বাংলাদেশের প্রতিটি ঘড়ের, প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে বড় concern কি? নির্দিধায় বলা যায় এটা হলো ছেলেমেয়দের education বা শিক্ষা। বাংলাদেশের মানুষ ছেলেমেয়েদের শিক্ষার পেছনে কি পরিমান টাকা ব্যায় করে তা একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে বিষয়টির গুরুত্ব। শুধু কি টাকা খরচ? সাথে সময়ও। শুধু কি ছাত্রের সময়? অভিভাবকদেরও। আমার মতে আমাদের অনেকেই বরং প্রয়োজনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি খরচ করে ফেলি। প্রাইভেট টউটরের নামে, কোচিং সেন্টারের নামে, প্রাইভেট স্কুল, কলেজ বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফীর নামে প্রচুর অর্থ অভিবাবকরা ব্যায় করে। সমস্যা হলো টাকাগুলো সঠিক ভাবে এবং সঠিক খাতে ব্যায় করা হয় না। অর্থাত টাকা কিন্তু আমাদের অভিভাবকরা ঠিকই খরচ করছেন কিন্তু এই খরচের সুফল তারা পাচ্ছেন না। বলা যায় অনেক ক্ষেত্রে তারা বাধ্য হয়ে করছেন কিন্তু করছেন তো? করছেন কেন? কারণ এটাই তাদের সবচেয়ে বড় কনসার্ন। অধিকাংশ পরিবারই মনে করে সন্তানদের পেছনে শিক্ষা খরচই সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ সু-ইনভেস্টমেন্ট। অথচ এটাই সবচেয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। যেন অভিভাবকহীন। এখানেই সরকারী বরাদ্দ প্রযজের তুলনায় সবচেয়ে কম। এক্ষেত্রেই আমাদের কোন ভিশন আছে বলে মনে হয় না।
আমাদের অভিভাবকরা যেই টাকা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শুধু টিউশন ফী এবং অন্যান্য ফী হিসাবে ব্যায় করা হয় ওটা যদি বাংলা মিডিয়াম স্কুলে টিউশন ফী হিসাবে ব্যায় করা হতো তাহলে ভাবতে পারেন কি রকম শিক্ষক বাংলা মিডিয়াম স্কুলে নিয়োগ দেওয়া যেত? অথবা বাংলা মিডিয়াম ছাত্রের অভিভাবকরা যেই টাকা কোচিং সেন্টারে, প্রাইভেট tutor-এর পেছনে ব্যায় করে সেই টাকার একটা অংশ যদি স্কুলের টিউশন ফী হিসাবে ব্যায় করা হতো তাহলে কি রকম ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেত? ওরকম বেতন দেওয়া হলে ওরকম ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে শেষ বিচারে অভিবাবকদের আর বাড়তি টাকা কোচিং সেন্টারে ব্যায় করতে হত না। ছেলেমেয়েরা পেত মানসম্মত শিক্ষা আর বেঁচে যেত কিছু সময় যে সময় ব্যায় হত কোচিং সেন্টারে। ওই বেঁচে যাওয়া সময় ছাত্র ছাত্রীরা ব্যায় করতে পারত extra curricula একটিভিটিতে।
শিক্ষকদের কম বেতন দিলে ভালো ছাত্র ওই পেশায় আসবে না। আর ওই কম বেতনে খারাপ শিক্ষকরাও যেহেতু চলতে পারবে না সেহেতু তারা নানারকম ফন্দি ফিকির করে টাকা ঠিকই উপার্জন করবে এবং ওই অভিবাবকদের কাছ থেকেই। কিন্তু মাঝ খান থেকে ব্যাপারটা হবে অনৈতিক চিন্তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সামিল। এভাবেই আমরা চলছি। আমার এক আত্মীয় পড়ে ঢাকার স্বনামধন্য সরকারী স্কুলে। ও আমাকে কয়েক দিন আগে বলল ক্লাসে পড়ানো হয়নি এমন বিষয় পরীক্ষায় দেওয়া হয় যেন তার কোচিং সেন্টারে যারা পড়ে তারা ব্যাতিত অন্যরা না পারে। এটা একটা মারাত্মক অনৈতিক trick কিন্তু খোজ নিয়ে জানলাম এটা এখন বাংলাদেশের কমন ঘটনা।
চিন্তা করা যায় আমাদের অভিবাবকরা কি পরিমান অর্থ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে খরচ করে? আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে ওই একই অভিভাবক কোন টাকাই খরচ করতে চায় না। যে টাকা তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ করতে প্রস্তুত বা করছে তার কিয়দংশও যদি তারা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে করত তবে তাদের সন্তানেরা পেত ঢের বেশি ভালো শিক্ষা, ভালো ক্যাম্পাস। মাঝে মাঝে ভাবি সরকার যদি সরকারী তত্বাবশানে (PPP অর্থাত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের আন্ডারে) কিছু স্পেশাল বিশ্ববিদ্যালয় খোলে যার টিউশন ফী তুলনামূলক বেশি কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক কম তাহলে ছাত্ররা কম টাকায় ভালো education পেত। অর্থাত সরকারকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় নামতে হবে। যে যেভাবে খুশি সেভাবে, যেখানে খুশি সেখানে, যত খুশি তত, যে মানের খুশি সে মানের প্রতিষ্ঠান খুলতে দিলে শেষ বিচারে দেশের ক্ষতি। আর দেশের ক্ষতি মানেই হলো সবারই ক্ষতি।
কবে আমরা একটা শিক্ষা বান্ধব সরকার পাব? বড় দেরী হয়ে যাচ্ছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠির মানুষের পৃথিবীর মানচিত্রে একটি ছোট্ট ডট-সম দেশে শিক্ষাই যে একমাত্র অবলম্বন।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 comments:
Post a Comment