আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এক জাদরেল অহম সম্পন্ন মানুষ। কাউকে পাত্তা দিতেন না। রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় কখনও মুখ তুলে তাকাতে দেখিনি। জীবনে কোন দিন চায়ের ষ্টলে আড্ডা দেওয়া দুরে থাক কখনও বসতে পর্যন্ত দেখিনি। জীবনে কখনো বাজার করতে দেখিনি। একজন পরিপূর্ণ ব্যেক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসাবে দেখেছি উনাকে। কোন mp, চেয়ারম্যান বা প্রভাবশালী কারো সাথে কোন ধরনের মাখামাখি করতে কেউ কখনও দেখেনি। তেমনি ছিলেন আরো কয়েকজন শিক্ষক। বেতিক্রম যে ছিলনা তা নয়। দুএকজন ছিলেন যারা রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত। এরা ঠিকমত ক্লাসে আসতেন না এবং আরো নানা রকম কুকীর্তি।
কলেজেও ছিলেন কিছু শিক্ষক যারা ছিলেন প্রচন্ড অহমবোধ সম্পন্ন। উন্দাদেরকেও কখনও অযথা রাস্তাঘাটে, হাটে বাজারে ঘুরতে দেখিনি। তারা খুব স্বল্পভাষী ছিলেন। বেতন নিশ্চই এখনকার মত কমই ছিল কিন্তু চলাফেরায় তা বোঝার উপায় ছিল না। পেছন ফিরে তাকিয়ে এখন মনে হয় তাদেরকেতো সব সময় একটা কি বড়জোর দুটো শার্টই পড়তে দেখেছি। কিন্তু সব সময় টিপটপ থাকতেন। এটা সম্ভব হয় তখনি যখন মানুষের প্রচন্ড অহমবোধ থাকে।
কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কি দেখি? অহমবোধ সম্পন্ন মানুষ কোথায়? প্রমোসনের জন্য রাজনীতি, প্রভাবশালী শিক্ষকদের পিছনে লেজুরবৃত্তি, রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি অসহায় আনুগত্য। এসবই হয় বা করে একটু favour পাওয়ার জন্য, একটু আনুকল্য পাওয়ার জন্য। এটা ঠিক যে এখন ভোগবাদের দিন। এখন আর আগের মত ঘরে অভাব অনটন রেখে বাহিরে প্রাচুর্য্য অথবা শুধু ভালো আছি দেখানো সম্ভব নয়। আর আমাদের রাষ্ট্রও চায়না শিক্ষকরা অহমবোধ নিয়ে, সম্মান নিয়ে বাঁচুক। তাইতো তাদের বেতন থেকে শুরু করে কোন রকম আবাসিক পর্যন্ত দিতে এত কার্পন্য। তারপরও বলব আমাদের অহমবোধ থাকতে হবে। আমরা কারো লেজুরবৃত্তি করতে পারি না। কোন দুর্নীতি পরায়নের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামতে পারি না। শিক্ষকতা অন্য আট দশটা পেশার মত না। দেশের সকল শিক্ষকের মাঝে প্রচন্ড অহমবোধ জাগ্রত হোক। বুক উচিয়ে, শির উচিয়ে চলতে জানুক।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।