Kamrul Hassan
এই দেশের কজন মানুষ অধ্যাপক মোঃ রহমতুল্লাহকে চেনে? একবার গুগল স্কলারে গিয়ে দেখে আসুন আর চিনে আসুন উনাকে। চমকে উঠবেন যে এত প্রতিকুলতা সত্বেও বাংলাদেশে এমনতর বিজ্ঞানী আছেন। শুনেছি একসময় উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন কিন্তু টিকতে পারেন নি। সম্ভবত টিকতে না পারার সবচেয়ে বড় কারণ বেতন। এরকম প্রতিভাবান আরো অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী ছেড়ে হয় বিদেশে না হয় দেশেরই কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করছেন। এই দেশের কতজন মানুষ ডক্টর মুবারক আহমেদ খানকে চেনে? একবার গুগল স্কলারে গিয়ে দেখে আসুন আর চিনে আসুন উনাকে। চমকে উঠবেন যে এত প্রতিকুলতা সত্বেও বাংলাদেশে এমনতর বিজ্ঞানী আমাদের পরমানু শক্তি কমিসনেই আছেন। অথচ যতটুকু জানি নিজ প্রতিষ্ঠানেই উনার মূল্যায়ন নেই। বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিসনে বিজ্ঞানী হিসাবে উনার ধারে কাছেও নেই। ওই প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ব্যক্তি হওয়ার মত যদি কেউ যোগ্য হয়ে থাকেন তো উনি একমাত্র ব্যক্তি। তুলনা করে দেখুন। অথচ বিজ্ঞানী হিসাবে যারা তলানিতে থাকার কথা তারা মন্ত্রনালয় এবং সরকারের আনুগত্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম যখন জীবিত ছিলেন কতজন মানুষ তাকে চিনত? কতজন মানুষ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে চেনে? কতজন মানুষ আমাদের অধ্যাপক হারুন অর রশিদকে চেনে? এরকম আরো অনেক নাম বলা যাবে যাদেরকে সঠিক মূল্যায়ন করতে এই সমাজ এই রাষ্ট্র পুরোপুরি ব্যার্থ। কষ্ট লাগে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের মত গুনিজনকে আমরা সঠিক ব্যবহার করতে পারিনি। উনার জীবদ্দশায় বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি শিক্ষা কমিসন হয়েছে। আমরা কি পারতাম না উনাকে দিয়ে শিক্ষা কমিসন করতে? ন্যুনতম কোন একটা কমিসনের মেম্বারতো করা যেত? এ পর্যন্ত কোন শিক্ষা কমিসনে কি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে রাখা হয়েছিল? অধ্যাপক রেহমান সোবহান এখনো জীবিত। উনার মেধাকে কি আমরা সঠিক মূল্যায়ন বা ব্যবহার করছি? গুনিজনের সঠিক মূল্যায়ন এই সমাজে নেই। চারিদিকে শুধু চাটুকারদের জয় জয়কার। খোজ নিয়ে দেখুন করা UGC-তে আছেন, কারা PSC-তে আছেন আর কাদের থাকার কথা ছিল।
বাংলাদেশকে গড়তে হলে দরকার এক ঝাঁক মেধাবী শিক্ষক গবেষক। প্রয়োজনে বাংলাদেশী যারা বিদেশে বিভিন্ন সনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তাদেরকে উপযুক্ত সম্মান এবং সম্মানী দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে তাদের লব্ধ জ্ঞান দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো। যেই কাজটি অনেক আগেই ভারত করেছে এবং অধুনা পাকিস্তান করছে। একবার গিয়ে দেখুন। যেমন অধ্যাপক জাভেদ আশরাফ যিনি ত্রিশ বছরের অধিক আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পাকিস্তান সরকার হান্ট করে তাদের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় Quaid-i-Azam University-র ভাইস চ্যান্সেলর বানিয়েছেন। আর ভারততো এই কাজ অনেক আগেই করেছে এবং তার ফল পেয়েছে এবং পাচ্ছে। শ্রিকান্থ শাস্ত্রী যাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি একসময় আমেরিকার এক টপ গ্রেডের বিশ্ববিদ্যালয়ের faculty ছিলেন। তাকে ভারতীয় সরকার চেষ্টা করে jawaharlal nehru centre for advanced scientific research সেন্টারে বড় offer এনেছেন। আমরা কেন এরকম করছি না। ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিসনের মত একটা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কেমন একাডেমিক যোগ্যতা থাকা উচিত আর কেমন চেয়ারম্যান আমরা পেয়েছি। এমন একজনকে পেয়েছি যিনি নিজেই নিজের একটা একাডেমিক CV দিতে লজ্জা বোধ করেন। আমি সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেও কোথাও পাইনি। উনার একটা পিএইচডি পর্যন্ত নেই। অথচ এটা আশা করা খুব স্বাভাবিক এরকম একটি পেফে যিনি আসীন হবেন তিনি একজন একাডেমিক স্কলার হবেন। এমন একজন হবেন যিনি অনেকের জন্য উদাহরণ হবেন। যিনি অন্যদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন। আমাদের এই বোধদয় কবে হবে?
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 comments:
Post a Comment