যে দেশে জ্ঞানী মানুষের যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয় না সেই দেশে জ্ঞানী মানুষ জন্মায় না। আমরা জাতি হিসাবে এতই দুর্ভাগা যে জ্ঞানী মানুষ কারা সেটা নির্বাচন কারার লিটমাস টেস্টই আমাদের জানা নেই। তাই সম্মান কাদের করতে হবে সেটা আমাদের জানা নেই। তাইত সম্মান, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি সব এখন তাদের দখলে যারা অসৎ, ধূর্ত আর ধুরন্ধর। আমরা মনে করি যার ক্ষমতা বেশি সেই জ্ঞানী। এই দেশে প্রাপ্ত সম্মান লব্ধ জ্ঞানের proportional না। একটা দেশ সভ্য কি অসভ্য তা কি দিয়ে নির্ণিত হয়? প্রাচীন গ্রীস ছিল সভ্য দেশ কারণ ওখানে ছিল প্লাটো, সক্রেটিস, Aristotle, ইউক্লিডের মত একাডেমিক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশও ঠিক ততটুকুই সভ্য যতটুকু সে deserve করে। কতটুকু deserve করে সেটা নির্ভর করে তার মধ্যে থাকা একাডেমিক মানুষগুলোর জ্ঞানের উপর। আমরা যদি বাংলাদেশের ১০০ জন জ্ঞানী মানুষের একটা লিস্ট তৈরী করি ওই লিস্ট-এ কারা আসবে? ওই লিস্টে কতজন আমলা আসবে আর কতজন শিক্ষক আসবে। এখন যদি এমন হয় যে, লিস্টে অধিকাংশই আমলা বুঝতে হবে এই দেশের সিরিয়াস সমস্যা আছে। যদি দেখা যায় ৮০%-এরও বেশি শিক্ষক-গবেষক তো বুঝতে হবে ঠিক আছে। আমি এই মুহুর্তে কিছু অধ্যাপকের নাম বলতে পারি যাদের ধারে কাছেও আসতে পারবে না কোন আমলা। সঙ্গত কারণেই আসা উচিতও না। আমেরিকাতে বা ভারতেও যদি এখন ১০০ জন সেরা জ্ঞানী ব্যক্তির নামের তালিকা করা হয় আমি নিশ্চিত তার ৮০%-এরও বেশি হবে শিক্ষক-গবেষক। তাহলে প্রশ্ন হলো আমাদের দেশ কি তার এই জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঠিক সম্মান দিচ্ছে? আমারতো ধারণা উল্টোটা। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রচন্ড মন পীড়ায় ভুগছেন। এটা শুধু টাকার জন্য না। শিক্ষকদের কাজই হলো জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান তৈরী এবং জ্ঞান বিতরণ করা। আজকে দেশে শিক্ষকরা যে অবস্থার মধ্যে আছে তাতে এর কোনটিই সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়।
রাষ্ট্র যারা চালায় তাদের মনে রাখতে হবে পানি কেবলই উপর থেকে নিচে যায়। জ্ঞানের ফ্লো ঠিক তেমনি বেশি জানা শিক্ষকের কাছ থেকে কম জানা শিক্ষার্থীর কাছে। শিক্ষক যত বেশি জানবেন, শিক্ষক যত বেশী মর্যাদাবান শিক্ষকের অবস্থান তত বেশী উপরে উঠবে আর তখনই জ্ঞানের ফ্লো ঠিক তত বেশি দ্রুত এবং এফিসিয়েন্ট হবে। ধরুন একটা ক্লাস দুজন শিক্ষক নিচ্ছে। দুজনেই ক্লাসে একই জিনিস একইভাবে উপস্থাপন করে lecture দিলেন। কিন্তু দুজনের একজন হলেন আইনস্টাইন আরেকজন হলো এই অধম কামরুল হাসান। ছাত্র ছাত্রীরা কার ক্লাস বেশি মনোযোগ দিয়ে শুনবে? ছাত্র ছাত্রীরা কার ক্লাস থেকে বেশি শিখবে? নিঃসন্দেহে আইনস্টাইনের ক্লাস থেকে। কারণ তার উপর ধারণা এবং এর ফলে রেসপেক্ট আমার থেকে অনেক অনেক অনেক বেশি। অর্থাত আমি এটাই বুঝতে চাচ্ছি শিক্ষক শুধু কতটুকু জানে তার উপরই জ্ঞানের ফ্লো নির্ভর করে না। শিক্ষকের উপর শিক্ষার্থীদের কতটুকু সম্মানবোধ আছে তার উপর অনেকখানি নির্ভর করে। এখন আমাদের দেশ যারা চালায় তাদের আচরণে কি মনে হয় তারা শিক্ষকদের উঁচু স্থানে নিতে চান? বরং উল্টোটা। কিছুদিন যাবত আমাদের মন্ত্রী, আমলা এমন কি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে গোটা শিক্ষক সমাজকে সমাজে নাজেহাল করছেন তাতে শিক্ষকদের অবস্থান তাদের ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রায় তলানিতে নিয়ে গিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষকদের কম পারিশ্রমিক দিয়ে নানা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করছেন। এর ফলে শিক্ষক নিজেরাও তাদের অবস্থান নিম্নে নামিয়ে নিচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে দেখলে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা শ্রেনীকক্ষে শিক্ষকের কাছ জ্ঞান অর্জনের হার পৃথিবীতে খুবই হতাশাব্যঞ্জক হবে। সমাজবিজ্ঞানীরা ইচ্ছে করলে এ বিষয়টি গবেষণা করে দেখতে পারেন।
রাষ্ট্রের মঙ্গলের কথা চিন্তা করলে রাষ্ট্রকেই ভাবতে হবে শিক্ষকদের অবস্থান কোন জায়গায় হবে। যেই দেশে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষককে তৃতীয়শ্রেনীর মর্যাদা দেওয়া হয় সেই দেশে শিক্ষার পরিবেশ কতটুকু আছে তা নিয়ে আর কি বিশেষ কিছু বলার প্রয়োজন আছে? আশা করি রাষ্ট্র যারা চালায় তারা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন এবং দ্রুত কোন পদক্ষেপ নিবেন।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
রাষ্ট্র যারা চালায় তাদের মনে রাখতে হবে পানি কেবলই উপর থেকে নিচে যায়। জ্ঞানের ফ্লো ঠিক তেমনি বেশি জানা শিক্ষকের কাছ থেকে কম জানা শিক্ষার্থীর কাছে। শিক্ষক যত বেশি জানবেন, শিক্ষক যত বেশী মর্যাদাবান শিক্ষকের অবস্থান তত বেশী উপরে উঠবে আর তখনই জ্ঞানের ফ্লো ঠিক তত বেশি দ্রুত এবং এফিসিয়েন্ট হবে। ধরুন একটা ক্লাস দুজন শিক্ষক নিচ্ছে। দুজনেই ক্লাসে একই জিনিস একইভাবে উপস্থাপন করে lecture দিলেন। কিন্তু দুজনের একজন হলেন আইনস্টাইন আরেকজন হলো এই অধম কামরুল হাসান। ছাত্র ছাত্রীরা কার ক্লাস বেশি মনোযোগ দিয়ে শুনবে? ছাত্র ছাত্রীরা কার ক্লাস থেকে বেশি শিখবে? নিঃসন্দেহে আইনস্টাইনের ক্লাস থেকে। কারণ তার উপর ধারণা এবং এর ফলে রেসপেক্ট আমার থেকে অনেক অনেক অনেক বেশি। অর্থাত আমি এটাই বুঝতে চাচ্ছি শিক্ষক শুধু কতটুকু জানে তার উপরই জ্ঞানের ফ্লো নির্ভর করে না। শিক্ষকের উপর শিক্ষার্থীদের কতটুকু সম্মানবোধ আছে তার উপর অনেকখানি নির্ভর করে। এখন আমাদের দেশ যারা চালায় তাদের আচরণে কি মনে হয় তারা শিক্ষকদের উঁচু স্থানে নিতে চান? বরং উল্টোটা। কিছুদিন যাবত আমাদের মন্ত্রী, আমলা এমন কি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে গোটা শিক্ষক সমাজকে সমাজে নাজেহাল করছেন তাতে শিক্ষকদের অবস্থান তাদের ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রায় তলানিতে নিয়ে গিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষকদের কম পারিশ্রমিক দিয়ে নানা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করছেন। এর ফলে শিক্ষক নিজেরাও তাদের অবস্থান নিম্নে নামিয়ে নিচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে দেখলে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা শ্রেনীকক্ষে শিক্ষকের কাছ জ্ঞান অর্জনের হার পৃথিবীতে খুবই হতাশাব্যঞ্জক হবে। সমাজবিজ্ঞানীরা ইচ্ছে করলে এ বিষয়টি গবেষণা করে দেখতে পারেন।
রাষ্ট্রের মঙ্গলের কথা চিন্তা করলে রাষ্ট্রকেই ভাবতে হবে শিক্ষকদের অবস্থান কোন জায়গায় হবে। যেই দেশে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষককে তৃতীয়শ্রেনীর মর্যাদা দেওয়া হয় সেই দেশে শিক্ষার পরিবেশ কতটুকু আছে তা নিয়ে আর কি বিশেষ কিছু বলার প্রয়োজন আছে? আশা করি রাষ্ট্র যারা চালায় তারা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন এবং দ্রুত কোন পদক্ষেপ নিবেন।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 comments:
Post a Comment