Friday, May 22, 2015

শিক্ষকের মর্যাদাঃ সরকারের প্রতশ্রুতি ও বাস্তবতা


আজকে শিক্ষকরা অষ্টম জাতীয় বেতনকাঠামো প্রত্যাখ্যান করে তা পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে রাস্তায়। সরকার এতদিন বলে আসছিল তারা শিক্ষকদের সতন্ত্র বেতন কাঠামো তৈরী করবেন, শিক্ষকদের উচ্চাসনে বসাবেন, শিক্ষকদের সমাজে মর্যাদাবান করবেন। আর এখন দেখছি করছে ঠিক উল্টোটি। এখন দেখছি যতটুকু ছিল তার থেকেও কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। অর্থাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আর তেমন গুরুত্বপূর্ন মনে করছেন না। এখন যারা আন্দোলন করছেন আমি নিশ্চিত তাদেরই কেউ কেউ সরকারের কাছে গিয়ে বলছেন "কোন সমস্যা নেই আমরা সব সামলে নিব। কয়েকদিন ওদের সাথে থাকতে হবে, থেকে সুযোগ বুঝে steering wheel-টা সময়মত ঘুরিয়ে দেব"। এগুলো না করে আজ যদি সমস্ত শিক্ষক এক হয়ে এক ভাষায় কথা বলত তাহলে দেখা যেত! তেমনি আমাদের ছাত্ররা যদি তাদের বিভিন্ন ন্যায্য দাবিতে এক ভাষায় কথা বলত তাহলে সরকার কি না মেনে পারত? যে সরকার বলে তিন হাজার, চার হাজার বা পাঁচ হাজার কোটি টাকা কোন বিষয় না সেই সরকার কিভাবে বার্ষিক মাত্র ১২৫ কোটি টাকা বাজেট দেয়? এই টাকাগুলো দিয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের কোন রকমে বেতন এবং অন্যান্য অত্যাবশকিয় কাজগুলো করা যায় খুবই টান-টান অবস্থায়। কিন্তু এর বাহির আরো অনেক বিষয় আছে। যেমন গবেষণা, বিভিন্নরকম maintenance-এর জন্য দরকার বিপুল টাকা। এটা কত অন্যায্য! না শিক্ষক না ছাত্র কেউই কখনো এই দাবি তুলেনি, তুলেছে কি? এই দাবি যেন না তুলতে পারে সেই জন্যই আমাদের সরকারগুলো সবসময় তাদের ঘরানার একদল চাটুকার তৈরী করে।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুমিকা দেশের সরকার, সরকারী দল, বিরোধী দল সমূহ থেকে শুরু করে আপামর জনতা জানে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্রদের ছিল এক বিশেষ সম্মানীয় অবস্থান। অনেক শিক্ষক ছিলেন আইকন স্বরূপ। তারা ছিলেন প্রচন্ড ব্যাক্তিত্বের অধিকারী। পদ, পদবী পাওয়ার জন্য লবি করেননি। কারণ এই মানুষগুলি ছিল প্রচন্ড অহম সম্পন্ন মানুষ। আর অহম একদিনে তৈরী হয় না। একজন মানুষ যখন ছোটবেলা থেকে সেরা ছাত্র হিসাবে স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সমাজে সমাদৃত হয় তখন তার মধ্যে একটা অহম বোধ তৈরী হয়। এই বোধ তাকে অনেক অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। পদলোভ থেকে দুরে রাখে। কিন্তু ইদানিং যেই নিয়োগ দেখছি তাতে সেরারা নিয়োগ পাচ্ছে না। অনেকের মধ্যে অহমবোধের প্রচন্ড অভাব। যোগ্যতাবলে প্রমোশন পান না বলে নানা রকম লবি করে বেড়ান, রাজনীতি করেন, নানান সংঘটনের সঙ্গে যুক্ত হন। শিক্ষকদের নানা ফোরামে নির্বাচন করেন এবং নির্লজ্জ বেহায়ার মত ভোট ভিক্ষা চান। এসব করলে পড়াশুনা বা গবেষণা করবেন কখন? ছাত্ররা যদি টিভি পর্দায় দেখে যে একজন শিক্ষক নির্লজ্জভাবে কোন একটা দলের পক্ষ হয়ে কথা বলতে গিয়ে নানারকম সত্য-মিথ্যার ফুলঝুড়ি ছাড়ছেন তখন তাকে আর সম্মানের জায়গায় রাখতে পারবে না। আর শিক্ষক যদি উঁচু স্থানে না থাকে জ্ঞানটা প্রবাহিত হবে কিভাবে? প্রবাহের জন্য চাই gradient যেমন লাগে পানি বা যে কোন ফ্লুইড প্রবাহের জন্য।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

0 comments:

Post a Comment