Thursday, July 30, 2015

শিক্ষকের বেতন কত হবে?


মোটা দাগে এটা প্রায় সবাই মানে যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন খুবই কম। এটা এত কম যে, ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক সংস্থা কিংবা এমন যে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় তাদের বেতন অনেকটা হাস্যকর। অনেকেই reluctantly এটাও চায় যে শিক্ষকদের বেতন বাড়ুক, অভাবের তাড়নায় তাদের বিড়ম্বনায় না পড়তে হোক এবং এটা তারা অনেকটা আন্তরিকভাবেই কামনা করে। সবকিছু মানার পর আবার কিছু "যদি-কিন্তু" যোগ করে বলবে চাকুরীর দরখাস্ত করার সময় জানতেন না আপনার বেতন? হ, জানতাম এবং এখনো জানি। যখন চাকুরীর জন্য দরখাস্ত করি তখন বয়স কম ছিল, তখন অবিবাহিত ছিলাম, কোন প্রকার পিছুটান ছিল না এমন কি আমার উপর কেউ নির্ভরশীল ছিল না। ছাত্রবস্থায় শিক্ষকদের দেখেছি মহানায়কের মত। আর যেখানে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় পার করেছি, যেখানে আমার জ্ঞান বৃদ্ধির হার ছিল সবচেয়ে বেশি সেখানে একদিন শিক্ষক হয়ে সারা জীবন ওই ক্যাম্পাসে থাকতে পারার এক বাসনাতো আছেই। এছাড়া এক্সপোজার কম ছিল বলে এক্সপেকটেশন বা চাওয়া-পাওয়াও কম ছিল। একটু বুঝিয়ে বলি। আমি যখন খুব ছোট ক্লাসে ছিলাম তখন মোমবাতি বা হ্যারিকেনের আলোতে পড়াশুনা করেছি। হাত পাখায় বাতাস করে গ্রীষ্মকাল কাটিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর বৈদ্যতিক বাল্বের নিচে পড়তে অভ্যস্ত হয়ে পরি। এরপর প্রতি ছুটিতে বাড়িতে গেলে সাথে করে ব্যাগ ভরে বই নিয়েছি বাড়িতে পড়ব বলে কিন্তু হ্যারিকেনের আলোতে পড়াশুনা আর করতে পারিনি। হাত পাখায় আর চলত না। ঘরে হ্যারিকেনের আলো জালালে কেমন জানি অন্ধকার অন্ধকার লাগত। তারপর বিদেশ যাই উচ্চ শিক্ষার জন্য। ওখানে গিয়ে আরেক দফা পরিবর্তন ঘটে। এবারের পরিবর্তনটা ছিল বড়সর পরিবর্তন। অনেকটা উন্নত জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে যাই। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতে। জীবন যাত্রার মানের অভ্যাস অনেকটা entropy-র মত একমুখী reversible না।তাই চাকুরীর জন্য দরখাস্ত করার সময় "আমি" আর এখনকার আমি এক না। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীর সুবাদে সবারই কম বেশি এরকম পরিবর্তন ঘটে। আর চাকুরিটাই এরকম সর্বদা শিখতে হয়। আমরা কেউ স্ট্যাটিক না। মানুষ তথা সরকারকে এটা বুঝতে হবে। এখন পরিবর্তন হয়েছে বলে শুধু টাকা এবং প্রাচুর্য্যই সব? এটা সব না। আমাকে কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যদি দ্বিগুন, তিনগুন, চারগুন বেতনও দেয় তারপরও আমি এখানেই থাকব ওখানে যাব না। কারণ ওগুলোকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ই মনে করি না। যাক ওটা ভিন্ন ইসু। তাই বেতনটা এমন হওয়া উচিত যেন আমার শিক্ষা, এক্সপোজার, জ্ঞান এগুলোর সাথে commensurable হয়।

অনেককেই আবার বলতে শুনি এই স্বল্প বেতন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান কমে যাবার ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক? এসব ক্ষেত্র বোঝার জন্য আমাদের দুটো এক্সট্রিম case চিন্তা করতে হবে। প্রথম case, আমাদের বেতন যদি খুব খুবই কম হয় তখন কি ঘটতে পারে।দ্বিতীয় case, যদি বেতন খুব খুবই বেশি হয় তখন কি ঘটতে পারে। প্রথম ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের আর যাই হোক শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন যেন না দেখে তার ব্যাবস্থা করবে। তখন শুধু তারাই চাকুরী করবে যারা কোথাও কোন চাকুরী না পাবে যেমন এখন আমাদের প্রাইমারি স্কুলে ঘটে। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রত্যেক বাবা মাই তখন স্বপ্ন দেখবে: আহা আমার ছেলে বা মেয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারত। শিক্ষকদের বেতন দিন দিন কমেছে অর্থাত ৪০ থেকে ৫০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক তার বেতন দিয়ে যতটুকু স্বর্ন কিনতে পারতেন এখন তা পারেন না। অন্য দিকে আমরা দিন দিনদিন বর্জুয়া জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি, দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু শিক্ষকদের বেতন বাড়ছে না। তার ফলাফল স্বরূপ ক্লাসের সেরা ছাত্ররা এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে না। অর্থাত এখন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করছে তাদের অধিকাংশই ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র না। সবচেয়ে ভালোরা বিদেশ চলে যাচ্ছে আর দেশে ফিরে আসছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়াতে হলে বেতনের দিকেতো লক্ষ্য রাখতেই হবে। কেউ কেউতো exceptional বা ব্যাতিক্রমী থাকবেই। ব্যাতিক্রম সব কিছুতেই থাকে।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Wednesday, July 29, 2015

On university teachers’ demand for a separate pay-scale

Mohit Ul Alam

On university teachers’ demand for a separate pay-scale
The proposed 8th national pay-scale has created a furore among the public university teachers as they deem that the suggested salary structure has neither protected their pay benefits nor defined their status. The University Teachers’ Associations Federation, representing the teachers associations of 37 public universities, has raised this issue with several wings of the government and pointed out that the recommendations of the Pay and Service Commission 2013 have been modified by the Secretary Committee in which it appears that the position of the university teachers recognised in the 7th national pay-scale has been downgraded by two steps in the 8th pay-scale, thus hurting the sentiment of the teachers.
The Vice-Chancellors’ Association, known in Bangla as Vishwabidyalay Parishad, has also responded to the grievances of the teachers and in a meeting with the honourable Education Minister on 8 July the Association members voiced their support for the logical demands of the university teachers. While speaking on behalf of the university teachers, the Vice Chancellors, all of whom are basically university teachers too, observed with great anxiety that when the present Honourable Prime Minister Sheikh Hasina and the Honourable Education Minister Nurul Islam Nahid, MP, are both widely known for their interest in the growth and flourishing of the higher studies across the country, this kind of constraining and prestige demeaning pay-structure cannot have been approved by them, and so they speculated that a section of the influential bureaucrats might have played a black hand in approving a pay-scale inimical to the university teachers. So they smelled a conspiracy somewhere that would not only harm the university teachers but would also tarnish the image of the government, which by all evidence is a pro-education government.
As the discontentment over the pay-scale issue is increasing and programmes such as protest processions, forming human-chains and symbolic abstention from classes by teachers manifest it, some comparative reports show that in the subcontinent all other countries have either a separate pay-scale for university teachers or, if not, an enhanced grade of salary with other tangible benefits. In Sri Lanka, there exists a separate pay-scale for university teachers, and a lecturer begins his career at the university with a monthly basic salary of Rupees 39,754 and highest Rupees 48,445. For a senior professor the monthly salary range is between Rs. 67,100 lowest and Rs. 87,775 highest. In addition, they get extra incentives every month in the form of lifestyle expenses, Rs. 7,800, and for all teachers there is allocation for 80 to 90 percent of the basic salary as academic incentives. In addition, they also receive research allowance, 35%, and special allowance, 20%, of the basic salary. Pakistan also maintains a separate pay-scale phenomenally high, where a university assistant teacher gets monthly lowest Rs. 1,04,000 and highest Rs. 2,11,250, and a professor’s monthly salary ranges from lowest Rs. 2,34,000 to highest Rs. 4,05,600. In India, there doesn’t exist a separate pay-scale for university teachers, but after joining the university each teacher gets a number of allowances in addition to their basic salary and other fringe benefits. India runs a highly research-oriented national educational programme, and, therefore, immediately after joining the university, a university teacher receives a onetime grant for research ranging from Rs. Two lakh lowest to Rs. Five lakh highest.
The above comparative statistics provides an opportunity to realise how importantly is the higher education recognised by our neighbouring countries, and this is all the more reason that we pay heed to the demand for a separate pay-scale by the university teachers.
The present scandalised status offered in the proposed 8th national pay-scale shouldn’t be seen as done by some whimsical sleight of hand, but rather the formation of such a negative attitude towards university teachers has been the result of a long-grown pathetic scenario in this sector. Historical data will support this view that since long university education has been politicised along the party-line politics, which is different from politicising higher education along the ideological line, say, for example, the spirit of the Liberation War. Ideally, politics is a matter of ideology, which should impact an institution beyond the physical individual identity of the people who carry that ideology. But in reality that higher ideal is compromised by a distorted vision that an ideology is identifiable with the physical entity of the individual, in this case in the persona of the individual teacher.
Thus the abstract and intangible dimension of the ideology is wrongly deemed as expressible in the tangible form of an individual teacher. Thus in pursuit of spreading an ideology, university authorities, being also influenced by external political pressure, have recruited not teachers but party-political agents, and that in a large way by recruiting inferior applicants sacrificing the brighter ones. In some cases, nepotism and shady dealings have also resulted in inferior recruitment. In short, merit has been sacrificed to biased allegiances.
Now the compromise with merit can be digestible in other job sectors, perhaps, but never ever in higher education, where an inferior person recruited as a university teacher may cause harm to the institution for nearly as many as four decades. Teaching is an intellectual profession, and so its impact is both invisible and far reaching, but, which, unfortunately, is not always sensed by a university authority keen on recruiting a party political agent with inferior academic records rather than a suitable candidate fit to teach at the university level.
This practice being followed for decades together has created a negative impression about the quality of the university teachers in the greater society, where in numerous social transactions everybody, whoever he may be, comes to be tested for his real worth. Thus in numerous public forums university teachers have been seen to be less qualified than their official tags demanded. University professors have become cheaper by the dozen. Most of them become professors without any significant research publication in their chosen fields. The negative image has created a negative impact on the body of the people who fix the pay-structure of the nation. So university teachers have fallen into a vicious cycle. Compromised recruiting system, coupled with poor pay structure, has failed to allure the more brilliant students to university teaching, and being poorer for that other competing agencies, say the bureaucracy, have grown a false notion that a university teacher’s job is tantamount to ordinary office time keeping from 9 to 5.
This is where the pain resides, the failure by the competent bodies to realise the significance and relevance of higher education in a growing society that Bangladesh is. The failure also includes an incorrect (rather perverted) view that a nation can grow without higher education. Otherwise, why would the university teachers, the carriers of higher education, be falling into such ignoble fold?
If a separate pay-scale for the university teachers is not feasible at the moment, I suggest that they are paid a number of increments with their basic pay at the time of joining in any rung. Maybe, a lecturer should be given five increments, followed by an assistant professor to be paid six increments, an associate professor seven, a professor eight, and a vice-chancellor nine increments. Correspondingly, with their basic pay fixation, other allowances would be given on a percentage basis. Let’s see. . . .

The writer is Vice-Chancellor, Jatiya Kabi Kazi Nazrul Islam University

Source:http://www.daily-sun.com/printversion/details/62405/On-university-teachersrsquo-demand-for-a-separate-payscale

Monday, July 27, 2015

১১ অতিরিক্ত সচিব, ১৭ যুগ্ম-সচিবের একাধিক তৃতীয় বিভাগ

এবাদুর রহমান

বাংলাদেশ সরকারের ১৭ জন অতিরিক্ত সচিব ও ৩৭ যুগ্ম-সচিবের শিক্ষা জীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগসহ টেনেটুনে পাস করার নির্মম ইতিহাস রয়েছে। এসব র্মকর্তাদের অধিকাংশই প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদোন্নতি পেয়ে সরকারের যুগ্ম-সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। শিক্ষাখাতের নানা স্তরে তক্কে তক্কে থাকা দেশের শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র অনলাইন জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষাডটকম’র অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিবদের অধিকাংশই বিএ/বিএসসি/বিকম পাসকোর্স পাস করে চাকরিতে ঢুকেছেন। পরবর্তীতে তারা সরকারি/মানহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে পদোন্নতিতে কাজে লাগিয়েছেন। অনেকে অবৈধভাবে চলা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের কথিত শাখা থেকে এমবিএ/পিএইচডি/এমফিল ইত্যাদিও নিয়েছেন। তবে সংবাদ মাধ্যমে বিরুপ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় অনেকেই পিএইচডি খেতাব ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকছেন কয়েকজন। তারা তক্কে তক্কে রয়েছেন কবে এসব বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার অনুমোদন দেবে সরকার তখনই তারাই ওইসব ডিগ্রি নামের আগে ব্যবহার করার শুরু করবেন। ডক্টরেটসহ বিজনেস কার্ড তৈরি করলেও তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়াধীন কোনওকোনও যুগ্ম-সচিব ও অতিরিক্তসচিব এমন তথ্য প্রমাণ দৈনিকশিক্ষাডটকম’র হাতে রয়েছে।

১৯৮৪ ব্যাচের যুগ্ম-সচিব মো. আবদুর রাজ্জাক তৃতীয় বিভাগ পেয়ে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। উপ-সচিব থাকাকালে ২০০৬ সালে তিনি প্রাইম ইউনিভার্সিটির অবৈধ একটি শাখা থেকে এলএলবি’র ও পরবর্তীতে এমবিএ’র সার্টিফিকেট যোগাড় করে পদোন্নতি বাগিয়েছেন। যুগ্ম-সচিব তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মোখলেছুর রহমানও অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক ডিগ্রি নিয়েছেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী পদে চাকরির জন্য পৃথিবীর কোথাও এক্সট্রাঅডিনারি মেধাবীরা ভীড় জমান না। ট্যালেনটেড যারা তারা আবিষ্কার করেন নতুন কিছু সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির মেধাবীরা সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে জীবন পার করে দেন। এটা সারা পৃথিবীতেই চলমান। সরকারি চাকরিতে কাজের যে ন্যাচার তাতে খুব মেধাবী লোকের দরকারও নেই। মধ্যম মানের মেধাবী হওয়াই যথেষ্ঠ। তবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা, সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিবসহ অনেক কর্মকর্তাই রয়েছেন মেধাবী। তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে মেধার পরিচয় দেন। এটা দেশের জন্য ভালো।

Published in: http://www.dainikshiksha.com/news.php?content_id=8573

আরো পড়ুন:
বিভিন্ন সরকারী ট্রেনিং এ কারা যায়? কি করে?
শিক্ষার ঋণে আনন্দভ্রমণ!
'শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা' নিতে আমলারাও যাচ্ছেন বিদেশে - শিক্ষক-শিক্ষাবিদরা সুযোগ পান না
সংস্কারের বিকল্প নেই
ঔপনিবেশিক জনপ্রশাসন এবং ক্যাডার সার্ভিস সংস্কার
ক্যাডারের রাজা "প্রশাসন ক্যাডার"
প্রশাসন ক্যাডার দুর্নীতির শীর্ষে!
আমলাতন্ত্রের আমলনামা ও শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন

যে দেশে বিপন্ন শিক্ষা, অবহেলিত শিক্ষার্থী এবং বঞ্চিত শিক্ষক

Kamrul Hassan

বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের বিজয়ের ঠিক আগ মুহুর্তে কাদের হত্যা করেছিল? ১৪-ই ডিসেম্বর যে আমরা বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস হিসাবে পালন করি তো ওই সময় কাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল? খোঁজ নিয়ে দেখুন দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি বুদ্ধিজীবী যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল তারা শিক্ষক ছিলেন। হানাদার বাহিনী জানত মানুষ গড়ার এই কারিগরদের হত্যা করলে এরা সহজে আর মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না। তারা জানত এদেরকে হত্যা করতে পারলে বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে দেওয়া যাবে। আমার ধারণা ২০১৫ সালে এসে এক ভিন্ন আঙ্গিকে বুদ্ধিজীবী নিধনের পায়তারা চলছে। এখনতো দিন পাল্টেছে। এখন যেমন যুদ্ধ করে দেশ দখল করার দিন শেষ ঠিক তেমনি সরাসরি হত্যা করে বুদ্ধিজীবী নিধনের দিনও শেষ। শিক্ষকতা পেশার যে মান-সম্মান আছে সেটা যদি আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা যায় তাহলে বুদ্ধিজীবী তথা শিক্ষকরা আস্তে আস্তে নীতিভ্রষ্ট হবে, মেধাবীরা এই চাকুরিতে আসতে নিরুৎসাহী হবে এবং এভাবে জাতি একদিন মেধাহীন হয়ে যাবে। ফরাস উদ্দিন সাহেবের নেতৃত্বে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের সুপারিশমালার দিকে তাকালে তারই খুব স্পষ্ট লক্ষণ পাওয়া যায়। মনে হচ্ছে এর মাধ্যমে আরো একদফা ভিন্নতরভাবে বুদ্ধিজীবীদের উপর আঘাত আনার পায়তারা চলছে।

ফরাস উদ্দিনের মাঝে রাজাকার আলবদরের প্রেতাত্মা ভর করে থাকতে পারে। বিষয়টা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি আর আশা করছি বর্তমান সরকার এই ফাঁদে পা দিবে না। বুঝতে হবে এই সরকারকে কারা বার বার বিতর্কিত করেছে। কারা বার বার দেশে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এই আমলারা ভুঁয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে এবং টাকার বিনিময়ে দিয়ে ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। কারা দুর্নীতিতে শীর্ষে। নিঃসন্দেহে এই আমলারা। তাই সরকারকে অনুরোধ করছি: ভেবে দেখুন। শেষ পেরেগটা মারার আগে please আরো একবার ভেবে দেখুন।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Friday, July 24, 2015

প্রি-প্রিন্ট আর্কাইভের সূচনা- arXiv.org


১৯৯১ সালে পৃথিবীজুড়ে বিজ্ঞানীদের জন্য এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। ওই সালে xxx.lanl.govurl এড্রেসে বিজ্ঞানীদের একটি প্রি-প্রিন্ট আর্কাইভের সূচনা হয়। বর্তমানে ওই এড্রেসটি পরিবর্তিত হয়ে arXiv.org হয় এবং এটি মেইনটেইন ও অপারেশনের দায়িত্ব নেয় Cornell University Library। এই আর্কাইভটি বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে সাংঘাতিক জনপ্রিয়। Covered areas archive include physics, mathematics, computer science, nonlinear sciences, quantitative biology and statistics। ১৯৯১-এর আগে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউট তাদের নিজস্ব প্রি-প্রিন্ট আর্কাইভের ব্যাবস্থা করত। বস্তুতপক্ষে এই প্রি-প্রিন্ট ব্যাবস্থাটা এই জন্য করা হয় যেন অন্যকেউ কারো পরে একই কাজ করে ওই কাজের দাবিদার না হতে পারে। এই ব্যাবস্থা যদি আরো আগে থাকতো তাহলে হয়ত মার্কনি রেডিও আবিস্কারের কৃতিত্ব দাবি করতে পারতেন না। বরং আমাদের জগদীশ চন্দ্র বসুর নামই এই আবিস্কারের সাথে জড়িয়ে যেত। যাহোক এখন সবাই কোন আর্টিকেল কোন জার্নালে প্রকাশের জন্য submit করার পূর্বে এখানে submit করে। একটা দেশ academically বা scientifically কতটুকু এগিয়ে তার একটা litmus test হতে পারে ওই দেশের কতজন বিজ্ঞানী বা শিক্ষক ওখানে রেজিস্টার্ড author বা মাসে ঐখানে কতগুলো আর্টিকেল submit করা হয় সেই সংখ্যা দিয়ে। খুবই আতঙ্কিত হওয়ার বিষয় হলো আমার জানামতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষকদের বা ছাত্রের সংখ্যা আমিসহ ৪-৫ এর বেশি নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুয়েকজন থাকতে পারে। কিন্তু আমি প্রায় নিশ্চিত দেশের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখানে রেজিস্টার্ড author না। আরো আশ্চর্য্যের বিষয় হলো অনেকেই এর নামই শুনেনি কখনো। বাংলাদেশে ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয় থাকা এবং এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর যতজন যোগ্য শিক্ষক কাম গবেষক প্রয়োজন তা কি আছে? কলকাতায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় প্রতিদিন শুধু পদার্থ বিজ্ঞানে একাধিক আর্টিকেল submit করা হয়। অর্থাত ওখান থেকে এক সপ্তাহে শুধু এক বোস সেন্টার বা সাহা ইনস্টিটিউট থেকে যে সংখ্যক আর্টিকেল submit করা আমাদের এখান থেকে তা এক বছরেও করা হয় না!!!

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Wednesday, July 22, 2015

সংকটাপন্ন শিক্ষা খাত


ড. মো. শরিফ উদ্দিন


আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা আলোচনা আছে, সেটি প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। প্রশ্ন আছে শিক্ষার মান, সিলেবাস ও কাঠামো নিয়ে। এর চেয়েও বড় সমস্যা আমাদের শিক্ষার উন্নতিকল্পে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ খুবই স্বল্প। এই স্বল্প বরাদ্দের আয়োজন রাষ্ট্রই করেছে। উৎপাদনশীল নয়, এমন বহু খাতে সরকারের বরাদ্দ আকাশছোঁয়া অথচ শিক্ষার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে আমরা বেশ সচেতনভাবেই উদাসীন। আমরা এখন গরিবের মধ্যে গরিব অবস্থা পার করছি, বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় না নিলেও দক্ষিণ এশিয়াতেও শিক্ষা বরাদ্দে আমরা অনেক পিছিয়ে। আর এসব ভুল ও অসঙ্গতি যেন জানান দেয়, আমাদের সামগ্রিক উন্নতি শুধু কঠিন নয়, বরং সুদূরপরাহত। অথচ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, নির্বাচনী ইশতেহার ও নীতিমালায় সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বারবার প্রাধান্য পেয়েছিল। যদিও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

এক

২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষার পর বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণে মাধ্যমিক শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না। মাধ্যমিক পর্যায়ে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষকের অভাবে এখনো আমাদের শিক্ষার মান অনেক নিচে অবস্থান করছে। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জনশক্তি ঘাটতি, অবকাঠামোগত উন্নয়নের সীমাবদ্ধতা, দুর্বোধ্য সিলেবাস, একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়নে মন্থরগতি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছে। এখানে শিক্ষকসংখ্যা যেমন অপ্রতুল, তেমনি ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষকের। প্রচলিত সিলেবাসের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই, সৃজনশীল পদ্ধতির নামে যে আজব এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে সরকার, তা শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধার বিকাশের পরিবর্তে সম্ভবত শিশুর পাঠপদ্ধতিকে দুর্বোধ্য ও নিরানন্দ করে তুলছে। বিদ্যালয়গুলোয় নেই বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা। সবকিছুর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে বাজেটে কম কিংবা নামমাত্র বরাদ্দ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তির মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাত মিলিয়ে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২৯ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০.৯ শতাংশ। অথচ প্রতিরক্ষাসহ অনেক অনুৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বিপুল।

এখানে কৃষি, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো অবহেলিত রাখা হয় বরাবরই। যা হোক, রিসার্স ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশন নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুবাদে গ্রামীণ বাংলাদেশের বেশকিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। টাঙ্গাইলের নাগরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই, মূল একাডেমিক ভবনে রয়েছে ফাটল, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র একটি টয়লেট। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় আশপাশের ঝোপঝাড়ে। বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক রয়েছেন চারজন। তাঁরা অকপটে জানিয়েছেন, সৃজনশীল পদ্ধতির বিষয়ে সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে কোনো প্রশিক্ষণ তাঁদের দেওয়া হয়নি। এ পদ্ধতিতে পড়াতে গিয়ে তাঁদের নিয়মিত হিমশিম খেতে হয়। এগুলো হলো স্বল্প পরিসরে উল্লেখিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুর্গতির চিত্র, যেখানে সরকারের ন্যূনতম সুনজর নেই। অথচ প্রাথমিক শিক্ষাকেই আমরা গোটা জীবনের ভিত্তি হিসেবে জেনে এসেছি। সেই ভিত্তি আজ ভয়ানক নড়বড়ে অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু টাঙ্গাইলের একটি বিদ্যালয়ের চিত্র হলেও সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোর দশা এর চেয়ে ভালো নয়। সেক্ষেত্রে চর, নদী অধ্যুষিত, হাওর ও দুর্গম অঞ্চলগুলোর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা কী হতে পারে ভেবে দেখুন। প্রাথমিক এ স্তরটি নিয়ে সরকারের কর্তারা ভাবছেন, শুধু পাসের হার বৃদ্ধি এবং তুলনামূলক ভালো ফল দেখাতে পারলেই বুঝি দেশ ও দশের মঙ্গল! এ জন্য তাঁরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করছেন, যাতে তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থীরাও ভালো নম্বর পেয়ে যায়, বৃদ্ধি পায় পাসের হার ও জিপিএ ৫। অথচ এটি তাঁদের ভাবনাতেই নেই যে, সৃজনশীল পদ্ধতি শুধু চালু করলেই চলে না, এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিচর্যা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন এবং ধারণক্ষমতা অনুযায়ী সিলেবাস প্রণয়ন। একটি মানসম্পন্ন সিলেবাস প্রণয়নে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সিলেবাস বদল করছেন কয়েক দফায়, যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিপাকে ফেলছে ব্যাপক মাত্রায়। এসব অদ্ভুত আয়োজন দেখে সচেতন মনে হয়, আমরা নিজেরাও জানি না প্রকৃতপক্ষে আমরা কোথায় চলেছি। আমাদের এই পথচলা গন্তব্যহীন, কোনো লক্ষ্য এখনো স্থির হয়নি, চলতে চলতে যেখানে গিয়ে থামব, সেটিই যেন আমাদের লক্ষ্য।

প্রাথমিক শিক্ষাকে গতিশীল ও প্রাণবন্ত করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো এ পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে বেতন-ভাতা পান, তা প্রয়োজনের তুলনায় শুধু অপ্রতুলই নয়, বরং হাস্যকরও। একজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন, মানুষকে উজ্জীবিত করেন শিক্ষার জন্য, অথচ তিনি নিজের সন্তানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন। তাঁর বেতনের অর্থে না চলে সংসার, না চলে জীবন। সীমাহীন চিন্তা, সংসারের টানাপড়েন কাঁধে নিয়ে যখন একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে আসেন, তখন তাঁর কাছ থেকে ভালো ফল আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।

দুই

আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এখনো অনুধাবনের বাইরে রয়ে গেছে, একথা সরকার ও জনসাধারণ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। খুব অল্প বয়স থেকেই আমাদের শিক্ষার্থীদের মন ও মগজে কৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় আমাদের শিক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো একটি চাকরি পাওয়া- একটি ভালো চাকরি, আরো সোজাসাপটাভাবে বললে একটি বেশি বেতনের চাকরি। একজন শিক্ষার্থী তাঁর পড়ালেখা সম্পন্ন করে যে একজন ভালো উদ্যোক্তা হতে পারেন, চাকরি জোগাতে পারেন আরো শত তরুণের জন্য, করতে পারেন দেশকে স্বাবলম্বী, সেই শিক্ষার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী নই। মাধ্যমিক স্তর থেকেই কর্মক্ষেত্র অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষাকে উৎসাহিত করা গেলে বিশাল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর সম্ভব। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবশ্যই ক্যারিয়ার কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এ পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের মেধানুযায়ী ক্যারিয়ার প্লানিং বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। শিক্ষার এই স্তর থেকেই পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করলে খুব সহজেই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হবে। শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষা বিষয়ে সচেতন করতে সহজবোধ্য সিলেবাস প্রণয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে রাষ্ট্রকেই। দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অগ্রগতি এখনো ভ্রূণ পর্যায়ে রয়ে গেছে, কাঙ্ক্ষিত উন্নতি তো দূরের কথা, শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষার ব্যাপারে এখনো আগ্রহী করে তোলা সম্ভব হয়নি। বর্ধিত জনসংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

তিন

দেশের উচ্চশিক্ষার সার্বিক অবস্থা এখন বেশ নাজুক ও ভঙ্গুর। শিক্ষা, গবেষণা এবং নতুন জ্ঞান আবিষ্কার ও অনুসন্ধানের পথ এখন অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীরা আগের মতো একাডেমিক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করতে পারে না কিংবা করে না। লেখাপড়ার চেয়ে সেখানে এখন দলীয় রাজনীতির আদর্শহীন অন্তঃসারশূন্য স্লোগান তাদের মুখে শোভা পায়। শ্রেণিকক্ষের বদলে টেন্ডারবাজি, হল দখল, খুনোখুনি, যৌন হয়রানির দিকেই যেন শিক্ষার্থীদের নজর বেশি! এ অবস্থার জন্য হয়তো আমরা শিক্ষকরা, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, তাঁরাও অনেকাংশে দায়ী। এগুলো হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা না হওয়ার বহির্দিক, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতরকার দিকও নানা সমস্যায় জর্জরিত। গবেষণার সরঞ্জাম নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে, নেই সরকারি বরাদ্দও, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিদেশিদের কৌশলপত্র মোতাবেক বলছে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে হবে। নিয়মিত শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম সচল রাখতে যদি অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে হয় অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কাঁধে ব্যয়ের বোঝা আরো চাপিয়ে দিতে হয়, তখন শিক্ষা সাধারণ মানুষের জন্য বিলাসিতায় পরিণত হবে। আয় বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে বলা হয়, উন্নত দেশে শিক্ষাব্যয় অনেক। অথচ প্রায়ই আমরা ভুলে বসে থাকি যে, আমরা যে দেশে বসবাস করি সেটি উন্নত দেশ নয়, এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ সাধারণ খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষা, গবেষণা, প্রযুক্তিতে সরকারের সুনজর যতখানি বাড়ার কথা ছিল, ততখানি না বাড়ায় শিক্ষার মান ক্রমান্বয়ে দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং এর শিক্ষার্থীরা, যা সমষ্টিগতভাবে আমাদের সবার জন্যই দুর্ভাগ্যের।

চার

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো, বিভিন্নমুখী আন্দোলনের মুখে বেতনের ওঠানামা নিয়ে বেশ কিছ দিন ধরে গণমাধ্যমে আলোচনা চলছে। এ আলোচনা নতুন না হলেও হাল আমলে তা গতি পেয়েছে। অষ্টম বেতন কাঠামো এবং চাকরি কমিশনের প্রতিবেদনে বেতন কাঠামোর সুপারিশ এবং সচিব কমিটির প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। অষ্টম কমিশনের সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাছে অনেকাংশে সন্তোষজনক না হলেও আগের নিয়মানুযায়ী তারা কেউ কেউ মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু সচিব কমিটির প্রস্তাব শিক্ষক সমাজকে শুধু অসম্মানই করেনি বরং তাদের মর্যাদার প্রশ্নেও পরিহাস করেছে। একটি মর্যাদাপূর্ণ বেতন কাঠামোর কথা বলার অর্থ এই নয় যে, কর্তৃপক্ষের কাছে দয়া প্রার্থনা করা হচ্ছে, একজন শিক্ষক যেমন তাঁর জাতির জন্য নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত বরাদ্দ রাখেন, তেমনি ওই জাতিরও কর্তব্য রয়েছে একজন শিক্ষক তথা সৃজনশীল মানুষের প্রতি।

এটি শুধু আন্দোলন করে বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নেওয়ার প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন মর্যাদার। সচিব কমিটি শিক্ষকদের এই মর্যাদাকে দ্বিগুণ নিচে নামিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে যে, এ দেশে রাজনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, মুক্ত বুদ্ধিবৃত্তির চেয়ে আমলাতন্ত্র বেশি শক্তিশালী। আমলাতন্ত্র যে এখন রাজনীতি, অর্থনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির সব মাঠ একচেটিয়াভাবে আগলে রেখেছে, এটি তারই প্রমাণ।

সমকালীন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নানা অসুখে নাজুক হয়ে রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে প্রচলিত শিক্ষার মান ও কাঠামো নিয়েও। এই শিক্ষা আমাদের না শেখাতে পারছে জীবনবোধ, না পারছে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আমাদের ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে। নানা পদ্ধতিগত জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক দৌরাত্ম্য, বাজেটে স্বল্প বরাদ্দ, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সীমাহীন উদাসীনতা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। শিক্ষা নিয়ে সমাজে মানুষের মধ্যে যে বিবেক ও দায়বোধ থাকার কথা ছিল, সেটি গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি দীর্ঘ সময়েও। গণমানুষের এই অসচেতনতাই সরকারকে কালঘুমে অস্থির করে রেখেছে। শিক্ষা কার্যক্রম যেভাবে পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল, যে রূপরেখা নিয়ে একটি জাতির তরতর করে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বিশ্বসভায়, তার কোনো আয়োজন আর চোখে পড়ে না শুরু থেকে শেষ পর্যায় পর্যন্ত। তবু আমরা আশাবাদী, আমাদের দেশ এগিয়ে যাবেই, সব বাধা-বিপত্তি ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অচিরেই আলো ছড়াবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিন হবে বিশ্বের পথপ্রদর্শক।

লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


Published in: http://www.ntvbd.com/opinion/15250

শিক্ষকের অবমূল্যায়ন ও প্রচার-অপপ্রচার

এ কে এম শাহনাওয়াজ
১৯৯২ সালের কথা। আমি আকাশপথে কলকাতা যাচ্ছি। দমদম এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে দাঁড়িয়েছি। সেদিন যাত্রীর চাপ ছিল। একটু কড়াকড়িও দেখলাম। একজন ইমিগ্রেশন অফিসার আমার পাসপোর্ট-ভিসা পরীক্ষা করছেন। আমার শিক্ষকতা পেশার জায়গাটি দেখে একগাল হাসলেন। প্রয়োজনীয় সিল-স্বাক্ষর দিয়ে আমাকে সসম্মানে ইমিগ্রেশন পার করে দিলেন। আমি ব্যবহারে অভিভূত হলাম। এক বন্ধু আমাকে নিতে আসবেন। ফোনে জানালেন, তাঁর পৌঁছতে একটু দেরি হবে। আমাকে লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে বললেন। প্রায় আধঘণ্টা পর ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে সেই অফিসার লাউঞ্জের দিকে আসছেন। আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলেন। খোঁজখবর করলেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি বিশেষ সম্মান দেখানোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিলাম। তিনি বিনয়ের সঙ্গে বললেন, 'ছি ছি এ কথা বলছেন কেন স্যার, আপনারা শিক্ষক। সব সময়ই নমস্য। আজ আমি যে এখানে আছি সে তো আপনাদের কল্যাণে, আপনাদের আশীর্বাদে।' আমি সেদিন অনুভব করলাম কেন সভ্য দেশগুলো বিবেচনা করে শিক্ষা সবচেয়ে বড় উন্নয়নমূলক খাত। এ জন্য সেসব দেশে শিক্ষা-গবেষণার ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ থাকে সবচেয়ে বেশি। শিক্ষা ক্ষেত্রকে পরিচালনা করেন শিক্ষক। তাই শিক্ষকের আর্থিক, একাডেমিক ও সামাজিক মানোন্নয়নে রাষ্ট্রের সতর্ক লক্ষ থাকে। শিক্ষাঙ্গনকে রাখতে চায় কলুষমুক্ত।
কিন্তু আমাদের মতো আমলানির্ভর রাষ্ট্রে নষ্ট রাজনীতির দলীয় বলয়বৃত্তে বন্দি সরকার নিজ দৈন্যের কারণে আমলার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর সেই সুযোগে কোনো কোনো সংকীর্ণ মানসিকতার আমলা নিজেদের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ভাবতে পছন্দ করেন। সব ক্ষেত্রে অধিকতর জ্ঞানী ভাবতেও আনন্দ পান। তাই অনেক সময় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকেও পরোয়া না করে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। এতে মহা-অনর্থ বেঁধে গেলেও নানা রকম রক্ষাকবচের জোরে দোর্দণ্ড দাপটে থাকেন। সরকারি রাজনৈতিক সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গবেষণায় শিক্ষকরা স্বাভাবিক মূল্যায়ন বঞ্চিত হন। জয় হয় রাজনৈতিক পরিচয়ের। এসব কারণে প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকরা স্বাভাবিক মূল্যায়ন বঞ্চিত হচ্ছেন। শিকার হচ্ছেন নানা অপপ্রচারের।
একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সাকল্যে যে বেতন-ভাতা পান, ঢাকা শহরে একজন রিকশাচালক নিজের শ্রম দিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি আয় করেন। নতুন পে স্কেলে মূল বেতনের আকার যত বড় দেখায় সার্বিক বিচারে লাভের ঘরটা তেমন বড় থাকে না। বিগত পে স্কেলের হিসাবেই বলি, প্রাইমারি স্কুলের জুনিয়র শিক্ষক বেতন-ভাতা মিলিয়ে সাকল্যে পেতেন সাত হাজার টাকার মতো। আর সিনিয়র শিক্ষক সর্বোচ্চ ১৪-১৫ হাজার টাকা। তাঁদেরও স্ত্রী, সন্তানসন্ততি আছে, নির্ভরশীল মা-বাবা, ভাইবোন থাকতে পারেন, বাসাভাড়া করে থাকতে হয়। অসুখ হলে চিকিৎসা খরচ মেটাতে হয়। ছেলেমেয়ে, ভাইবোনদের লেখাপড়া করাতে হয়। এই সঙ্গে থাকে নানা সামাজিক দায়িত্ব। তাই সাত হাজার বা ১৪ হাজার টাকায় তারা কিভাবে জীবন নির্বাহ করবেন! এ কথা কি রাষ্ট্র কখনো ভেবেছে? এই বৈষম্যের অবস্থান শিক্ষার সব পর্যায়ে শিক্ষকরা হাড়ে-মজ্জায় টের পান। এরপর যখন সরকারি বিধায়ক থেকে শুরু করে জ্ঞানীগুণী অনেকে শিক্ষকদের টিউশনি (প্রাইভেট পড়ানো) নিয়ে নীতিকথা বলেন, তখন বলতে ইচ্ছে হয়, শিক্ষকরা কি তবে জীবন বাঁচাতে ছিনতাই-রাহাজানিতে নামবেন? শিক্ষকরা তো ফাইল আটকে অতিরিক্ত আয় করছেন না- তাঁদের পেশার সঙ্গে সম্পর্কিত ছাত্র পড়িয়ে আয় করছেন। এতে শিক্ষকদের নিজ পেশায় দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। খবরদারি চলতে পারে সেখানে, যদি শিক্ষক স্কুলে নিজ দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা করেন। দরকার ছিল নোট বই-গাইড বই মুক্ত করা। সেখানে তো একটি চমৎকার আপস করে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী। ব্যক্তিগত টিউশনি নয়, নিয়ন্ত্রণ করা উচিত কোচিং বাণিজ্যের জায়গাটিতে।
নতুন বেতন স্কেল ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। যেখানে সভ্য দেশগুলোতে বেতন ও মর্যাদায় শিক্ষকদের অনেকটা এগিয়ে আলাদা অবস্থানে রাখা হয়, সেখানে আমাদের দেশে বড় আমলাদের মাথার ওপর রেখে তিন ধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা। উপাচার্যরা শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেতন কাঠামো সংশোধনের মাধ্যমে তাঁদের অবস্থান সর্বোচ্চে রাখার দাবি জানিয়েছেন। এভাবে দাবি জানাতে হয়েছে জেনে আমি লজ্জায় অধোবদন হয়েছি। আমরা কি অন্ধ আর বিবেক-বিবেচনাহীন রাষ্ট্রে বাস করছি যে স্বয়ং উপাচার্যদেরই যেতে হচ্ছে এমন এক দাবি নিয়ে।
শিক্ষকের অবমূল্যায়ন ও প্রচার-অপপ্রচার
এসব দেখে আমার মনে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাকাঠামোর একটি ছবি চকিতে ভেসে উঠল। তখনো বইপত্রের যুগ শুরু হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষার একটি ধারা ছিল গুরুগৃহে জ্ঞানচর্চা। রাজা-মন্ত্রীর ছেলেরা গুরুগৃহে বিদ্যাচর্চা করত। গুরু অর্থাৎ সন্ন্যাসীরা বনের ভেতর কুটিরে জীবন যাপন করতেন। ধর্মচর্চা করতেন। রাজা-মন্ত্রী তাঁদের ছেলেদের নিয়ে এসে করজোড়ে প্রার্থনা জানাতেন। অনুনয় করতেন গুরু যাতে সন্তানদের দায়িত্ব নেন। রাজপুত্র-মন্ত্রীপুত্ররা গুরুর কুটিরে থেকে গুরুর সেবা করে জ্ঞানার্জন করতেন। এখন সেই সত্য যুগও নেই, শিক্ষকের মর্যাদাও নেই। তাই মর্যাদা ফিরে পাওয়ার জন্য অপাত্রে ভিক্ষে প্রার্থনা করতে হচ্ছে।
গত ১০ জুন কালের কণ্ঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-কাঠামোর দশা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে কোনো উন্নত দেশ নয়, প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, নতুন বেতন-কাঠামোতে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপকের মূল বেতন হবে ৩৫,৫০০ টাকা আর একই মর্যাদার ভারতে শিক্ষকের মূল বেতন ৫৫ হাজার টাকা, পাকিস্তানে এক লাখ চার হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কায় এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৮০ টাকা। বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপকের বেতন ৫০ হাজার টাকা, ভারতে ৯০ হাজার টাকা, পাকিস্তানে এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। বাংলাদেশে অধ্যাপকের বেতন ৬৪,৬০০ টাকা, ভারতে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা, পাকিস্তানে দুই লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও শ্রীলঙ্কায় এক লাখ ৮৬ হাজার ৩৪৫ টাকা।
সভ্য দেশগুলোতে এ সম্মান দেওয়া হয় কেন? কারণ তারা বিশ্বাস করে, একটি দেশের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ হচ্ছে লাভজনক বিনিয়োগ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষিত ও চৌকস জনগোষ্ঠী তৈরি হবে। নতুন নতুন গবেষণার ফলাফলে দেশ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গন আলোকিত হবে। তা ছাড়া অন্য সব অঞ্চলের বিনিয়োগ থেকে শিক্ষার বিনিয়োগ অনেক বেশি সুরক্ষিত।
কালের কণ্ঠের উল্লিখিত রিপোর্টে ইউজিসির প্রতিবেদনের কথা লেখা হয়েছে। সেখানে নাকি বলা হয়েছে, অনেক শিক্ষক একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ওসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় দেন বেশি। যেহেতু আমি পুরো প্রতিবেদন দেখিনি, তাই এই দুটো লাইন দিয়ে ইউজিসির বক্তব্যকে সমালোচনা করতে পারব না। তবে এ ধরনের একটি সরলীকৃত কথা প্রায়ই শোনা যায়। আমার মনে হয়, এ ধরনের অপপ্রচারের অবসান হওয়া উচিত।
প্রথমত বুঝতে হবে বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের একটি নগণ্যসংখ্যক শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন। তাই গড়পড়তা মন্তব্য করার অবকাশ নেই। তা ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সুযোগ ঢাকাতে যতটা আছে সারা দেশে তেমনটা নেই। দ্বিতীয়ত, 'নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় দেন বেশি' ধরনের মন্তব্য ভীষণ একপেশে। কোনো ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে সত্য হলেও সার্বিকীকরণের ক্ষেত্রে অন্যায়। সাধারণত নিয়ম মেনেই স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন একজন শিক্ষক। সাধারণত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে দুই দিন যেতে হয়। তার পরও গোটা দিন নয়- সকালে, বিকেলে বা সন্ধ্যায়। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বা একাধিক কোর্সে সাধারণত সপ্তাহে তিনটি ক্লাস নিয়ে থাকেন একজন শিক্ষক। আরো এক দিন থাকে অতিরিক্ত ক্লাস, টিউটোরিয়াল ইত্যাদির জন্য। শুক্রবারসহ বাকি তিন দিন শিক্ষক ব্যক্তিগত কাজ, গবেষণা ইত্যাদিতে ব্যয় করেন। সুতরাং যে শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন, তিনি এই তিন দিনের ভেতর থেকেই সময় বের করে নেন। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর কারণে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় দিতে পারেন না ধরনের মন্তব্য বাস্তব বিবেচনাপ্রসূত নয়; বরঞ্চ শিক্ষকদের হেয় করার একটি অপপ্রচার মাত্র। পাশাপাশি প্রশ্ন থাকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করাটা কি অন্যায়?
একজন শিক্ষক নিজ শ্রম দিয়ে যদি সংসারে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আনার চেষ্টা করেন তাতে অন্যের কষ্ট পাওয়ার তো কিছু নেই। পাশাপাশি এতে শিক্ষকতার চর্চা হচ্ছে বলে সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষক তাঁর মানন্নোয়নও করতে পারছেন। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে দেশের মোট শিক্ষার্থীর বড় অংশ পড়াশোনা করে তারা একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের সাহচর্য পাচ্ছে। একে কি জাতীয় স্বার্থে ইতিবাচক হিসেবে দেখব না?
তবে এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্যে প্রতিদিন ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থী ও দেশকে বঞ্চিত করছেন। আমার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় এর পেছনে দুটো কারণকে দায়ী করে থাকি। এদের ছোট্ট অংশটি ব্যক্তিগত আদর্শ ও নীতিবোধের অভাবে ফাঁকি দিয়ে থাকেন। আর বড় ফাঁকিবাজ অংশটির দায় নিতে হবে রাজনৈতিক সরকারগুলোকে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের রাজনৈতিক বলয় তৈরি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের ওপর ভর করেন। এখন সরকারি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মেধার যোগ্যতায় নয়, রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় শিক্ষক হচ্ছেন অনেকে। এ ধারার শিক্ষকদের অনেকেরই শিক্ষকতার দায়বদ্ধতা যতটা না থাকে, এর চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন রাজনীতি অঞ্চলের দায় মেটাতে। ক্ষমতার কেন্দ্রে ঘুরে বেড়ানো শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় অনেক শিক্ষকের অত সময় থাকে না ক্লাসে বা গবেষণায় ব্যস্ত থাকার। তাঁরা বড় বড় পদাধিকারী হওয়া বা পদাধিকারী বানানোতে বেশি ব্যস্ত থাকেন।
সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের অল্প কিছুসংখ্যক নীতিভ্রষ্ট শিক্ষককে সামনে রেখে এ পেশায় নিবেদিতপ্রাণ বড়সংখ্যক শিক্ষককে কালিমালিপ্ত করা একটি দুরভিসন্ধি বলেই আমাদের মনে হয়। মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কর্তব্য শুধু শিক্ষাদান করাই নয়। শিক্ষা ও গবেষণা দুটো দায় তাঁর কাঁধে। তবে জবাবদিহিতার বাইরে কেউ থাকতে পারেন না। শিক্ষকের প্রয়োজনীয় জবাবদিহিতা নেওয়ার যেমন দায়িত্ব রয়েছে সরকারের, তেমনিভাবে শিক্ষককে যথাযোগ্য মর্যাদার জায়গায় রেখে তাঁকে মূল্যায়ন করার দায়ও নিতে হবে সরকারকেই। তা না হলে মধ্যম আয়ের দেশ বা উন্নত দেশের লক্ষ্যে পৌঁছার যাত্রাপথ বিঘ্নিত হবে বারবার।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞান গবেষণায় আমরা কেন পিছিয়ে আছি

এস এম মুজিবুর রহমান

২০১৫-১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, হচ্ছে ও ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু আমাদের আলোচনার বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২৯ জুন প্রথম আলোর সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট’। এতে বলা হয়েছে ১০০-এর কাছাকাছি বিভাগ ও ইনস্টিটিউশনের গবেষণার জন্য ধরা হয়েছে মাত্র সাড়ে চার কোটি টাকা, যা কি না পুরো বাজেটের ১ শতাংশ মাত্র। টাকার এই পরিমাণটা শুধু অপ্রতুলই নয়, একধরনের মশকরা আরকি! প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নাম শুনলে যাঁরা খােমাখাই উদ্বেলিত হন, তাঁরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাজেটে খুবই মনঃক্ষুণ্ন² হবেন। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাজেটের এই করুণ অবস্থা, সেখানে বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাটা কেমন হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা বাজেট প্রসঙ্গ না তোলাই ভালো।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য ডিগ্রি দেওয়া নয়, বরং জ্ঞান সৃষ্টি, নিরন্তর অনুশীলন গবেষণা’ এই লাইনটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণের উপায় নেই। তবে গবেষণা বাজেটের পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আসলেই শুধু ডিগ্রি দেওয়া, সৃজনশীল গবেষণা নয়। এই ধারণা মিথ্যা হলে আমি খুবই খুশি হতাম, কিন্তু সেটা হওয়ার নয়। যাক এবার একটি আনুমানিক সংখ্যায়নে আসা যাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাজেট চার কোটি টাকা ও অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাজেট ২ দশমিক ৫ কোটি টাকা হলে দেশের সর্বমোট ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট হবে মাত্র ১২ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা শ্বেতহস্তী বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন ও বিসিএসআইআরসহ অন্যান্য খুচরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেট ৪৮ মিলিয়ন ডলার হলে বাংলাদেশের সর্বমোট গবেষণা বাজেট হবে ৬০ মিলিয়ন ডলার। এখন LHps://em.wikipedia.org/wiki থেকে নেওয়া একটি উপাত্ত থেকে কয়েকটি দেশের তালিকায় নমুনা তুলে দিচ্ছি; এই তালিকায় ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো স্থান নেই!

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান একটি লজ্জাজনক অবস্থায় আছে।

আজ বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে, এটা আমাদের সবার জন্যই কিছুটা হলেও আনন্দের। তবে গড় আয় আমাদের মতো দরিদ্র দেশগুলোতে অনেকটাই শুভংকরের ফাঁকি বলে ধারণা করি। স্বল্পসংখ্যক ধনী মানুষের আয় আর বিশালসংখ্যক দরিদ্রের আয় গড় হিসাবে চালানোতে বড় ধরনের একটা ফাঁক থেকেই যায়। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, আজ ১ টাকা গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করলে আগামী দিনে ১০ টাকার সংস্থান হবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যাঁরা আমাদের আগামী দিনের পরিকল্পনা তৈরি করেন, তাঁদের বোধের ওপরই নির্ভর করে আমাদের সার্বিক উন্নয়ন।

বাংলাদেশে মেধাবী লোকবলের অভাব নেই। মেধাবী এই লোকবলকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে মধ্যম আয়ের দেশ হতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না, অন্যথায় এটা একটা ফাঁপা স্লোগান হয়েই থাকবে

প্রসঙ্গত, আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের উদাহরণ দিই (এটা অনুমান করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই যে ভারত সব দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে, বরং এর কয়েকটি রাজ্যের তুলনায় বাংলাদেশ সব দিক দিয়েই এগিয়ে আছে)। স্বাধীনতা লাভের বহু বছর আগে থেকেই তৎকালীন কংগ্রেস দলীয় ভিত্তিতেই ‘প্ল্যানিং কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করে, যা তাদের স্বাধীনতার পর ‘প্ল্যানিং কমিশন’-এ রূপ নেয়। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই উল্লিখিত প্ল্যানিং কমিটির মাধ্যমে নেহরু মোটামুটিভাবে ভারতের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি রূপরেখা ঠিক করে রেখেছিলেন। উল্লেখ্য, ওই কমিটিতে তৎকালীন ভারতের নামকরা পণ্ডিত ব্যক্তিত্বদের আধিক্য ছিল, আমলাদের স্থান প্রায় ছিলই না বলা যায়। যতটা জানা যায়, ভবিষ্যৎ এই রূপকল্পে বিজ্ঞানের গবেষণা ও উন্নয়নে: (ক) ভারতের পারমাণবিক কমিশন গঠন ও এর কার্যক্রম চিহ্নিতকরণ, (খ) আইআইটিগুলোর রূপকল্প তৈরি করা, (গ) খাদ্যে ভারতের স্বনির্ভরতা অর্জন ও (ঘ) বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন রূপকল্পের একটা কাঠামো তৈরি করা। তৃতীয় বিশ্বের একটি উদাহরণ হিসেবে ভারতকেই নেওয়া যেত পারে, যার উন্নয়নে বিজ্ঞান গবেষণা একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। বছর কয়েক আগে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির চুক্তি করতে গিয়ে অকপটে বলেছেন, ভারতের সফট ও জাপানের হার্ডওয়্যারের মিলন হলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। আজ থেকে ৭০ বছর আগে ভারতের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বিশ্বপ্রযুক্তিতে একটি প্রজ্ঞাবান রূপকল্পের জন্ম দেয়, যার ফল ভারত আজ ভোগ করছে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ফিরে আসি। প্রায় সাড়ে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের এক বড় আকারের বাজেট দিয়েছে বাংলাদেশ ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের জন্য। নিম্ন মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে এই বাজেট নিতান্ত কম নয়। তবে গবেষণা ও উন্নয়নে এই বাজেটের শতকরা কত অংশ ধরা হয়েছে তার সঠিক হিসাব আমার জানা নেই, তবে আমরা এই লেখার গোড়ার দিকে উল্লিখিত তা যদি ৬০ মিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে, তবে ৩৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের এই বাজেটের একেবারেই নগণ্য অংশ সেটা। আর ১৫০ বিলিয়ন জিডিপির তুলনায় তা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি!

আমরা জানি, নিম্ন মধ্যম আয়ের এই বাংলাদেশে স্বাভাবিক কারণেই আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এমন কঠিন বাস্তবতার মধ্যে আমাদের ঠিক করতে হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে। ২০১৫ সাল শেষ হওয়ার আগেই আমাদের আগামী দিনের রূপকল্পে যেসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে তা হলো: (ক) বায়বীয় অর্থে নয়, যথার্থেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে আয়ের উন্নত মানের কৃষি গবেষণা চালু করতে হবে। সাম্প্রতিক কালে পত্রপত্রিকায় পচা গমের খবরে এই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হয় যে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এখনো আমরা হইনি। গোলাভরা ধানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে কৃষি, মৎস্য ও আমিষ খাবারের উৎপাদন যথার্থই বাড়াতে হবে উন্নত মানের গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে। (খ) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অবস্থা ততটা ভালো নয়, যতটা আমরা প্রচার করি। বিশেষ করে বিদ্যুতের জন্য পারমাণবিক শক্তির বিকল্প দেখি না। সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ—এসব একান্তই জোড়াতালি, এগুলো দিয়ে ১৬০ মিলিয়ন মানুষের চাহিদা পূরণ হবে না। কাজেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য আমাদের দক্ষ জনবল চাই। এই দক্ষ জনবল ও প্রযুক্তি ধার করে চলবে না, তা তৈরি করতে হবে আমাদেরই। কিন্তু এই জনবল ও প্রযুক্তি সৃষ্টির কোনো রূপকল্প আমাদের আছে কি? আমাদের বড় আকারের বাজেটে আছে কি তার জন্য কোনো বরাদ্দ? (গ) স্বাধীনতার প্রায় ৪৪ বছর পরও বাংলাদেশের একশ্রেণির মানুষ হাঁচি-কাশির চিকিৎসার জন্য উড়ে যাচ্ছেন ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর। কেন আমরা পারিনি চিকিৎসাক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরি করতে? গবেষণা-উন্নয়নে কী পরিমাণ বাজেট ধরা আছে চিকিৎসাক্ষেত্রে? সরকারের উচ্চপর্যায়ের ও উচ্চ আয়ের মানুষেরা যেখানে উচ্চমূল্যে বিদেশে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন, সেখানে সাধারণ মানুষের কথাও ভাবতে হবে। (ঘ) ৫০ বছর আগে ভারত তাদের আইআইটিগুলো চালু করে যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় রেখেছে, আজ তার ফল তারা পাচ্ছে। ভারতের আইআইটি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির গ্র্যাজুয়েটদের প্রায় এক পাল্লায় মাপা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হওয়ার পরও কি আমাদের এই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার উদয় হবে না? (ঙ) আজ বাংলাদেশে ৩৭টি সরকারি ও ষাটেরও বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আমরা ধরে নিই, আমার উল্লিখিত (ক থেকে ঘ) বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের মূল ভূমি হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তরুণ ও প্রবীণ গবেষকদের একটি মিলনক্ষেত্র কি ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (এনআইএসটি) নামের বহুমুখী গবেষণাগার করা যায় না, যেখানে গবেষকেরা আসবেন, প্রশিক্ষণ নেবেন ও দেবেন বছরব্যাপী? ইতালির ত্রিয়েস্তে শহরে আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে অধ্যাপক আবদুস সালাম বিজ্ঞানের বিশেষ শাখায় গবেষকদের যে মিলনক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আজ তার সুফল পাচ্ছে। একই রূপকল্পে সদিচ্ছা থাকলে আমরাও পারি জাতীয় পর্যায়ে এমন একটি প্রতিষ্ঠান করতে, যা আমাদের ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে বিজ্ঞান গবেষণায় এগিয়ে নেবে।

আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে মেধাবী লোকবলের অভাব নেই। মেধাবী এই লোকবলকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে মধ্যম আয়ের দেশ হতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না, অন্যথায় এটা একটা ফাঁপা স্লোগান হয়েই থাকবে।

এস এম মুজিবুর রহমান: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয়, মাসকাট, ওমান।

Published in: http://www.prothom-alo.com/opinion/article/581587

Saturday, July 18, 2015

President Obama praises South Korea for paying teachers as much as doctors


President Obama has praised South Korea’s policy of paying its teachers as much as doctors.
The US President was speaking at a High School in Oklahoma as he launched a new programme aimed at giving low-incomehouseholds broadband internet.
At the project launch at Durant High School he said: “Obviously, as President you travel around a lot, and you go to countries like South Korea where a higher percentage of the population has high-speed broadband- and, by the way, they pay their teachers the way they pay their doctors, and they consider education to be at the highest rung of the professions.
“Well, we will start falling behind those countries- which is unthinkable when we invented the stuff.”
It is not the first time that Obama has praised the nation's education system. In 2010, the politician also praised the length of the academic year in South Korea, compared to the US. He said: “We can no longer afford an academic calendar designed when America was a nation of farmers who needed their children at home plowing the land at the end of each day.
“That calendar might have once made sense, but today, it puts us at a competitive disadvantage. Our children spend over a month less in school than children in South Korea. That is no way to prepare them for a 21st-century economy.”
According to the education monitoring body ICEF: “South Korean students consistently rank at the top of the Programme for International Student Assessment survey results in reading, mathematics and science. South Korea is also one of the highest educated nations in the world.”
In addition to well funded state schools, Hagwons, or ‘cram schools’, are popular in South Korea as extra tuition for pupils outside of school hours on top of the taught curriculum.
Parents also spend around 22% of their household income on education and educational services in a bid to boost their children’s learning. It is one of highest proportions of household spend on education amongst developed nations.
The South Korean government recently imposed a 10pm curfew on ‘cramming schools’ amid concerns that some children were being made to study for too long each day. However, despite this campaigners worry that children are still being made to study in online ‘hagwons’ or that tutors are brought into children’s homes for the evening lessons instead.

Thursday, July 16, 2015

After 85-year search, massless particle with promise for next-generation electronics discovered

Morgan Kelly
An international team led by Princeton University scientists has discovered an elusive massless particle theorized 85 years ago. The particle could give rise to faster and more efficient electronics because of its unusual ability to behave as
matter and antimatter inside a crystal, according to new research.
The researchers report in the journal Science July 16 the first observation of Weyl fermions, which, if applied to next-generation electronics, could allow for a nearly free and efficient flow of electricity in electronics, and thus greater power, especially for computers, the researchers suggest.
Proposed by the mathematician and physicist Hermann Weyl in 1929, Weyl fermions have been long sought by scientists because they have been regarded as possible building blocks of other subatomic particles, and are even more basic than the ubiquitous, negative-charge carrying electron (when electrons are moving inside a crystal). Their basic nature means that Weyl fermions could provide a much more stable and efficient transport of particles than electrons, which are the principle particle behind modern electronics. Unlike electrons, Weyl fermions are massless and possess a high degree of mobility; the particle's spin is both in the same direction as its motion — which is known as being right-handed — and in the opposite direction in which it moves, or left-handed.
"The physics of the Weyl fermion are so strange, there could be many things that arise from this particle that we're just not capable of imagining now," said corresponding author M. Zahid Hasan, a Princeton professor of physics who led the research team.
Hasan
An international team led by Princeton University scientists has discovered Weyl fermions, elusive massless particles theorized 85 years ago that could give rise to faster and more efficient electronics because of their unusual ability to behave as matter and antimatter inside a crystal. The team included numerous researchers from Princeton's Department of Physics, including (from left to right) graduate students Ilya Belopolski and Daniel Sanchez; Guang Bian, a postdoctoral research associate; corresponding author M. Zahid Hasan, a Princeton professor of physics who led the research team; and associate research scholar Hao Zheng. (Photo by Danielle Alio, Office of Communications)
The researchers' find differs from the other particle discoveries in that the Weyl fermion can be reproduced and potentially applied, Hasan said. Typically, particles such as the famous Higgs boson are detected in the fleeting aftermath of particle collisions, he said. The Weyl fermion, however, was discovered inside a synthetic metallic crystal called tantalum arsenide that the Princeton researchers designed in collaboration with researchers at the Collaborative Innovation Center of Quantum Matter in Beijing and at National Taiwan University.
The Weyl fermion possesses two characteristics that could make its discovery a boon for future electronics, including the development of the highly prized field of efficient quantum computing, Hasan explained.
For a physicist, the Weyl fermions are most notable for behaving like a composite of monopole- and antimonopole-like particles when inside a crystal, Hasan said. This means that Weyl particles that have opposite magnetic-like charges can nonetheless move independently of one another with a high degree of mobility.
Weyl
A detector image (top) signals the existence of Weyl fermions. The plus and minus signs note whether the particle's spin is in the same direction as its motion — which is known as being right-handed — or in the opposite direction in which it moves, or left-handed. This dual ability allows Weyl fermions to have high mobility. A schematic (bottom) shows how Weyl fermions also can behave like monopole and antimonopole particles when inside a crystal, meaning that they have opposite magnetic-like charges can nonetheless move independently of one another, which also allows for a high degree of mobility. (Image by Su-Yang Xu and M. Zahid Hasan, Princeton Department of Physics)
The researchers also found that Weyl fermions can be used to create massless electrons that move very quickly with no backscattering, wherein electrons are lost when they collide with an obstruction. In electronics, backscattering hinders efficiency and generates heat. Weyl electrons simply move through and around roadblocks, Hasan said.
"It's like they have their own GPS and steer themselves without scattering," Hasan said. "They will move and move only in one direction since they are either right-handed or left-handed and never come to an end because they just tunnel through. These are very fast electrons that behave like unidirectional light beams and can be used for new types of quantum computing."
Prior to the Science paper, Hasan and his co-authors published a report in the journal Nature Communications in June that theorized that Weyl fermions could exist in a tantalum arsenide crystal. Guided by that paper, the researchers used the Princeton Institute for the Science and Technology of Materials (PRISM) and Laboratory for Topological Quantum Matter and Spectroscopy in Princeton's Jadwin Hall to research and simulate dozens of crystal structures before seizing upon the asymmetrical tantalum arsenide crystal, which has a differently shaped top and bottom.
The crystals were then loaded into a two-story device known as a scanning tunneling spectromicroscope that is cooled to near absolute zero and suspended from the ceiling to prevent even atom-sized vibrations. The spectromicroscope determined if the crystal matched the theoretical specifications for hosting a Weyl fermion. "It told us if the crystal was the house of the particle," Hasan said.
The Princeton team took the crystals passing the spectromicroscope test to the Lawrence Berkeley National Laboratory in California to be tested with high-energy accelerator-based photon beams. Once fired through the crystal, the beams' shape, size and direction indicated the presence of the long-elusive Weyl fermion.
First author Su-Yang Xu, a postdoctoral research associate in Princeton's Department of Physics, said that the work was unique for encompassing theory and experimentalism.
"The nature of this research and how it emerged is really different and more exciting than most of other work we have done before," Xu said. "Usually, theorists tell us that some compound might show some new or interesting properties, then we as experimentalists grow that sample and perform experiments to test the prediction. In this case, we came up with the theoretical prediction ourselves and then performed the experiments. This makes the final success even more exciting and satisfying than before."
In pursuing the elusive particle, the researchers had to pull from a number of disciplines, as well as just have faith in their quest and scientific instincts, Xu said.
"Solving this problem involved physics theory, chemistry, material science and, most importantly, intuition," he said. "This work really shows why research is so fascinating, because it involved both rational, logical thinking, and also sparks and inspiration."
Weyl, who worked at the Institute for Advanced Study, suggested his fermion as an alternative to the theory of relativity proposed by his colleague Albert Einstein. Although that application never panned out, the characteristics of his theoretical particle intrigued physicists for nearly a century, Hasan said. Actually observing the particle was a trying process — one ambitious experiment proposed colliding high-energy neutrinos to test if the Weyl fermion was produced in the aftermath, he said.
Hasan2
Hasan (pictured) and his research group researched and simulated dozens of crystal structures before finding the one suitable for holding Weyl fermions. Once fashioned, the crystals were loaded into this two-story device known as a scanning tunneling spectromicroscope to ensure that they matched theoretical specifications. Located in the Laboratory for Topological Quantum Matter and Spectroscopy in Princeton's Jadwin Hall, the spectromicroscope is cooled to near absolute zero and suspended from the ceiling to prevent even atom-sized vibrations. (Photo by Danielle Alio, Office of Communications)
The hunt for the Weyl fermion began in the earliest days of quantum theory when physicists first realized that their equations implied the existence of antimatter counterparts to commonly known particles such as electrons, Hasan said.
"People figured that although Weyl's theory was not applicable to relativity or neutrinos, it is the most basic form of fermion and had all other kinds of weird and beautiful properties that could be useful," he said.
"After more than 80 years, we found that this fermion was already there, waiting. It is the most basic building block of all electrons," he said. "It is exciting that we could finally make it come out following Weyl's 1929 theoretical recipe."
Ashvin Vishwanath, a professor of physics at the University of California-Berkeley who was not involved in the study, commented: "Professor Hasan's experiments report the observation of both the unusual properties in the bulk of the crystal as well as the exotic surface states that were theoretically predicted. While it is early to say what practical implications this discovery might have, it is worth noting that Weyl materials are direct 3-D electronic analogs of graphene, which is being seriously studied for potential applications."
The team included numerous researchers from Princeton's Department of Physics, including graduate students Ilya Belopolski, Nasser Alidoust and Daniel Sanchez; Guang Bian, a postdoctoral research associate; associate research scholar Hao Zheng; and Madhab Neupane, a Princeton postdoctoral research associate now at the Los Alamos National Laboratory; and Class of 2015 undergraduate Pavel Shibayev.
Other co-authors were Chenglong Zhang, Zhujun Yuan and Shuang Jia from Peking University; Raman Sankar and Fangcheng Chou from National Taiwan University; Guoqing Chang, Chi-Cheng Lee, Shin-Ming Huang, BaoKai Wang and Hsin Lin from the National University of Singapore; Jie Ma from Oak Ridge National Laboratory; and Arun Bansil from Northeastern University. Wang is also affiliated with Northeastern University, and Jia is affiliated with the Collaborative Innovation Center of Quantum Matter in Beijing.

The paper, "Discovery of Weyl fermions and topological Fermi arcs," was published online by Science on July 16. The work was supported by the Gordon and Betty Moore Foundations Emergent Phenomena in Quantum Systems (EPiQS) Initiative (grant no. GBMF4547); the Singapore National Research Foundation (grant no. NRF-NRFF2013-03); the National Basic Research Program of China(grant nos. 2013CB921901 and 2014CB239302); the U.S. Department of Energy (grant no. DE-FG-02-05ER462000); and the Taiwan Ministry of Science and Technology (project no. 102-2119-M- 002-004).
Source:http://www.princeton.edu/main/news/archive/S43/64/59M11/index.xml?section=topstories

Sunday, July 12, 2015

The dignity of the varsity dons in Bangladesh

Dr Rashid Askari

The distinguished Bengali author, Syed Mujtaba Ali wrote a short story named 'Padotika' (Footnote) where he painted a gloomy picture of how the teachers were living under most appalling conditions in British India. The abolition of the Toll and Maktab systems of education prevalent among the Hindus and the Muslims on the Subcontinent gave birth to East India Company's schools where the Bengali and Sanskrit knowing pundits were used to getting salaries lesser than that of a chaprasi (A junior office w
orker who carries messages). Mujtaba Ali's story features such a pundit whose monthly salary amounted to 25 taka in all by which he had to rear a family of eight members. On an occasion of the laat sahib's visit to the school, the pundit, humorously and poignantly gave an account of his meagre income by comparing it to the amount of money worth 75 taka that would have been spent monthly on the rearing of the laat sahib's three-footed pet dog. The aggrieved pundit showed by an arithmetical calculation that his salary, which he would spend on his Brahmin wife, the old mother, the three marriageable daughters, the widowed aunt, the maidservant and himself, was three times less than the amount spent on the three-footed dog and equal to that spent merely on its one foot.
I am feeling tempted to cite another example of salary discrimination in British India. Sir Jagadish Chandra Bose, on his return from London with BSC degree in 1885, joined the Calcutta Presidency College as a professor of physics. The salary of the Indian professors was then worth two third of that of the English professors. Since Bose had been serving on a temporary basis, his salary was only one third. However, in protest of this discrimination, he continued serving three years without any salary, and finally compelled the British government to make his job permanent and pay off all his dues. 
The British has quitted India. The Pakistanis too were compelled to quit. But the legacy of undermining the position of the teachers is still nagging at us. The whole nation, to its utter shock, witnessed how an assistant professor of a public college in Pirojpur was put over an assistant commissioner's knee for the former's alleged insubordination (9 April 2015). It was the teacher's fault that he had the impertinence to ask the magistrate, the Justice of the peace, his identity. The teacher is, however, senior to the magistrate by age and length of service. But nothing could save the poor teacher's dignity from the wrath of our bureaucratic gods who are always arrogant and high-handed in their dealings with people. The poor professor had to save his job by knelling in supplication.
The overbearing bureaucrats' arrogance knew no limits when the freedom fighter Ayub Khan, former commander of Satkania unit of Chittagong, committed suicide in a residential hotel in the capital after being insulted by the secretary of the Liberation War Affairs Ministry (7 July 2015). The deceased's handwritten suicide note may well authenticate the fact. What can be the bigger cost of the dignity of a freedom fighter?
We know for sure that nothing will happen to these mighty agents of bureaucracy held responsible for this couple of deliberate cruelties inflicted on the innocent people. They are the pampered children of the government. They grease the wheels of the state de facto. So, when it comes to bringing them to justice, the whole system would leap to their defence and justice would cry in the wilderness. They preserve every right to get preferential treatment from the state itself. They are the makers of things and hence the main beneficiaries of them. 
The proposed eighth pay scale is a shining example of strong bias towards the bureaucrats and against the varsity teachers. It has deprived the teachers to the nth degree. Even the status given to them in the 7th Pay Scale was way far better. The present scale has heavily downgraded the teachers' dignity because of the senior professors' exclusion from the secretarial grade. If remains unaltered, it is going to take heavy tolls on the varsity teachers in general. 
An independent pay structure for the public university teachers has been a long-standing demand in Bangladesh. The National Education Policy 2010 had recommended a separate pay scale for the teachers. The University Grants Commission, too, has recommended a 'lucrative salary structure' and other fringe benefits to attract outstanding students to teaching profession. The Federation of Bangladesh University Teachers' Association (FBUTA) has long been pressing the government to increase the salary of university teachers at least to the level of that of India, Pakistan and Sri Lanka. The education minister, Nurul Islam Nahid always seems to be taking a pro-teacher stance in regard to their salary and status. He has brought the issue to the notice of the president and prime minister and sent DO letters to all concerned including Cabinet secretary and public administration secretary. 
But there seems to be no clear light yet at the end of the tunnel. The 8th pay scale has been ready and waiting for implementation paying no heed to the university teachers' silent cry. The poor teachers are trying, by way of polite and non-violent campaign, to give fresh momentum to their just demand. They are looking forward to falling back on the Prime Minister, Sheikh Hasina. Only she can bring hopes that the crisis can be resolved without resort to the unexpected. It calls for her intervention to restore the dignity of the varsity teachers. On numerous occasions, she has expressed her concern over them. Her father, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman was the leading promoter of our higher education and performed yeoman service for upholding the dignity of the public university teachers by introducing the 1973 Acts at all the universities during his tenure. His worthy successor, our present premier, Sheikh Hasina too has done a lot for the teaching community in general. It is she, who has extended the age of the university teachers' superannuation to 65. Her government has made a major breakthrough in all tires of education-from primary to tertiary. The free distribution of textbooks to more than 30 million schoolchildren on the first day the school year for the last several years has been unprecedented in the history of Bangladesh. Her government has remarkably increased the growth of literacy by creating fresh institutions and incentives. It has introduced, through UGC, the globally acclaimed Self-Assessment and Quality Assurance system to our public and private universities to make them centres of excellence and prepare them for international accreditation. This is going to be a big challenge for the government and mostly hinges on the restoring the university teachers' status, protecting their salary and, above all, saving them from bureaucratic domination. 
We keep our fingers crossed. We hope against hope that good sense must prevail upon hegemonic control. Our university teachers made supreme sacrifice for the creation of today's Bangladesh. Most of the martyred intellectuals of 1971 were erstwhile varsity dons. If properly taken care of, they now can greatly contribute to the making of the much coveted secular democratic Bangladesh free from militancy and fanaticism, and thereby can help her reach the Visions 2021 and 2041!r 
Dr Rashid Askari writes fiction and column, and teaches English literature at Kushtia Islamic University, Bangladesh. Email: rashidaskari65@yahoo.com

Source:http://www.observerbd.com/2015/07/12/99313.php

Wednesday, July 8, 2015

তবু মানসম্মত শিক্ষা চাই

ড. আবদুল্লাহ ইকবাল

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষা ছাড়া বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যাবে না, উন্নতির শিখরে পৌঁছানো যাবে না- এগুলো অতি প্রচলিত কতগুলো বাক্য। সবাই চায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা। সরকার ও বিরোধী দলগুলো প্রতিনিয়তই দেশবাসীকে বোঝাতে চায় তারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সবাই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আন্তরিক ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ! কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন কতটুকু? শুধু সভা-সমাবেশ বা বক্তৃতায় বললেই কি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হয়ে যাবে? এর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার গুরুদায়িত্ব সরকারের। তবে সরকার এককভাবে এটি করতে পারবে না। সরকারের আন্তরিকতার পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে
সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাও অপরিহার্য। মানসম্মত শিক্ষার একটি অপরিহার্য উপাদান হলো যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক। কিন্তু মেধাবী তরুণ-তরুণীরা কি শিক্ষকতা পেশায় আসছে বা রাষ্ট্র কি আনতে পারছে? নাকি তারা এ পেশার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে বা অনীহা প্রকাশ করছে? সরকার বা রাষ্ট্র কি এগুলো ভেবে দেখেছে? সময় এসেছে এগুলো ভেবে দেখার। লক্ষ করলে দেখা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে পারলেও অন্য স্তরগুলোতে এটি সম্ভব হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ অপর্যাপ্ত বেতন-ভাতাদি ও যথাযথ সামাজিক মর্যাদা না পাওয়া। পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতাও একটা বড় কারণ।
সাধারণত মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদটি দখল করে থাকেন কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত কিংবা অনির্বাচিত ব্যক্তিরা, যার ফলে তাঁদের কাছে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের চেয়ে প্রাধান্য পায় ব্যক্তিগত-পারিবারিক কিংবা দলীয় সুবিধালাভের বিষয়টি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অধিকতর মেধাবী বা যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তাঁরা 'নিয়োগ বাণিজ্য' করে থাকেন। সমাজে তাঁদের প্রতিপত্তি এতটাই বেশি যে কারো প্রতিবাদের উপায় থাকে না। অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা থাকায় ব্যাপারটি আরো কষ্টদায়ক ও নিন্দনীয় হয়ে পড়ে। ফলে অপেক্ষাকৃত মেধাবী বা যোগ্য প্রার্থীদের পক্ষে অনেকটা নিরুপায় হয়ে দুর্বল-অসহায়ের মতো সহ্য করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বেলায়ও এই অভিযোগ প্রযোজ্য! যার ফলে প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের মান কেবলই কমছে। এই নিয়োগসংক্রান্ত সমস্যা থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্তি দিতে চাইলে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে আলাদা একটি কমিশন বা অনুরূপ কিছু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ওই কমিশন কেন্দ্রীয়ভাবে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটি অধিকতর স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করবে- এমনটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটিও রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রকার প্রভাব থেকে মুক্ত করে আরো স্বচ্ছ করতে হবে।
এটি কেউই স্বীকার করবে না যে ভালো শিক্ষক ছাড়া ভালো মানের শিক্ষাদান সম্ভব। আবার কম মেধাবী ছাত্রটি কিছু বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে তুলবেন সেই সুযোগও নেই। শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় বা যথাযথ পরিকল্পনা ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ের সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে প্রতিবছরই কমছে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ। চলতি বছরের বাজেটেও বিগত বছরের চেয়ে বরাদ্দ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় নিজেও এতে উদ্বিগ্ন। একদিকে প্রতিবছরই সব পর্যায়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও আনুষঙ্গিক জনবল বাড়ছে, অন্যদিকে বাজেটে বরাদ্দ কমছে! তাহলে মানসম্মত শিক্ষা কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে? আবার শিক্ষকদের জন্য আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা বিধান না করতে পারায় প্রতিনিয়তই এই পেশায় মেধাবীরা আসতে অনিচ্ছুক হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ শিক্ষকতায় এসেও পরবর্তী সময় থাকছে না। এর কারণ হলো পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা ও পদোন্নতির অভাব। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষকদের একটা বড় ক্ষোভ হলো পদোন্নতির সুযোগ না পাওয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের একই পদে সারা জীবন চাকরি করে অবসরে যেতে হয়। আবার একই পদমর্যাদার বা যোগ্যতাসম্পন্ন অন্য চাকরিজীবীরা পদোন্নতিসহ অধিকতর আর্থিক সুবিধাদি ভোগ করে থাকেন। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই চাকরিপ্রার্থীরা শিক্ষকতার প্রতি অনীহা প্রকাশ করেন। এমনিতেই যেখানে বেতন-ভাতাদি নিয়ে অনেক অসন্তোষ বিদ্যমান, সেখানে নতুন করে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে তাঁদের আরো বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে এই পেশায় যোগ্য ও মেধাবীদের পাওয়া কঠিনতর হয়ে উঠবে।
প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোয় শিক্ষকদের অবমূল্যায়নের চরম ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ২০০৯ সালে বাস্তবায়িত বেতন কাঠামোর পদমর্যাদা থেকে দুই ধাপ নামিয়ে আনার মাধ্যমে! এতে ভবিষ্যতে মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতায় আগ্রহী হবে না, এটি অনেকটাই নিশ্চিত। এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবনের স্বপ্নই থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। শিক্ষকতার সুযোগ না পেলে যেতে চায় অন্য পেশায়। কিন্তু বর্তমানে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে বেতন কমিশন ও সচিব কমিটির সুপারিশে প্রকারান্তরে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আসতে নিরুৎসাহী করার অশুভ ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমরা খুশি হতাম যদি সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো যে বেতন কমিশনের সদস্য বা সচিব কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতার তফাতটা কেমন তার একটি তুলনামূলক চিত্র দেখতে পারলে। কী কারণে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী হয়েও সচিব বা অন্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে অধিক মর্যাদা বা সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে? কিংবা কোন যোগ্যতাবলে তাঁরা এই অধিক পদমর্যাদা বা সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাশা করেন সেটিও দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট করলে আমাদের মতো 'বঞ্চিত শিক্ষকগণ' নীরব হয়ে যেতাম। খুব জানতে ইচ্ছা করে তাঁদের কতজনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার আবেদন করার ন্যূনতম যোগ্যতাটুকু আছে বা ছিল?
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের বহুবার বলতে শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদান করতে সরকার সচেষ্ট। তাহলে কি ধরে নেব যে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে? সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির বয়স বাড়িয়ে ৬৫ বছর করে মেধার স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে সম্মানিত করেছে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির অশুভ তৎপরতায় যেন সেই শিক্ষকরা অসম্মানিত না হন তার নিশ্চয়তার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করতে হলে মেধাবীদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক হিসেবে আকৃষ্ট করতে আমাদের পাশের দেশগুলোর মতো শিক্ষকদের পদমর্যাদার পাশাপাশি অন্যান্য গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো বা সুপারিশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্মানিত শিক্ষক নেতারা সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকার বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ না করলে চলমান এই আন্দোলন নতুন মাত্রা পেতে পারে। যার ফলে ব্যাহত হতে পারে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ, দীর্ঘ হয়ে যেতে পারে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন, যার দায়ভার সরকারের ওপরই বর্তাবে, অন্য কোনো স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর নয়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
iqbal21155@bau.edu.bd; iqbalfoodtech@yahoo.com