Tuesday, July 7, 2015

কর্মপদ্ধতিঃ শিক্ষকতা ও অন্যান্য

Kamrul Hassan

অনেক আমলা এমন কি সাধারণ মানুষও মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজ কর্ম তেমন নেই। তারা ভাবে দিনে মাত্র ১-২ অথবা ৩টি ক্লাস অর্থাত ১ থেকে ৩ ঘন্টা কাজ বাকি পুরো দিনই অবসর। আর তাইতো তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন চাকুরী করতে পারেন। বুঝতে হবে যে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে ১ ঘন্টার একটা ক্লাস শুধু ১ ঘন্টার ব্যাপার না। Ideally বলতে গেলে প্রতি ১ ঘন্টার ক্লাসের পিছনে অনেক ঘন্টার রাত জেগে ক্লাস প্রিপারেশন, lecture নোট প্রিপারেশন, এসাইনমেন্ট প্রিপারেশন, ক্লাস টেস্টের খাতা দেখা ইত্যাদি আছে। তারপর আছে গবেষণা। গবেষণার জন্য ভাবতে হয়। যত বেশি ভাবনা তত বেশি নতুন নতুন রিসার্চ আইডিয়া আসার সম্ভবনা। এমনকি কি আমরা বাথরুমে (কি শাওয়ারের নিচে, কি কমোডে বসা) থাকার সময়ও ভাবি। সমস্যা হলো এই ভাবনার সময়টাকে অনেকে অলস সময় কাটানো মনে করে। সমস্যা হলো আমরা এখানে ক্লাসের বাহিরের সময়টা পুরোটা এইভাবে ব্যায় করিনা। আমরা এই সময়ের বেশ কিছুটা সময় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে কিংবা কেউ কেউ consultancy করে ব্যায় করি। প্রশ্ন হলো এগুলো কি কেউ সাধে করে? সাধে কেউ ২-৩ ঘন্টার জ্যাম পেড়িয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যায় না। এগুলোর মধ্যে আনন্দ নেই গ্লানি আছে। সরকারী কর্মচারীরাতো ঘুষ বা দুর্নীতি করে সংসার চালাতে বেতনের বাহিরে অতিরিক্ত যা লাগে তা কামিয়ে নিতে পারেন। শিক্ষকরা কিন্তু কষ্ট করে ওই জ্ঞান বিতরণ করেই অতিরিক্ত কিছু উপার্জন করে। দুর্নীতি করে না। তবে হ্যা, এগুলো করতে গিয়ে নিজের কর্মস্থলের ছাত্রদের বঞ্চিত করা হয়। কারণ একজন শিক্ষক যদি আজকালকার এই অসহনীয় জ্যাম পেড়িয়ে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তখন তার আর কোন শক্তি বা ইচ্ছে আর অবশিষ্ট থাকে না নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দেওয়ার মত। আজ যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেই পরিমান বেতন দেওয়া হয় আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তত সেটাও দেওয়া হত তাহলেও আমি নিশ্চিত অনেকেই আর ওখানে যেত না। আমাদের শিক্ষকরা কিন্তু তাদের মেধা এবং শ্রম পুরোটা তার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দিচ্ছে না। তারপরও এই স্বল্প পরিমানেই আমাদের ছেলেমেয়েরা খারাপ করছে না। আর এই শিক্ষকরাই যদি তাদের পুরোটা দিত তাহলে আমি নিশ্চিত আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকার অর্থেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হত (যদিও এসব ট্যাগ লাগানো আমার একদম অপছন্দ)।

শিক্ষকদের দাবিতো সকলের দাবি হওয়া উচিত। তাকিয়ে দেখুন এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতে আর তুলনা করুন ওখানকার বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আর আমাদের শিক্ষকরাদের। জিবনযাত্রার ব্যায় কিন্তু আমাদের ঢাকাতে কলকাতার তুলনায় বেশি ছাড়া কম না। আজ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের একটি ন্যায্য বেতন দেওয়া হত তাহলে শিক্ষকরা তাদের অন্যত্র ব্যায় করা সময়টা তাদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দিত। তাতে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষকদের আরো নিবিরভাবে পেত। শিক্ষকরা তাদের গবেষণায় আরো মনোনিবেশ করতে পারত। প্রশ্ন হলো শিক্ষকদের একটা ন্যায্য বেতন দিতে সরকারের অতিরিক্ত কত টাকা খরচ হবে? অতিরিক্ত এই টাকার পরিমান আর তার বিনিময়ে অতিরিক্ত যে প্রাপ্তি হবে সেটা বিবেচনা করলে আমি নির্দিধায় বলতে পারি বাংলাদেশে কেউ ওই পরিমান টাকা খরচ করে এর চেয়ে বেশি মুনাফা (জ্ঞান অর্জন এই ক্ষেত্রে) আর অন্য কোনভাবে সম্ভব না, সিম্পলি না। এই দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত এটা যত শীঘ্র বুঝতে পারবে রাষ্ট্রের কল্যাণ তত শীঘ্র হবে। কিন্তু অষ্ঠম জাতীয় বেতন বোর্ড শিক্ষকদের যা ভাবে সম্মান এবং সম্মানী নিয়ে টানা হেচড়া করছেন তাতে শিক্ষা ক্ষেত্রে ভয়ানক নৈরাজ্য চলে আসবে। এই অবমাননাকর বেতন স্কেল বাস্তবায়িত হলে উচ্চ শিক্ষার মান আরো এক ধাপ নিম্নগামী হবে। তাই বলি মনা ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

0 comments:

Post a Comment