Saturday, March 14, 2015

বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি ও জার্নালের গুনগত মান

Kamrul Hassan

ধরা যাক বাংলাদেশের কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রমোশন আসন্ন। প্রমোশনের কিছু নিয়ম কানুন আছে। শিক্ষক প্রমোশনের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য কমিটি থাকে সেখানে বিষয় সংশ্লিষ্ট এক্সপার্টও থাকেন। এক সময় এই নিয়ম কানুনগুলো খুব শক্ত ছিল। শুনেছি একসময় এই এক্সপার্টরা ছিলেন বিদেশী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক। এই এক্সপার্টরা তাদের মতাতত পাঠাতেন কমিটির কাছে এমনকি তাদেরকে কমিটিতেও রাখা হত। তারা গবেষণা পত্রের আন্তর্জাতিক মান ও অন্যান্য যোগ্যতা impartially যাচাই করতেন। স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে আমরা এগুলো সব কিছু পরিবর্তন করে ফেলেছি। নিয়োগ কমিটিতে এখন শুধুই দেশী এক্সপার্ট থাকেন। আবার এই দেশী এক্সপার্টদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনায় অন্তুর্ভুক্ত করা হয়। এই তথাকথিত এক্সপার্টরা কতটুকু এক্সপার্ট সে বিষয়ে মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন থেকেই যায়। এখন গবেষণা পত্র আর আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে হতে হয় না। অবস্থা এখন এমন যে Nature বা Science জার্নালে প্রকাশিত করলে যে ফায়দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালে প্রকাশিত করলে ঐ একই ফায়দা। তো এদেশের শিক্ষকরা ভালো কাজ করতে উত্সাহিত হবে কেন? এবং হচ্ছেও না।

যে কথা বলছিলাম। কোন একজন শিক্ষকের যদি প্রমোশন আসন্ন হয় সে তখন কি করে এই বাংলাদেশে? প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েই তাদের নিজস্ব জার্নাল আছে এমন কি আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও। এই জার্নালগুলোর এ জন্যই তৈরী করা হয় যেন আমাদের শিক্ষকরা তাদের প্রমোশনের প্রয়োজনীয় গবেষণা পত্র অতি সহজে প্রকাশিত করে অতি দ্রুত প্রমোশন পেয়ে অধ্যাপক হতে পারেন। ওই জার্নালগুলোর এডিটর সাধারণত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একজন শিক্ষক। প্রমোশন প্রার্থীর যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক গবেষণা পত্র না থাকে কোন সমস্যা নেই। যতগুলোর ঘাটতি আছে ততগুলো গবেষণা পত্র লিখে এডিটরের কাছে ব্যাক্তিগত ভাবে গিয়ে রিকোয়েস্ট করতে পারলেই এক ইসুতে দুই বা ততোধিক গবেষণা পত্র পাবলিশ করা বা acceptance লেটার নেওয়া সম্ভব। এই acceptance লেটার দিয়েই প্রমোশন হয়েছে এরকম শিক্ষক এই খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পাওয়া যাবে। এমনটা পৃথিবীতে বিরল। আমরা এমনই। আমরা এরকম বিরল আরো অনেক ক্ষেত্রে।

একটা গল্প বলে বাকি লেখাটা শেষ করতে চাই। ঢাকার কোন এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক বিভাগের বেশ কিছু শিক্ষকের প্রমোশন হচ্ছে না প্রয়োজনীয় গবেষণা পত্র নেই বলে। তো তারা সকলে একত্রিত হয়ে তারা তারা মিলে একটা জার্নাল প্রকাশের ডিসিশন নেন। যেই কথা সেই কাজ। প্রথম দুয়েক ইসুতেই তাদের, শুধু মাত্র তাদের, গবেষণা পত্র দিয়ে তাদের যা প্রয়োজন ছিল মিটিয়ে ফেলেন এবং প্রমোশন পেয়ে যান। তারপর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। এটা আবার চালু হয় যখনই কিছু জনের খুব প্রয়োজন হয়। শিক্ষক যদি এমন ছলচাতুরী করে তো এরা আমাদের ভবিষ্যত প্রন্মকে কি শেখাবে?

নিজেদের জার্নাল, নিজেরদের লোক এডিটর এবং রেফারি এগুলো শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। এগুলো করে রিসার্চ-এর মান কখনো ভালো হবে না এবং হচ্ছেও না। কারণ কোন কিছু না করে শুধু কিছু গোজামিল দিয়ে যদি রিসার্চ পেপার হয়ে যায় আর সেইগুলো দিয়েই যদি সব কাজ চলে তো ভালো এবং কষ্টকর কাজ কোন বলদ করবে?

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

0 comments:

Post a Comment