Kamrul Hassan
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে মোদি বলেন, এটি সেই বিশ্ববিদ্যালয় যা বাংলাদেশকে জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে। প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে জ্ঞান বৃদ্ধির কাজ এ বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। এ কথাটি বলেছেন নিজ দেশের রাষ্ট্রনায়ক না অন্য একটি দেশের রাষ্ট্রনায়ক এবং তিনি এমন একটি সময় বলেছেন যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্ম বিরতিতে যাবেন (আজ) তাদের হৃত সম্মান ফিরে পাবার জন্য আন্দোলনের একটি ধাপ হিসাবে। তাই এইদিনটিকে জাতীয় লজ্জা দিবস হিসাবে পালন করা উচিত। নিজ দেশের রাষ্ট্রনায়করা দিন দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পঙ্গু করে দিচ্ছেন। এমন অবস্থা করছেন যেন সেরা ছাত্র, অহমবোধ সম্পন্ন ছাত্র আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান না করে। এই প্রক্রিয়া অনেক দিন ধরেই চলছে। কারণ আমাদের রাষ্ট্রকে যারা পরিচালনা করেন তারা জানেন ভালো ছাত্র আর অহমবোধ সম্পন্ন মানুষ যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে তারা ভাঁড় হবেন না, দলবাজ হবেন না। তারা সত্য কথা বলবেন। আর এখানেইতো যত সমস্যা। একটু সার্ভে করলেই জানা যাবে ক্লাসের বেস্ট বা সেকেন্ড বেস্ট এমনকি থার্ড বেস্টকেও আমরা এখন আর শিক্ষক হিসাবে পাচ্ছি না। এটা ঠিক যে, ক্লাসে ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ড হলেই যে প্রকৃত মেধাবী হবে তার guarantee নেই কিন্তু statistically বলা যায় ওরাই বেস্ট। অর্থাত আমরা যদি থাম্ব রুল ব্যাবহার করে সব সময় ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ডকেই নেই ভুল কম হবে কারণ ক্লাসের বেস্টরাই ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ড হয় মাঝে মাঝে শুধু এর ব্যাতিক্রম ঘটে।
অনেকদিন যাবত শিক্ষকরা দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষকদের সতন্ত্র বেতন স্কেলের যেন সমাজে শিক্ষকদের মান মর্যাদা একটু বৃদ্ধি পায়, যেন ভালো ছাত্ররা শিক্ষককতা পেশায় আসতে আগ্রহী হয়। কিন্তু দেখছি সরকার প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের মাধ্যমে উল্টো শিক্ষকদের মান সম্মান সমাজে আরো নিচে নামাতে মরিয়া। আমি কদিন ধরে খুব করে বোঝার চেষ্টা করছি এর আসল কারণ উদ্ধার করার জন্য। অনেক ভেবে বুঝতে পারলাম শিক্ষকদের মান মর্যাদা একটু degrade করলে তুলনামূলক খারাপ ছাত্ররা শিক্ষক হবে। আর ওই খারাপ শিক্ষকদের sycophant বানানো, দলবাজ বানানো তুলনামূলক সহজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা সব বিশ্ববিদ্যালয় জাতির বিবেক এবং জ্ঞান তৈরির কারখানা। এখানে অন্যান্য কারখানায় যেমন CBA-এর নাম রাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল growth-কে বাঁধাগ্রস্থ করা হয় তেমনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সমিতির নামে রাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়ে শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশকে বিঘ্নিত করা হয়।
প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের মাধ্যমে শিক্ষকদের degrade করার প্রস্তাব আর নন্রেন্দ্র মোদীর বক্তব্যই পার্থক্য নির্ণয় করে দেয় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে। ভারতে শিক্ষকদের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাদি একটু খতিয়ে দেখলেও পার্থক্য পরিস্কার হবে! তুলনা করে দেখুন। এই দুই দেশে দ্রব্যমূল্য কিন্তু প্রায় একই। ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের দেশে অনেক কিছুর দাম বরং বেশি। হ্যা, সবারই বেতন বাড়ানো উচিত। কিন্তু শুরু করতে হলে শিক্ষক দিয়েই করা উচিত। কিন্তু এটা বুঝতে যে ভিশন দরকার সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যার্থ হয়েছে সেই ভিশনারী রাষ্ট্রনায়ক তৈরী করতে।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 comments:
Post a Comment