Monday, September 29, 2014

ছাত্ররাজনীতির সেকাল একাল

Kamrul Hassan

আমি confused! সকাল বেলাতেই হঠাত করে মনে প্রশ্ন জাগলো: আচ্ছা বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংঘটনগুলোর কাজ কি? ৯০ পর্যন্ত আমি ছাত্র ছিলাম এবং তখনকার ছাত্র রাজনীতি কাছ থেকে দেখেছি। তখনকার ছাত্ররাজনীতির একটা উদ্দেশ্য ছিল। স্বৈরাচার হটাও দেশ বাঁচাও। ব্যাপারটা এরকম মনে হচ্ছিল তখন যে স্বৈরাচারের পতন ঘটলে দেশ উন্নয়নের জোযারে ভাসবে। মনে হচ্ছিল ছাত্রদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মনে হচ্ছিল স্বৈরাচারের পতন ঘটলেই ছাত্ররা পড়ার টেবিলে ফিরবে। তাদের রাস্তায় থাকার আর কোন কারণ থাকবে না। ৯০-এ স্বৈরাচার পতনে কারো যদি একচ্ছত্র ভুমিকা থাকে তো সেটা হলো সংগ্রামী ছাত্র সমাজ।
কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ৯০-এ স্বৈরাচার পতনের পর গণতান্ত্রিক সরকারগুলো ছাত্রদের জীবন যাপনের মান উন্নয়নে, আবাসিক সুবিধা বৃদ্ধি করনে, শিক্ষার মান বৃদ্ধিকরণে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বরাদ্দ বর্ধিতকরনে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে? বরং কৃতঘ্নতা দেখিয়েছে। শুধু যে ছাত্রদের সুযোগ সুবিধা কমেছে তাই নয় তারা ছাত্র রাজনীতির স্বরূপ পাল্টে দিয়েছে। আমাদের সময় ৪ সিটের একটি রুমে বড়জোর ৬ জনকে থাকতে দেখেছি তাও খুব কম সংখ্যক রুমে। অধিকাংশ রুমেই যতগুলো সিট ততজন ছাত্রই থাকত। ৯০-এর পর থেকে খারাপ হতে হতে ধীরে ধীরে এমন খারাপ হয়েছে যে এখন এমন রুমি পাওয়া যাবে না যেখানে ৪ সিটের একটি রুমে ৪জনই থাকে। বরং অভিধানে নতুন শব্দ যোগ হয়েছে "গণরুম" নামক একটি বিভীষিকাময় শব্দ। এটা শুনলেই আমার কেন জানি গণকবরের কথা মনে পরে। "গণরুম" মানে হলো এটা ছাত্রনেতাদের ডাম্পিং রুম। ওসব রুমে সিট বরাদ্দ দেয় ছাত্রনেতারা বিশেষ করে যে দল ক্ষমতায় তার ছাত্র সংঘটনের নেতারা। শিক্ষকরাতো নিয়মের বাহিরে যেতে পারে না তাই শিক্ষকরা ৪ সিটের রুমে ৪ জনকেই বরাদ্দ দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত ছাত্র থাকার ব্যাপারটা দেখভাল করে ছাত্রনেতারা।

এখন যদি কোন রুমে ছাত্ররা গণরুম বানিয়ে থাকে সেখানে কি কোন ভাবে পড়াশুনা করার মত পরিবেশ থাকে? আরো দুঃখজনক হলো এই গনরূমের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা কিন্তু হুহু করে বাড়ছে যেহেতু নতুন নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে। তার উপর ৩+১ শিক্ষা ব্যাবস্থা থেকে ২০০২-এ (সম্ভবত) আমরা ৪+১ সিস্টেমে চলে গেলাম। এতে করে ২৫% ছাত্র এমনিতেই হলে বেশি থাকা শুরু করে। আমরা ৩+১ সিস্টেম থেকে ৪+১-এ চলে গেলাম কোন প্রকার পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া। আমার ধারণা গণরুম শব্দটি তখন থেকেই চালু হয়। আমাদের ছাত্র সংঘটনগুলো আজ পর্যন্ত তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য জোরালো কোন ভুমিকা নিয়েছে? পড়াশুনার মান বৃদ্ধির জন্য আজ পর্যন্ত জোরালো কোন ভুমিকা নিয়েছে? লাইব্রেরিগুলোর পরিবেশ এবং মান বৃদ্ধির জন্য জোরালো কোন ভুমিকা নিয়েছে? নিয়ম্নান্ত্রিক ছাত্রনেতা তৈরির জন্য জোরালো কোন ভুমিকা নিয়েছে? বরং শিক্ষার মান ও পরিবেশ খারাপ করার যা করার দরকার তারা তা করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে সরকার দলীয় ছাত্রসংঘটনেরই রাজত্ব। তাদেরই একচ্ছত্র আধিপত্য। অন্যান্য সংঘটনের ছাত্ররা থাকে বা রাজনীতি করার সুযোগ পায় তাদের অনুকল্যে। তাই ক্যাম্পাসে ভিন্নমত প্রায় নেই বললেই চলে। এরকম পরিবেশে ছাত্রনেতারা ভিন্নমতের সাথে সহাবস্থান শিখবে কোথায়। ছাত্র অবস্থাতেই শিখে ফেলে ভিন্নমতাবলম্বীদের কিভাবে annihilate করা যায়। তাই এই নেতারা যখন জাতীয় রাজনীতিতে আসে তারা একই ধারায় চলে এবং আমরা তারই প্রতিফলন জাতীয় ক্ষেত্রে দেখছি।

আমি বিশ্বাস করি ছাত্রনেতারা যদি সাধারণ ছাত্রদের সাথে নিয়ে ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে সরকারের কাছে দাবি জানায় তাহলে সরকার এই ন্যায্য দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে। এই ক্যাম্পাস ছাত্রদের জন্য আর পড়াশুনা বান্ধব না। অবস্য পড়াশুনা বান্ধব কখনও ছিলও না। ভাবতে অবাক লাগে কার্জন হলে ছাত্রদের জন্য ভালো একটা cafeteria, ভালো টয়লেট facilities পর্যন্ত নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের পাশাপাশি এদুটো খুবই জরুরি। দিনের অধিকাংশ সময় ছাত্ররা এখানে কাটায়। হ্যা, একটা cafeteria আছে বৈ কি!! এটাকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের cafeteria বলা যায় কিনা সেটা নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা। একটা বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হওয়া উচিত তার চিত্র আমাদের ছাত্রদের মানসপটে আছে কিনা আমার সন্দেহ। হয়ত সিনেমায় দেখেছে। তবে সিনেমাকে আমরা বাস্তব বিবর্জিত কল্পিত এক জগত ভাবি তাই ছাত্ররা হয়ত বিশ্বাস করতে পারে না হল মানে তিন তারকা হোটেলের মত। তেমনি cafeteria ও হবে তিন তারকা রেস্তোরার মত। ক্লাস রুমগুলোও তেমনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মনোরম পরিবেশ সমৃদ্ধ। কিন্তু অমিতো আমাদের কোন ছাত্র সংঘটনকে এবিষয়ে দাবি জানাতে দেখি না। তারাতো জাতীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যাস্ত ছাত্র রাজনীতি নিয়ে নয়।

আসলে আমি confused না। কখনও confused ছিলাম না অন্তত এই বিষয়ে। কারণ অমিত জানি এটা একটা সিরিয়াস বিষয়!



কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।