মো. আবুসালেহ সেকেন্দার
পূজা ও ঈদের ছুটির মধ্যেই এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবস (৫ অক্টোবর) পালিত হয়েছে। মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান দুটি বার্ষিক উৎসবের মধ্যবর্তী সময় হওয়াতে তাই নামকাওয়াস্তে কিছু কর্মসূচি ছাড়া বিশ্ব শিক্ষক দিবস নিয়ে কোনো বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। শিক্ষকদের মতোই এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবস অবহেলার শিকার হয়েছে। যদিও এবারের প্রতিপাদ্য : 'শিক্ষকের জন্য বিনিয়োগ, ভবিষ্যতের বিনিয়োগ' প্রাসঙ্গিক ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আদৌও কি আমরা শিক্ষকের জন্য কোনো বিনিয়োগ করছি? শিক্ষকদের জন্য বিনিয়োগ বলতে সাধারণভাবে শিক্ষকদের উপযুক্ত সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধায় বিনিয়োগ করাকেই বোঝাবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছরে আমরা শিক্ষকদের জন্য তার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? কিন্তু সেই বিনিয়োগ যদি 'কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই' প্রবাদের মতো কাগজে-কলমে অথবা শিক্ষা দিবসের প্রতিপাদ্যের মধ্যে কেবল সীমাবদ্ধ থাকে; তবে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগও যে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত সম্মান ও সম্মানীর নিশ্চয়তা প্রদানই কেবল এবারের শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্যকে ভবিষ্যতে সার্থক করে তুলতে পারে। প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের শিক্ষকের 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' অবস্থার অবসানই কেবল এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির চাবিকাঠি।
২০০৯ সালের বেতন কাঠামো অনুসারে বাংলাদেশের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রভাষক পদে ১৩৫ ডলার বেতনে চাকরিতে নিযুক্ত হন। একজন অধ্যাপক সর্বোচ্চ বেতন পান ৪১৩ ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক চার হাজার ৭৭ ডলারে শিক্ষকতায় নিযুক্ত হলেও একজন অধ্যাপকের সর্বোচ্চ বেতন আট হাজার ৩৬৯ ডলার। যুক্তরাজ্যের কথা না হয় বাদ দিলাম। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জিডিপির পার্থক্য আকাশচুম্বী নয়। তাই ভারতের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যে বেতন পান, এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের তার কাছাকাছি বেতন দাবি করাটা কি অযৌক্তিক? কিন্তু দুর্ভাগ্য এ দেশের শিক্ষকসমাজের! ভারতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক প্রতি মাসে ৬০ হাজার রুপি; আর একজন অধ্যাপক এক লাখ ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পেলেও এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ১৩৫ ডলার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। আমরা যে পাকিস্তানকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে প্রতিদিন ১০০ বার গালমন্দ করি, সেই পাকিস্তানও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। পাকিস্তানের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মাসে দুই লাখ তিন হাজার থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত সম্মানী পান। বাংলাদেশের কাছাকাছি যেসব দেশের জিডিপি, সেই মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তান, ইথিওপিয়া, আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া ও সুদূর আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিলের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন আমাদের থেকে কয়েক গুণ বেশি। ওই দেশগুলোতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক বেতন পান যথাক্রমে : এক হাজার ৩৭, ৮৬৪, দুই হাজার ৭৫৮ ও এক হাজার ৮৫৮ ডলার। আর অধ্যাপকের সর্বোচ্চ বেতন যথাক্রমে : দুই হাজার ৩০৪, এক হাজার ৫৮০, ছয় হাজার ২২৯ ও চার হাজার ৫৫০ ডলার।
কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নয়; প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে অন্য দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতনের আকাশ-পাতাল তফাত। মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকদের অবস্থাও একই। এ দেশের শিক্ষকদের কম বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে যতটা না অর্থনৈতিক সংকট দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী উচ্চপর্যায়ে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সংকীর্ণ মানসিকতা। বাংলাদেশের মানুষ ধবধবে সাদা পুরনো পাঞ্জাবি গায়ে, ভাঙা ছাতা হাতে, মরচে ধরা হাতলওয়ালা সাইকেলে অথবা কখনো পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল গিয়ে ছাত্র পড়ানো ব্যক্তিকেই শিক্ষক বলে জানে। ধরেই নিই, শিক্ষকরা হবেন অতিভদ্র, বিদ্যার ভার তাঁদের মাথা নোয়াবে। সাদাসিধে জীবনযাপন করবেন তাঁরা। আর্য, মৌর্য, গুপ্ত, হুন, পাল, সেন, সুলতানি, পাঠান, মোগল, ইংরেজ অথবা স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষক মানেই এমন চিত্র মানসপটে ফুটে ওঠে। কিন্তু আমরা ভুলেই গেছি, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে অনেক। ডিজিটাল যুগে আছি আমরা। এখন একজন শিক্ষককেও শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে পড়াতে ইন্টারনেট ঘাঁটতে হয়। সর্বশেষ তথ্য জানতে হয়। কিন্তু শিক্ষকদের যদি আর্য-মৌর্য যুগের সম্মানী দিই; তবে তাঁদের পক্ষে কী শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল যুগের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব?
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়নের জন্য স্থায়ী পে কমিশন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র কমিশন ও সম্মানজনক সম্মানী প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতিতেও শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে; কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ শিক্ষকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে জাতীয় পে কমিশন নিশ্চয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করবে। কিন্তু একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন পে কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ প্রকাশিত হলেও সেখানে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কোনো উল্লেখ নেই, যা প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের শিক্ষকদের চরমভাবে হতাশ করেছে। যদিও নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের 'অস্ত্র নয় শিক্ষায় বিনিয়োগ করার' আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বনেতাদের মতো আমরাও প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য সমর্থন করছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর ওই আহ্বানের কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে? এ দেশে এখনো শিক্ষা খাতে যত ব্যয় করা হয়, তার থেকে বেশি ব্যয় করা হয় প্রতিরক্ষা খাতে। দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে এই খাতের ব্যয় আরো বৃদ্ধি করলেও আমাদের আপত্তি করার কিছু নেই; কিন্তু পাশাপাশি শিক্ষা খাতে তথা শিক্ষকদের উপযুক্ত সম্মানী প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি।
পরিশেষে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় না আসা পর্যন্ত সরকার যত উদ্যোগই গ্রহণ করুক না কেন, শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন অসম্ভব। একজন ভালো মানের কারিগরের পক্ষেই উচ্চমানের শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একজন মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারেন। কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীরা তখনই অধিক হারে শিক্ষকতা পেশায় আসবেন, যখন তাঁদের উপযুক্ত সম্মানী প্রদান করা হবে। তাই সরকারের উচিত প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করে সম্মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উপযুক্ত সম্মানী প্রদান করা।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
Published in: http://www.kalerkantho.com/feature/sub-editorial/2014/10/11/138137/print
আরো পড়ুনঃ "স্বতন্ত্র স্কেল চাই, অন্য কোন দাবি নাই!!"
শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত সম্মান ও সম্মানীর নিশ্চয়তা প্রদানই কেবল এবারের শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্যকে ভবিষ্যতে সার্থক করে তুলতে পারে। প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের শিক্ষকের 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' অবস্থার অবসানই কেবল এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির চাবিকাঠি।
২০০৯ সালের বেতন কাঠামো অনুসারে বাংলাদেশের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রভাষক পদে ১৩৫ ডলার বেতনে চাকরিতে নিযুক্ত হন। একজন অধ্যাপক সর্বোচ্চ বেতন পান ৪১৩ ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক চার হাজার ৭৭ ডলারে শিক্ষকতায় নিযুক্ত হলেও একজন অধ্যাপকের সর্বোচ্চ বেতন আট হাজার ৩৬৯ ডলার। যুক্তরাজ্যের কথা না হয় বাদ দিলাম। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জিডিপির পার্থক্য আকাশচুম্বী নয়। তাই ভারতের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যে বেতন পান, এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের তার কাছাকাছি বেতন দাবি করাটা কি অযৌক্তিক? কিন্তু দুর্ভাগ্য এ দেশের শিক্ষকসমাজের! ভারতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক প্রতি মাসে ৬০ হাজার রুপি; আর একজন অধ্যাপক এক লাখ ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পেলেও এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ১৩৫ ডলার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। আমরা যে পাকিস্তানকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে প্রতিদিন ১০০ বার গালমন্দ করি, সেই পাকিস্তানও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। পাকিস্তানের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মাসে দুই লাখ তিন হাজার থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত সম্মানী পান। বাংলাদেশের কাছাকাছি যেসব দেশের জিডিপি, সেই মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তান, ইথিওপিয়া, আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া ও সুদূর আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিলের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন আমাদের থেকে কয়েক গুণ বেশি। ওই দেশগুলোতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক বেতন পান যথাক্রমে : এক হাজার ৩৭, ৮৬৪, দুই হাজার ৭৫৮ ও এক হাজার ৮৫৮ ডলার। আর অধ্যাপকের সর্বোচ্চ বেতন যথাক্রমে : দুই হাজার ৩০৪, এক হাজার ৫৮০, ছয় হাজার ২২৯ ও চার হাজার ৫৫০ ডলার।
কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নয়; প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে অন্য দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতনের আকাশ-পাতাল তফাত। মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকদের অবস্থাও একই। এ দেশের শিক্ষকদের কম বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে যতটা না অর্থনৈতিক সংকট দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী উচ্চপর্যায়ে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সংকীর্ণ মানসিকতা। বাংলাদেশের মানুষ ধবধবে সাদা পুরনো পাঞ্জাবি গায়ে, ভাঙা ছাতা হাতে, মরচে ধরা হাতলওয়ালা সাইকেলে অথবা কখনো পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল গিয়ে ছাত্র পড়ানো ব্যক্তিকেই শিক্ষক বলে জানে। ধরেই নিই, শিক্ষকরা হবেন অতিভদ্র, বিদ্যার ভার তাঁদের মাথা নোয়াবে। সাদাসিধে জীবনযাপন করবেন তাঁরা। আর্য, মৌর্য, গুপ্ত, হুন, পাল, সেন, সুলতানি, পাঠান, মোগল, ইংরেজ অথবা স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষক মানেই এমন চিত্র মানসপটে ফুটে ওঠে। কিন্তু আমরা ভুলেই গেছি, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে অনেক। ডিজিটাল যুগে আছি আমরা। এখন একজন শিক্ষককেও শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে পড়াতে ইন্টারনেট ঘাঁটতে হয়। সর্বশেষ তথ্য জানতে হয়। কিন্তু শিক্ষকদের যদি আর্য-মৌর্য যুগের সম্মানী দিই; তবে তাঁদের পক্ষে কী শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল যুগের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব?
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়নের জন্য স্থায়ী পে কমিশন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র কমিশন ও সম্মানজনক সম্মানী প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতিতেও শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে; কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ শিক্ষকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে জাতীয় পে কমিশন নিশ্চয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করবে। কিন্তু একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন পে কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ প্রকাশিত হলেও সেখানে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কোনো উল্লেখ নেই, যা প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের শিক্ষকদের চরমভাবে হতাশ করেছে। যদিও নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের 'অস্ত্র নয় শিক্ষায় বিনিয়োগ করার' আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বনেতাদের মতো আমরাও প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য সমর্থন করছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর ওই আহ্বানের কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে? এ দেশে এখনো শিক্ষা খাতে যত ব্যয় করা হয়, তার থেকে বেশি ব্যয় করা হয় প্রতিরক্ষা খাতে। দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে এই খাতের ব্যয় আরো বৃদ্ধি করলেও আমাদের আপত্তি করার কিছু নেই; কিন্তু পাশাপাশি শিক্ষা খাতে তথা শিক্ষকদের উপযুক্ত সম্মানী প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি।
পরিশেষে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় না আসা পর্যন্ত সরকার যত উদ্যোগই গ্রহণ করুক না কেন, শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন অসম্ভব। একজন ভালো মানের কারিগরের পক্ষেই উচ্চমানের শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একজন মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারেন। কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীরা তখনই অধিক হারে শিক্ষকতা পেশায় আসবেন, যখন তাঁদের উপযুক্ত সম্মানী প্রদান করা হবে। তাই সরকারের উচিত প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করে সম্মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উপযুক্ত সম্মানী প্রদান করা।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
Published in: http://www.kalerkantho.com/feature/sub-editorial/2014/10/11/138137/print
আরো পড়ুনঃ "স্বতন্ত্র স্কেল চাই, অন্য কোন দাবি নাই!!"
0 comments:
Post a Comment