Wednesday, October 7, 2015

বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার উপাখ্যান

Kamrul Hassan

মেডিকেল কলেজগুলো কোন না কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অথচ নিয়ন্ত্রণ করে মন্ত্রনালয়। জানতাম না যে মেডিকেল কলেজগুলোতে কেউ পার্মানেন্ট শিক্ষক না। আজ যে ডাক্তার শিক্ষক কালই বদলি হয়ে কলেজ নয় এমন কোন হাসপাতালে বদলি হয়ে গেলে তিনি হয়ে যান একজন সাধারণ ডাক্তার। অথবা আজ যিনি একজন সাধারণ ডাক্তার কালই তিনি শিক্ষক হয়ে যাবেন যদি উনি কোন মেডিকেল কলেজে বদলি হন। আর এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে মন্ত্রনালয়। অন্যদিকে প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজ কোন না কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। যেমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অন্তরভুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সমস্ত অনুষদের ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে ভর্তি সংক্রান্ত সমস্ত কার্য্যক্রম দেখভাল করে শুধু চিকিৎসা অনুষদ ব্যতিত। শুধু তাই না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নতি তারাই করে থাকেন। চিকিৎসা অনুষদের আন্ডারে যারা আছে তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পুর্ন ভিন্ন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে স্বাস্থ অধিদপ্তর পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ডাক্তারি পড়লেই একজন ডাক্তার শিক্ষক হতে পারা উচিত? শিক্ষক হতে হলে তার একটা উজ্জল অতীত থাকতে হবে যার মধ্য দিয়ে নিজেকে একজন ভবিষ্যতের শিক্ষক হিসাবে তৈরী করেন। আবার যে আজকে শিক্ষক, কালকে প্রশাসক আর পরশু শুধুই একজন সাধারণ ডাক্তার তাহলে হবে না।

উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে ভর্তি কার্য্যক্রম পৃথিবীর কোথাও এরকম আমলা দ্বারা নিয়ন্ত্রনের নজির নেই। আমলারা নিয়ন্ত্রণ করে বলেই মেডিকেল কলেজগুলোতে স্থায়ী কোন শিক্ষক নেই। আমলারা নিয়ন্ত্রণ করে বলেই সমস্ত বদলি প্রক্রিয়া আমলা এবং ড্যাব বা স্বাচিপ নিয়ন্ত্রণ করে। আমলারা নিয়ন্ত্রণ করে বলেই মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র প্রনয়ন থেকে শুরু করে সমস্ত তদারকিতে থাকেন আমলারা। অর্থাত প্রশ্ন জাগে মেডিকেল কলেজগুলো যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজটা কি তাহলে? শুধু ফলাফল প্রনয়ন এবং সার্টিফিকেট প্রদান। এটুকুই। এটা একটা নজিরবিহীন ব্যাপার যে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রনয়ন এবং দেখভালের দায়িত্বে মন্ত্রনালয়। আমি সব সময় বলে আসছি যে, কেবল মাত্র শিক্ষকরাই পারেন প্রশ্ন প্রনয়ন করতে এবং এর পবিত্রতার গুরুত্ব বুঝতে। আমলারা কোনভাবেই এর পবিত্রতা এবং গুরুত্ব বুঝবেন না। আর বুঝবেন না বলেইতো তাদের আন্ডারে যত প্রশ্নপত্র প্রনয়ন ও নিয়ন্ত্রণ হয় প্রায় সব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়, হচ্ছে এবং হতে থাকবে। অনতিবিলম্বে মেডিকেল কলেজগুলোকে উচ্চ শিক্ষার অংশ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে এবং এগুলোর নিয়ন্ত্রণ স্ব স্ব মেডিকেল কলেজের শিক্ষক এবং যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিতে হবে। বরং ভর্তি সংক্রান্ত প্রশাসনিক কাজ কর্মগুলো মন্ত্রনালয় করতে পারে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে শুধু মাত্র শিক্ষকদেরকেই দিতে হবে।

মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে প্রশ্নপত্র রাখা আর শেয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেওয়া একই। প্রশ্ন পত্রের পবিত্রতা বোঝার নৈতিক ভিত্তিই তাদের নেই। যাদের দুর্নীতির কারণে দেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চাম্পিয়ান হয় তাদের কাছে প্রশ্নপত্র রাখলে তা ফাঁস হবেই। যেই মুরগীর ডিম সেই মুরগীকেই তার ডিমে তা দিতে হয়।


কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

0 comments:

Post a Comment