Sunday, April 26, 2015

শিক্ষকের অহমবোধ


আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এক জাদরেল অহম সম্পন্ন মানুষ। কাউকে পাত্তা দিতেন না। রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় কখনও মুখ তুলে তাকাতে দেখিনি। জীবনে কোন দিন চায়ের ষ্টলে আড্ডা দেওয়া দুরে থাক কখনও বসতে পর্যন্ত দেখিনি। জীবনে কখনো বাজার করতে দেখিনি। একজন পরিপূর্ণ ব্যেক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসাবে দেখেছি উনাকে। কোন mp, চেয়ারম্যান বা প্রভাবশালী কারো সাথে কোন ধরনের মাখামাখি করতে কেউ কখনও দেখেনি। তেমনি ছিলেন আরো কয়েকজন শিক্ষক। বেতিক্রম যে ছিলনা তা নয়। দুএকজন ছিলেন যারা রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত। এরা ঠিকমত ক্লাসে আসতেন না এবং আরো নানা রকম কুকীর্তি।

কলেজেও ছিলেন কিছু শিক্ষক যারা ছিলেন প্রচন্ড অহমবোধ সম্পন্ন। উন্দাদেরকেও কখনও অযথা রাস্তাঘাটে, হাটে বাজারে ঘুরতে দেখিনি। তারা খুব স্বল্পভাষী ছিলেন। বেতন নিশ্চই এখনকার মত কমই ছিল কিন্তু চলাফেরায় তা বোঝার উপায় ছিল না। পেছন ফিরে তাকিয়ে এখন মনে হয় তাদেরকেতো সব সময় একটা কি বড়জোর দুটো শার্টই পড়তে দেখেছি। কিন্তু সব সময় টিপটপ থাকতেন। এটা সম্ভব হয় তখনি যখন মানুষের প্রচন্ড অহমবোধ থাকে।


কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কি দেখি? অহমবোধ সম্পন্ন মানুষ কোথায়? প্রমোসনের জন্য রাজনীতি, প্রভাবশালী শিক্ষকদের পিছনে লেজুরবৃত্তি, রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি অসহায় আনুগত্য। এসবই হয় বা করে একটু favour পাওয়ার জন্য, একটু আনুকল্য পাওয়ার জন্য। এটা ঠিক যে এখন ভোগবাদের দিন। এখন আর আগের মত ঘরে অভাব অনটন রেখে বাহিরে প্রাচুর্য্য অথবা শুধু ভালো আছি দেখানো সম্ভব নয়। আর আমাদের রাষ্ট্রও চায়না শিক্ষকরা অহমবোধ নিয়ে, সম্মান নিয়ে বাঁচুক। তাইতো তাদের বেতন থেকে শুরু করে কোন রকম আবাসিক পর্যন্ত দিতে এত কার্পন্য। তারপরও বলব আমাদের অহমবোধ থাকতে হবে। আমরা কারো লেজুরবৃত্তি করতে পারি না। কোন দুর্নীতি পরায়নের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামতে পারি না। শিক্ষকতা অন্য আট দশটা পেশার মত না। দেশের সকল শিক্ষকের মাঝে প্রচন্ড অহমবোধ জাগ্রত হোক। বুক উচিয়ে, শির উচিয়ে চলতে জানুক।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Saturday, April 18, 2015

শিক্ষকতা ও নষ্ট রাজনীতি

Kamrul Hassan

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের VC-কে তার নিজ অফিসে এসে so-called জনগনের ভোটে নির্বাচিত একজন MP তার দলবল নিয়ে শাসিয়ে যান। পৃথিবীর কোথাও, I repeat পৃথিবীর কোথাও এরকম ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। তবে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ ব্যতীত কোথাও এরকম ঘটতে পারে না কারণ বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীতে খুব কম দেশেই MP এত ক্ষমতাবান (warrant অফ precedence-ই তার প্রমান)। MP-দের কাজ হওয়া উচিত শুধু আইন প্রনয়ন করা। আর আমাদের MP-রা ওই কাজে মনোনিবেশ সবচেয়ে কম। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তাদের কাজ প্রশাসনের কাজে বাঁধা দান, টেন্ডারবাজিতে সহায়তাদান, স্কুল কলেজে নিয়োগ বানিজ্যে এবং দলীয় কেডার নিয়োগে সহায়তা করা, সাধারণ মানুষের এবং সরকারী খাঁস জমি দখল ইত্যাদি করা। তারা ধরা কে সরা জ্ঞান করে।
আর আমরা শিক্ষকরাও এখন তাদেরই আজ্ঞাবহ হয়ে গিয়েছি। শিক্ষাদান অন্য যে কোন পেশা থেকে ভিন্ন। এখানে জ্ঞানের flow-এর ব্যাপার জড়িত। আমরা জানি flow, হউক সেটা fluid বা চার্জ, হতে হলে প্রেসার বা ভোল্টেজ ডিফারেন্স প্রয়োজন। তেমনি জ্ঞানের flow-এর জন্যও একটা সম্মানের ডিফারেন্স প্রয়োজন। ছাত্রদের কাছে শিক্ষক সম্মানের দিক থেকে যত উঁচুতে থাকবে জ্ঞান তত ভালো ভাবে শিক্ষক থেকে ছাত্রের দিকে flow হবে। একজন শিক্ষক যখন ভর দুপুরে বা জনসমক্ষে নির্যাতনের স্বীকার হন তখন সামগ্রিকভাবে শিক্ষকদের উঁচু স্থানটি আরো উঁচুতে না গিয়ে নিম্নে নেমে আসে। আর উঁচু স্থানকে আরো উঁচুতে নেওয়ার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে শিক্ষক শ্রেণী নিজেদের। তার সাথে রাষ্ট্রকেও এই কাজে সাহায্য করতে হবে। শিক্ষকদের বেতন খুবই কম। সত্যি বলতে বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন পৃতিবীতে সবচেয়ে কম। আর এটাকে কাজে লাগিয়ে যদি শিক্ষকদের কলা মূল ঝুলিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে সরকার নিজেই তাদের লোভাতুর করে তুলে তবে সেই দেশে শিক্ষকদের স্থান আর উঁচুতে কিভাবে থাকে? শিক্ষকরা এখন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদ পদবি পাওয়ার জন্য যে কোন নির্লজ্জ কাজ করতেও আপত্তি নেই। মনে আছে আমাদের কোন এক প্রাক্তন VC/প্রো VC কোন এক MP-র নির্বাচনের পর তার বাসায় (কিংবা অফিসে গিয়ে) গিয়ে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে আসে। আবার এখন দেখতে পাচ্ছি আমাদের কিছু শিক্ষক বর্তমান মেয়র নির্বাচনে তাদের নিজ নিজ দলের candidate-এর জন্য জোর ক্যাম্পেইন করছেন। এক সময় সচিবরা ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের VC ফোন করে সচিবালয়ে এসে মিটিং করতে বলার সাহস পেত না। VC-র সাথে মিটিং করতে হলে VC-র কার্যালয়ে এসে মিটিং করতে হত। এটা ওয়ারেন্ট অফ precedence-এর বিষয় না personality ও সম্মানের বিষয়। আর এখনকার VC রা নিয়োগ পাওয়ার আগে lobbing করেন, পাওয়ার পর আবার তাকে ধরে রাখার জন্য lobbing করেন। তাকে সরকারের activist হিসাবে কাজ করতে হয়। বিভিন্ন নিয়োগ বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছে অনিচ্ছার দিকে নজর দিতে হয়। তাহলে শিক্ষকরা আর তার সম্মানের আসনে কিভাবে থাকবেন? আমাদের এমন নির্মোহ হতে হবে যে কাউকে VC বানাতে চাইলে উনি না করবেন এবং সরকার অতি অনুনয় অনুরোধ করলে হয়ত পাঁচ জনের মধ্যে একজন রাজি হবেন। তবেই কেউ কোনদিন একজন VC অসম্মানিত করতে সাহস পাবে না। আমরা এখন পর্যন্ত শুনিনি সরকার ওই MP-র বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নিয়েছেন। আর নিবেন বলে মনেও হচ্ছে না।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।