সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন, ২০১৩ গঠন করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কমিশন ২০১৪ সালের ১৭ জুনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিশন আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
যোগাযোগ করলে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর জন্য কিছু করা যাবে মনে করে অন্য কোনো দায়িত্বের পরিবর্তে আমি এটি গ্রহণ করেছি।’
বেতন কমিশন নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। নির্বাচনকালীন সরকার বেতন কমিশন গঠন করতে পারে না—একটি দৈনিক সংবাদপত্রে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইটস জাস্ট স্টুপিড। এখনো নির্বাচনের শিডিউল ঘোষিত হয়নি। সাখাওয়াত হোসেন একজন নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। তিনি এমন কথা বলতে পারেন না। শিডিউল ঘোষণার আগের সরকার নির্বাচনকালীন সরকার নয়।’
এবারের কমিশনে তিনজন সদস্য হলেন দুই সাবেক সচিব মুহম্মদ আবুল কাশেম ও শেখ খুরশীদ আলম এবং সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. সাহাদ চৌধুরী। ১২ জন খণ্ডকালীন সদস্য হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জাফর খালেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মমতাজউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুৎফুল হাসান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো বিনায়ক সেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ রুহুল আমীন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ, মেট্রো চেম্বারের সাবেক মহাসচিব সি কে হায়দার, ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে এম রফিকুল ইসলাম, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইমদাদুল হক, আইন বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ আমিনুল ইসলাম এবং সশস্ত্র বাহিনীর একজন প্রতিনিধি। তবে, কমিশন প্রয়োজনবোধে খণ্ডকালীন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। কমিশনের সদস্যসচিব হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এহসানুল হক।
কমিশনের কার্যপরিধি: প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনাপূর্বক সরকারের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করবে কমিশন।
সুপারিশ তৈরির সময় মা-বাবাসহ ছয়জনের একটি পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বিবেচনায় রাখতে হবে। এর আগে ২০০৮ সালের কমিশনে অবশ্য চারজনের জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনার কথা ছিল।
একটি সময়োপযোগী বেতন কাঠামো ও অবসর সুবিধা নির্ধারণ; বিশেষায়িত চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ এবং বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, প্রেষণ, কার্যকর, মহার্ঘ্য, উৎসব ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নির্ধারণের কাজ করবে কমিশন। কমিশন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয়ের পদ্ধতিও নিরূপণ করবে।
টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড এবং ইনক্রিমেন্টের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসংগতিও দূর এবং রেশন-সুবিধা যৌক্তিকীকরণ করা হবে।
২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গঠিত বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০০৯ সালের ১ জুলাই সর্বশেষ সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ৭ অক্টোবর তাঁদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার, যা গত ১ জুলাই কার্যকর হয়েছে।
Published in: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/81928/
আরো পড়ুনঃ