Wednesday, August 26, 2015

মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বন্দী

Kamrul Hassan

আমার এক আত্মীয়া ঢাকার এক স্বনাম ধন্য কলেজে পড়ে। গতকাল সে আমার বাসায় এসেছিল। এক পর্যায়ে জানতে এবং ভালোভাবে বুঝতে চাইল gradient, divergence ও curl সম্মন্ধে। তো আমি জিজ্ঞেস করলাম মাত্রতো ক্লাস শুরু হলো এত জলদি তোমাদের এত কিছু পড়িয়ে এখানে চলে এসেছে? ও বলল শেষ ক্লাসে এগুলো পড়িয়েছে। তো আমি আগে শুনতে চাইলাম ক্লাসে কিভাবে এবং কতটুকু বুঝিয়েছে। উত্তর শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম আর কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। ফিরে গেলাম আমার কলেজ জীবনে। আমার সেই গ্রামের কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক যিনি আমাকে পড়িয়েছেন কত ভালো ছিল আর কত ভালো পড়াতেন। কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা জানালাম আমার সেই স্যারকে। ঢাকার ওই নামী কলেজের শিক্ষক বোঝালেন ১) যে পদ্ধতিতে একটি স্কেলার রাশিকে ভেক্টর রাশিতে রূপান্তর করা হয় তাকে গ্র্যাডিয়েন্ট বলে, ২) যে পদ্ধতিতে একটি ভেক্টর রাশিকে স্কেলার রাশিতে রূপান্তর করা হয় তাকে ডাইভার্জেন্স বলে আর ৩) ভেক্টর অপারেটর আর ভেক্টর রাশির ক্রস গুণনকে কার্ল বলে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটা খুবই খারাপ দিক হলো সব কিছুকেই সজ্ঞায়িত অর্থাৎ ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা কে X বলে। আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের একটা ধারণা জন্মেছে যে, এইভাবে না শিখলে বিষয়টি শেখা হয় না আর এইভাবে না বোঝালে বিষয়টি ভালোভাবে বোঝানো হয় না। এগুলোর জন্য অনেকাংশে আমাদের কোচিং সেন্টারগুলো দায়ী। তাদের কাজই হলো সব কিছুকে সজ্ঞার ছকে ফেলা। আর আমরা পরীক্ষার প্রশ্নও করি "কাহাকে বলে" টাইপের। দোষ আমাদের ছেলেমেয়েদের না। আমাদের।

Gradient, divergence ও curl এইভাবে বোঝানোর মানের শিক্ষকরাই এখন আমাদের কলেজে পড়ান। এদের কাছে পড়ে তারপর আমাদের কাছে আসে। প্রথম বর্ষ আর দ্বিতীয় বর্ষে অনেক কিছুই আমরা পড়াই যা আমাদের ইন্টারমিডিয়েটেও পড়ানো হয়। ওদেরকে ওগুলো জিজ্ঞেস করলে ওদের উত্তর gradient, divergence ও curl-এর উত্তর থেকে খুব যে better উত্তর দেয় তা কিন্তু নয়। তাই বিষয়টা অত্যন্ত সিরিয়াস। আমাদেরকে ভাবতে হবে। এই লেভেলের শিক্ষক নিয়োগ বা দলীয় চিন্তা ধারা থেকে শিক্ষক নিয়োগ হলে এর ফল খারাপ থেকে খারাপতর হবে। অর্থাত এই জাতি সার্টিফিকেট ধারী যারা নিজেদের শিক্ষিত ভাববে কিন্তু প্রকৃত অর্থে অশিক্ষা আর কুশিক্ষায় আকন্ঠ নিমজ্জিত।

আমি ভাবছিলাম কি দরকার আছে gradient, divergence ও curl ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে রাখার। ইংরেজি মাধ্যমের A-লেভেলের syllabus দেখলাম তাদেরতো এগুলো পড়ানো হয় না। আমি ইন্টারমিডিয়েটের syllabus দেখে ভাবছিলাম আর একটু পড়ালেতো তাদের undergraduate ডিগ্রী দেওয়া যায়। কারা এই syllabus করছে? যারাই করুক তাদের এত পন্ডিতি দেখাতে বলেছে কে? নিজে যা যা জানে বা পড়েছে তার প্রায় পুরোটাই সিলেবাসে ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো এই syllabus কারা তৈরী করে? যতটুকু জানি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই করেন কিন্তু যারা ওসব কমিটিতে থাকেন তাদের অধিকাংশই more politicians than they are teachers এবং এই কমিটি নির্বাচনেই গলদ। এই কমিটি তৈরী করেন সচিব লেভেলের মানুষগুলো। তাদের মাথায় আছে কিভাবে মন্ত্রী বা সরকারকে খুশি করা যায়। তাই তারা সরকার দলীয় শিক্ষক রাজনীতির সাথে যারা জড়িত তাদেরকেই শুধু ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে যা হবার তাই হয়। ওই শিক্ষকরা সচিবালয়ে গিয়ে মিটিং করতে পেরেই খুশি। ওখানে গিয়ে syllabus তৈরিতে যতনা মনোযোগী তার চেয়ে বেশি মনোযোগী অন্য কোন favour পাওয়াতে বা অন্য কোন তদ্বিরে। এখানেও এই সচিবরাই মূলত দায়ী। তারা যদি সঠিক মানুষদের কমিটিতে রাখত তাহলে সবকিছু অন্যরকম হত। তাই আমি বলি আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে মন্ত্রনালয় থেকে বের করে এনে এগুলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিসন বানাতে হবে। যতদিন এগুলো শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে থাকবে ততদিন এরকম অবস্থা চলতেই থাকবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Tuesday, August 25, 2015

শিক্ষার ঋণে আনন্দভ্রমণ!

শরীফুল আলম সুমন 

এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবস্থারই তুলনা করা হয়। আর শিক্ষাব্যবস্থায় যেকোনো সংযোজন-বিয়োজন হলেও মডেল হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকেই ধরা হয়। এমনকি জাতীয় বাজেটেও শিক্ষা খাতে মিল থাকে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে। অথচ শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলে সফর করা হয় ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার দেশে দেশে। সম্প্রতি উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) অধীনে ৩৬ জন কর্মকর্তা যান ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডায়। একই প্রকল্পে শিগগিরই নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায়ও ট্যুর রয়েছে। আর সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টের (সেকায়েপ) অধীনে ১৫ জনের একটি টিমের ব্রাজিল সফরও নির্ধারিত হয়েছে। চলতি বছরই এ প্রকল্পের অধীনে আরো কয়েকটি ট্যুরে জার্মানি, ফিলিপাইন, মেক্সিকো, বেলজিয়াম যাওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। দুই প্রকল্প মিলে ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার দেশগুলোতে এ বছরই ঋণের টাকায় সফর করছেন ৯২ জন কর্মকর্তা।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এই ধরনের ট্যুর মূলত এক প্রকার আনন্দভ্রমণ। একটি নতুন দেশে গিয়ে আট-দশ দিনে তেমন কিছুই জানা সম্ভব নয়। তা ছাড়া ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো থেকে কিছু দেখে এলে তা আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করাও সম্ভব নয়। তাই সফরগুলো আমাদের দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দেশেই হওয়া উচিত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হেকেপ প্রকল্প শেষ হবে ২০১৮ সালে। এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় দুই হাজার ৫৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২৬২ কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। বাকি সবই বিশ্বব্যাংকের ঋণ। আর সেকায়েপ প্রকল্পের ব্যয় প্রায় তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা শেষ হবে ২০১৭ সালে। এর মধ্যে মাত্র ৩০৬ কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার, বাকি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। দুটি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই শিক্ষার মানের উন্নয়ন।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিক্ষার যেকোনো ট্যুরের ক্ষেত্রে যে দেশগুলো দ্রুত উন্নতির দিকে যাচ্ছে এবং শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেখানেই যাওয়া উচিত। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কার শিক্ষাব্যবস্থা দেখাটাই যুক্তিযুক্ত।

কারণ আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেও তারা শিক্ষায় আমাদের নিচে ছিল, কিন্তু এখন ৫০ গুণ এগিয়ে গেছে। তাই কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা দেখলে আমাদের খুব একটা লাভ নেই। আর যদি হয়, দেখলাম আর ঘুরে এলাম তাহলে তো কোনো ফলই হবে না। এসব ট্যুরে যাঁরা কারিকুলাম ও এডুকেশনের সঙ্গে জড়িত, তাঁদেরই রাখা উচিত।'

ইউজিসি সূত্র জানায়, হেকেপের একচেঞ্জ ও স্টাডি প্রোগ্রামের আওতায় মোট ছয়টি ট্যুর আছে। এর মধ্যে দুটি ট্যুর হয়েছিল ২০১২ সালে। বাকি চারটি ট্যুর হচ্ছে চলতি বছর। প্রতি দলে থাকছেন ১২ জন সদস্য। এর মধ্যে প্রথম গ্রুপ ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্র ট্যুর করে ২৩ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত। দ্বিতীয় গ্রুপ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ট্যুর করে ১৫ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। তৃতীয় গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ট্যুর করে ২০ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে এই প্রোগ্রামের শেষ ট্যুরটি হবে, যার আওতায় যাওয়া হবে সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।

জানা যায়, প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুযায়ী, পলিসি মেকাররাই এই সফরে যাবেন, যাতে কোনো কিছু পরিদর্শন করে তাঁরা তা বাস্তবায়ন করতে পারেন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় প্রতি সফরে একজন করে কর্মকর্তা মনোনয়ন দিতে পারে। কিন্তু প্রতিটি ট্যুরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ছিলেন। প্রথম ট্যুরে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ। আর দ্বিতীয় ট্যুরে ছিলেন ইউজিসি চেয়ারম্যানের পিএস মো. শাহীন সিরাজ। কিন্তু তাঁদের দ্বারা এই প্রকল্প কিভাবে উপকৃত হবে, এর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কেউ। এ ছাড়া শর্তানুযায়ী, উপসচিব পদমর্যাদার নিচে কেউ এই ট্যুর করতে পারবেন না। অথচ কয়েকজন সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ট্যুর করে এসেছেন। এ ছাড়া সফরগুলোতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন। অথচ শিক্ষকদের জন্যই মূলত এই প্রোগ্রাম। এ ছাড়া এই তিনটি ট্যুরে এমন দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁরা সফর শেষের কয়েক দিন পরই অবসরে চলে যাবেন। আর গত তিনটি ট্যুরে ইউজিসির ১২ জন কর্মকর্তা ছিলেন, যাঁদের অনেকেই দাপ্তরিক কাজ করেন; কখনোই এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। আবার একটি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সফর শেষেই অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করে ট্যুর থেকে ফিরে আসা ইউজিসির একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অনেকেরই চাকরিজীবনে আকাঙ্ক্ষা থাকে ইউরোপ-আমেরিকা যাবেন। এই প্রোগ্রামের আওতায় সেই সুযোগ মিলছে। বিদেশে অনেকেই যে কাজে গেছেন তার চেয়ে অন্য কাজেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। সফরের আগে অনেক ধরাধরি লাগলেও সফর শেষে একটি রিপোর্ট দিলেই দায়িত্ব শেষ। তারপর আর এ বিষয়ে কেউ কোনো খোঁজখবর নেয় না।'

এসব বিষয়ে হেকেপ প্রকল্প পরিচালক ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মহান্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যারা নির্বাচিত হয় তারা সবাই এই প্রকল্পের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। আর আরডিপিপি অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও সফরে নেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ই ঠিক করে কে যাবে না যাবে।'

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরে তিনটি ট্যুর আছে। এর মধ্যে ব্রাজিল ট্যুরের জন্য ১৫ জনের সরকারি আদেশও হয়ে গেছে। তাঁদের গত ৩ আগস্ট যাওয়ার কথা থাকলেও ভিসা জটিলতার কারণে এখনো যেতে পারেননি। এরপর বাকি দুটি ট্যুরে জার্মানি, ফিলিপাইন, মেক্সিকো ও বেলজিয়াম যাওয়ার কথা রয়েছে। উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়েই এসব ট্যুর।

জানা যায়, ব্রাজিল ট্যুরে পরিকল্পনা, জনপ্রশাসন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এলজিইডি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন; মাউশির দুজন, সেকায়েপ প্রকল্পের চারজন কর্মকর্তা রয়েছেন; আর দুটি কলেজের দুজন শিক্ষক রয়েছেন। মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক রোকসানা আক্তার ও যশোর সরকারি সিটি কলেজের প্রভাষক সাহেদ শাহান কিভাবে ভূমিকা রাখবেন তা বুঝতে পারছেন না প্রকল্পেরও একাধিক কর্মকর্তা। তবে যাঁরা এই প্রোগ্রাম মাঠপর্যায়ে পরিচালনা করেন তাঁদের কেউ নেই। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মকর্তাকে এই সফরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

মাউশি সূত্র জানায়, বাকি দুটি ট্যুরেও প্রায় একইভাবে কর্মকর্তাদের নির্বাচন করা হচ্ছে। তবে মাউশির উপপরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা তিনটি ট্যুরেই নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে পেরেছেন। তিনি আগেও সেকায়েপের অধিকাংশ সফরে গেছেন। আর আগে যাঁরা একাধিকবার সেকায়েপের ট্যুরে গেছেন, তাঁদের এবারও নির্বাচিত করা হয়েছে।

সেকায়েপের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশ্বব্যাংক এত কিছু দেখে না, ভাবেও না। তারা দেখে ঋণের টাকা খরচ করা হয়েছে কি না। এতেই তারা খুশি। আর শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের বাইরের লোক নিলেই তারা বেশি খুশি হয়। সেভাবেই আরডিপিপি করা হয়েছে। কিন্তু বাইরের লোক গিয়ে কিভাবে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন ঘটাবে, তা আমরা নিজেরাই বুঝছি না। নেওয়ার দরকার ছিল মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের। অথচ তাঁরা একবারও সুযোগ পান না।'

গত বছর স্পেন, ইতালি ও যুক্তরাজ্যেও সেকায়েপ প্রকল্পের ট্যুর ছিল। ১২ জনের টিমে বেশির ভাগই ছিল প্রকল্পের বাইরের লোক। এর আগে কানাডায় ১৫ জনের একটি টিম যায়। সেখানেও ছিল একই অবস্থা।

এসব বিষয়ে সেকায়েপ প্রকল্প পরিচালক ড. মাহমুদ-উল-হকের কাছে জানতে চাইলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'যারা ট্যুরে যায় তাদের সবারই এই প্রকল্পে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। কেউ যদি ট্যুর থেকে এসে বদলিও হয়ে যায়, তারা সেখান থেকেই ভূমিকা রাখবে। আর ট্যুরগুলো কোন দেশে হবে তা বিশ্বব্যাংক ঠিক করে দেয়। ওই সব দেশের মডেল দেখে এসে আমরা তা আমাদের দেশে কাজে লাগাই।'

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঋণের শর্তের মধ্যেই ট্যুর আছে। তাই যাওয়াটা বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন দেশ দেখার পাশাপাশি উন্নত দেশও দেখা উচিত। দুটোর সমন্বয় সাধন করেই যাওয়া উচিত। কারণ আমরা এখন আর গরিব দেশ নই। তবে সুযোগ বুঝে বেরিয়ে এলে হবে না। নানা কারণে আমি নিজে এসব ট্যুরে যাই না। তবে অবশ্যই ব্যাপারটা আরো ভাবতে হবে। পরবর্তী সময় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেব।'

Published in:http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2015/08/26/261022


আরো পড়ুনঃ
               

আরো পড়ুন:

বিভিন্ন সরকারী ট্রেনিং এ কারা যায়? কি করে?
'শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা' নিতে আমলারাও যাচ্ছেন বিদেশে - শিক্ষক-শিক্ষাবিদরা সুযোগ পান না
সংস্কারের বিকল্প নেই
ঔপনিবেশিক জনপ্রশাসন এবং ক্যাডার সার্ভিস সংস্কার
ক্যাডারের রাজা "প্রশাসন ক্যাডার"
প্রশাসন ক্যাডার দুর্নীতির শীর্ষে!
আমলাতন্ত্রের আমলনামা ও শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষায় বিপ্লব ঘটাতে পারে


বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে উচ্চশিক্ষায় বিপ্লব সম্ভব। কৃষি, মাঝারিশিল্পের পর উদীয়মান এ সেক্টরে একদিন বিপ্লব ঘটবে। বিশ্বের প্রথিতযশা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। তবে সবকিছুর জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সঠিক তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। এটি করতে পারলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডসহ প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি। তারা জ্ঞান আহরণ, গবেষণা, শিক্ষা বিতরণ করে এ অবস্থানে এসেছে। তবে তাদের বয়স কারও ৪০০ বছর, কারও ২০০ বছর। সেই তুলনায় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও শিশু। আর শিশুদের সঠিক নার্সিং করলে তারা যেমন সুসন্তান হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিক নার্সিংয়ের মাধ্যমে এর সুফল পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডসহ বিশ্বের নামীদামি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি। এ ছাড়া উন্নত দেশগুলোতে গবেষণামুখী বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশির ভাগ গবেষণামুখী হয়। পাবলিকগুলো শিক্ষাদানমূলক। বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিকভাবে নার্সিং করতে পারলে সেটি সম্ভব হবে। বেসরকারি শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি শিক্ষা দিতে পারলে এরা দেশের সম্পদে পরিণত হবে, সঙ্গে সঙ্গে তারা বিদেশে কর্মসংস্থানের যোগ্য হয়ে বিশ্বের সম্পদেও পরিণত হবে। বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু ১৯৯২ সালে। মাত্র ২২ থেকে ২৩ বছরে তাদের দিয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৪০০ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করি, তবে তা সঠিক হবে না। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় তথা উচ্চশিক্ষার বয়স মাত্র ৯৪ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৯৪ বছর বয়সে অনেক বিশ্বমানের পণ্ডিত তৈরি করেছে। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন ৯৪ বছর বয়স হবে, তখন তাদের বলা যাবে আপনারা কী করছেন? এখন তাদের বলার সময় হয়নি। কারণ বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় তারা এখনও শিশু। শিশুদের নার্সারি করতে হয়। এখন তাদের নার্সিং করতে হবে। এই নার্সিং করার দায়িত্ব শুধু আমাদের ওপর বর্তায় না, যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে তাদেরও রয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এই উপমহাদেশে যে কয়টি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তার বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই ছিলেন সমাজে বিত্তবান বা ব্যবসায়ী। আগের জমিদাররা জনকল্যাণ হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। এখনও বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা জনকল্যাণ কাজ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন এ রকম একাধিক উদাহরণ আছে। তবে কিছু লোক মনে করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কারণ অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা জড়িত। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে উল্লেখ করে আবদুল মান্নান বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই এই সার্টিফিকেট বাণিজ্য হয়। বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও অহরহ শিক্ষা বাণিজ্য, সার্টিফিকেট বাণিজ্য হচ্ছে। সেসব দেশ থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট এনে আমাদের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষকতা করছেন। আমরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা খুবই সীমিত। আমরা কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শ, নজরদারি সর্বোপরি সরকারকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিতে পারি। 

উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করলেই আমরা কিছু করতে পারবো। উচ্চশিক্ষা কমিশনের নামে আমরা পদপদবি চাই না। ইউজিসি যুগোপযোগী ও শক্তিশালী হোক সেটি চাই। তিনি বলেন, ইউজিসিকে শক্তিশালী করা মানে হচ্ছে শিক্ষা খাতে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করা। সরকারকে আমরা কার্যকর সহায়তা করতে পারি। ফিজির মতো ছোট দেশ সেখানে উচ্চশিক্ষা কমিশন থাকলে আমাদের কেন থাকবে না। ইউজিসি একটি নখদন্তহীন বাঘ বলতে চাই না। তবে ইউজিসির ক্ষমতা সীমিত সেটি সত্য। আমরা নখ চাই না, বাঘ চাই না, আমরা চাই ইউজিসি একটি কার্যকর কমিশন হোক। ক্রমবিকাশমান একটি সেক্টরকে আরও অগ্রসর করতে এর কোন বিকল্প নেই। কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে, মাঝারিশিল্পে বিপ্লব ঘটেছে। আমরা চাই বাংলাদেশে উদীয়মান শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটুক। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে কয়টি কমিশন আছে তার মধ্যে ইউজিসির সম্ভবত সবচেয়ে দুর্বল কমিশন। ১৯৭৩ সালে মাত্র ৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য যে আইন ছিল ২০১৫ সালে ১২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য এখন একই আইন বহাল রয়েছে। এটি কোনভাবেই হতে পারে না। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে মঞ্জুরি কমিশনের অনুদান বণ্টন ছাড়াও এখন অনেক কাজ করতে হয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা সরকারি ও বেসরকারি বলতে চাই না। বিশ্বের কোথাও এ ধরনের শব্দ ব্যবহৃত হয় না। আমরা সবাইকে এক চোখে দেখি। কাস্টমার কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি খোঁজেন না। যেখানে ভাল সেবা পাবেন তিনি সেখানেই যাবেন। বিশ্বের সব জায়গায় একটি প্রচলিত ধারণা, সরকারি মানেই খারাপ সেবা। আর ভাল সেবা মানেই বেসরকারি। কিন্তু বাংলাদেশের বিচিত্র ঘটনা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। এখানে উল্টো। সরকারি খাত ভাল আর বেসরকারি খাত খারাপ। আমাদের চোখে সবাই সমান। পাবলিক হোক আর প্রাইভেট হোক তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কি না- সেটি আসল বিষয়। 

তিনি বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হতে হলে ৩টি শর্ত পূরণ করতে হয়। জ্ঞান সৃষ্টি, গবেষণা ও জ্ঞান বিতরণ করা। এ কাজগুলো যারা পূর্ণাঙ্গভাবে করতে পারে তারাই বলতে পারে আমরা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

Published in: http://www.mzamin.com/details.php?mzamin=ODkzMjQ=&s=MTM=

বাঁশের চেয়ে যখন কঞ্চি বড় হয়

Kamrul Hassan

শিক্ষক বনাম সরকারের সচিব বা মহা-করনিক বিতর্ক চলছে। এই বিতর্কটা কোন অবস্থাতেই কাঙ্খিত তো নয়ই বস্তুত এইটা অসুস্থ সমাজের একটা বহির্প্রকাশ। প্রশ্ন হলো এই বিতর্কের উদ্ভব হলো কিভাবে? আর উদ্ভব হলো তো এটাকে জিইয়ে রাখল কারা? এই অসুস্থ বিতর্কের জন্ম এবং তাকে লালন করছে ওই মহা-কারনিকরা। আর আমাদের সরকার এই কুবিতর্ক থেকে মজা লুটছে। তারা পারে এক তুড়িতে এই বিতর্ককে থামিয়ে দিতে কিন্তু ঐযে মজা লওয়ার বাসনা নিবৃত্ত করতে পারে না। প্রশ্ন হলো শিক্ষক বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে শিক্ষক কারা হন। নির্ধিধায় সকলে এক বাক্যে স্বিকার করবে যে সাধারণত ক্লাসের সেরা ছাত্রের স্বপ্ন থাকে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে, জ্ঞানন্নেষণে বিদেশ যাবে পিএইচডি, পোস্ট-ডক্টরাল করবে, গবেষণা করে জ্ঞান তৈরী এবং বিতরণ করবে। শিক্ষকতাই একমাত্র পেশা যার মাধ্যমে একজন শিক্ষক প্রতিদিন প্রতিনিয়ত জ্ঞানন্নেষণে ব্রত থাকবেন। অর্থাৎ শিক্ষক মানেই হলো তার জ্ঞান স্ট্যাটিক না। মনে রাখতে হবে বদ্ধ জলাশয়ের পানি দুর্গন্ধ ছড়ায় তেমনি যে মানুষের জ্ঞান স্ট্যাটিক সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় না তারা পঙ্কিলতা ছড়াবে, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আমাদের সমাজের আমলারা ঠিক সেই কাজটিই করছে। কি প্রয়োজন ছিল ছল চাতুরী করে নিজেকে উপরে উঠিয়ে অন্যকে নিচে নামানোর চেষ্টা করার? ব্রিটিশ কলোনিয়াল সময়ে এবং স্বাধীনতার পূর্বেও কিছু ভালো ছাত্র শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে প্রশাসন বা মহা-করনিক হতে চেয়েছেন। সেটা চেয়েছিলেন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। তখন আমরা নির্যাতিত এবং বঞ্চিত ছিলাম। আমরা ক্রমাগত দেখতাম মহা-কারনিকদের দাপট। এই প্রেক্ষাপটে কিছু ছাত্র শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্যেও মহা-করনিক হতে চেয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞান ফেকাল্টির সেরা ছাত্র যার শিক্ষক হার যোগ্যতা ছিল সেটা ছেড়ে মহা-করনিক হয়েছেন এরকম আমার জানা নেই। কয়েকজনকে জানি যারা ভালো ছাত্র ছিলেন বটে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারতেন না।

আমরা জানি একজন ভালো ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পিএইচডি বা উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্কলারশিপ নিয়ে উন্নত দেশে যান। বিদেশে চার-ছয় বছর সে শুধু যে বিষয়ে গবেষণা করে তাই শিখে না। সে সুযোগ পায় বিশ্বের নানা দেশের স্কলার থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তের নানান ধর্মের মানুষদের সাথে মেশার সুযোগ। এই ৪-৬ বছরের মধ্যে জ্ঞানের পরিবর্তনের হার সাংঘাতিক high হয় ফলে সে যখন দেশে ফিরে আসে তার বাবা-মাই চিনতে পারে না তাদের ছেলে বা মেয়েকে। আর ওই সময়ে আমাদের মহা-করনিকরা সাভারের PADC-তে মহা-করনিক হওয়ার ট্রেনিং নেন আর সেটাও দেন কোন না কোন শিক্ষক। এই ট্রেনিং-এর পর তাদের জ্ঞানের পরিধি খুব সামান্যই বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ট্রেনিং-এর মাধ্যমে একটা কাজই তারা ভালোভাবে লব্ধ করে সেটা হলো কিভাবে এবং কতরকম ভাবে মানুষকে হয়রানি করা যায়। অর্থাত হয়রানিকে তারা তাদের ক্ষমতা মাপার হাতিয়ার হিসাবে মনে করে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখি যতগুলি প্রতিষ্ঠান তাদেরকে দেওয়া হয়েছে প্রচালনার জন্য তার প্রত্যেকটি ব্যর্থ যেমন বিমান, যেমন পাটকল, চিনিকল ইত্যাদি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের নাম নেওয়া যাবে। এমন কি আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার হলো আমাদের এটমিক এনার্জি কমিসনও মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে আর তাই এটার পারফরমেন্সও পৃথিবীর এমন যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে তাদের মধ্যে এর অবস্থান প্রায় শেষের দিকে। যা বলছিলাম একজন সরকারী আমলার চাকুরী পাওয়ার দশ বছর পরও যদি এই দশ বছরে তার জ্ঞান বৃদ্ধি কতটুকু বেড়েছে মাপা হয় আমার ধারণা এটা প্রায় শুন্যের কোঠায়। যতটুকু বেড়েছে ওটা বেড়েছে due to অভিজ্ঞতা।
একজন মানুষের সম্মান এবং সম্মানী নির্ধারণ করা উচিত তার কাজ এবং সময়ের সাথে তার জ্ঞানের পরিবর্তনের হার দেখে। যে আমলা চাকুরীর ন্যুনতম যোগ্যতা অর্জন করেন কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অর্থাত তার অর্জিত জ্ঞান আসে একঝাক শিক্ষকের কাছ থেকে আর আজ সেই শিক্ষককেই বলছে তুমিতো আমার নিচে। ওই যে বললাম এধরনের উদ্ভট চিন্তা আসে ইনফেরিয়রিটি কমপ্লেক্সিটি থেকে। No wonder that they suffer from inferiority complex. মানুষের প্রাপ্ত ক্ষমতা এবং লব্ধ জ্ঞান যখন commensurable না হয় তখনি এরকম inferiority complex আসতে বাধ্য। আমাদের দেশে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের ইউনিয়ন আছে। এসব ইউনিয়নের যারা নেতৃত্ব দেন তারা এক বিশাল কর্মচারীর সমিতিকে রেপ্রেসেন্ট করেন। ফলে তারা ধরে নেন তাদের বিশাল ক্ষমতা। তারা ক্ষমতাটা বুঝতে পারেন কিন্তু এত বড় ক্ষমতা ডিসচার্জ করার মত ক্ষমতা তাদের আছে কিনা এটা মেজার করার মত ক্ষমতা তাদের নেই। আর তাই অনেক সময় তাদের উপরের কর্মকর্তাদের আদেশ নিষেধ সহ অফিসের দেকরাম মানতে চান না ফলে বিশৃঙ্খলা নিশ্চিত আর হচ্ছেও তাই।

গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে এবিষয়ে এক সরকারী কর্মকর্তার লেখা পড়লাম। পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম: এত সীমাবদ্ধ তোমাদের জ্ঞান!!! উনি লিখেছেন,
"বাংলাদেশ সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কোনো পরিকল্পনা ছাড়া হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট ও মাস্টার্স তৈরি করা হয়। এই বিপুল উচ্চশিক্ষিত নাগরিকদের কী কাজে লাগানো হবে? কী হবে তাদের কর্মক্ষেত্র? তাদের অর্জিত ডিগ্রি অনুযায়ী কাজ তারা পাবে কিনা? এসব বিষয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়া উচ্চশিক্ষিত বেকার তৈরির এই আত্মঘাতি প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা কখনই নেয়া হয়নি! কী হাস্যকর! সারা পৃথিবীর টপ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নাই, গবেষণা নাই, সৃজনশীল উদ্যম নাই, ছোট্ট একটা দেশ হুট করে মানবিক ও কলা বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে ৪ নম্বর পজিশন পাওয়াটা আমার কাছে অস্বস্তিকর!"

ওই কর্মকর্তা যা লিখেছেন তাতে উনার জ্ঞানের দৈন্যতারই বহির্প্রকাশ ঘটেছে। প্রথমত উনি উচ্চশিক্ষিত বেকার তৈরিকে আত্মঘাতি প্রক্রিয়া মনে করেন। সত্যিকারের উচ্চ শিক্ষিত একজন মানুষ বেকার থাকতে পারে না। কারণ সে তার লব্ধ জ্ঞান দিয়ে কোন না কোনভাবে self-employed হওয়ার ব্যবস্থা করবেই। সে শুধু নিজে কিছু করবে না বরং অন্য অনেকের কর্মসংস্থানও করবে। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের যতটুকু উন্নতি হয়েছে তার কৃতিত্ব কিন্তু অনেকাংশে উচ্চশিক্ষিত বেকারদেরই দিতে হবে। তারা যদি সবাই আমলার চাকুরী পেয়ে যেতেন তাহলে আমাদের এত vibrant NGO নেটওয়ার্ক হতো না, ব্যক্তিখাত এত উন্নতি লাভ করত না। বেকার থাকবে এই অজুহাত দিয়ে শিক্ষাকে সংকুচিত করার মানসিকতা কুপমুন্ডুকতা। কর্ম সংস্থান নেই এই অজুহাতে আপনি তাহলে চাচ্ছেন উচ্চ শিক্ষিতের সংখ্যা কমাতে। আমরা যদি আপনার এই উপদেশ মানি সেটাই হবে আত্মঘাতি। আর পৃথিবীর টপ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নাই, গবেষণা নাই, সৃজনশীল উদ্যম নাই এগুলোর কারণও কিন্তু আপনারা অর্থাত আপনার মত আমলারা। আপনার কি জানা আছে টপ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট কত? আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট কত? আপনার কি জানা আছে টপ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কেমন, তাদের সুযোগ সুবিধা কেমন। আপনার বুঝতে হবে ইনপুট যেমন হবে আউটপুট তেমনি হবে। তারপরও বলব ওই টপ ৫০০
বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন একটিকে বেছে নিয়ে আমাদের যত টাকা বাজেট দেওয়া হয় সেই পরিমান দিয়ে দেখুন তারা আমাদের সমান বা তার কাছাকাছি আউটপুট দিতে পারে কিনা। এত স্বল্প ইনভেস্টমেন্ট-এও আমাদের বাংলাদেশের বিস্ববিদ্যালয়গুলো যতটুকু করছে সেটা সত্যিই মিরাকেল। সমালোচনা করার পূর্বে একটু ভাবুন। তুলনা করবার আগে চিন্তা করুন। আমাদের কাছেই কিন্তু আপনার সন্তানকে পাঠাতে হবে শিক্ষার জন্য। আমাদের ছোট করে আপনার সন্তান ভালো শিক্ষক পাবে না আর ভালো শিক্ষক না পেলে তারা সুসন্তান হবে আর না হলে আপনার জীবনটা যে ষোল আনাই মিছে হবে।

Thanks God ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে না। যদি হতো উফফফ আমি আর ভাবতে পারছি না।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Monday, August 24, 2015

বিভিন্ন সরকারী ট্রেনিং এ কারা যায়? কি করে?

 Rakib Ahmed

অফিসে ইন্দোনেশীয় পরিসংখ্যান দলের কিছু সদস্য এসেছে, প্রায়ই আসে। উদ্দেশ্য দেশে ফিরে গিয়ে অস্ট্রেলীয় অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো। অস্ট্রেলীয় সরকারের খরচে এমন সুযোগ কে না কাজে লাগাতে চাইবে। গত বছর বাংলাদেশী একটা দলও ঘুরে গেছে।
কথা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক দলগুলোর দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত আমাদের এক সহকর্মীর সাথে। কথাপ্রসঙ্গে জানতে পারলাম ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাপুয়ানিউগিনি সহ অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলোকে অস্ট্রেলীয় এইডের অংশ হিসাবে এখানে ট্রেনিং এ আনতে তাদের আগ্রহের কথা। বাংলাদেশের নামটা উহ্য থাকায় তাকে মনে করিয়ে দিতে চাইলাম। উত্তর পেলাম একেবারে অপ্রত্যাশিত - "Not any more." অপ্রস্তুত ভাবটা যতটা সম্ভব চাপা দিয়ে কারন জানতে চাইলাম। বল্লো,
- They've cancelled their trips six times.
- হয়ত বাজেট পাশ হয়নি?
- No, it's funded by the Australian Govt. 
- তাহলে?
- They couldn't simply decide who to send. Dealing with them is very time consuming. 
বুঝলাম, তাই আর কথা বাড়াতে চাইলাম না। কিন্তু ও বলেই চল্লো,
- Moreover, last time they sent mostly high level management people who had no technical interest or background. Since the first day of their week-long training they went out early for lunch break and only a few returned. The schedule wasn't followed and their interest was mainly in shopping.
- দুর্ভাগ্যজনক!
- It is unfortunate.
প্রস্থান করলাম।

রাকিব আহমেদ
পরিসংখ্যান ব্যুরো, অস্ট্রেলিয়া

অষ্টম বেতন-কাঠামো, বেতন-বৈষম্য ও শিক্ষকদের মর্যাদা

রাহমান নাসির উদ্দিন
Rahman Nasiruddin



আমি নিজে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাই, অষ্টম বেতন কাঠামো, এর কথিত বেতন-বৈষম্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ দাঁড় করাতে গেলে আমার পক্ষে মূল্যবোধ-নিরপেক্ষ হওয়া কঠিন। তাছাড়া, যে বিষয়ের আমি নিজেও একজন অংশীজন (স্টেকহুল্ডার) বলেই, এ-নিয়ে এর আগে কোথাও লিখিনি।



এ কথাও অনস্বীকার্য যে, যেহেতু আমিও এ ‘বিষয় ও বিতর্কে’র অংশ, সেহেতু এ-বিষয়ে লিখতে গেলে সাবজেকটিভ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া, ‘সাবজেকটিভ’ হয়েও ‘অবজেকটিভ’ হওয়ার সাফাই গাওয়া এবং বস্তুনিষ্ঠতার দাবি করা বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা বলে মনে করি। তাই, পাঠকের কাছে আমার এ প্রারম্ভিক-কৈফিয়ত।

ফলে, এ নিবন্ধে আমি যে পুরোপুরি অবজেকটিভ এটা দাবি করছি না; কেননা প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামোর ভেতর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের প্রতি যে অন্যয় করা হয়েছে, এ-পরিবারের সদস্য এবং মুরুব্বিদেরকে (সিলেকশান গ্রেড প্রফেসর) যে অসম্মান করা হয়েছে, এ পরিবারের সদস্য হিসেবে তার প্রতিবাদ করাও আমার তরফে নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্বের অংশ বলে মনে করি। তাই, এ নিবন্ধটি আমার ‘পেশাসত্তা’ এবং ‘লেখকসত্তা’র যৌথ ভাবনা-চিন্তা ও দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে রচিত।

ফরাস উদ্দিন বেতন কমিশনের রিপোর্ট এবং সচিব কমিটির সুপারিশ নিয়ে প্রস্তাবিত ‘অষ্টম বেতন কাঠামো’ সম্পর্কে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এটি যেন সরকারের নজরে আসে সে জন্য দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ‘শিক্ষক সমিতি’গুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন’এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে কয়েক মাস ধরে বেশ কিছু প্রতীকী প্রতিবাদমূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না-করে; প্রশাসনিক, একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্থ করে এমন কোনো কর্মসূচি না-দিয়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।

এর বাইরেও বিভিন্ন সংবাদপত্রের নিবন্ধ লিখে, সংবাদমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, মানববন্ধন করে, কালো ব্যাজ ধারণ করে, প্রতিবাদ সমাবেশ করে, বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোতে অংশ নিয়ে শিক্ষকরা তাঁদের দাবি, অসন্তোষ, অপমান ও আত্মমর্যাদার কথা নানানভাবে প্রকাশ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শিক্ষকদের আত্মমর্যাদায় আঘাত পাওয়ার বিষয়টি অবহিত করে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া মৌখিক ও লিখিতভাবে পেশ করেছেন।

এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার স্বপক্ষে সরকারকে অনুরোধ করে অফিসিয়ালি একটি সরকারি পত্র বা ‘ডিও লেটার’ও প্রদান করেছেন। পার্লামেন্টেও এ-নিয়ে সামান্য আলোচনা হয়েছে। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সরকারের দৃষ্টি কোনোভাবেই আকর্ষিত হচ্ছে না। অথবা সরকার দেখেও ঠিক দেখছে না কিংবা কোনো এক অদৃশ্য কারণে সরকারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ-বিষয়ে কোনো ধরনেরই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন না। যার ভেতর দিয়ে প্রতিভাত হয় যে, সরকার বিষয়টিতে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না কিংবা সরকারকে এ-বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া থেকে বিরত রাখা হচ্ছে।

যার অর্থ দাঁড়ায় ফরাসউদ্দিন বেতন কমিশন যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন এবং সচিব কমিটি সে প্রস্তাবনার উপর ‘সুপারগ্রেড’ তৈরি করে যে মতামত দিয়েছেন, সরকার তার খুব একটা পরিবর্তন না-করেই প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

একদিকে ফেডারেশন প্রস্তাবিত বেতন-কাঠামো সংশোধন ও পরিবর্তন না-হলে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি অশান্ত হয়ে যায়, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দায়ী থাকবে না বলে এক ধরনের সংকেত দিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রী শুরু থেকেই শক্তভাবে বলছেন, ‘টাইম স্কেল এবং সিলেকশান গ্রেড থাকছে না’, যদিও তিনি অতিসম্প্রতি বলেছেন, ‘টাইম স্কেল ও সিলেকশান গ্রেড আমি ভালো বুঝি না, তবে এটা নিয়ে ভেবে দেখতে হবে।’ সব মিলিয়ে একটা অস্বস্তিকর পরস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এ রকম একটি পরিস্থিতিতে, অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ-বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে।

প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, শিক্ষকদের অবস্থানের কীভাবে অবনমন হচ্ছে এবং কীভাবে অবনমন করে তাদের পদায়ন করে নিচে নামানো হচ্ছে তা নিয়ে কিছু ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারের দুয়েকজন দায়িত্বশীল সচিব বেশ কয়েকবার সংবাদপত্রে মন্তব্য করেছেন, ‘শিক্ষকরা বিষয়টি বুঝতে পারছেন না। না-বুঝে আন্দোলন করছেন।’ এ-ধরনের বক্তব্য বেশ আপত্তিজনক; কেননা উচ্চশিক্ষিত এবং বাইরে প্রশক্ষিত জনসম্পদের একটা বিরাট অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। অথচ উনারা ‘প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো’ বুঝেন না, আর কয়েকজন সচিবই সবজান্তা শমসের!

এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ক্ষমতার দাম্ভিকতাই প্রতিভাত করে। তাছাড়া, মিডিয়াতে নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখালেখির ফলে পুরো বিষয় নিয়েই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আমি অত্যন্ত সহজ করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।

প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন-কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান সপ্তম বেতন কাঠামোর বিবেচনায় দুধাপ (সিলেকশান গ্রেড বাদ দিলে তিন ধাপ) নিচে পদায়ন করা হয়েছে। এ-নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সংবাদপত্রে প্রবন্ধ লিখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর মইনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর মো: জাকির হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব প্রফেসর এ এস এম মাকসুদ কামাল নিবন্ধ লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কীভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে তার সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

এসব নিবন্ধে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের করুণ ও লজ্জাকর বেতন-কাঠামোর তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করে শিক্ষকদেরকে এদেশে কীভাবে অবমূল্যায়ন ও অমর্যাদা করা হয়, সে বিষয়াদির বিষদ ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে তাদের দাবি-দাওয়ার ন্যায্যতা প্রমাণ করা হয়েছে। তাছাড়া, একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে সুন্দর, সমৃদ্ধশালী ও উন্নত দেশ গঠনের জন্য শিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষকের গুরুত্ব নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

তথাপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি ও আন্দোলন নিয়ে বাজারে একটি অত্যন্ত ভুল ধারণা জারি আছে। এখানে মূল আর্গুমেন্ট ‘বেতন কম, তাই সম্মান কম’ নয়; বরঞ্চ শিক্ষকদের পদ ও মর্যাদার প্রশ্নটিই এখানে অধিক গুরুত্ব¡পূর্ণ। কেননা, সপ্তম বেতন কাঠামোর মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থানক্রম একই জায়গায় রেখে, সিলেকশান গ্রেড বাদ না-দিয়ে এবং অন্যান্য গ্রেডের সঙ্গে সমন্বয় করে একই আনুপাতিক হারে বেতন বৃদ্ধি করলে আমার মনে হয় না যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন হত। যেমনটা আগেও কখনও হয়নি।

সরকার প্রতি পাঁচ বছর পর পর যেভাবে ‘পে-স্কেল’ প্রদানের মাধ্যমে বেতন বাড়িয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সে বেতনই বিনাবাক্যে মেনে নিয়েছে। আমি নিজে তিন/চারটি ‘পে-স্কেলে’ বেতন পেয়েছি। অনেকের মধ্যে কিছু ‘ব্যর্থ হা-হুতাশ’ ছাড়া কোনোদিন কাউকে উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি। মাঝে মাঝেই শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেলের দাবি উঠেছে, কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত শক্ত কোনো ‘সুর’ হয়ে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত আন্দোলন হয়ে বেজে ওঠেনি।

বাজারমূল্য ও নিজেদের যোগ্যতার বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা তুলনামূলক অনেক কম হলেও তারা ‘অব্যক্ত বেদনা’ ও ‘অনুত্তেজিত ক্ষোভ’ নিয়ে সব মেনে নিয়েছেন। সুতরাং ‘বেতন কম’ বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মান এতটুকুও কমেনি। অন্তত আমি সেটা মনে করি না। কিন্তু প্রস্তাবিত ‘অষ্টম বেতন কাঠামো’য় যেটা করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে ‘গ্রেড-১’ এর আগে আরও দুটি গ্রেডহীন গ্রেড বসানো হয়েছে: মুখ্য সচিব/মন্ত্রিপরিষদ সচিব (যাদের বেতন সুপারিশ করা হয়েছে ৯০,০০০ টাকা), আর সিনিয়র সচিব (যাদের বেতন ৮৪,০০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে)। তারপর ‘গ্রেড-১’ এ আবার দুটি ক্যাটেগরি: পদায়িত সচিব (যাদের বেতন ৭৮,০০০ টাকা) এবং অপদায়িত বা ওএসডি সচিব (যাদের বেতন ৭৫,০০০ টাকা)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদেরকে সিলেকশান-গ্রেড তুলে দিয়ে ওএসডি সচিবের কাতারে (গ্রেড-১ এর ৭৫,০০০ টাকা হিসেবে) ফেলে বেতন-ধাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ-প্রক্রিয়ায় পদায়ন করে অন্যান্য অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষকদের বেতনধাপ নির্ধারণ করা হয়েছে, যেটা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কারও পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

সপ্তম বেতন-কাঠামোয় সিনিয়র সচিব (যদিও তখন ‘সিনিয়র সচিব’ বলে কিছু ছিল না যা সচিবরা নিজেরাই পরে তৈরি করে নিয়েছেন) আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশান-গ্রেড প্রফেসররা একই স্কেলে বেতন পেতেন। তাহলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসররা কী এমন পাপ করেছেন আর সচিবালয়ের সচিবরা কী এমন পূণ্য করেছেন যে, চরম বৈষম্য দিয়ে স্কেল নির্ধারণ করতে হবে?

তাই, এখানে অর্থের ব্যাপারটি একেবারেই মূখ্য নয়। মূখ্য হচ্ছে পদায়ন, অসম্মান, অমর্যাদা এবং আত্মমর্যাদায় আঘাত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আপনি আমাকে বেতন কম দেন, কিন্তু আমাকে অসম্মান করার অধিকার নেই। ঠিক আছে যদি যুক্তির খাতিরে ধরে নিই যে, সম্মান আর অসম্মান করার অধিকারও আপনার আছে, কিন্তু অপমান করার অধিকার আপনার নিশ্চয়ই নেই। এটাই শিক্ষকদের আন্দোলনের মূল দাবি। স্কেলের যেহেতু একটা প্রতীকী এবং কাঠামোগত মূল্য আছে, তাই স্কেল পুননির্ধারণের দাবি এর সঙ্গে অটোমেটিক্যালি সংযুক্ত হয়ে যায়।

সে কারণেই সিনিয়র অধ্যাপকদের সিলেকশান গ্রেড ফিরিয়ে দিয়ে সিনিয়র সচিবের সমান করে অন্যান্য ধাপে (অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষকদেরকে) একইভাবে সমন্বয় করে প্রস্তাবিত বেতন-কাঠামো সংশোধন ও পুননির্ধারণেনের যে দাবি– শিক্ষক পরিচয়ের বাইরেও দেশের একজন নাগরিক হিসেবে শিক্ষকদের সে দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক ও ন্যায্য বলে মনে করি।

আরও বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি। একটা টকশোতে দেখলাম সরকারের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন না-করে নিজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে বেতনবৃদ্ধির পরামর্শ দিচ্ছেন। ফরাস উদ্দিন বেতন কমিশনের প্রতিবেদনেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সচিব কমিটি নিজেদের সুপার গ্রেডসহ অন্যান্য সুপারিশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বাবলম্বী’ হওয়াল সুপারিশ বহাল রেখেছেন।

আমি একে অশুভ সংকেত হিসেবে দেখতে চাই। কেননা, শিক্ষার্থীদের উপর বেতনের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ মূলত শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তরের কর্পোরেট এজেন্ডা ছাড়া কিছুই নয়। মাননীয় মন্ত্রীর কথা শুনে মনে হল, বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট করে ফেললেই বেতনের ঝামেলা চুকে যায়!

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান ধনী-দরিদ্র বৈষম্য ‘সুযোগ ও অধিকার’-এর জায়গায় আরও পাকাপোক্ত হয়ে যাক যাতে কৃষক, শ্রমিক, কুলি, মজুর, শ্রমজীবী মানুষ, আদিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিচতলার মানুষের ছেলেমেয়েরা আর পড়াশুনা করতে না-পারে। কেননা বিদ্যা অর্জনের যোগ্যতা থাকলেও বিদ্যা কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। তাই, উঁচুতলার মানুষরাই ‘বিদ্যা’ কিনবে। আর ‘ছোটলোক’ ‘ছোটলোক’ হয়ে থাকবে ‘বড়লোকের’ দুনিয়ায়! তখন, শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘পাবলিক’ বলে কিছুই আর থাকবে না, সবই ‘প্রাইভেট’ হয়ে যাবে!

এটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য কতটা ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসবে, সেটা উপলব্ধি করবার মতো বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ, দেশপ্রেমিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব বর্তমান সরকারের মধ্যে যথেষ্ট আছে বলেই মনে করি। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত সংকটের মুখে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা কারা করছে, সে বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

পরিশেষে বলতে চাই, এটা এখনও ‘প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো’; ফলে কিছুই চূড়ান্ত নয়। তাই, সংশোধনের সুযোগ রয়ে গেছে। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই যে, অন্যায়ভাবে সাজানো, চরমভাবে বৈষম্যপূর্ণ, অমর্যাদাকর বেতন-কাঠামোটি সরকার কোনোভাবেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে না। দেশের ৩৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক, লাথো শিক্ষার্থী, তাদের লাখ লাখ অভিভাবক এবং হাজারও কর্মচারীর এক বিরাট ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে’র সকলের পক্ষ থেকে এ ‘বিশ্বাসে বিশ্বাস’ রাখতে চাই যে, সরকার ‘অষ্টম বেতন-কাঠামো’ সংশোধন করে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল শিক্ষক সমাজকে যথাযর্থ মর্যাদা প্রদান করবেন।

লেখক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক

published on: http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/30546

সচিবের বেতন ও শিক্ষকের সম্মানী

ড. শরীফ মজুমদার 

বিতর্কটি অনেক দিনের; যদিও সম্মান ও যৌক্তিকতায় বারবারই সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। এবার বোধহয় কিছুটা ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে। বিতর্কটি চলুক, কারণ এতে করে অনেক গতানুগতিক মূল্যবোধ নতুন করে ব্যাখ্যা করার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রথমত লক্ষণীয়, সামষ্টিক আর্থিক সুযোগ-সুবিধা কার কেমন তা এবারের বিতর্কের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক নয়, নিয়ামক হচ্ছে পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের তুলনায় সচিবদের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া। এ উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে তাতে কিছু চিন্তার খোরাক যে নেই তা নয়, তবে অধিকাংশই বাস্তবতার আলোকে যুক্তিহীন। একটি ছোট যুক্তি দিয়ে শুরু করি। যে কোনো মধ্যম বা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা করা হলে আনুপাতিক দৃষ্টিতে যে পেশাটি সবচেয়ে বিসদৃশ মনে হবে তা হল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা। পত্রিকায় বহু লেখায় মধ্যম বা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো তুলে ধরা হয়েছে, আমি সেদিকে আর দৃষ্টিপাত করছি না। কিন্তু যে বিষয়টি মিডিয়ায় এখনও আসেনি তা হল বিভিন্ন দেশের আন্তঃপেশার তুলনামূলক সুযোগ-সুবিধার পর্যালোচনা। অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশে একজন সচিবের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা কেমন আর একই পদের একজন বাংলাদেশী সচিবের সুযোগ-সুবিধা কেমন। এই তুলনামূলক চিত্রটি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যাংকার, সেনাকর্মকর্তা, বীমা পেশাসহ অন্যান্য পেশায় তুলে ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ‘বেতনের’ পরিবর্তে ‘সম্মানীতে’ সন্তুষ্ট থাকতে গিয়ে আজ নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান কোথায় নামিয়ে এনেছেন। কিন্তু এখন বোধহয় তারা ‘বেতনের’ কথা ভাবছেন, যেমন করে সচিবরা ভাবছেন। এখন বোধহয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আর ‘সম্মানী’ দিয়ে নিজের পরিবার, সমাজ কোথাও ‘সম্মানিত’ থাকতে পারছেন না। তাছাড়া অন্য যে বিষয়টি আমরা বেমালুম ভুলে যাচ্ছি তা হল, ‘সম্মানী’ দিয়ে বিশ্বমানের গবেষণা হয় না। ‘সম্মানী’ অফিস কক্ষ, বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাস, চিন্তাশক্তি কোনোকিছুকেই বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে না। ‘সম্মানী’ দিয়ে অধিকাংশ শিক্ষকই তাদের একটি বা বড়জোর দুটি সন্তানের সম্মানজনক বা মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারছেন না, ন্যূনতম বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারছেন না; সামাজিক অবস্থানের প্রতিযোগিতায় হীনমন্যতায় ভুগছেন; পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘সম্মানী’ তাদের আর সম্মানিত করছে না; ‘সম্মানী’ দিয়ে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হওয়ার পরও ঢাকার মতো যান্ত্রিক নগরীতে একটি গাড়ি মেইন্টেইন করতে পারছেন না, যেখানে ‘সম্মানী’ না নিয়ে ‘বেতন’ নেন বলে একজন সচিব এই নিু-মধ্যবিত্ত দেশেও একাধিক গাড়ির বিলাসিতা উপভোগ করতে পারছেন। সচিবরা যদি সততার বলে বলীয়ান হয়ে যুক্তিতর্কে আসেন তাহলে তাদের মেনে নিতে হবে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে ধরনের ‘বেতন’ পেয়ে থাকেন, এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মোটামুটি সে ধরনের একটি বেতন অনেক আগেই সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছিল এবং তা সচিবরাই অনেক কৌশলে ‘সম্মানীর’ দোহাই দিয়ে অন্ধকারের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছেন।

এবার অন্যদিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। এ বিতর্ক ভেতরে ভেতরে কম গড়ায়নি। সচিবদের এমনও বলতে শোনা গেছে যে, বিশ্বমানের মানদণ্ডে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণার প্রভাব নেই বললেই চলে। এ মন্তব্যে পুরোটা না হলেও কিছুটা সত্যতা আছে। কিন্তু সে আংশিক সত্যের মূলে রয়েছে গতানুগতিক ‘সম্মানীর’ মনমানসিকতা ও ‘সম্মানীর’ সীমাবদ্ধতা, যা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ প্রায়শই অনুধাবন করতে পারছেন। আমারই এক পরিচিত সচিব আমায় বলেছিলেন, তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছেন, যেসব আউটলেটে বিশ্বমানের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়, সেখানে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তেমন কোনো গবেষণাকর্ম তার চোখে পড়েনি। হ্যাঁ, এর উত্তর, একদম নেই তা নয়, তবে খুবই কম। কিন্তু আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, Springer, Elsevier, World Scientific, Taylor & Francis, John WileyÑএই আউটলেটগুলোয় প্রকাশিত গবেষণাকর্মের ব্যয় সম্পর্কে তার কোনো ধারণা আছে কি-না? সরাসরি কোনো উত্তর মেলেনি; তবু আমি তাকে বলেছিলাম, এ ব্যর্থতার দায়ভারও ‘সম্মানীর’ ওপরই বর্তায়।

যা হোক, ওই যে বলেছিলাম, এ বিতর্ক থেকে শেখার আছে! একটি শিক্ষা হওয়া উচিত এমন- এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজকে সেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, পদোন্নতি সবকিছুতেই ওই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের স্বচ্ছ প্রতিফলন থাকতে হবে। অন্যান্য উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশে একাডেমিক সেক্টরে পদোন্নতি ও নেতৃত্বের জন্য এ আউটলেটগুলোয় নির্দিষ্টসংখ্যক প্রকাশনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল কয়েক দশক আগে। এ বাধ্যবাধকতা তারা এতটাই গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োগ করেছেন এবং করছেন যে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি কারোই কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকছে না। আমাদের ক্ষেত্রে সে ধরনের কিছু না করতে পারাটাই হয়তো শিক্ষাক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের পিছিয়ে পড়ার একটি বড় কারণ। সত্য বলতে গেলে বলতে হয়, আমাদের নীতিনির্ধারকরা যে ওই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড সম্পর্কে জানতেন না তা নয়, জেনেও উপেক্ষা করতে হয়েছে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কারণে।

তথাকথিত ‘সম্মানীর’ অসম্মান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজকে বেরিয়ে আসতে হবে। আজ সচিবরা বলছে, দু’দিন পর অন্য সেক্টরের লোকজন বলবে। ব্যংকাররা বলবে, আন্তর্জাতিক আউটলেটগুলোয় ব্যাংকিং সেক্টরের যে গবেষণা প্রকাশিত হয় তাতে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তেমন কোনো গবেষণাপত্র নেই। ইঞ্জিনিয়াররা বলবে; বীমা পেশার লোকজন বলবে; অর্থনীতি সেক্টরের পেশাজীবীরা বলবে; পুরো সমাজ বলবে। যে সময় আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে তা বড় নিষ্ঠুর। আজ শুধু ক্লিক করেই বিশ্বমানের পরিচিতি অর্জন প্রায় সবারই নাগালের মধ্যে। এ বিশ্বায়ন সমাজ সভ্যতাকে দুমড়ে মুচড়ে সময়ের দাবি অনুযায়ী খুব দ্রুত পুনর্গঠন করছে। এ পুনর্গঠনে শামিল হওয়া অনেক কষ্টসাধ্য, তবে শামিল না হওয়াটা পরবর্তী জেনারেশনের সঙ্গে নেহাতই প্রতারণা। সুতরাং সচিবদের মতো ‘বেতন’ চাওয়াটাও হয়তোবা সে পুনর্গঠনেরই অংশ। তবে সচিবদের সমালোচনায় কর্ণপাত করাটাও পুনর্গঠনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

‘সম্মানী’ বাদ দিয়ে ‘বেতন’ দাবির সঙ্গে যে চ্যালেঞ্জগুলো স্বাভাবিকভাবেই জড়িত তার কিছু আজ আলোচনার টেবিলে হাজির। সে চ্যালেঞ্জগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার না করে যদি ‘বেতন’ দাবি করা হয়, তবে তা ‘সম্মানীতে’ সন্তুষ্ট থেকে আজ যে অসম্মানের বেড়াজালে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ জড়িয়েছে তার চেয়েও বেশি অবমাননাকর হয়ে দাঁড়াবে। আরও বাস্তবভিত্তিক ভাবনার প্রয়োজন আছে। ‘সম্মানী’ যখন ‘বেতন’ হবে তখনও তা আন্তর্জাতিক আউটলেটগুলোয় প্রচুর কন্ট্রিবিউট করার মতো গবেষণায় ভাসিয়ে দেয়ার সুযোগ নিয়ে আসবে না; শুধু সিলেক্টিভ কিছু গবেষণা ওই আন্তর্জাতিক মানের আউটলেটগুলোয় প্রকাশনার ক্ষেত্রে ইনসেনটিভ হিসেবে কাজ করবে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য মধ্যম আয়ের দেশে একজন গবেষক ওই আন্তর্জাতিক আউটলেটগুলোয় একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করার বিনিময়ে যে পরিমাণ আর্থিক ইনসেনটিভ পান, ঠিক একই পরিমাণ আর্থিক ইনসেনটিভ প্রদানের প্রথা চালু করতে হবে। ভয়ের কিছু নেই, সেই আর্থিক ইনসেনটিভ দাবি করার মতো গবেষকের সংজ্ঞা এ দেশে প্রচুর নয়; কিন্তু ইনসেনটিভের প্রচলনটি না এলে ওই মানের গবেষক হয়তো একসময় একেবারেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। যা হোক, এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজকে ‘সম্মানীর’ অসম্মান থেকে বেরিয়ে এসে ‘বেতনের’ যৌক্তিকতায় নিঃসংকোচ হতে হবে।

অন্য যে বিষয়টি নিয়েও সচিবদের বেশ উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছিল তা হল, এত এত অধ্যাপকে ভরা এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অথচ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আউটলেটগুলোয় গবেষণা অতি নগণ্য এবং বিশ্ব-র‌্যাংকিংয়ে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান ক্রমপতনশীল। সত্যি বলতে কী, ক্রমপতনশীল র‌্যাংকিং এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আউটলেটগুলোয় অপর্যাপ্ত গবেষণাপত্রের প্রকাশনা একই সুতায় গাঁথা। বাস্তব সত্য হল, আমরা যে সাবজেক্ট এরিয়ায় গবেষণার কথাই বলি না কেন, সে সাবজেক্ট এরিয়ায় সম্মানজনক ও প্রতিনিধিত্বকারী জার্নালগুলো সেই Springer, Elsevier, World Scientific, Taylor & Francis, John Wiley-এর মতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আউটলেটগুলো থেকেই প্রকাশিত হয় এবং এই আউটলেটগুলোয় প্রকাশিত গবেষণার পরিমাণ বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সত্যিই তো সারাজীবনে এ ধরনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আউটলেটগুলোয় একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশ না করে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দেয়াটা কিছুটা অন্তঃসারশূন্যতাই বটে; কারণ অধ্যাপক একটি আন্তর্জাতিক পদবী। তবে হ্যাঁ, এ আউটলেটগুলোয় গবেষণাপত্র প্রকাশ করা যে কতটা চ্যালেঞ্জিং, তা শুধু যারা সেগুলোতে প্রকাশ করেছেন তারাই জানেন। সুতরাং এ পাঁচটি আউটলেটের যে কোনোটিতে সীমিতসংখ্যক গবেষণাপত্র থাকার বাধ্যবাধকতা দিয়েও যদি অধ্যাপক পদটির মান রক্ষা করা হয়, তাহলেও অধ্যাপকের যে ব্যাপকতা এবং ক্রমপতনশীল র?্যাংকিংয়ের যে ধারাবাহিকতা, তার অনেকটুকুই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।
ড. শরীফ মজুমদার : সহযোগী অধ্যাপক, গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
sharif_math2000@yahoo.com

Published on:http://www.jugantor.com/sub-editorial/2015/08/24/312813

আরো পড়ুনঃ "স্বতন্ত্র স্কেল চাই, অন্য কোন দাবি নাই!!"

Sunday, August 23, 2015

আন্দোলনরত শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামোর দাবিসহ চার দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

আজ রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বেতন কমিশনের সুপারিশে এ পর্যন্ত সাতটি বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু কোনো বেতনকাঠামোই অষ্টম বেতন কাঠামোর মতো বিতর্কিত হয়নি। এ পর্যন্ত কোনো বেতন কাঠামোতেই ‘সুপারগ্রেড’ রাখা হয়নি। দুটি সুপারগ্রেড রেখে রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি শিক্ষকদের জন্য মর্যাদাহানিকর বলে উল্লেখ করা হয়।
নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য পরিষদের সঙ্গে ফেডারেশনের যৌথসভা করে আন্দোলন ও দাবি আদায়ে উপাচার্যদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন আদায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা ও তাঁর সঙ্গে দেখা করে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সই সংবলিত দাবিনামা পেশ করা, দাবি না মেনে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হলে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে শিক্ষকদের জাতীয় কনভেনশন করে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা।
শিক্ষকদের অন্য দাবিগুলো হলো: স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো প্রবর্তনের জন্য অবিলম্বে বেতন কমিশন করা, আলাদা কাঠামো হওয়ার আগ পর্যন্ত অষ্টম বেতনকাঠামোতে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদার বৈষম্য দূর করা এবং রাষ্ট্রীয় ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’-এ পদমর্যাদাগত অবস্থান ও সুবিধা নিশ্চিত করা
এক প্রশ্নের জবাবে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্চশিক্ষাকে অবহেলা করে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কখনোই সম্ভব না। অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের আন্দোলন ও বেতন ভাতা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তাই তাঁর কথার ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। এখানে শুধু শিক্ষকদের বেতন-ভাতার কথাই বলা হচ্ছে না, উচ্চশিক্ষার স্বার্থে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হচ্ছে।
Source: http://goo.gl/F41yBP

গুরুদক্ষিণা

রাশেদুজ্জামান কানন


বিদ্যাশিক্ষার প্রারাম্ভেই দেশ ও জাতির জন্য শিক্ষা এবং শিক্ষাগুরুর মর্যাদা নিয়ে লেখা কবিতা বা গল্প আওড়াতে আওড়াতে বড় হয় প্রতিটি শিক্ষার্থী। শিক্ষা জীবনের সকল শিক্ষা ভুলে গেলেও এই সব নীতিশিক্ষা মানুষ কোনো দিনই ভুলে যেতে পারে না। শিক্ষক শব্দটা উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ছাতা হাতে মলিন বস্ত্রে বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়া অংকের রগচটা শিক্ষকের মুখ। ক্লাস রুমের ভেতরে এবং বাইরে যার ভয়ে সবাই জবুথবু। যতটা না ভয়ে, তার চেয়ে বেশি সম্মানে। সেখানে বাদশা নামবাদের ছেলে আর মাঝি বাড়ির গৌতমের ছেলের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই, সবাই সমান।

এই মলিন বস্ত্রধারী মানুষটির বাইরের রূপ সকলেই দেখলেও তার ভেতরের মানুষটিকে চেনা খুব সহজ ছিল না কোনো শিক্ষার্থীর জন্য। শুধু শিক্ষার্থী কেন? ঘরের চৌকাঠের বাইরের কুমড়োর লতাটাও বুঝি জানে না সেই কষ্টটা। তাই আমরা শিক্ষার্থীরা যারা একদিন দেশের কর্ণধার হয়েছি তারা সেই মলিন বস্ত্রের মাস্টার মশাইকে শুধু মর্যাদাই দিয়েছি। কিন্তু শুধু মর্যাদা দিয়েই যে পেট ভরে না তা আমরা বেমালুম ভুলেই গেছি। হয়ত আমরা ধরেই নিয়েছি মাস্টার মশাইকে বিনে পয়সার এই মর্যাদাটুকু দিলেই তার দিনপাত চলে যাবে। হয়ত এরা মর্যাদা খেয়েই বেঁচে থাকে! হয়ত বা তাই।
ঢাকা শহর দেশের সবচেয়ে ঘনবসতি-পূর্ণ আর সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর। বাসা ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা। সেখানে একজন শিক্ষকের মাসিক বাড়ি ভাড়া বাবদ বরাদ্ধ কত জানেন? ৩০০ টাকা। আপনি অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে যাবেন? ওষুধ বাদেই শুধু ডাক্তার ফি কত? সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা? একজন শিক্ষকের চিকিৎসা ভাতা কত জানেন? ২০০ টাকা। আর টাকা কোথা থেকে আসবে সে খবর কি নিয়েছেন কোনদিন? চুরি করে নাকি ডাকাতি করে? কিন্তু এই সব মানুষের আবার আত্মসম্মান-বোধটাও স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি। সুতরাং কষ্ট ভোগ করো?
বইয়ের পাতার কঠিন কঠিন সমীকরণ যিনি বিনা বাধায় নিমিষেই করে দেন তিনি কিভাবে জীবনের সমীকরণ মেলান তা হয়ত তিনিই জানেন। অন্য কারো জানার কোনো উপায় নেই। ঐ যে সেই কুমড়োর লতাটিও না।
শিক্ষক নাকি জাতির শ্রেষ্ঠ নাগরিক। কোনো কোনো দেশ সেই মর্যাদা দিয়েও থাকে। আর আমাদের দেশে? শিক্ষকদের ক্লাস ছেড়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে অবস্থান ধর্মঘট করতে হয়। সম্মান নিয়ে সমাজে বেঁচে থাকার তাগিদে মান-সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে সরকার প্রধানের কাছে বলতে হয়- ‘আমাকে অন্তত সন্মান নিয়ে বেঁচে থাকার মতো অর্থ দাও’। এ লজ্জা কার? আর সম্মানের যে ফাঁকা বুলির কথা বলা হয় সেখানেও শিক্ষকের অবস্থান দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়।
একজন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সরকারের গ্রেডের ৩য় শ্রেণীর কর্মকর্তা। যদিও অতি সম্প্রতি সরকারি স্কুলের শিক্ষককে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে কিন্তু দেশে সরকারি স্কুল আছেই বা কয়টা? যেখানে সমগ্র দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাই নির্ভর করে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপর সেখানে সেই সব স্কুলের শিক্ষকদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ থাকতে পারে না।
বাদশা আলমগীর তার সন্তানের শিক্ষার গুরুকে কত টাকা মাইনে দিতেন জানা নেই। তবুও তো সন্মান দিতে এতটুকু দ্বিধাও করেন নাই। আর আমরা না দেব সন্মান, না দেব শিক্ষা-গুরুর দক্ষিণা। শিক্ষকদের মর্যাদা হেয় করে তাদের কাছ থেকেই দেশের জন্য উন্নততর আগামী প্রজন্ম প্রত্যাশা করা কি বাতুলতা নয়?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ভালো শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার যোগ্যতা অর্জন করেন। তারচেয়ে তুলনামূলক ভাবে যারা একটু খারাপ তারা হয়ত সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক বা অন্যান্য দপ্তরে চাকুরি নিয়ে জীবন যাপন করে থাকেন। আর ক্লাসের সবচেয়ে শেষের বেঞ্চের শিক্ষার্থীকেই দেখা যায় রাজনীতি এবং অপরাজনীতির মাঠ গরম করতে। আর সুখ বিলাসের চিত্রটা যেন পুরোপুরি বিপরীত।
একজন রাজনীতিবিদের বাড়ি যান মনে হবে স্বর্গে এসেছেন। তারা ঘুরে বেড়ায় প্রাডো বা পাজেরোতে চড়ে। আর একজন সরকারি কর্মকর্তা? তিনি প্রাডোতে না চড়তে পারলেও অন্তত একটা চার চাকার যান ঠিকই যোগাড় করে ফেলেন আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যে কিনা সবচেয়ে মেধাবী ছিলেন তিনি সাত নাম্বার বাসে ঝুলে ঝুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। এভাবেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা ঝুলে থাকেন বাসের হাতল ধরে। আর নাম স্বাক্ষরের যোগ্যতাবিহীন রাজনীতিবিদরা তাদের উপরেই আঙ্গুল ঘোরান।
একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়। শিক্ষার মান বজায় রাখতে হলে শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। পেটে ক্ষুধা নিয়ে আর কতদিন এগিয়ে আসবে শিক্ষকেরা বলবেন কি মাননীয় মন্ত্রী?
শিক্ষকরা নাকি পড়াশোনা করেন না। মাননীয় মন্ত্রী একবার একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন তো কত টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন শিক্ষকের গবেষণার জন্য? গাছের ফল খেতে চাইলে গাছে পানি ঢালতে হয়। পানি না ঢেলেই ফল খাবেন? প্রকৃতি আর কত দিন সাপোর্ট দিবে?

এই আমাদের দেশেই একজন পুলিশ অফিসার তার নেশাগ্রস্থ সন্তানের জন্য সাপ্তাহিক হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাত খরচ দিয়ে থাকেন। সেখানে শিক্ষক তার সন্তানের স্বাভাবিক চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেয়ে যান। নিজের সন্তানকে অভাবের দৈন্যদশায় রেখে অন্যের সন্তানদের মেধা ও মননের পরিচর্যা কিভাবে করবেন বলবেন কি মাননীয় মন্ত্রীসমাজ? এত অবহেলার পরও শিক্ষকদের কাছ থেকে জাতি এত বেশি কিছু কিভাবে আশা করে? দেশ নামক শাসনযন্ত্রের কি এতটুকুও লজ্জা করে না?
আমরা কথায় কথায় পার্শ্ববর্তী দেশের উদাহরণ টেনে আনি। এই ক্ষেত্রে কি একটু টেনে আনা যায় না? ভারত, নেপালের চিত্রটা কি একটু বিবেচনা করা যায় না? ওরা শিক্ষাগুরুর মর্যাদা দিতে জানে বলেই ওরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে। ওদের শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে বসে রাতের খাবারের কথা বা সন্তানের কলেজের মাইনের কথা চিন্তা করতে হয় না বলেই সেই সব শিক্ষক জাতিকে উপহার দিতে পারছেন ভবিষ্যতের মূল্যবান রত্ন।
এরপর থেকে হয়তোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীটি আর শিক্ষক হতে চাইবেনা। ভালোভাবে পড়ালেখার পরিবর্তে মেধাবী ছাত্রটিও হয়ে যাবে ব্যাকবেঞ্চার। দেশ ভরে যাবে রাজনীতিবিদে। একটু ভালোভাবে বাঁচার সাধ কার না জাগে? আর সেই ভালো থাকার তাগিদেই নীতি শিক্ষার গুরুও হয়ত ভুলে যাবেন নীতিবোধ।
অবশেষে একদিন শিক্ষক নামক শব্দটাই হারিয়ে যাবে বাস্তবতার নির্মম রোষানলে। স্থান নিবে যাদুঘরে। আর সত্যিই যদি এমনটাই ঘটে তবে দেশের ভবিষ্যত কোন দিকে ধাবিত হবে তা চিন্তা করতেই শরীরের রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আশা করি এমনটি কোনোদিনই হবে না।
ধর্মান্ধ, নীতিবোধ বর্জিত, স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করা যে অর্থহীন তা শিক্ষক সমাজ ভালোভাবেই জানেন। কিন্তু সরকার যখন অসাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি- তখন তার কাছে প্রত্যাশাও স্বভাবগত ভাবেই অনেকখানি বেশি। স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও শিক্ষক সমাজ যা পান নাই তা তারা পাবেন এই প্রত্যাশা নিয়েই হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মাঠে নেমেছেন। প্রগতিশীল সরকার শিক্ষাগুরুর মর্যাদা রক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখড়ে এটাই সবার কাম্য। 
লেখক: ইংরেজি বিভাগ, ৪র্থ বর্ষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
Published on: http://www.banglamail24.com/news/102605

Saturday, August 22, 2015

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যোগ্যতায় উচ্চ, সম্মানে নিম্ন!

ড. মতিউর রহমান, ড. তুহিন ওয়াদুদ, ড. রহমান রাজু, ড. এম আবদুল আলীম, আশরাফুল আলম, রাহেল রাজীব, মাখন চন্দ্র রায়

২০০৮ সালে মহাজোটভুক্ত দলগুলোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো করা। মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ অনেকেই শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। সে ঘোষণার বাস্তবায়ন তো নেই, বরং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবনতি সাধন করা হচ্ছে। বিশ্বে উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত অনেক রাষ্ট্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো রয়েছে। বাংলাদেশেই ভিন্ন চিত্র।
অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে এই বৈষম্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বহু রকম সীমাবদ্ধতা নিয়ে চাকরি করেন। এর সঙ্গে করে যুক্ত হলো নতুন বঞ্চনা। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার নতুন সুবিধা যোগ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সারাজীবনে তিনটি পদোন্নতি হয়। প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা পদোন্নতি পান সাতবার। সহকারী কমিশনার পদে যোগ দিয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এখন আবার সচিবের পর সিনিয়র সচিব। এতগুলো ধাপ থাকার কারণে তাদের চাকরিতে সিনিয়র স্কেল, সিলেকশন গ্রেড কোনো কিছুর তেমন প্রয়োজন হয় না। এখন পদ শূন্য না থাকলেও পদোন্নতি ব্যবস্থার কারণে তুলনামূলক কিছুটা কম বয়সে সচিব পর্যন্ত হতে পারবেন এ ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। সচিবরাও যেন একই পদে বেশি দিন না থাকেন সে জন্য সিনিয়র সচিব পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সিনিয়র স্কেল কিংবা সিলেকশন গ্রেড প্রয়োজন হয় তাদের, যাদের একই পদে অনেক দিন থাকতে হয়।

একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বর্তমান বেতন কাঠামোতে (যেহেতু নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হয়নি) ২৯ হাজার টাকা মূল বেতন পান। এরপর একটি টাইম স্কেল পেয়ে ৩৩ হাজার ৫শ' টাকায় উন্নীত হন। প্রত্যেক বিশ্বদ্যিালয়ের অধ্যাপকরা তাদের এক-চতুর্থাংশ সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ৪০ হাজার টাকায় উন্নীত হন। সচিবরা এই গ্রেডে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে ১৭ নম্বর ধাপে, সিলেকশন গ্রেড পাওয়া অধ্যাপকরা ১৯ নম্বর ধাপে এবং অধ্যাপকরা ২২ নম্বর ধাপে। এটারও সংশোধন প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বেতন স্তরের সঙ্গে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স পুনর্গঠন করা উচিত। বর্তমান বেতন কাঠামো থেকে টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়া হলে এবং সিনিয়র সচিব পদ সৃষ্টি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের চার ধাপ নিচে নামানো হবে এবং তারা সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপকের পদে উন্নীত হতে পারবেন না।

প্রশাসন ক্যাডারে যারা চাকরি করেন তাদের অনেকের স্কুলিং মাত্র ১৪ বছরের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্কুলিং ১৬ বছরের নিচে নেই। শুধু তাই নয়, এসব শিক্ষকের অনেকেরই রয়েছে দেশ-বিদেশের ৩-৪ বছর মেয়াদি উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা। প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এখনও ৬ বছর বেশি চাকরি করেন। তাহলে বেশি স্কুলিং, উচ্চতর ডিগ্রি এবং বেশি সময় চাকরি করেও সম্মান বিবেচনায় নিচে থাকতে হবে কেন? চাকরিতে উচ্চতর বেতন কাঠামো যারা পান তার জন্য কিছু যৌক্তিক কারণ প্রয়োজন। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাকে সবচেয়ে উঁচুতে রাখতে হবে, এ রকম কি কোনো যৌক্তিক ভিত্তি আছে? বরং সে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা করতে পারেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য যে যোগ্যতা চাওয়া হয় তার চেয়ে বেশি যোগ্যতা দেশের আর কোনো চাকরিতেই চাওয়া হয় না। বর্তমানে যারা প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করেন, তাদের শতকরা ১০ শতাংশেরও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির আবেদনের শর্ত পূরণ করতে পারবেন কি-না সন্দেহ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের যোগ্যতা ছিল প্রশাসন ক্যাডারে চাকরির আবেদনের। এই বাস্তবতার নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপরে আর কারও বেতন হওয়া সমীচীন নয়।

ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকারের বেশি প্রয়োজন প্রশাসন বিভাগ। এর অন্যতম কারণ, আমাদের দেশে এখন রাজনীতি করেন ব্যবসায়ী কিংবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা। ব্যবসায়ীরা যখন মন্ত্রী হন তখন তারা মন্ত্রণালয় পরিচালনায় বেশি পরিমাণে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন আমলাদের ওপর। নিজেদের অজ্ঞতা ঢাকতে তাদের প্রয়োজন হয় আমলাদের ওপর নির্ভরতা। প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার কথা ছিল পিরামিডের মতো। কিন্তু এখন পিরামিড উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা। পদ শূন্য থাকুক আর না-ই থাকুক পদোন্নতি চলছেই। একজন জেলা প্রশাসক যদি পদোন্নতি পেয়ে থাকেন এবং পদায়ন না হয় তাহলে তিনি লেখেন জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব)। কারণ জেলা প্রশাসক পদটি উপসচিব পর্যায়ের। এ বছর যে নতুন পে স্কেল দেওয়া হচ্ছে, সেখানে সিনিয়র সচিব বলে একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সিনিয়র সচিব থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। এই পদ সৃষ্টি করতে হলে প্রজাতন্ত্রের সব বিভাগের কর্মকর্তাদেরও একইভাবে পদের উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

মহাজোট সরকার উচ্চশিক্ষা কমিশন গড়ার কাজে হাত দিয়েছিল। এর মাধ্যমে সেখানে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় থাকার কথা ছিল। কমিশন করা সম্ভব হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যেতে হতো না। যতদূর জানা যায়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বাধার মুখে এ কাজ মুখ থুবড়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয় হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ছাত্র অবস্থায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন, গ্রেফতারও হন। আর তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মানের অবনমন হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।

সরকারের নতুন বেতন কাঠামোর পুনর্গঠনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সংগঠিত আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পক্ষে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধানমূলক সিদ্ধান্ত হয়নি। অষ্টম বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণসহ স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো করার দাবিতে আন্দোলন চলছে। সরকারের উচিত হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া। মেধাবীদের আকৃষ্ট করা যায় এমন বেতন কাঠামো করা না হলে মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাবিমুখ হবেন। সেটা জাতির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তবে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে স্বতন্ত্র বেতন প্রদান।

লেখকবৃন্দ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

Source: http://www.samakal.net/2015/08/22/156816

Friday, August 21, 2015

Unwarranted unrest in the highest seats of learning


 Abdul Mannan, Chairman of the UGC



Suddenly the highest seats of learning, the universities, both in the public and the private sector have become restive resulting in the uncertain future of millions of students studying in these universities. Unrest in public universities is not new. There are regular gun battles in many of the campuses of public universities amongst thugs in the name of student politics for establishing supremacy on the campus.  These days even teacher strikes protesting the irregular activities of some Vice-chancellors also results in suspension of academic activities. In some universities teachers often resort to strikes because they want the removal of their Vice-chancellors alleging corruption and nepotism against them. Sometimes some of these allegations are framed on flimsy grounds and the targeted Vice-chancellors are debarred from discharging their regular duties resulting in the total disruption of administrative and academic matters.

Such actions cause misery not only to students but also to a greater section of teachers themselves.  Vice-chancellors, Pro-vice Chancellors and Treasures both in the public and private sectors are appointed by the President of the Republic who is also the Chancellor. It is his prerogative whom he will appoint or remove. Even one private university removed one such appointed person by order of the Board of Trustee which by any standard is audacious and unacceptable. They virtually challenged the authority of the President of the Republic. Some Boards knowingly or unknowingly often cross their limits set by the law under which they operate. They attempt to create a state within a state. This affects the entire sector. However most of the time they tend to get away as they have strong connection with powerful people in all governments. The current simmering unrest was created when the new pay-scale was announced by the government and a 7.5% VAT imposed on the tuition fees of the students studying in the private universities.
Announcement of new pay scales are always awaited by the people working for the government.  Such announcement brings some respite to the servants of the Republic most of whom, especially those working in the lower rung, always find it difficult to make two ends meet. Not that a new pay scale will solve all the financial woes across the board but it is expected that it will give some breathing space to most of the employees of the state. Historically, from the time of Bangabandhu government all Awami League led government was generous enough to announce a new pay scale even before anyone asked for it. This time it was no exception. It formed a Pay Commission under the leadership of seasoned and former able and competent bureaucrat Dr. Mohammad Farashuddin, onetime Personal Secretary to Bangabandhu and a person who is highly regarded by the Prime Minister. The new Commission after consulting all the stakeholders and doing some tedious homework proposed a sixteen scale grade. The committee did not propose who should be placed at what grade but when it was sent to the Secretary level committee they added four more grades, which by many is seen as benefiting the bureaucrats only. Beyond twenty scales they also proposed separate pay-scale for Principal Secretary and Cabinet Secretary, Senior Secretaries including Secretaries posted in some particular ministries or positions. On top of that, it was also recommended that the Time Scale and Selection Grade also be removed from the new scale. Earlier the university professors were entitled to both the benefits.
Due to such a proposal the University Professors have been relegated few steps behind the secretaries which, as expected, no university teachers have taken it in good earnest. Earlier, all university Professors and Secretaries were grouped together in one scale. Under the proposed scale the Professors will be below the rank of the Secretaries. Practically all the bureaucrats serving the government were one time students either of colleges or universities. The teachers with many of whom I tried to talk said it was a deliberate attempt by some of the bureaucrats to demean them and some even went a bit further saying that some of these bureaucrats once wanted to become university teachers in their early life and not being able to get a berth in the teaching profession now have grinded their axe against them. This may or may not be true but the fact is that the Secretary Committee recommendations on the Pay Scale have created a widespread discontent not only among the university teachers but also among other rank and file of the government servants.
The university teachers have already protested the proposed new scale and the attempt to demean them through forceful relegation and have resorted to abstention from work for few hours every week. They have also announced that if their demands are not met they will go on continuous abstention. Their concern is not how much pay they will get under the new pay scale but about their relegation below the rank of a Secretary. They do not have any strong resentment about how much pay the bureaucrats will be taking home but on where they stand in the rank compared to the bureaucrats. The BCS association have already met the Finance Minister and explained the anomalies in the proposed Secretary-level Committee and how the new proposed pay-scale will be discriminatory for them.
The good thing is that the Finance Minister has assured them that he will review the matter and may come up with a solution that will be acceptable to all.  The Prime Minister’s Office also sent a message to the Finance Minister that it is the desire of the Prime Minister that the new pay-scale should not create any sort of big discontent in the rank and file of the government servants. It is irony that when the government has a big cabinet, where many of the members are quite competent, at times when there is some kind of crisis or discontent in any section of the society they all look up to the Prime Minister for a solution. So far the Prime Minister has not disappointed them. The new pay scale is expected to be tabled before the cabinet early next week. According to some media reports the approved pay scale may to a great extent fulfil the desire of all stakeholders as per the desire of Prime Minister. The government at present has no major problem on its hand so why create an unnecessary one?
According to the new budget the private university students will have to pay a 7.5% VAT on their tuition fees, something unique by any standard. In India there was an attempt to impose such a tax on students which was later withdrawn because of pubic outcry. At present, about 63% of university going  students (excluding National and Open Universities) study in private universities, many of who would either have gone outside the country, often to third grade universities or colleges, often cheated or returning with a useless degrees. The emergence of private universities at least to some extent has managed to stop such an exodus. While studies in public universities are practically completely subsidised by the State, the costs of studying in private universities are borne by the students and their parents along with grants by the founders. The cost of running a private university is also borne on commercial basis and on surplus revenue they have to pay a 15% income tax.
Some people have a wrong idea that those studying in private universities come from affluent society. This is not true. The fact is more than 60 percent of students studying in private universities come from middle and lower middle income families. Some parents meet the education expenses of their children in these universities by selling their immovable property like land. Many students do part time jobs in call centres, super shops and coffee parlours.  Few work as teaching assistants of their teachers. Needless to say that all private universities are not performing up to the expectation and in some the founders do take out money through clandestine channels. But these are different problems that will have to be looked up by the Ministry of Education and the UGC. But imposing a VAT on students needs a second thought as such an imposition will put an extra burden on the students and their parents. Though many think the tax will have to be paid by the university, in reality the VAT is paid by the service receiver and not the giver. So the onus will be on the students and their parents. It is not expected that the students of private universities will go out on the street and get violent to put a pressure on the government but they also expect a realistic intervention of the Prime Minister on this issue. It is again back to the good Prime Minister according to many parents I talked with.
Some small decisions, made judiciously considering the prevailing circumstances can take the country to a newer height of achievement. The country has achieved food autarky under the current government; now it is time to bring about a revolution in the education sector. This is possible with little bit of attention and pragmatic approach by the present government. Let normal condition prevail in all sectors.

The writer is an analyst and commentator, Chairman of the UGC Bangladesh

Source:http://www.daily-sun.com/printversion/details/69025/Unwarranted-unrest-in-the-highest-seats-of-learning

সচিব-শিক্ষক মর্যাদার টানাপোড়ন

রাজীব মীর

Decrease fontEnlarge font
শিক্ষক মহান। একটি জাতি শিক্ষকের দীক্ষায় সমৃদ্ধ হয়, সামনে এগোয়। এমন কোনো দেশ নেই, জাতি নেই যারা শিক্ষককে সম্মানের চোখে দেখে না। ভারতবর্ষেই সংস্কৃত শিক্ষায় টোল ছিল, গুরু ছিল। শিষ্য গুরুকে ভক্তি করতো, গুরু শিষ্যকে মানুষ করতো। মানুষই সম্ভবত একমাত্র প্রাণী যাকে শিক্ষকের সংস্পর্শে এসে মানুষ হতে হয়। অভিভাবকরা শিক্ষকের কাছে ধর্ণা দেন, বলেন-আমার শিশুকে একটু মানুষ করে দেন। কাজেই  শিক্ষক শুধু শিক্ষা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন না। তিনি একজন শিক্ষার্থীর মনোজগতের গঠন নিয়েও কাজ করেন-আর সেটাই প্রকৃত শিক্ষা।


বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা এখন বেশ পরিব্যপ্ত, বিস্তৃত। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বেড়েছে। শিক্ষার প্রতি সরকার ও জনগণ সবাই সচেতন হচ্ছে, হয়েছে। কিন্তু যে হারে শিক্ষার্থী বেড়েছে, সে হারে শিক্ষক বাড়েননি। সবচেয়ে ভয়াবহ হল এত বাড়ার মধ্যেও যেটি কমেছে সেটা হল শিক্ষকের মর্যাদা। কীভাবে, কখন এ সংকট তৈরি হয়েছে সেটা গবেষণার বিষয়। কিন্তু আপাত সত্য হল পরিসংখ্যানগত শিক্ষার কাছে মানসম্মত শিক্ষা মার খেয়েছে, শ্রেণিকক্ষে এটা সহজেই টের পাওয়া যায়। শিক্ষার্থী আগের মতো শক্ত ভিত্তি নিয়ে বড় হচ্ছে না। যা নিয়ে আসছে তা যতটা না মগজে তার চেয়ে বেশি কাগজে। ওখানে জিপিএ লেখা থাকে। সেটা দিয়ে  শিক্ষার্থীর অবস্থান বিবেচনা করা যেতে পারে, কিন্তু মান পরিমাপ অসম্ভব।

এই যে বিপর্যয় এটা শুধু বিদ্যাশিক্ষার নয়, মন এবং মানসিকতারও। মানবিক ও মানসিক অচেতনভাবে একটি সমাজ যদি গড়ে উঠতে থাকে, শিক্ষক সেখানে প্রশ্নবিদ্ধ হয় বৈকি, হচ্ছেও। অর্থমন্ত্রী সরাসরি বলেছেন, শিক্ষকরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অল্প সময়ে অধ্যাপক হয়ে যান, কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-স্কেল বা পদমর্যাদা সচিবদের সমান হতে পারে না। কথা হিসেবে এটি সাধারণের চোখে সত্য মনে হতেই পারে, তিনি সেটিই বলেছেন। যা বললে শিক্ষক রাজনীতির অশুভ তৎপরতাকে ইঙ্গিত করা হয়, শিক্ষক নেতারা সহজেই ঝিমিয়ে পড়েন।

কিন্তু ঘটনা উল্টো। শিক্ষকরা অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রজাতি হয়ে থাকেন। তাই তারা কষ্ট পেয়েছেন, ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। বেতন কমিটিতে সচিবদের পদমর্যাদা অসঙ্গতিপূর্ণভাবে বাড়ানোর ফলে শিক্ষকগণ যারপরনাই মর্মাহত। মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব, সচিব ইত্যাদি কোনো অর্গানোগ্রাম মেনে করা হয়েছে বা এটা আদৌ আইনসিদ্ধ হয় কিনা ইত্যাদি প্রশ্নের কথা না হয় বাদ থাকলো কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদমর্যাদা সচিবদের নিচে নামিয়ে আনাটা যুক্তিসঙ্গত হয়েছে, কেউ মানছেন না। বরং তারা অপমানিত হয়েছেন। এ শিক্ষকদের কাছে পড়ে শুনে মানুষ হয়ে তারা আর শিক্ষকদের মানুষ মনে করছেন না। এদেরকে বলা হয় আমলা। ব্যুরোক্রেসি বা আমলাতন্ত্র খুব জটিল মারপ্যাঁচের বিষয়, অসম্ভব লম্বা এর হাত, খুবই শক্তিশালী। শক্তি বিচারে শিক্ষকদেরঅনুরূপ কোনো তন্ত্র গড়ে ওঠে নাই ঠিক কিন্তু আত্মমর্যাদায়  তারা নিজেদেরকে সুপিরিয়র ভাবতে এখনও ভুলে যান নাই। শিক্ষক তার মর্যাদাবোধ অটুট রাখবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের সেই সম্মান নষ্টের পায়তারা যদি সরকারিভাবে হয়, বিষয়টি আতঙ্কের ও আশঙ্কার বটে।

শিক্ষক হতাশ হয়ে পড়লে শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে কীভাবে ভূমিকা রাখবেন? শিক্ষক রুটি-রুজির জন্য অন্য চিন্তা করলে শিক্ষার্থীর প্রতি মনোযোগ কমে যাবে, স্বাভাবিক। সে প্রক্রিয়ায় যে জাতি গড়ে উঠবে, সেটা ভবিষ্যতে দেশকে কী উপহার দেবে?

একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আবর্তিত হন, সেটা তো তার নিয়োগ প্রক্রিয়াই ঠিক করে দেয়। শুধু মেধা বা শিক্ষাদানের যোগ্যতার উপরই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বা পদোন্নতি পান, একথা সর্বাংশে সত্য নয়- অর্থমন্ত্রী এমনটিই বলতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়া বদল না করে শিক্ষকদের দোষারোপ করা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কিন্তু কথা হলো একজন উপাচার্যই বা কে নির্বাচন করেন, শিক্ষকরা নিশ্চয়ই নন। তো তার মর্যাদা কে ঠিক করবেন? শিক্ষকরা চাকরির শেষে অধ্যাপক, উপাচার্য তো সবাই হবেন না। আর আমলারা চাকুরির শেষে সচিব, সিনিয়র সচিব, মুখ্য সচিব এমনতর ধারায় বিন্যস্ত হবেন কোনো বিবেচনায়। সেখানে কি কোনো রাজনীতির প্রভাব থাকে না? তবে ওএসডি কারা হন, কেন হন। আমরা কাউকে অমর্যাদা করতে চাই না, খর্ব করতে চাই না তাদের অবদান। দেশের সার্বিক প্রশাসন তারা সুচারুভাবে পরিচালনা করেন, করবেন-আমরা তো এমনভাবেই তাদের গড়ে তুলি। আমাদের কাছে শিক্ষালাভ করেই তারা আজ নিজেদের অবস্থান এত উঁচুতে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তাদের অবস্থান তো আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু  আমাদের মর্যাদা বা সম্মান বিনষ্ট করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? কোন দৈব অনিষ্ট তাদের উপর ভর করেছে যে একজন অধ্যাপককে সচিবদের নিচে চার নম্বর সারিতে অবস্থান করতে হবে। শিক্ষকদের তো কারও সঙ্গে তুলনা চলেনা। শিক্ষক শুধু চাকরি করেন না, শিক্ষক গোটা জাতি গড়েন। তার অবস্থান হবে স্বতন্ত্র, সবার উপরে। তার মর্যাদা এবং বেতন স্কেলও হবে ভিন্ন, সেটা তো করা হলোই না বরং অন্যায়ভাবে চাকুরি শ্রেণিকরণে শিক্ষকদের অবস্থান অবনমন করার প্রস্তাব করে সচিব কমিটি গোটা জাতিকে অপমান করেছে। এটার বিচার হওয়া উচিত।

প্রশাসনের একজন ইউএনও পর্যন্ত পাজেরো জিপে চড়েন, আমরা নম্বরযুক্ত সিটি বাসে ঝুলে ঝুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। শিক্ষার্থীরা যদি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সন্তান হন বা ধনীর সন্তান তারাও গায়ে ঠাণ্ডা বাতাস ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করে ক্লাসে আসেন। আমরা ধুলোর সঙ্গে বসবাস করি, নিজেরা আত্মঅহঙ্কারের জোরে বাঁচি। সরকার বা প্রশাসন আমাদের সম্মান নিয়ে প্রহসন করে-এটাই কি এখন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ!

অথচ অঙ্গীকার ছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হবে যেখানে বৈষম্য থাকবে না, প্রগতির চর্চা হবে। এই যে শিক্ষক-আমলা শ্রেণিকরণ, এটা কি তবে বৈষম্য নয়? এটাই কি প্রগতি? আমাদের পোষাকে ময়লা ধরিয়ে ফকফকা পোষাক পরে তবে কারা ঘুরে বেড়াবে, সেটা কি হতে পারে বা হতে দেয়া যায়? উত্তর একটাই- না।

তাই বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকরা বুকের ভেতর কষ্ট পুষে আজ ক্ষোভের মশাল নিয়ে একত্রিত হচ্ছেন, নিজেদের অধিকারের কথা সরকারকে জানান দিচ্ছেন। ধারাবাহিক আন্দোলন, মিছিল, কর্মবিরতি শুরু করেছেন। শিক্ষক নেতরা তো বটেই সাধারণ শিক্ষকরাও মতভেদ ভুলে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন, শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাকর একটি পৃথক বেতন স্কেল গঠন করুন। মনে রাখবেন শিক্ষকদের সমাজের প্রতিটা মানুষ সম্মান করেন। স্যার সম্বোধন করেন, অন্য কোনো পেশায় এরকম সর্ব জনাব উপাধিতে ডাক পাওয়া অসম্ভব। আমরা সেটাই পাই। পাই বলেই আপনাদের জানাই-হয়ত আপনার অসাবধানতাবশতঃ আমাদের অবস্থান নিয়ে টানাহেঁচড়া করছেন, অজ্ঞানতাবশতঃ নিশ্চয়ই নয়। আমরা তাই চাই আপনাদের সম্বিৎ ফিরুক। আপনারা একটু সংবেদনশীলভাবে বিষয়টা দেখেন। এটা আমাদের দাবি, আমাদের অধিকার। এমনি এমনিই দিতে বলছি না, তাহলে তো আর সম্মান থাকে না।

সমাজটার কথা একবার ভাবুন- সামাজিক মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে?  কিছুদিন আগেও পাড়ার ছেলেরা খেলছে, সেখানে বড় ভাই বা সিনিয়র এসে একটা ডাক দিলে তারা এক দৌড়ে পালাতো। এখন গুলি আর চাপাতির খেলা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই শুধু নন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ সব শিক্ষকরাই এই মূল্যবোধ সম্পন্ন সুস্থ সমাজ গড়ার নিপুণ কারিগর। কারিগরের উপযুক্ত বেতন না দিয়ে, তাকে অসম্মান করে একটা প্রকৃত মূল্যবোধ সম্পন্ন জাতি তৈরি হওয়া অসম্ভব।

কাজেই একটা সমৃদ্ধ সোনার বাংলার স্বপ্ন বুকে লালন করে স্বাধীনতার বীজ বপনের মাধ্যমে একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ গঠন করতে পারলেই ফুলে ফলে শক্ত মহীরুহ হয়ে উঠবে দেশ, সভ্যতায় আমাদেরনাম থাকবে, থাকবে উন্নত অবদান। সে নামটিকে রহিত করবেন না, প্লিজ।

বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের কথা উদাহরণ হিসেবে যদি নাও আনি পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কথা বিবেচনা করুন। সেখানে শিক্ষকদের বেতন, মান অতুলনীয়। আমরা কথায় কথায় বিদেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা করি, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে শান্তি পাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবার হরিজনের মর্যাদা যদি দিতে চাই, বিষয়টা ঠিক যায় না।

শুনেছি ডেপুটেশনে সরকারি প্রশাসনের কোথাও নিয়োগ পেলে আমলারা যদি শিক্ষকদের অধীনস্থ হন, এ ভয় আমলাদের গ্রাস করেছে। এটা তারা না মেনে নিতে পারেন, না মনে। তো এসব জটিল  মনো-দৈহিক শক্তি প্রয়োগ জনিত সমস্যা অনুধাবন করে জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে চাকরির অর্গানোগ্রাম ভেঙে নিজেদের জন্য উঁচু থেকে উঁচু পদ তৈরি করে স্ব-আসন সুসংহত করার চেষ্টা করেছেন। আর নিজে প্রভু হলে অন্যকে দাস বানাতে হয়, এ ঔপনিবেশিক চিন্তায় শিক্ষকদের সারি অনেক পেছনে রেখেছেন। এটা যে তাদের ইচ্ছাকৃত দোষ এমনটা নয়- এটা উপনিবেশিক মানসিকতার ফল, কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়। তাই কাজটি সরকারকেই করতে হবে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে এটি বিবেচনা করবেন, প্রত্যাশা। আর না হলে শিক্ষকদের মনোকষ্ট হয়ত আমলাদের উপর থাকবে কিন্তু সংক্ষুদ্ধ হবেন বা আন্দোলন করবেন সরকারের বিরুদ্ধে। সেটা সময় হিসেবে এখন হতে দেওয়া উচিত হবে না।

কারণ মৌলবাদী কোনো সরকার থাকলে না হয় রাস্তায় নামাটা যৌক্তিক ছিল, কিন্তু এতবড় প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সরকার, ঠিক সেসময় শিক্ষকরা পেটের জন্য রাস্তায় নামলে সরকার লজ্জা পাবেন না!

ইতোমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দিয়েছে সরকার, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়েছেন প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা- সব প্রশংসনীয়। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি সরকার আরও গুরুত্ব দেবেন- এই প্রত্যাশা খুবই স্বাভাবিক। আমরা সরকারের সেই স্বাভাবিক পদক্ষেপগুলোর প্রত্যাশা করি-বেশি কিছু নয়।

তাই আমরা চাই সরকার সমব্যাথী হোক, শিক্ষকদের জন্য পৃথক মান-মর্যাদা নির্ধারণ করুক। শিক্ষকরাও আরও সজীব হোক; গড়ে তুলুক সুন্দর জাতি, সবুজ এবং সমৃদ্ধ দেশ।

লেখক
সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
Email: rayib.mir@gmail.com 

Source: http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/419007.html

Thursday, August 20, 2015

প্রসঙ্গঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধকালীন কোর্স ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান

Kamrul Hassan

অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসনেস ফেকাল্টির রমরমা অবস্থা দেখে খুবই খুশি আর ভাবে আমাদেরও যদি এমন জৌলুস হত! তাদের এই জৌলুসের পিছনের কাহিনী কি তা কিন্তু কেউ তলিয়েদেখে না। বিশ্বব্যাপী প্রচন্ড রেটে moral degradation চলছে আর এই moral degradation-এর সাথে বিসনেস ফেকাল্টির রমরমা অবস্থার একটা সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি। উদাহরণস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসনেস ফেকাল্টির কথাই বলা যেতে পারে। তাদের এই রমরমা অবস্থার উৎস কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে সব ফেকাল্টি ও বিভাগকে প্রায় সমভাবেই টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এমন না যে, ওই ফেকাল্টিকে বিশেষ কোটায় বা স্পেশাল বিবেচনা করে তাদেরকে কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে অতিরিক্ত কিছু দেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত জৌলুসের জন্য অতিরিক্ত টাকা তারা নিজেরাই রোজগার করে। প্রশ্ন হলো ওটা কিভাবে? এই বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসনেস ফেকাল্টিতে দেখা যায় রঙ বেরঙের বৈকালিক বা সান্ধকালীন কোর্স আছে। বাংলাদেশে এই ধরনের কোর্স চালুর ব্যাপারে তারাই সম্ভবত পতিক্রিত। এই সান্ধকালীন কোর্স-এর জন্য কিন্তু আলাদা শিক্ষক নেই। রেগুলার শিক্ষক যারা আছেন তাদেরই একটা বড় অংশ সান্ধকালীন কোর্সগুলোতে পড়িয়ে থাকেন। শুধুই কি সান্ধকালীন কোর্স -এ উনারা পড়ান? যারা সান্ধকালীন কোর্স-এ পড়ান? তাদের আবার একটা বড় অংশ বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ান।

এখন প্রশ্ন হলো বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের একজন শিক্ষক দৈনিক কত ঘন্টা ক্লাস নিবেন? একজন শিক্ষক যদি দিনে একটা বা দুইটা ক্লাস নেন আবার রাতেও এক/দুই বা ততোধিক ক্লাস নেন তাহলে পরদিনের ক্লাসের প্রিপারেশন কখন নিবেন? গবেষণা কখন করবেন? পরীক্ষার প্রশ্ন কখন করবেন? পরীক্ষার খাতা কখন দেখবেন? প্রত্যেক শিক্ষকের কিছু না কিছু administrative দায়িত্বও থাকে ওগুলো কখন পালন করবেন? এছাড়া আরো কিছু নৈতিক বিষয় আছে যেমন কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দিবেন? রেগুলার ক্লাস না সান্ধকালীন ক্লাস। যেখানে মূল চাকুরী সেখানকার ক্লাসে নাকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে? মনে রাখা দরকার রেগুলার ক্লাস থেকে বেতন নিশ্চিত। অর্থাত ফাঁকি দিলেও বেতনে হেরফের হবে না। তাছাড়া কাউকে জবাবদিহিও তেমন করতে হয়না। তবে সান্ধকালীন ক্লাস বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে যেহেতু পারিশ্রমিক বেশি তাই ওগুলো পাওয়ার একধরনের প্রতিযোগিতাও বেশি এবং এর ফলে জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা অটোমেটিক এসে যায়।

তাদের এই অতিরিক্ত জৌলুসের ধাক্কা মাঝে মাঝে আমাদের বিজ্ঞান ফেকাল্টিতেও লাগে। প্রায়ই দেখি বিজ্ঞান ফেকাল্টির কিছু কিছু শিক্ষক সান্ধকালীন কোর্স চালুর permission চেয়ে ফেকাল্টিতে দরখাস্ত করে। তবে আসার কথা হলো এপর্যন্ত দেখা গেছে আমাদের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সকল শিক্ষক এর বিপক্ষে। আমরা প্রতিবার এই উদ্যাগকে ঠেকিয়েছি। তবে কতদিন পারব বলা যায় না। লক্ষ্য করেছি যে, কিছু দিন পর পরই এধরনের চাপ আমাদের প্রতিহত করতে হয়। দুঃখের বিষয় হলো প্রশাসন এবং আমাদের সরকারও চায় বিশ্ববিদ্যালয় বা তাদের বিভাগগুলো অতিরিক্ত অর্থ আয়ে উদ্যেগী হয়। কিন্তু কেউই এটার ক্ষতিকর দিকগুলো তলিয়ে দেখে না। BBA, MBA বিষয়গুলোই এমন যে অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরির ফর্মুলা খোজে পাওয়া তাদের curricular-ই একটা অংশ। কিছুদিন আমি এক জায়গায় আমন্ত্রিত হেয় বিশেষ অনুরোধে কয়েকটা ক্লাস নিয়েছিলাম। আমি যেই রুমে ক্লাস নিতাম আমার ক্লাসের ঠিক আগে ওই রুমে বিসনেস ফেকাল্টির একজন ক্লাস নিত। আমি প্রায়ই ক্লাসের বেশ আগে চলে যেতাম তাই অটোমেটিক পাশের রুমে বসে ওই ক্লাসে কি পড়ানো হচ্ছে তা শোনা হয়ে যেত। লক্ষ্য করতাম ক্লাসগুলোর মূল থিম ছিল কোয়ালিটি, প্রফিট আর জনবল। অর্থাত employer-কে কি করতে বললে তার অধিক মুনাফা হবে এটাই যেন এই ধরনের সাবজেক্টগুলোর মূল প্রতিবাদ্য। হায়রে পড়াশুনা!!!!

PS: No offense meant to anyone. এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা। আমার ধারণা ভুল হতে পারে। আমার এই বক্তব্যকে কেউ পের্সনাল্লি নিবেন না please। দ্বিমত থাকলে আপনার মত তুলে ধরতে পারেন।
কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।