Thursday, July 2, 2015

দল ও নিয়োগ নৈরাজ্যে বিশৃঙ্খল উচ্চশিক্ষা

শরীফুল আলম সুমন
উচ্চশিক্ষার সার কথা গবেষণা। অথচ এ খাতই সবচেয়ে অবহেলিত, বরাদ্দও নামমাত্র। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়া পুরোপুরি মুখস্থবিদ্যা-নির্ভর। শিক্ষাবিদদের মতে, গবেষণাহীন উচ্চশিক্ষা কোনো শিক্ষাই নয়। রাজনীতি শেষ করে দিচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি সবটাতেই দলবা
জির চূড়ান্ত। ফলে লাগাতার অশান্তিতে লেখাপড়া লাটে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাহীনদের দাপট। বেশির ভাগই সনদ বিক্রির দোকান যেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ধুঁকছে সেশনজটে। শিক্ষার মান তলানিতে। সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় বিশৃঙ্খলা চরমে। আর এসব দেখার দায়িত্ব যাদের, সেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক আন্দোলনের মুখে গত ২৩ এপ্রিল দুই মাসের ছুটিতে যান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়া। ২২ জুন ফিরেই তিনি নতুন প্রক্টরিয়াল কমিটি অনুমোদন করেন। ওই দিন বিকেল পর্যন্ত তাঁকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষকরা। ২৩ জুন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও উপাচার্য ভবনে তালা ঝোলানো হয়। আন্দোলনরত 'মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ'-এর সদস্যরা পরের দুই দিন উপাচার্য ভবনের সামনে ব্যানার টানিয়ে বসে থাকেন। ছাত্রছাত্রীরাও এ নিয়ে দুই ভাগ। ওই চার দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া বলে কিছু ছিল না।
আন্দোলনরত শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'উপাচার্য কথা দিয়েছিলেন দুই মাসের ছুটি কাটিয়ে এসেই পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তিনি সে পথে যাননি। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এর মধ্যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায় তাঁকেই নিতে হবে।' তবে উপাচার্য আমিনুল হক ভূঁইয়া জানিয়েছেন, শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হলেও চূড়ান্তভাবে তিনি কিছু বলেননি।
গত ২৩ জুন থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল শিক্ষার্থী টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলন করে। তারা ওই দিন উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে ভিসি কার্যালয়ে জিম্মি করে। পরদিন শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা অবরুদ্ধ এবং রাতে একাডেমিক ভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ ২৫ জুন দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতাদের দাবির মুখে ইবি প্রশাসন জিম্মি হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ভবন, ভিসি অফিস ও অন্যান্য ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় গত ২২ জুন থেকে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ২৪ জুন একটা সমঝোতা হলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।
গত এপ্রিলে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে নিহত হয় দুই ছাত্র। মে মাসে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ যায় আরেক ছাত্রের। এভাবে প্রতি মাসেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। রাজনীতিতে পিছিয়ে নেই শিক্ষকরাও। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫তম সিন্ডিকেট সভায় পদোন্নতি ও শিক্ষাছুটি-সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন না হওয়ায় সম্প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল শিক্ষক সমিতি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, শেরে বাংলা কৃষিসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন উপাচার্যরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় মূলত রাজনৈতিক পরিচয় আর স্বজনপ্রীতির ওপর ভিত্তি করে। এ কারণে শিক্ষকরাও লেখাপড়ার চেয়ে রাজনীতিতেই মনোযোগী বেশি। আর শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের পক্ষে নয়তো বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক অসন্তোষ চরমে। তাঁদের নানা দাবি-দাওয়ার কারণে প্রায়ই অচলাবস্থা তৈরি হয়। একান্তই প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে শিক্ষক অসন্তোষের ফলে শিক্ষা কার্যক্রম লাটে ওঠে।
জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোহাব্বত খানের কণ্ঠেও শোনা গেল হতাশার কথা। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ওপরের দিকে যিনি থাকেন, তাঁর মানই যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের মান বাড়বে কিভাবে? শিক্ষকরা নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে ব্যস্ত থাকেন কনসালট্যান্সি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে। আর শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতি তো নিয়মে পরিণত হয়েছে। গ্রন্থাগারে যে বই আছে, তা শিক্ষক-ছাত্ররা ধরেও দেখেন না। মঞ্জুরি কমিশন এসব ব্যাপারে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারে না। আমরা শুধু সুপারিশ করি। এখন কেউ যদি তা না শোনে, তাহলে কী করার আছে?'
আন্দোলন তেমন একটা না থাকলেও অনিয়মে অনেক এগিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গাজীপুরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলতাব হোসেন ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করছেন গত বছরের মে মাস থেকে। বিষয়টি নজরে এলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর তদন্তে নেমে দেখতে পায়, তিনি আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার অনুমতি নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ডিগ্রি বিক্রি করেছে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে দেড় থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত। আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এক হাজার পিএইচডি ডিগ্রি বিক্রি করেছে। এই পাঁচ হাজার ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রিধারী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইউজিসির কাছেও এখন ৫০টি ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রির প্রমাণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পড়ালেখা না করিয়েই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও দিচ্ছে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির চতুর্থ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের কাছ থেকে এক হাজার ৫৩১ জনকে সনদ প্রদানের অনুমতি নেওয়া হয়। কিন্তু এর বাইরেও অতিরিক্ত ছয় হাজার ২০ জনকে অননুমোদিতভাবে ডিগ্রি দেওয়া হয়। পঞ্চম সমাবর্তনে চার হাজার ৭০৯ জনের স্থলে ১০ হাজার ২২৬ জনকে সনদ প্রদানের প্রস্তুতি নেওয়া হলে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ওই অনুষ্ঠান বর্জন করেন। ২০০৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির আর কোনো সমাবর্তন হয়নি। অথচ এ ছয় বছরে আরো প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেছেন। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ও গত ২০ বছরে শতাধিক ক্যাম্পাসের মাধ্যমে বিক্রি করেছে হাজার হাজার ডিগ্রি। গত বছরও টিআইবি এক প্রতিবেদনে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগ তোলে।
নিয়ম আছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সার্বক্ষণিক শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হতে পারবে না। অথচ টিআইবি গত বছর এক প্রতিবেদনে বলেছে, কাগজে-কলমে শিক্ষকদের কোটা পূরণ দেখানো হলেও বাস্তবে তা নেই। পূর্ণকালীন শিক্ষকের চেয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। শুধু শিক্ষকদের সিভি সংরক্ষিত রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত দেখাতে ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষকদের না জানিয়েও তাঁদের সিভি ব্যবহার করা হয়। নিজের দক্ষতা প্রমাণে শিক্ষকরাও ভুয়া পিএইডি ডিগ্রি ব্যবহার করেন। আবার অযোগ্যদেরও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। কম যোগ্যকে বিভাগীয় প্রধান করারও প্রমাণ আছে। ফলে মানসম্মত শিক্ষা সোনার হরিণ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আবুল কাশেম হায়দার বলেন, 'বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক আসলে ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছেন। আইনে অলাভজনক থাকায় তাঁরা সরাসরি টাকা নিতে না পারলেও ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পারিবারিক সদস্য নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে লাগামছাড়া ফি বাড়াচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি আরো দায়িত্বশীল হলে এ স্বেচ্ছাচারিতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।'
উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ২০ লাখই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তহীন সমস্যা। চার বছরের অনার্স কোর্স শেষ হতে পেড়িয়ে যায় সাড়ে ছয় বছর। ডিগ্রি ও মাস্টার্সেও লেগে আছে দীর্ঘ সেশনজট। ইউজিসিই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে তাদের সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত দুই হাজারেরও বেশি কলেজ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষে একটি দুরূহ কাজ। সেশনজট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অধিভুক্ত বেশির ভাগ কলেজে একাদশ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এতে সমস্যা হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কারিকুলাম প্রণয়ন এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। তবে শিক্ষক নিয়োগ ও বদলিতে এর কোনো ভূমিকা নেই। এর ফলে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণহারা।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, 'জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি পাচ্ছে। অথচ পাঠ্যসূচির বাইরে তারা কিছুই জানে না। এমনও দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫টা প্রশ্ন পড়লেই তার মধ্যে পাঁচটি প্রশ্ন কমন পড়ছে। তাই পুরো বই পড়ার তাগিদ থাকে না তাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া কি এভাবে হয়? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগই নতুন। সেখানে নিয়োগ হয় লবিংয়ে। গবেষণা বা পিএইচডি করা শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা কোনো শিক্ষাই নয়।'
ইউজিসির অধীন ২০০৯ সাল থেকে দুই হাজার ৫৪ কোটি টাকায় উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) কাজ শুরু হলেও তা কাজে দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ টাকা বরাদ্দ দিয়ে তা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে উপাচার্যদের বিরুদ্ধে। তবে হেকেপ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাঝেমধ্যে সেমিনার করা হয়। আর এই প্রকল্পের টাকা ব্যয়ে পিছিয়ে নেই ইউজিসিও। এর অধিকাংশ কর্মকর্তাই এই প্রকল্পের টাকায় বিদেশ ঘুরে বেড়ান।
বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার জায়গা হলেও মূলত মুখস্থবিদ্যাতেই সীমাবদ্ধ উচ্চশিক্ষা। এমনকি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীও ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না। ফলে গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা বাড়লেও চাকরির বাজারে তারা ঢুকতে পারছে না। দেশের বিশ্ববিদ্যালগুলোতে গবেষণায় বরাদ্দ খুবই কম। ২০১৩-১৪ সালে সর্বাধিক দুই কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার টাকা গবেষণায় খরচ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর বুয়েট করেছে ৫৫ লাখ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম নয় লাখ টাকা করে। সবচেয়ে কম খরচ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যান্য বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ব্যয় পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশেই গবেষণায় ব্যয় দুই-চার লাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টিতে গবেষণায় এক টাকাও খরচ করেনি। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি এবং টেক্সটাইলভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাই আটটি। ৬৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২টির কোনো গবেষণা প্রকল্প নেই। ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বাবদ কোনো বরাদ্দই নেই।
জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহানাওয়াজ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ঢোকায় মেধাবীদের কদর নেই। যারা রাজনীতি করে শিক্ষক হন, তাঁরা ক্লাসে না গিয়ে রাজনীতির পেছনে ঘোরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব মেধাবীদের হাতে না এলে মান বাড়ার সুযোগ নেই। আর বিশ্ববিদ্যালয় তো স্কুল-কলেজ নয়। এটা গবেষণার জায়গা। অথচ আমাদের এখাতে তেমন কোনো বরাদ্দই নেই। ফলে উচ্চশিক্ষা চলছে গবেষণাহীন।'
Source:http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2015/07/02/240292

0 comments:

Post a Comment