Tuesday, September 8, 2015

Open Letter To Finance Minister.

Prof. Mohammed Shamsuddin

Honourable Finance Minister, I am posting this text as an open letter to you. I do not expect that you would see this post but I feel it is my responsibility to stand beside my colleagues who are being badly insulted by your words.


I agree with you that professors of Bangladesh are not as skilled as those of USA, UK, Germany, Australia, etc. but are equally skilled to their counterparts in India, Pakistan, Sri Lanka, Malaysia, Kenya, Argentina, etc. Would you be so kind to name one Secretary from Bangladesh who is as skilled as his/her counterpart from the Central Governments of the developing countries referred to above? I agree most universities in Bangladesh have a higher proportion of professors than many other countries of similar economy but would you be so kind to ask one of your staff to present you information on the number of secretaries Bangladesh has? How many examples of so called 'senior secretaries' would you be able to cite from countries of similar economy like Bangladesh? How many countries in the world have multiple secretaries in one ministry? Professors in Bangladesh have not come from an isolated island, they should have followed the same trend as has been followed by the so called administrative cadre. As a tax payee, I believe I have right to demand your statement on these facts in the Parliament of Bangladesh.

Reading from Abul Monsur Ahmed and addresses made by Bongobondhu and many other politicians from fifties, it is clear that the army and civil bureaucracies were the main hurdles that limited development of the then Pakistan and East Bengal was the worst sufferer. If you look at the great six points movement it had been aimed to restrain the anti-people power of bureaucrats in the then Pakistan. Unfortunately, we have inherited Pakistani army and bureaucracies in the independent Bangladesh who succeed to kill the Father of the Nation within three years of independence and took a U turn towards colonial governments, good governance remained only in our dreams! After the democracy movement in 1990, the Bangladesh Army has taken a good shape and attracted national and global respects. But the civil bureaucracy in Bangladesh has remain the number one hurdle against development and in favour of corruptions.

This is unfortunate for the nation that after 1975' the politics of Bangladesh could not produce a single Finance Minister, the position has always been taken by active/retired bureaucrats! And here remains the route cause of development lacks of Bangladesh. Only politicians whose bodies smell the soil of Bangladesh would know the importance of education not the kind of bureaucrats that carry the legacy from the colonial times. As a man and a senior citizen, I have all respects for you but I am also reminded that you belonged to the bureaucracy that could not take a pro-people shape after 44 years of liberation. And your words have encouraged that inefficient bureaucracy but humiliated the teachers who have been working with difficulties to produce qualified graduates to turn the bureaucracy towards people.

Honourable Minister, I am aware of your honesty and integrity and I join with many others to praise your personal honesty. Would you be so kind to ask your staff to present you a summary of information if personal assets of secretaries of Bangladesh match with their legal incomes? Would you also collect such information for professors? Mr. Minister in your true sense you will feel to apologies to professors since they are not corrupts. Corrupts who made Bangladesh champions five times will be found mostly in government offices. One regime of politicians punishes the former regime but the corrupt bureaucrats protect each other and remain beyond touches by the Anti Corruption Council!

I hope democracy practices in Bangladesh would attract and facilitate development of good politicians from grass route who would have the power and sense to identify the need of strong education to produce qualified graduates to run the country, especially a pro people government. Sooner the change should occur, better would be the fate of the country.


Yours sincerely,
Prof. Dr. M. Shamsuddin
Vienna, Austria

আরো পড়ুনঃ "স্বতন্ত্র স্কেল চাই, অন্য কোন দাবি নাই!!"

Monday, September 7, 2015

বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজনীতি ও এর প্রভাব

Kamrul Hassan

আমাদের শিক্ষা বান্ধব সরকার ৮-ম পে-স্কেলের মাধ্যমে শিক্ষকদের দারুন একটা শিক্ষা দিয়েছেন। এমন দারুন শিক্ষা যে এই প্রফেসনে আর ভালো কেউ আসার পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে গেল। আসলে ভালো শিক্ষক তারা কেন চাইবেন? ভালো শিক্ষক মানেই তাদের মাথা ঘড়ের ছাদ ফুড়ে আকাশ স্পর্শ করা মানুষ। তারা সর্বদা সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলবে। এখন একদল আগাছা শিক্ষক বনে গিয়েছে। তারা কোন দিন হয়ত স্বপ্নও দেখেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। ফসলের খেতে আগাছা থাকেই। কিন্তু এখন আগাছাই ফসল স্বরূপ হয়ে উঠছে এবং উৎকন্ঠা সেখানেই। আমাদের সরকারগুলো এমনই শিক্ষা বান্ধব যে তারা সর্বদাই ওই আগাছাদেরই শিক্ষক হিসাবে চেয়েছে কারণ তারা জানে এই এরা খুব উপকারী। এরা সামান্য কিছু পাওয়ার আশায় চাতকের মত আকাশ পানে তাকিয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে উচ্ছিষ্ট স্বরূপ এক ফোটা কিংবা দুই ফোটাই তাদের লালসা নামক তৃষ্ণা নিবারণে যথেষ্ট। এরা প্রভুর গুনকির্তন আর প্রভুর শত্রুর বিরুদ্ধাচরণে বিন্দুমাত্র পিছপা হয় না।

যারা academically sound দেখা গেছে তারা গোষ্টিবদ্ধ হতে চায় না বা হয় না। দুর্বলরা সর্বদাই দলবদ্ধ হয়ে চলে। যে শিকারী একা শিকার করতে পারে না তারাই তখন দলবদ্ধ এবং দলবদ্ধ হয়ে শিকার করে। আমাদের সমাজেও তাই দেখা যায়। যারা যত বেশি দুর্বল তারা তত বেশি সমিতি গঠনে সচেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক তাই ঘটছে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষকরা রাজনীতির ছত্রছায়ায় দলবদ্ধ হয়। তারা একে অপরের সুবিধা অসুবিধা দেখবাল করে এভাবে আস্তে আস্তে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। ব্যাপারটা শুধু যে এই সরকারই করছে তা নয়। ৯০-এর পর থেকে আমাদের সকল সরকারই ধারাবাহিক ভাবে করে গিয়েছেন। এখন শুধু কফিনের লাস্ট পেরেগ মারা অবলোকন করছি। সন্তানের সুশিক্ষা দানই হলো আমাদের সমাজের প্রতিটি ঘরের সবচেয়ে বড় কনসার্ন। অথচ এই শিক্ষাই আজ সবচেয়ে উপেক্ষিত। শিক্ষা ভবন নামক এক বিভীষিকাময় অফিসের মাধ্যমে স্কুল কলেজের শিক্ষকদের ক্রমাগত অপমান করে যাচ্ছে আমাদের আমলারা। এবার সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পালা। বেতন কম জেনেও আমাদের ক্লাসের সেরা ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চায় শুধু একটু সম্মানের আশায়। আজ সেই সম্মানটুকুও হুমকির মুখে।

এখন দেখা যায় দুর্বলই নেতৃত্বে চলে এসেছে। এরা আস্তে আস্তে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রমোসন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে তারা ধীরে ধীরে প্রমোশন নীতিমালা শিথিল করে ফেলেছে। ভালো রেখে অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের নিয়োগে তারা বেশি উৎসহি। আর আমাদের আমলা এবং সরকার এই দুর্বল ক্ষণের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কমুনিটির নেতৃত্ব এখন দুর্বল কারণ যারা নেতৃত্বে আছেন তারা নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাবে ব্যস্ত সুদুর প্রসারী ক্ষতি তাদের হিসাবের মধ্যে নেই। এবং সেইজন্য, শুধু সেই জন্য এরকম একটা অবমাননাকর পে-স্কেল করে সরকার পার পেয়ে যাচ্ছে। সরকার নিশ্চই বুঝতে পেরেছে এটা নিয়ে শিক্ষকরা বেশি কিছু ঝামেলা করতে পারবে না কারণ শিক্ষকদের নেতৃত্ব এখন তাদের কুক্ষিগত। এমনই নেতৃত্ব যে, আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অবস্থান জানানোর জন্য সাক্ষাত প্রার্থনা করে পর্যন্ত ব্যার্থ হয়েছে। যতটুকু শুনতে পাই প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাত দেননি।

অথচ ইতিহাস বলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকল আনদোলনের পুরোধা ছিলেন। আমরা যে ১৪-ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি হত্যা দিবস পালন করি ওই বুদ্ধিজীবী কারা ছিলেন? গুনে দেখুন প্রায় ৮০% বুদ্ধিজীবিই যাদের ওই দিন পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা হত্যা করে ছিল তারা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এখনও দেশ কোন বিপদে পড়লে এই শিক্ষক এবং ছাত্র এগিয়ে আসে সবার আগে এই থেকে উদ্ধারের জন্য। বিশ্বিবিদ্যালয় হলো জ্ঞানী মানুষ তৈরীর কারখানা আর শিক্ষকরা হলেন ওই কারখানার কারিগর। অথচ ৮ম পে-স্কেলের মাধ্যমে শিক্ষকদের অপমানের চূড়ান্ত করে ছেড়েছে। দুঃখের বিষয় হলো যে, যারা একদিন এই কারখানারই প্রোডাক্ট হিসাবে বের হয়েছিলেন তারাই আজ সেই কারখানাকে ধংশ করতে উদ্যত। তার মানে হলো তারা চায় না ভবিষ্যতে তাদের চেয়ে মেধাবী প্রোডাক্ট আর বের হোক। এমন থাপ্পর খেলাম যে দুঃখ প্রকাশের ভাষা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। তারপরও আমি নিশ্চিত আমাদের শিক্ষকরা থাপ্পর কর্তাদের গুনকির্তন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি এখন decide করে এখন থেকে আর গুনকির্তন করবে না তাহলে আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় একটা তুরীর ব্যাপার মাত্র।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

উপাচার্যরা ঘেরাও হন কেন?

জহিরুল হক মজুমদার

জবাবদিহিতা নেই, এমন পদ কখনও সম্মানের হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটির জবাবদিহিতা কার কাছে? এই প্রশ্নের উত্তর প্রায় দেড়যুগের কাছাকাছি শিক্ষকতা করার পরও আমি জানি না। আমার সহকর্মীরাও জানেন না। অর্থাৎ উপাচার্য কোন অসদাচরণ কিংবা অসৎ কর্ম করলে কিংবা কোন দাফতরিক কাজে অযাচিত সময়ক্ষেপণ কিংবা অবহেলা করলে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কার কাছে অভিযোগ করবেন কিংবা উপাচার্য কার কাছে জবাবদিহি করবেন, তা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইনে লেখা নেই।

এমনকি উপাচার্যের কারণে যদি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার প্রতিকার কিভাবে হবে—তাও বলা নেই। এছাড়া বাকি আর সব বিশ্ববিদ্যালয়, যেগুলো তাদের বিশেষ আইন দ্বারা পরিচালিত হয়, তাদের আইনেও এই বিষয়গুলো লেখা আছে বলে জানা নেই। কেউ কেউ বলবেন, উপাচার্য সিন্ডিকেট, রিজেন্ট বোর্ড কিংবা সিনেটের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। কিন্তু এই সমস্ত পরিষদ অন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কিংবা ছাত্রকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখলেও উপাচার্যের শাস্তিবিধান কিংবা সতর্ক করার বিধান আইনে নেই। এ রকম জবাবদিহিতাহীন পদ রাষ্ট্রের আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না।

১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশের অধীন চারটি কথিত স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত সিনেটের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত তিনজন নাগরিকের মধ্য থেকে যেকোনও একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন। উপাচার্যকে একজন শিক্ষক হতে হবে, এমন কোনও কথা আইনে বলা নেই এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সর্বনিম্ন সীমা বলা নেই। ব্রিটিশ আমলে খাজা নাজিম উদ্দিনের ছোট ভাই খাজা শাহাবুদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ছিলেন। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে তিনি কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ছিলেন। কথিত আছে যে খাজা শাহাবুদ্দিন ইংরেজি মাধ্যমে অষ্টম শ্রেণি পাস ছিলেন। অর্থাৎ একজন নন মেট্রিক। স্বাধীনতা উত্তরকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক আবুল ফজল যিনি মূলত কলেজ শিক্ষক ছিলেন। সুতরাং আজকাল যারা উপাচার্য তারা পাস কোর্সে ডিগ্রি পাস এম এ প্রিলিমিনারির ছাত্র কিংবা কোনও কোনও উপাচার্যের পিএইচডি ডিগ্রি নেই এইসব কথা বলেন তারা বোধ হয় খাজা শাহাবুদ্দিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে অবগত নন।

বলে রাখা ভালো যে, ১৯৭৩ এর রাষ্ট্রপতির আদেশ একটি নয়, প্রত্যেকটি (চারটি’র) জন্য আলাদা আলাদা এবং কিছু সামান্য ব্যতিক্রম আছে। যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ট্রেজারার পদ নেই। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আছে কোনও শিক্ষক বা কর্মকর্তা যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন তাহলে তিনি উপাচার্যের মাধ্যমেই মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করে প্রতিকার চাইবেন।

এখন উপাচার্য যদি এই আবেদন ফরোয়ার্ড না করেন, তাহলে রাষ্ট্রপতির কাছে সরাসরি আবেদনের বিধানও আইনে রাখা হয়নি। আদালতের শরণাপন্ন হলেও আদালত অনেক সময় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের সুযোগটি ব্যবহার করেছেন কি না জানতে চান এবং সেটি শেষ করে আদালতে আসার পরামর্শ দেন। যে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সরাসরি উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে থাকেন, সে সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি চাইলেই অদক্ষতা, অসততা কিংবা যেকোনও অসদাচরণের কারণে উপাচার্যকে অপসারণ করতে পারেন। কিন্তু ১৯৭৩ আদেশভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সরাসরি অপসারণের আগে অসম্ভব ভাবা হলেও ‘জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট’ নামে একটি আইনের অধীনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দিনকে অপসারণের ভেতর দিয়ে রাষ্ট্রপতি এবং চ্যান্সেলর তার আইনি কর্তৃত্বের প্রমাণ রেখেছেন। কিন্তু ১৯৭৩ এর রাষ্ট্রপতির আদেশ কিংবা বর্তমানে প্রচলিত বিবিধ আইনে উপাচার্যের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কিংবা ছাত্রদের কোনও কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ না থাকায় উপাচার্যরা প্রায়ই ক্ষুব্ধ ছাত্র শিক্ষক কিংবা কর্মচারী দ্বারা ঘেরাও হয়ে যান। এর মাধ্যমে তারা সরকার এবং চ্যান্সেলরকে উপাচার্যের অগ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে জানান দিতে চান।

সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ঘেরাওয়ের মতো অস্থির পরিস্থিতি এড়িয়ে শিক্ষার শান্তিময় পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন সংশোধন করে ‘গুরুতর অসদাচরণ কিংবা কর্তব্য অবহেলা’র ক্ষেত্রে ছাত্র শিক্ষক কিংবা কর্মচারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করে উপাচার্যেকে ইমপিচমেন্ট করার বিধি সংযোজন করা উচিত বলে মনে করি।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Published in: http://www.banglatribune.com/news/show/109621/

আরো পড়ুনঃবিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ও যোগাযোগহীন প্রজন্ম
রাষ্ট্র, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের বেতন
বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষদকের নিয়ে সাম্প্রতিক রাস্ট্রীয় অনাকাঙ্খিত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া

নতুন বেতন কাঠামোর উপর মহাসচিবের বক্তব্য

Sunday, September 6, 2015

অবশেষে অষ্টম পে-স্কেল অনুমোদন

ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Decrease fontEnlarge font
ঢাকা: মূল বেতন দ্বিগুণ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় পে-স্কেলের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সকাল দশটার দিকে শুরু হওয়া মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষ হয় দুপুর দুইটায়। এরপর শুরু হয় ব্রিফিং। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের নতুন পে স্কেলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।

নতুন বেতন কাঠামোয় গ্রেড আগের মত ২০টিই থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গ্রেড ২০টিই থাকবে। সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন হবে ৭৮ হাজার টাকা তবে এই গ্রেডে কোন ইনক্রিমেন্ট থাকবে না, বেতন হবে ফিক্সড। সর্বনিম্ন বেতন হবে  ৮ হাজার ২৫০ টাকা। অবশ্য  যা পরে এক পর্যায়ে ২০ হাজারের বেশিও হতে পারে।

সিলেকশন গ্রেড অব্যাহত থাকবে না জানিয়ে সচিব বলেন, বেতন সবার জন্য বাড়ছে। কাজেই কিছু পদ বা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুবিধা দেওয়ার চেয়ে সবাইকে সুবিধা দেওয়াই যৌক্তিক। 

তবে মূল বেতনের ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০ থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ। পঞ্চম গ্রেডে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। তিন ও চার নম্বর গ্রেডে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ। গ্রেড দুই-এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর এক নম্বর গ্রেডে কোনো প্রবৃদ্ধি হবে না।

এ ব্যাপারে মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, মূল বেতনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন, কারও মূল বেতন ১০ হাজার টাকা। ৫ শতাংশ হারে এক বছরে তার প্রবৃদ্ধি হবে ৫০০ টাকা। প্রথম বছর শেষে ওই ব্যক্তির প্রবৃদ্ধিসহ বেতন দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। যেহেতু চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে, তাই দ্বিতীয় বছরে ওই ১০ হাজার ৫০০ টাকার ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে। এভাবে প্রত্যেক বছরই বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। প্রতি বছরের ১ জুলাই সবার জন্য একই সঙ্গে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে।’

সচিব বলেন, পর্যালোচনায় দেখা গেছে আগে টাইম স্কেলে অনুযায়ী যে বেতন বাড়তো, নতুন পদ্ধতিতে তার চেয়ে বেশি বেতন বাড়বে।

এবার থেকে বাংলা নববর্ষ ভাতা শুরু হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, সবাই ধর্মভিত্তিক ভাতা পায়। কিন্তু সবার জন্য এবার থেকে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালু করা হবে।

এছাড়া এখন থেকে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কোনো শ্রেণীবিভাগ থাকবে না উল্লেখ করে সচিব বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী  সিদ্ধান্ত। এখন থেকে এটি বিলুপ্ত। প্রথম শ্রেণী বা তৃতীয় শ্রেণী বলে কিছু থাকবে না। সরকারি কর্মচারীরা এখন থেকে গ্রেড অনুযায়ী পরিচিত হবেন। তাদের জন্য এটি হবে মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট।

সত্যায়িত করার ক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ করে সচিব বলেন, বিষয়সহ শ্রেণী অনুযায়ী যেসব কাজ, সেগুলোতে পরিবর্তন আনা হবে। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার জায়গায় গ্রেড ভিত্তিক সত্যায়িতকরণের ক্ষমতা থাকবে।

এছাড়া ক্যাডার বা নন-ক্যাডারদেও বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।পাশাপাশি অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা এখন থেকে ৯০ শতাংশ হারে পেনশন পাবেন  বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য নতুন পে-স্কেল কার্যকর হবে উল্লেখ করে তা পর্যালোচনার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, কমিটির মাধ্যমে এর পর্যালোচনা হবে। তবে এমপিওভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন স্কেলে বেতন পাবেন, পাশাপাশি এর পর্যালোচনাও চলবে।
 
এই পে-স্কেলের বাস্তবায়ন ১ জুলাই-২০১৫ থেকে ধরা হবে  জানিয়ে অর্থ-বিভাগে এখন এর  খুটিনাটি বিষয়গুলো পর্যালোচনা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

ঘোষিত পে-স্কেল অনুযায়ী সর্বোচ্চ গ্রেড প্রথম গ্রেডের বেতন হবে ৭৮ হাজার টাকা (ফিক্সড)। ২য় গ্রেড ৬৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হবে। এছাড়া ৩য় গ্রেড ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে, ৪র্থ ৫০ হাজার টাকা থেকে, ৫ম ৪৩ হাজার টাকা থেকে, ৬ষ্ঠ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে, ৭ম ২৯ হাজার টাকা থেকে, ৮ম ২৩ হাজার টাকা থেকে, ৯ম ২২ হাজার টাকা থেকে, ১০ম ১৬ হাজার টাকা থেকে, ১১তম ১২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে, ১২তম ১১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে, ১৩তম ১১ হাজার টাকা থেকে, ১৪তম ১০ হাজার ২০০ টাকা থেকে, ১৫ তম ৯হাজার ৭০০ টাকা থেকে, ১৬তম ৯ হাজার ৩০০ টাকা থেকে, ১৭তম ৯ হাজার টাকা থেকে, ১৮তম ৮ হাজার ৮০০ টাকা থেকে,১৯তম ৮ হাজার ৫০০ টাকা থেকে এবং ২০তম বা সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে শুরু হবে।

নতুন পে স্কেলে তিন বাহিনীর প্রধান (সেনা,নৌ ও বিমান) সমান বেতন পাবেন (৮৬ হাজার ফিক্সড)। এছাড়া সেনাবাহিনীর লেফট্যানান্ট জেনারেল বেতন পাবেন ৮২ হাজার টাকা (ফিক্সড)।

এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানের বেতন সেনাবাহিনী প্রধানের বেতনের সমান হবে। সশস্ত্র বাহিনীতে সর্বশেষ পদ হলো সৈনিক, কিন্তু তারা সর্বনিম্নে গ্রেডে বেতন পাবেন না। যারা সৈনিক নন এবং সামরিক দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট নন, তারা সর্বনিম্ন গ্রেডে বেতন পাবেন।

ঘোষিত স্কেলের মূল বেতন ১ জুলাই-২০১৫ থেকে এবং ভাতাগুলো ১ অক্টোবর-২০১৬ থেকে কার্যকর হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এদিকে নতুন কাঠামোর বাস্তবায়নে আগের ব্যয়ের সঙ্গে আরও ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। 

এতে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বেতন বাবদ সরকারের ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এবার রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে, পরের বছর তা আরও বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তাই এই পে-স্কেল বাস্তবায়নে সরকারকে বেশি বেগ পেতে হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এখন প্রচলিত কাঠামোতেই বেতন পাবেন। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটি রয়েছে, তারা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জানাবেন। প্রতিবেদন পরে কেবিনেটে এলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে।

এ সময় অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব গ্রেড ওয়ানে পড়বেন। তিনি ফিক্সড বেতন পাবেন। সরকারি কর্মচারীরা পদোন্নতি পেলে তার গ্রেড বদল হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এছাড়া এ মুহূর্তে স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের প্রয়োজন নেই বলেও জানান সচিব। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অবসরের সময়সীমার বিষয়টি আগে যা ছিল এখনও তাই রয়েছে বলেও জানান সচিব।

বিজ্ঞানীরাও নতুন স্কেলে বেতন পাবেন উল্লেখ করে সচিব বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান যদি বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয় বা পরিচালনা করে, তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে, যার কোন সীমা নেই।

Source: http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/423413.html

Friday, September 4, 2015

শিক্ষকের অসম্মান বেতনে এবং ছাত্রলীগের হাতে

প্রজাতন্ত্রের বেতনকাঠামো পদমর্যাদার স্মারক, অথচ শিক্ষকদের জন্য তা মর্যাদাহানিকর
কাবেরী গায়েন 

বাংলাদেশে সবচেয়ে সহজে মারা যায় শিক্ষকদের। যাকে বলে, ভাতে মারা এবং হাতে মারা। সবাই মারে তাঁদের, শিক্ষকেরা পাল্টা মার দিতে পারেন না বলেই হয়তো। আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষককে যদি মারা যায় মরিচ গুঁড়ার স্প্রে চালিয়ে, তো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে মারা যায় দলীয় ক্যাডার লেলিয়ে। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের ‘শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মেরেছে’ বলে বিস্মিত হয়েছেন। আমি হইনি। তাঁর বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা ছবি, তাঁর গলায় দড়ি দেওয়ার মতো মানসিক পরিস্থিতিতে পৌঁছানোর বিষণ্ন কথনে আমি শিক্ষকদের ওপর ধারাবাহিক অসম্মানের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার দৃশ্যটি দেখতে পাই। সেই সঙ্গে আমাদের দায়টিও কমবেশি দেখতে পাই। সম্মানহানি তো অনেক আগেই শুরু হয়েছে, প্রস্তাবিত বেতনকাঠামোতেই তাচ্ছিল্যের চূড়ান্ত প্রকাশ ভেবেছিলাম। কিন্তু না, সরাসরি শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত হলেন শিক্ষকেরা।
অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন, এখন পর্যন্ত। এখানে টাকা নেই, বসার জায়গা নেই, গবেষণায় বরাদ্দ নেই, আবাসিক ব্যবস্থা পেতে বহু বছরের সাধনা করতে হয়—তবু সেরা শিক্ষার্থীটি যে আজও শিক্ষক হতে চান, এ এক জাতিগত অভ্যাস। এ উপমহাদেশে শিক্ষকতা মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত হয়ে এসেছে প্রাচীনকাল থেকে। গুরুর ঘরে চাল থাকবে না, সবচেয়ে দামি কাপড়টি তাঁর সন্তান পরতে পারবে না, কিন্তু তাঁর সম্মান থাকবে। সেই সম্মান আজ আর নেই, কিন্তু পাখি উড়ে গেলেও ‘পড়ে থাকে স্মৃতির পালক’-এর মতোই সম্মান নামের স্মৃতির ঘোর। সবচেয়ে সেরা শিক্ষার্থী সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করেন, পিএইচডি-পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা শেষ করে, বছর বিশেক চাকরি করার পরেও যে বেতন পান, তা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীর কোনো বহুজাতিক কোম্পানিতে সদ্য যোগ দেওয়া চাকরির বেতনের চেয়ে কম।
আমার মনে আছে, শিক্ষাজীবন শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরে আমার মাতামহী আমার বেতন জিজ্ঞেস করেছিলেন। বেতনের অঙ্ক শুনে মুখ শুকনো করে বলেছিলেন, ‘একটা ভালো চাকরি নিতে পারলে না? তিনি তাঁর পরিচিত গণিত বিষয়ের এক স্কুলশিক্ষকের নাম উল্লেখ করেছিলেন, প্রাইভেট পড়িয়ে যিনি মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় করতেন তখনই। ‘তোমার মাস্টারিতে প্রাইভেট নাই?’ খুব হেসেছিলাম তখন। বয়স কম, আদর্শতাড়িত মন, তখনো আওড়াই সক্রেটিস, ‘হাউ মেনি থিংস আই ক্যান ডু উইদাউট।’ ভাবতাম, একজন বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকের সম্মানই আসল কথা, বেতন-প্রাইভেট দিয়ে মাপা যায় না। হা সম্মান!
শুনেছি, পাকিস্তান আমলে সরকারি কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের বেতনকাঠামো সমপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়ে একটু বেশি ছিল। স্বাধীন দেশে সমান হয়েছে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ক্রমেই কমেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক যে বেতন পান, সেই বেতনে আসলে ঢাকা শহরে একটি বাসযোগ্য বাসা ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকা সম্ভব নয়, যদি না বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা দেখেন তিনি। অথচ সেই ১৯০৭ সালে ‘হারভেস্ট জাজমেন্ট’-এ অস্ট্রেলিয়ার ইন্ডাস্ট্রিয়াল আরবিট্রেশন কোর্টে বিচারপতি হিগিনস একজন শ্রমিকের ন্যূনতম বৈধ মজুরি ঘোষণা করেছিলেন এই মর্মে যে একজন অদক্ষ শ্রমিকের নিজেকে চালানো, তাঁর স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদানসহ গ্রহণযোগ্য স্বাচ্ছন্দ্যে চালানোর সমপরিমাণ অর্থ হবে ন্যূনতম মজুরি। বলাই বাহুল্য, সেই ন্যূনতম মজুরি আমাদের নেই। এই অবস্থা অবশ্য একজন শুরুর দিকের সরকারি কর্মকর্তারও, তবে পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ে, শিক্ষকদের সে সুযোগ নেই। অন্যান্য চাকরির বেতন বা সুযোগ-সুবিধার দিকে তাকাইনি কখনোই, জানি যে আমি স্বেচ্ছায় এসেছি এই চাকরিতে। এও জানি যে বহুদিন থেকেই শিক্ষকেরা স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো দাবি করে আসছিলেন। স্বতন্ত্র কাঠামোর সুপারিশই করেছে বটে ফরাসউদ্দিন কমিশন!
সপ্তম বেতনকাঠামো পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের বেতনকাঠামোতে বৈষম্য ছিল না। ‘সিলেকশন গ্রেড’ পাওয়া অধ্যাপকেরা সরকারের সর্বোচ্চ বেতনকাঠামোর অধিকারী হয়ে সচিব পদমর্যাদায় বেতন-ভাতা পেতেন। দুই বছর আগে ‘সিনিয়র সচিব’ পদ চালু করা হলে শিক্ষকেরা এক ধাপ পিছিয়ে পড়েন। প্রস্তাবিত জাতীয় বেতনকাঠামো নিয়ে সচিব কমিটির সুপারিশে সচিবের ওপরে ‘মুখ্য সচিব/মন্ত্রিপরিষদ সচিব’ ও ‘সিনিয়র সচিব’ নামে পৃথক দুটি স্কেলের সুপারিশের মাধ্যমে শিক্ষকেরা দুই ধাপ পিছিয়ে পড়েছেন। সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকেরা জাতীয় বেতন স্কেলে দুই ধাপ পিছিয়ে পড়লে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষকেরাও পিছিয়ে পড়বেন। যদিও সিলেকশন গ্রেডকেই বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মূল বেতনকাঠামোতে সপ্তম বেতনকাঠামোর এক ধাপ নিচে বেতন বিন্যাসের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে তিন ধাপ অবনমন সত্যিই বিস্ময়কর। প্রজাতন্ত্রের বেতনকাঠামো যেহেতু পদমর্যাদার স্মারক, তাই বেতনকাঠামোর এই অবনমনমূলক প্রস্তাব শিক্ষকদের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। সচিব কমিটির এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে বেতন ও পদমর্যাদা কমে যাবে দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষকের। কী এমন ঘটল যে এহেন সুপারিশ করা হলো!
এমন একটি অসম্মানজনক প্রস্তাবের বিপরীতে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু গণমাধ্যমে এই ভদ্রোচিত আন্দোলনের তেমন অভিঘাত নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শুনিনি এ IJবিষয়ে। টক শোতে ঝড় ওঠেনি শিক্ষকদের ওপর এহেন অসম্মানজনক প্রস্তাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এতটা গুরুত্বহীন কবে হলেন?
এরই সঙ্গে যুক্ত হলো শিক্ষকদের ওপর ছাত্র নামধারীদের মার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে আন্দোলন করছিলেন। তবু একদল ‘শিক্ষার্থী’ লাঞ্ছিত করল শিক্ষকদের। কার মদদে? উপাচার্য মহোদয় ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, তবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা তদন্তের জন্য নয়, তাঁর ওপর কেন ‘হামলা’ হয়েছে, সেটি দেখার জন্য।
স্বাধীনতার পরে, বিশেষ করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে, সেনাশাসনের সময় থেকে শিক্ষক-ছাত্র রাজনীতির নামে যে প্রবল দলীয়করণ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, সেই প্রতিকারহীন ঘটনাপ্রবাহের ফলাফল ফ্রাঙ্কেনস্টাইন দানব হিসেবে আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্রমান্বয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর চেষ্টা হয়েছে সব সরকারের আমলে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন থেকেই বোঝা যায়, শিক্ষক-রাজনীতি আসলে কতটা নতজানু রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে। রাতের অন্ধকারে ভিসি অফিস দখলের মতো নির্লজ্জ ঘটনাও ঘটেছে। শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরিবর্তে যখন থেকে শিক্ষকেরা সরকারের অনুকম্পায় পদাসীন হতে শুরু করেছেন, তখন থেকেই সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার প্রয়োজন তীব্র হয়েছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, সেই সরকারের পছন্দের ব্যক্তিকে যখন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে থোড়াই জ্ঞান করে হাতে ধরে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া হয়, তখন তাঁকে রক্ষা করার দায়ও সরকারেরই বৈকি! কখনো পুলিশ দিয়ে, কখনো দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে এই পাহারা দেওয়া হয়। আমরা এই প্রক্রিয়াটিকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে কেবল শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলাকে নিন্দা জানাতে পারব ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারব না। দুঃখের বিষয়, এত বড় ঘৃণ্য একটি ঘটনা ঘটল, কিন্তু সারা দেশের শিক্ষক সমাজ তবু একত্র হয়ে প্রতিবাদ জানাতে পারল না।
শিক্ষক-রাজনীতি কিংবা ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তো মাত্র অল্প কয়েকজন শিক্ষক, তাঁদের হাত-পা বাঁধা জানি। বিশ্বাস করি, বেশির ভাগ শিক্ষকই বেদনাবোধ করেন রাষ্ট্রের আর সরকারি ছত্রচ্ছায়ায় সংঘটিত এমন সব অসম্মানের। এখনো যদি আমরা এসব অপমানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারি, কবে আর পারব তবে?
শিক্ষকেরা দলীয় রাজনীতি আর আনুগত্যের বাইরে তাঁদের প্রবল শিক্ষক সত্তা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন যদি, আমার বিশ্বাস, এখনো সময় আছে। প্রস্তাবিত বেতনকাঠামোর অসম্মান কিংবা সরকারি ছাত্রসংগঠনের ক্যাডার দিয়ে শিক্ষক পেটানোর মতো ঘটনাও যদি আমাদের একত্র প্রতিরোধে দাঁড় না করাতে পারে, তবে পরবর্তী মার এবং আরও অসম্মান মেনে নেওয়ার জন্য তৈরি থাকাই ভালো। অসম্মান তো তাঁদেরই করা যায়, যাঁদের সম্মানবোধকে আনুগত্যে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে, আর যাঁদের পেশাগত ঐক্যে এমন বিভাজন ঘটেছে যে পেটানোর পরেও তাঁরা একসঙ্গে প্রতিবাদ করতে পারেন না। সচিব কমিটি কিংবা ছাত্রলীগের আচরণ বিষয়ে বলার কিছু নেই। শুধু আমার মতো সাধারণ শিক্ষকদের কাছে প্রত্যাশা এখনো শিক্ষক সত্তা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর।
কাবেরী গায়েন: অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Published on: http://goo.gl/KQMdO9

বাংলাদেশের আন্দোলনের সংস্কৃতিঃ প্রেক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আন্দোলন


আমাদের দেশে যেকোন দাবি আদায় করতে হলে civilized পথে দাবি জানালেই হয় না। দাবি আদায় করতে হলে আন্দোলন করতে হবে। আবার প্রতিকী আন্দোলন করলে হবে না। কোন কিছুকে জিম্মি করে আন্দোলন করতে হবে যেমন রাস্তাঘাট আটকে দিতে হবে। অথবা ডাক্তার হলে রোগী দেখবনা, শিক্ষক হলে ক্লাস নিব না এ জাতীয় কর্মসূচী নিতে হবে। আবার এ জাতীয় কর্মসূচি শুধু প্রতিকী হিসাবে নিলে কর্তিপক্ষ মেনে নিবে না। আন্দোলনকে লাগাতার চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলনে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হবে। তারপরও কর্তিপক্ষ অনড় থাকবে, অপেক্ষা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না damage ম্যাক্সিমাম না হয়। তবে সবার কি সব রকম আন্দোলন মানায়? আমরা শিক্ষকরা যদি ভাবি আমরা অন্য সকল প্রফেসন থেকে ভিন্ন তো আমাদের আচরণও হবে ভিন্ন। আমরা কি সেরকম ভিন্ন আচরণ করছি? শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ইনসিডেন্টটি বার বার ভিডিওতে দেখছি। এ পর্যন্ত অনেকবার দেখেছি। দেখে আমার অন্তর্দাহ হয়েছে। অনেকবার দেখে আমার মনে হয়েছে আমার প্রাথমিক রিঅ্যাকশন ভুল ছিল। আমি শুধু একতরফা ভাবে উপাচার্য্য এবং ছাত্রলীগকে দায়ী করেছি।

বার বার ভিডিও ফুটেজ দেখে মনে হয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আনদোলনের ধরনটিও civilized ছিল না। একজনকে দেখলাম ভিসিকে দারিয়াবাধা খেলার মত করে পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করতে। এমনকি উপাচার্যের শরীরে touch লেগেছে বলেও আমার মনে হয়। আর উপাচার্য্যও কম যায় কিসে? উনিও শারীরিক শক্তি ব্যয় করে অফিসে ঢুকার চেষ্টা করেছেন। এগুলো কি পৃথিবীর কোন শিক্ষক সম্প্রদায় করতে পারে? আইনে হয়ত বাঁধা নেই কিন্তু সব কিছুই আইন দিয়ে চলে? সরকার পারত অনেক আগেই ঘটনার একটা civilized সমাধান দিতে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও দেখেছি সরকারকে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে যতক্ষণ না ঘটনার চরম অবনতি হয়। সরকার কেন বুঝতে পারে না যে, একটা বড় গ্রুপ (তারাও সরকার দলীয়) যখন ভিসির অপসারণ চায় তখন এটার সফল পরিনতি ঘটবেই। সরকারের উচিত এটা বুঝা। তাহলে সকলের জন্যই উইন-উইন ব্যাপার হয়। এসব ঘটনার মাধ্যমে শিক্ষক সমাজের মান সম্মান নিচে নামছে। কিছুদিন আগে দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষকরা একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন। তারপর তারা নিঃগৃহীত হয়েছেন। ওই শিক্ষক কে দেখেছিলাম উনি যে নিগৃহীত হয়েছিলেন সেটাকে ব্যবহার করে কিভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা লুটা যায় তার চেষ্টা করতে। যেভাবে উনাকে অপদস্ত করা হয়েছিল তাতে উনার লজ্জিত বা ধরণী দিখন্ডিত হোক উনাকে আড়াল করুক এরকম একটা ভাব আসা। আপনারা শিক্ষক। আপনি কেন একটি দলকে সমর্থন করে তার আন্দোলনের পার্ট হবেন? এগুলো করেই শিক্ষকদের অবস্থান উনারা তলানিতে ঠেকিয়েছে।

এগুলো কাম্য নয় কারণ শিক্ষক যদি উচু অবস্থানে না থাকে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মাঝে কোন gradient থাকবে না। আর জ্ঞানের flow হলো fluid ফ্লো এর মত উচু থেকে নিচে যায়। আর মর্যাদা কখনো দানের বিষয় না এটা আর্ন করার বিষয়। আসুন আমরা সবাই বিষয়টার গুরুত্ব অনুভব করি।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।