Kamrul Hassan
মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে অর্থাত মহা-কেরানী নিয়ন্ত্রিত কোন সরকারী বা আধা-সরকারী সংস্থা কি আজ পর্যন্ত কোন ভালো কাজ successfully করতে পেরেছে? এরকম উদাহরণ কি আছে? আমাদের "বিমান", আমাদের পাটকল, আমাদের চিনিকল, আমাদের সরকারী ব্যাংক ইত্যাদি কোন কিছু তারা successfully চালাতে পেরেছে? আশ্চর্য্যের বিষয় হলো বাংলাদশ আনবিক শক্তি কমিসনের মত একটি প্রতিষ্ঠানও মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। এই আমলারা একজন ডাক্তারকে এরকম একটা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বানিয়েছিল। পৃথিবীর কোথাও এরকম নজির আগে ছিল না, এখন নেই আর ভবিষ্যতে হবেও না। আনবিক শক্তি কমিসন নামটি উচ্চারণ করলেই মানস পটে ভেসে উঠে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে পদার্থবিদে গিজ গিজ করবে আর তাদের সাপোর্ট-এ থাকবে প্রধানত ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্যরা। খোজ নিয়ে জেনেছি বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিসনে পদার্থবিদরা কোনঠাসা হয়ে আছে। আর ওখানকার বৈজ্ঞানিকদের বিজ্ঞান চর্চা থেকেও বড় কাজ হলো বিজ্ঞান মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী সচিবদের দরবারে ধরনা দেওয়া। এখানে কোন গবেষণা নেই। গবেষকদের যদি এভাবে মন্ত্রনালয়ে দৌড়ের মধ্যে রাখে তাহলে গবেষণা হবে কিভাবে? ঘুরে আসুন একবার মুম্বাইয়ের ভাবা আনবিক শক্তি কমিসনে দেখবেন আনবিক শক্তি কমিসন কাকে বলে!!
আরো একটি প্রতিষ্ঠান হলো BCSIR (আমরা যাকে সাইন্স ল্যাব বলে চিনি) যেটা বিজ্ঞান মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে এবং ওটার অবস্থা আরো করুন। মন্ত্রনালয়ের লোকজনদের দেখেছি ওখানে যন্ত্রপাতি দিতে খুবই উৎসাহী কারণ ওখানকার যবতীয় ক্রয় কার্য্যক্রম মন্ত্রনালয় করে থাকেন। যত বেশি কেনাকাটা তত বেশি লাভ। নিজের লাভতো বলদেও বুঝে, তাই না? তাইতো দেখা যায় ওখানে অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে ভরপুর যেগুলো বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত নেই। ওখানে কি কাজ হয় কেউ কি যাচাই করে দেখেছে? উন্নতমানের চুলা প্রযুক্তি জাতীয় কিছু কাজ করে। তার জন্য রাধানীর প্রাণ কেন্দ্রে এত লোকবল দিয়ে তৈরী একটা প্রতিষ্ঠানে কোন আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা নেই। এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে যার মাধ্যমে প্রমান করা যাবে কেমন অদক্ষ তারা।
অন্যদিকে নাম মাত্র বরাদ্দে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বরং অনেক বেশি ভালো কাজ করছে। এই স্বল্প বরাদ্দের কারণও আমাদের মন্ত্রনালয় আর তাদের সচিবরা। এত কম অর্থাত নগন্য বাজেট দিয়েও আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়েদের আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় শূন্য বাজেট দিয়েও আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা, সংখ্যায় কম হলেও, করে যাচ্ছেন। আমি challenge দিয়ে বলতে পারি এত কম বাজেটে এই পরিমান আন্তর্জাতিক গবেষণা পৃথিবীর কোথাও করতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে যে পরিমান টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা থেকে যে পরিমান টাকা গবেষণার জন্য দেওয়া হয় ওই পরিমান টাকা পৃথিবীর শ্রেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়ে দেখুন আমাদের সমান পরিমান গবেষণা করতে পারে কিনা!! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে হত। শুধু একবার কল্পনা করুন যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে আর আমাদের শিক্ষকরা তাদের প্রমোসনসহ অন্যান্য কাজে মন্ত্রনালয়ে দৌড়াচ্ছে! উফ, কি বিচ্ছিরি চিত্র!! এরা ঠিক এমনি। তাদের ক্ষমতা আর তাদের জ্ঞান এই দুটো commensurable না।
সমালোচনার সময় ষোলো আনা আর দেওয়ার সময় ১ আনাও না। যারা তুলনামূলক দক্ষতার পরিচয় দেয় তাদের সম্মান এবং সম্মানী কমিয়ে যারা অদক্ষ হিসাবে প্রমানিত তাদের সম্মান এবং সম্মানী বাড়িয়ে এদেশের উন্নতি কি সম্ভব? এই দেশে সব কিছু Anomalous সব!!
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 comments:
Post a Comment