স্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামো নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আপত্তির বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ পাঁচ সচিবকে আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবদের এই পত্র দিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল গঠন এবং ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডে
ন্সে অধ্যাপকদের যথাযথ পদমর্যাদা নির্ধারণের বিষয়ে এই চিঠি দেওয়া হয়।মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে রোববার শিক্ষামন্ত্রী এই ডিও লেটার পাঠিয়েছেন।
প্রস্তাবিত বেতন স্কেল নিয়ে নিজেদের আপত্তি জানিয়ে গত ১৫ জুন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের শিক্ষক নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকে নাহিদ শিক্ষক নেতাদের বলেছিলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন তিনি। এছাড়া শিক্ষকদের পক্ষে ‘লড়াই’ করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ (ফাইল ছবি)
সপ্তম বেতন স্কেলে সচিব, সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক ও মেজর জেনারেল এক নম্বর গ্রেডে থাকলেও প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও অধ্যাপকদের বেতন আগের তুলনায় তিন ধাপ নেমে গেছে।
এনিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করে প্রস্তাবিত বেতন স্কেল সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
বেতন ও চাকরি কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গত ১৩ মে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে কাঠামো সুপারিশ করে সচিব কমিটি।
এখন অর্থ মন্ত্রণালয় সচিব কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি চূড়ান্তে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবে। আগামী ১ জুলাই থেকে অষ্টম বেতন স্কেল কার্যকর করবে সরকার।
কমিশন গঠনের দাবি শিক্ষকদের
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের লক্ষ্যে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানানো হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো পুনঃনির্ধারণের দাবিও জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিতে বক্তব্যে বলা হয়, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো রয়েছে। শ্রীলংকার শিক্ষকরা মূল বেতনের বাইরে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহী ভাতা, একাডেমিক ভাতা, গবেষণাসহ বেশ কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশগুলোতে মানব সম্পদ উন্নয়নের সুদৃঢ় ভিত রচনা করা হয়েছে এবং তার সুফলও দেশগুলো বর্তমানে ভোগ করছে।”
অধ্যাপক কামাল বলেন, “রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে আমাদের মাননীয় উপাচার্য়ের অবস্থান সপ্তদশ। সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের অবস্থান ১৯তম এবং অধ্যাপকদের অবস্থান ২২তম। শিক্ষকদের এই অবমাননাকর অবস্থান নিয়ে দীর্ঘ অসন্তোষ রয়েছে।”
“প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পুনঃনির্ধারণ করে বেতন কাঠামো সাপেক্ষে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে আমাদের অবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানাই, অন্যথায় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান বাদ দেওয়া হোক।”
সরকারি কর্মকর্তাদের মতো সুযোগ-সুবিধা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরদের দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
ফেডারেশনের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “শিক্ষকদের অমর্যাদা করে কোনো জাতিই এগিয়ে যেতে পারে না। দেশ উন্নত হচ্ছে, আমাদের বাজেটের আকার বাড়ছে, কিন্তু শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না।”
দাবি আদায়ে আগামী ২৮ জুন সকাল ১১টায় বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়ে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বেসরকারি শিক্ষকদের হুমকি
জুলাই থেকে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত না করলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষকরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রোববার বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির এক মানববন্ধনে এ হুমকি দেন শিক্ষক নেতারা।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল সিদ্দিকী বলেন, “১ জুলাই থেকেই বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।”
সরকারি বিধি অনুযাযী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত এমপিওভুক্ত করার দাবিও জানান তিনি। পাশাপাশি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখার শিক্ষক-কর্মচারীদের দ্রুত এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ ও শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৬৫ বছরে উন্নীত করার দাবি তিনি জানান।
মানববন্ধনে শিক্ষক নেতা মোজাম্মেল হক বলেন, “সরকার আমাদের দাবি না মানলে দেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে না। তালা দিয়ে সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জামান, সহ-সভাপতি সমরেন্দ্রনাথ রায় সমর, আবদুল খালেক, আবদুল মজিদ, সুনীল চন্দ্র পাল, হাসিনা পারভীন প্রমুখ।
Source:http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article986260.bdnews
0 comments:
Post a Comment