Saturday, June 13, 2015

শিক্ষকদের সম্মান ও অষ্টম বেতন কাঠামো

মামুন কাইউমআওয়াল কবীর জয়রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র মশিউর রহমানইব্রাহীম মোল্লাআলমগীর হোসেনমঈনুল হাছান  জোবায়ের আল মাহমুদ

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরজন্য বর্তমানসরকারের অষ্টমবেতন কাঠামোবাস্তবায়নের উদ্যোগকেস্বাগত জানানোরবিকল্প নেই।বাজার নিয়ন্ত্রণকরা গেলেসুফল কর্মকর্তা-কর্মচারীরাপাবেন। তবেঅষ্টম কমিশন সচিবকমিটির কিছুসুপারিশ বিতর্কেরওজন্ম দিয়েছে।এর মধ্যেএকটি হলো, শিক্ষকদেরপ্রতিশ্রুত আলাদাবেতন কাঠামো'খোঁড়াযুক্তি'তে বাস্তবায়ননা করাএবং নতুনএকটি বৈষম্যতৈরি করেশিক্ষক সমাজকেহেয় প্রতিপন্নেরঅভিযোগও তোলাহচ্ছে। 
বেসরকারি সংস্থায়চাকরির কথাবাদ দিলাম।কারণ সেখানকারবেতনের হিসাবদেওয়া হলেঅনেকের কাছে'বেশি' মনেহবে। রাষ্ট্রীয়মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোওনিজেদের মতোএকটি বেতনস্কেল তৈরিকরে রেখেছে, যাবাস্তবায়ন হলেপে কমিশনেরসুপারিশকে ছাড়িয়েযাবে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সরকারের প্রতিরক্ষাখাতের বিভিন্নধাপে বর্তমানসরকারের সময়েবিভিন্নভাবে পেশাগতউন্নয়নের প্রচেষ্টানেওয়া হয়েছেএবং অব্যাহতরয়েছে। বিচারকরাওনিজেদের যতটাসম্মানী হলেস্বাচ্ছন্দ্যে বলাযায়, সরকারকে আইনগতভাবেতেমন বেতনস্কেল বাস্তবায়নেরতাগিদ দিয়েছেন।এগুলো অযৌক্তিকনয়। বরংদুর্নীতিমুক্ত-বৈষম্যহীনদেশ গড়তেএগুলোর বিকল্পনেই। তবেবৈষম্যহীন সমাজগড়তে হঠাৎআমলাতন্ত্রের চাপিয়েদেওয়া সিদ্ধান্তেরমাধ্যমে শিক্ষকসমাজের প্রতিনতুন বৈষম্যেরসূচনাও মোটেইকাম্য নয়।
মেধাবী আমলারাজাতির জন্যঅনেক উন্নয়নমূলককাজ করেন। বিশ্বাসথেকেই তাদেরগাড়িসহ বিভিন্নভাতা, ড্রাইভার, পিয়ন, রাজপ্রাসাদসমবাসাবাড়ি নিয়েকোনো প্রশ্নতোলা হয়না। কিন্তুপ্রশ্ন আসে, আমলারাকি জাতিগঠনে শিক্ষকদেরঅবদানের কথাস্বীকার করেন? অন্ততঅষ্টম পেকমিশনের ওপরসচিব কমিটিরসুপারিশে প্রশ্নেরউত্তর স্পষ্টহয়েছে। ওয়ারেন্টঅব প্রিসিডেন্সেরপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরঅধ্যাপকদের ভিসিদের যেস্থানে রাখাহয়েছে আগেথেকেই তানিয়ে বিতর্করয়েছে। এখনআবার নতুনবিতর্কের সূচনাকমিশনের জন্যমঙ্গল নয়।সারাদেশের শিক্ষকসমাজের পক্ষথেকে খুবস্পষ্টভাবে অভিযোগকরা হয়েছে, প্রস্তাবিতঅষ্টম বেতনকাঠামোয় শিক্ষকদেরন্যায্য অধিকারক্ষুণ্ন হয়েছে।সচিব কমিটিআরও একধাপএগিয়ে নিজেদেরসুবিধা নিশ্চিতকরার মাধ্যমেঅন্যদের জন্যবৈষম্যের ব্যবস্থাকরেছে। সপ্তমজাতীয় বেতনকাঠামোতে শিক্ষকদেরযে অবস্থানছিল, প্রস্তাবিত বেতনকাঠামোয় তাদুই ধাপনামিয়ে আনাহয়েছে। আবারবিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভ্যন্তরীণআয় নাবাড়াতে পারলেআলাদা পেস্কেল নাদেওয়ার জন্যসরকারকে দিকনির্দেশনাদেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকদের আলাদাবেতন কাঠামোরবিপরীতে এমনপদক্ষেপ শিক্ষকসমাজকে হেয়প্রতিপন্ন করাহয়েছে শুধুআর্থিক বিবেচনায়নয়, সামাজিক বিবেচনায়ওবটে। সরকারেরপক্ষ থেকেবহুবারই বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকসহ সবপর্যায়ের শিক্ষকদেরজন্য স্বতন্ত্রবেতন কাঠামোপ্রণয়নের প্রতিশ্রুতিদেওয়া হয়েছে।সেটি যেমন২০০৯ ২০১৪ সালেরআওয়ামী লীগেরনির্বাচনী ইশতেহার, প্রণীত শিক্ষানীতিতেরয়েছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীরবক্তব্যেও স্পষ্টহয়েছে। শিক্ষকদেরআলাদা বেতনকাঠামোর প্রতিশ্রুতি১৯৮৬ সালথেকে দেওয়াহলেও অদ্যাবধিসুরাহা হয়নি।আমাদের দেশেশিক্ষকদের সামাজিকসম্মান আর্থিক সুবিধাআমাদের প্রতিবেশীসমপরিমাণ জিডিপিরযে কোনোদেশের চেয়েওঅনেক কম। জন্যঅনেকেই ঠাট্টাকরে বলেন, 'মাসযেতে টেরপান যিনি, তিনিমাস্টার।'
আমলাতন্ত্রের তৈরিশিক্ষক সমাজেরপ্রতি এমনবৈষম্য প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীরপ্রতিশ্রুতির সাংঘর্ষিক; তেমনি সাংঘর্ষিকরূপকল্প ২০২১, সরকারের২০০৮ ২০১৪ সালেরনির্বাচনী ইশতেহারজাতীয় শিক্ষানীতিরসঙ্গে প্রতিবন্ধক।প্রস্তাবিত বর্তমানবেতন কাঠামোয়পরিবর্তন নাএলে হয়তোআগামী দিনেবিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীশিক্ষক পাওয়াওঅসম্ভব হয়েউঠবে। অবস্থার পরিবর্তননা করলেজ্ঞাননির্ভর ডিজিটালবাংলাদেশের স্বপ্নহয়তো স্বপ্নইথেকে যাবে।জাতির নীতিনির্ধারকদেরঅবশ্যই বোঝাউচিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাইকর্মকর্তাদের কাজেরজন্য যোগ্যকরে তোলেন।এমন পরিস্থিতিতেশিক্ষকদের আর্থ-সামাজিকদিক বিবেচনায়এনে প্রস্তাবিতবেতন কাঠামোপরিবর্তন করেবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরজন্য আলাদাবেতন কাঠামোঘোষণা করাহবে বলেবিশ্বাস করতেচাওয়াটা নিশ্চয়ইবেশি হবেনা। দেশকেজ্ঞান-বিজ্ঞান সভ্যতারশিখরে নিয়েযেতে হলেশিক্ষা খাতেবিনিয়োগ বাড়াতেইহবে। জাতীয়বাজেটে সরকারকেএর প্রতিফলনঘটাতে হবে।তা নাহলে সরকারকেভাবতে হবেবিশ্ববিদ্যালয়ের সেরাশিক্ষার্থীটি কোনপেশায় যোগদানটাকেলাভবান মনেকরবেন? কারণ, এখনবিশ্ববিদ্যালয় থেকেভালো ফলনিয়ে বেরহওয়ার পরকম জায়গাইরয়েছে, যেখানে শিক্ষকতারপ্রথম স্তরের(প্রভাষক) সমপরিমাণবা এরকম বেতনরয়েছে।
অন্যথায় শিক্ষকরামৌলিক চাহিদামেটাতে পাবলিকবিশ্ববিদ্যালয়ে যেমনবিভিন্ন রকমকোর্স চালুকরার প্রবণতাবাড়বে, তেমনি অন্যস্তরের শিক্ষকরাওনানা বৈধ অবৈধউপায়ে আয়বাড়াতে উদ্যোগীহবে। প্রাইভেটবিশ্ববিদ্যালয়ের মতোপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েওউচ্চ অর্থব্যয় করেশিক্ষা গ্রহণকরা শিক্ষার্থীরঅভাব হবেনা। আবারবেতন কমিশনেরসুপারিশ অনুযায়ী, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণেরপাশাপাশি ছাত্রদেরবেতন, পরীক্ষা ভর্তি ফিবেড়ে যাওয়ারসমূহ সম্ভাবনারয়েছে। ক্ষেত্রে বিবেচনায়রাখা প্রয়োজন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েসচিবদের বাধনীদের ছেলেরাখুব কমইপড়ে, সবচেয়ে বেশিপড়ে মধ্যবিত্তেরসন্তানরা।
শিক্ষকদের আলাদাস্কেল দেওয়াবর্তমান পরিপ্রেক্ষিতেসম্ভব যদিনাও হয়, তাহলেঅন্তত প্রস্তাবিতঅষ্টম জাতীয়বেতন কাঠামোতেই বছরেরঅভিজ্ঞতা সম্পন্নঅধ্যাপকদের বেতন-ভাতাসিনিয়র সচিবেরসমতুল্য করা, সিলেকশনগ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদেরবেতন-ভাতাসিনিয়র সচিবেরসমতুল্য করা, সহযোগীঅধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক প্রভাষকদেরবেতন কাঠামোক্রমানুসারে নির্ধারণ, প্রতিবেশী দেশগুলোরআলোকে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকদের গবেষণাভাতা, বই ভাতাসহঅন্যান্য সুযোগ-সুবিধানিশ্চিত, সরকারি কর্মকর্তাদেরমতো গাড়ি, আবাসন অন্যান্যসুবিধা শিক্ষকদেরক্ষেত্রেও নিশ্চিতকরা, প্রত্যাশিত বেতনকাঠামো অনুযায়ীওয়ারেন্ট অবপ্রিসিডেন্সে শিক্ষকদেরপদমর্যাদা অবস্থান নিশ্চিতকরা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরউপাচার্যের পদমর্যাদামুখ্য সচিব-মন্ত্রিপরিষদসচিবের সমতুল্যকরে সেঅনুযায়ী সুবিধাদিওনিশ্চিত করাসময়ের দাবিহিসেবে সামনেএসেছে। পরবর্তীকালেদ্রুততম সময়েরমধ্যে শিক্ষানীতিঅনুযায়ী প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরজন্য স্বতন্ত্রবেতন স্কেলপ্রবর্তন করাহোক। আমরাবিশ্বাস করি, শিক্ষিতজাতি গঠনেবর্তমান সরকারেরঅঙ্গীকার অনুযায়ীবিষয়গুলোর বাস্তবায়নহবে। যাতেআগামী দিনেঅন্যান্য পেশারপাশাপাশি শিক্ষকতায়ওমেধাবীদের খুঁজেপাওয়া যায়।

লেখকবৃন্দ যথাক্রমেরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়, কবিকাজী নজরুলবিশ্ববিদ্যালয়, বেগমরোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদদানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লাবিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণশিক্ষক

Source:http://www.samakal.net/


0 comments:

Post a Comment