Wednesday, July 22, 2015

সংকটাপন্ন শিক্ষা খাত


ড. মো. শরিফ উদ্দিন


আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা আলোচনা আছে, সেটি প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। প্রশ্ন আছে শিক্ষার মান, সিলেবাস ও কাঠামো নিয়ে। এর চেয়েও বড় সমস্যা আমাদের শিক্ষার উন্নতিকল্পে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ খুবই স্বল্প। এই স্বল্প বরাদ্দের আয়োজন রাষ্ট্রই করেছে। উৎপাদনশীল নয়, এমন বহু খাতে সরকারের বরাদ্দ আকাশছোঁয়া অথচ শিক্ষার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে আমরা বেশ সচেতনভাবেই উদাসীন। আমরা এখন গরিবের মধ্যে গরিব অবস্থা পার করছি, বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় না নিলেও দক্ষিণ এশিয়াতেও শিক্ষা বরাদ্দে আমরা অনেক পিছিয়ে। আর এসব ভুল ও অসঙ্গতি যেন জানান দেয়, আমাদের সামগ্রিক উন্নতি শুধু কঠিন নয়, বরং সুদূরপরাহত। অথচ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, নির্বাচনী ইশতেহার ও নীতিমালায় সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বারবার প্রাধান্য পেয়েছিল। যদিও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

এক

২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষার পর বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণে মাধ্যমিক শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না। মাধ্যমিক পর্যায়ে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষকের অভাবে এখনো আমাদের শিক্ষার মান অনেক নিচে অবস্থান করছে। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জনশক্তি ঘাটতি, অবকাঠামোগত উন্নয়নের সীমাবদ্ধতা, দুর্বোধ্য সিলেবাস, একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়নে মন্থরগতি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছে। এখানে শিক্ষকসংখ্যা যেমন অপ্রতুল, তেমনি ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষকের। প্রচলিত সিলেবাসের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই, সৃজনশীল পদ্ধতির নামে যে আজব এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে সরকার, তা শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধার বিকাশের পরিবর্তে সম্ভবত শিশুর পাঠপদ্ধতিকে দুর্বোধ্য ও নিরানন্দ করে তুলছে। বিদ্যালয়গুলোয় নেই বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা। সবকিছুর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে বাজেটে কম কিংবা নামমাত্র বরাদ্দ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তির মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাত মিলিয়ে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২৯ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০.৯ শতাংশ। অথচ প্রতিরক্ষাসহ অনেক অনুৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বিপুল।

এখানে কৃষি, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো অবহেলিত রাখা হয় বরাবরই। যা হোক, রিসার্স ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশন নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুবাদে গ্রামীণ বাংলাদেশের বেশকিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। টাঙ্গাইলের নাগরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই, মূল একাডেমিক ভবনে রয়েছে ফাটল, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র একটি টয়লেট। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় আশপাশের ঝোপঝাড়ে। বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক রয়েছেন চারজন। তাঁরা অকপটে জানিয়েছেন, সৃজনশীল পদ্ধতির বিষয়ে সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে কোনো প্রশিক্ষণ তাঁদের দেওয়া হয়নি। এ পদ্ধতিতে পড়াতে গিয়ে তাঁদের নিয়মিত হিমশিম খেতে হয়। এগুলো হলো স্বল্প পরিসরে উল্লেখিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুর্গতির চিত্র, যেখানে সরকারের ন্যূনতম সুনজর নেই। অথচ প্রাথমিক শিক্ষাকেই আমরা গোটা জীবনের ভিত্তি হিসেবে জেনে এসেছি। সেই ভিত্তি আজ ভয়ানক নড়বড়ে অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু টাঙ্গাইলের একটি বিদ্যালয়ের চিত্র হলেও সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোর দশা এর চেয়ে ভালো নয়। সেক্ষেত্রে চর, নদী অধ্যুষিত, হাওর ও দুর্গম অঞ্চলগুলোর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা কী হতে পারে ভেবে দেখুন। প্রাথমিক এ স্তরটি নিয়ে সরকারের কর্তারা ভাবছেন, শুধু পাসের হার বৃদ্ধি এবং তুলনামূলক ভালো ফল দেখাতে পারলেই বুঝি দেশ ও দশের মঙ্গল! এ জন্য তাঁরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করছেন, যাতে তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থীরাও ভালো নম্বর পেয়ে যায়, বৃদ্ধি পায় পাসের হার ও জিপিএ ৫। অথচ এটি তাঁদের ভাবনাতেই নেই যে, সৃজনশীল পদ্ধতি শুধু চালু করলেই চলে না, এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিচর্যা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন এবং ধারণক্ষমতা অনুযায়ী সিলেবাস প্রণয়ন। একটি মানসম্পন্ন সিলেবাস প্রণয়নে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সিলেবাস বদল করছেন কয়েক দফায়, যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিপাকে ফেলছে ব্যাপক মাত্রায়। এসব অদ্ভুত আয়োজন দেখে সচেতন মনে হয়, আমরা নিজেরাও জানি না প্রকৃতপক্ষে আমরা কোথায় চলেছি। আমাদের এই পথচলা গন্তব্যহীন, কোনো লক্ষ্য এখনো স্থির হয়নি, চলতে চলতে যেখানে গিয়ে থামব, সেটিই যেন আমাদের লক্ষ্য।

প্রাথমিক শিক্ষাকে গতিশীল ও প্রাণবন্ত করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো এ পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে বেতন-ভাতা পান, তা প্রয়োজনের তুলনায় শুধু অপ্রতুলই নয়, বরং হাস্যকরও। একজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন, মানুষকে উজ্জীবিত করেন শিক্ষার জন্য, অথচ তিনি নিজের সন্তানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন। তাঁর বেতনের অর্থে না চলে সংসার, না চলে জীবন। সীমাহীন চিন্তা, সংসারের টানাপড়েন কাঁধে নিয়ে যখন একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে আসেন, তখন তাঁর কাছ থেকে ভালো ফল আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।

দুই

আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এখনো অনুধাবনের বাইরে রয়ে গেছে, একথা সরকার ও জনসাধারণ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। খুব অল্প বয়স থেকেই আমাদের শিক্ষার্থীদের মন ও মগজে কৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় আমাদের শিক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো একটি চাকরি পাওয়া- একটি ভালো চাকরি, আরো সোজাসাপটাভাবে বললে একটি বেশি বেতনের চাকরি। একজন শিক্ষার্থী তাঁর পড়ালেখা সম্পন্ন করে যে একজন ভালো উদ্যোক্তা হতে পারেন, চাকরি জোগাতে পারেন আরো শত তরুণের জন্য, করতে পারেন দেশকে স্বাবলম্বী, সেই শিক্ষার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী নই। মাধ্যমিক স্তর থেকেই কর্মক্ষেত্র অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষাকে উৎসাহিত করা গেলে বিশাল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর সম্ভব। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবশ্যই ক্যারিয়ার কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এ পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের মেধানুযায়ী ক্যারিয়ার প্লানিং বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। শিক্ষার এই স্তর থেকেই পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করলে খুব সহজেই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হবে। শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষা বিষয়ে সচেতন করতে সহজবোধ্য সিলেবাস প্রণয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে রাষ্ট্রকেই। দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অগ্রগতি এখনো ভ্রূণ পর্যায়ে রয়ে গেছে, কাঙ্ক্ষিত উন্নতি তো দূরের কথা, শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষার ব্যাপারে এখনো আগ্রহী করে তোলা সম্ভব হয়নি। বর্ধিত জনসংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

তিন

দেশের উচ্চশিক্ষার সার্বিক অবস্থা এখন বেশ নাজুক ও ভঙ্গুর। শিক্ষা, গবেষণা এবং নতুন জ্ঞান আবিষ্কার ও অনুসন্ধানের পথ এখন অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীরা আগের মতো একাডেমিক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করতে পারে না কিংবা করে না। লেখাপড়ার চেয়ে সেখানে এখন দলীয় রাজনীতির আদর্শহীন অন্তঃসারশূন্য স্লোগান তাদের মুখে শোভা পায়। শ্রেণিকক্ষের বদলে টেন্ডারবাজি, হল দখল, খুনোখুনি, যৌন হয়রানির দিকেই যেন শিক্ষার্থীদের নজর বেশি! এ অবস্থার জন্য হয়তো আমরা শিক্ষকরা, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, তাঁরাও অনেকাংশে দায়ী। এগুলো হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা না হওয়ার বহির্দিক, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতরকার দিকও নানা সমস্যায় জর্জরিত। গবেষণার সরঞ্জাম নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে, নেই সরকারি বরাদ্দও, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিদেশিদের কৌশলপত্র মোতাবেক বলছে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে হবে। নিয়মিত শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম সচল রাখতে যদি অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে হয় অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কাঁধে ব্যয়ের বোঝা আরো চাপিয়ে দিতে হয়, তখন শিক্ষা সাধারণ মানুষের জন্য বিলাসিতায় পরিণত হবে। আয় বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে বলা হয়, উন্নত দেশে শিক্ষাব্যয় অনেক। অথচ প্রায়ই আমরা ভুলে বসে থাকি যে, আমরা যে দেশে বসবাস করি সেটি উন্নত দেশ নয়, এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ সাধারণ খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষা, গবেষণা, প্রযুক্তিতে সরকারের সুনজর যতখানি বাড়ার কথা ছিল, ততখানি না বাড়ায় শিক্ষার মান ক্রমান্বয়ে দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং এর শিক্ষার্থীরা, যা সমষ্টিগতভাবে আমাদের সবার জন্যই দুর্ভাগ্যের।

চার

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো, বিভিন্নমুখী আন্দোলনের মুখে বেতনের ওঠানামা নিয়ে বেশ কিছ দিন ধরে গণমাধ্যমে আলোচনা চলছে। এ আলোচনা নতুন না হলেও হাল আমলে তা গতি পেয়েছে। অষ্টম বেতন কাঠামো এবং চাকরি কমিশনের প্রতিবেদনে বেতন কাঠামোর সুপারিশ এবং সচিব কমিটির প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। অষ্টম কমিশনের সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাছে অনেকাংশে সন্তোষজনক না হলেও আগের নিয়মানুযায়ী তারা কেউ কেউ মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু সচিব কমিটির প্রস্তাব শিক্ষক সমাজকে শুধু অসম্মানই করেনি বরং তাদের মর্যাদার প্রশ্নেও পরিহাস করেছে। একটি মর্যাদাপূর্ণ বেতন কাঠামোর কথা বলার অর্থ এই নয় যে, কর্তৃপক্ষের কাছে দয়া প্রার্থনা করা হচ্ছে, একজন শিক্ষক যেমন তাঁর জাতির জন্য নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত বরাদ্দ রাখেন, তেমনি ওই জাতিরও কর্তব্য রয়েছে একজন শিক্ষক তথা সৃজনশীল মানুষের প্রতি।

এটি শুধু আন্দোলন করে বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নেওয়ার প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন মর্যাদার। সচিব কমিটি শিক্ষকদের এই মর্যাদাকে দ্বিগুণ নিচে নামিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে যে, এ দেশে রাজনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, মুক্ত বুদ্ধিবৃত্তির চেয়ে আমলাতন্ত্র বেশি শক্তিশালী। আমলাতন্ত্র যে এখন রাজনীতি, অর্থনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির সব মাঠ একচেটিয়াভাবে আগলে রেখেছে, এটি তারই প্রমাণ।

সমকালীন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নানা অসুখে নাজুক হয়ে রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে প্রচলিত শিক্ষার মান ও কাঠামো নিয়েও। এই শিক্ষা আমাদের না শেখাতে পারছে জীবনবোধ, না পারছে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আমাদের ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে। নানা পদ্ধতিগত জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক দৌরাত্ম্য, বাজেটে স্বল্প বরাদ্দ, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সীমাহীন উদাসীনতা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। শিক্ষা নিয়ে সমাজে মানুষের মধ্যে যে বিবেক ও দায়বোধ থাকার কথা ছিল, সেটি গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি দীর্ঘ সময়েও। গণমানুষের এই অসচেতনতাই সরকারকে কালঘুমে অস্থির করে রেখেছে। শিক্ষা কার্যক্রম যেভাবে পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল, যে রূপরেখা নিয়ে একটি জাতির তরতর করে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বিশ্বসভায়, তার কোনো আয়োজন আর চোখে পড়ে না শুরু থেকে শেষ পর্যায় পর্যন্ত। তবু আমরা আশাবাদী, আমাদের দেশ এগিয়ে যাবেই, সব বাধা-বিপত্তি ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অচিরেই আলো ছড়াবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিন হবে বিশ্বের পথপ্রদর্শক।

লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


Published in: http://www.ntvbd.com/opinion/15250

0 comments:

Post a Comment