে দিকে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হওয়া উচিত ছিল; কিন্তু তা না করে অষ্টম বেতন স্কেলে তাদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিভেদ নিরসনের পরিবর্তে যে উসকে দেয়া হয়েছে এমনটিই পরিলক্ষিত হয়।
Published in: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/61165
0 comments:
Post a Comment