Thursday, April 24, 2014

শিক্ষকতা, সম্মান ও সম্মানী

মোঃ আবু সালেহ সেকেন্দার

সম্মানের দিক থেকে শিক্ষকরা সমাজের উঁচু স্তরের মানুষ। কিন্তু সম্মানী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা আজও বঞ্চিত। সরকার আসে, সরকার যায়; কিন্তু শিক্ষকদের ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে না। শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন, মন্ত্রীদের বক্তৃতা-বিবৃতি, নেতাদের স্লোগানে শিক্ষকদের সম্মান ও সম্মানীর বিষয়টি যুগ-যুগান্তর ধরে উচ্চারিত হলেও কোনো সরকারই সম্মানজনক স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়ন করেনি। প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের শিক্ষকের এখনও নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। শিক্ষকের ছাত্র-ছাত্রীরাই প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী হলেও দুর্ভাগ্য শিক্ষকদের পিছু ছাড়ে না। শুধু সম্মান নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

ক্ষমতার শীর্ষে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলে অথবা শিক্ষককে কাছে পেলে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে আনন্দে বিগলিত হন। কিন্তু শিক্ষকদের সম্মানীর বিষয়টি নিয়ে মুখে রাটি পর্যন্ত করেন না। মহামান্য বিচারকরা কত শত বিষয়ে স্বপ্রণোদিত রায় প্রদান করেন অথবা আইনজীবীরা প্রায়ই এটা-ওটা নিয়ে হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন; কিন্তু দুর্ভাগ্য শিক্ষকদের, তাদের কোনো শিক্ষার্থীই তাদের উপযুক্ত সম্মানীর বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয় না।

সরকারি ও বিরোধী দলের সব নেতাই কোনো না কোনো শিক্ষকের ছাত্র। তারাও সংসদে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর বিল উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু এমনটি কেউ কখনও করেছেন বলে শুনিনি। বরং একজন খ্যাতিমান অধ্যাপককে সংসদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে প্রশ্ন করা হয়েছে, এত টাকা কোথা থেকে আসে? গাড়ি-বাড়ি কোথায় পান? স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও তাই শিক্ষকদের উপযুক্ত সম্মানী প্রাপ্তির দাবি পূরণ হয়নি।

ধব ধবে সাদা পুরনো পাঞ্জাবি গায়ে, ভাঙা ছাতা হাতে, মরচে ধরা হাতলওয়ালা সাইকেলে অথবা কখনও হেঁটে মাইলের পর মাইল গিয়ে ছাত্র পড়ানো ব্যক্তিকেই আমরা শিক্ষক বলে জানি। ধরেই নেই, শিক্ষকরা হবেন অতি ভদ্র, বিদ্যার ভারে তাদের মাথা নুয়ে যাবে। সাধাসিদে জীবনযাপন করবেন তারা। আর্য, মৌর্য, গুপ্ত, হুন, পাল, সেন, সুলতানী, পাঠান, মুঘল, ইংরেজ অথবা স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষক মানেই এমন চিত্র মানসপটে ফুটে ওঠে। কিন্তু আমরা ভুলেই গেছি, শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে অনেক। ডিজিটাল যুগে আছি আমরা। এখন একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পড়াতে ইন্টারনেট ঘাঁটতে হয়। সর্বশেষ তথ্য জানাতে হয়। কিন্তু শিক্ষকদের যদি কম সম্মানী দেই, তাহলে তাদের পক্ষে কি ডিজিটাল যুগের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া সম্ভব?

শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল যুগের উপযুক্ত করে গড়তে চাইলে শিক্ষকদের সম্মানীর ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও দেশের অনেক শিক্ষক বৈদিক যুগের মতো গুরুদক্ষিণা নিয়ে অথবা পাল যুগের মতো লজিং থেকে ছাত্র পড়ান। যারা সরকারি বেতন পান, তাদের অবস্থাও যে খুব ভালো, এমন নয়। উচ্চ বাজার মূল্যের যুগে যে বেতন তারা পান, তা দিয়ে মাসের অর্ধেকটাও চলে না।

সম্মানজনক সম্মানী না পেলেও কোনো সময়েই শিক্ষকদের সম্মানের কমতি হয়নি। প্রায় সব যুগেই শিক্ষকতা মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। খলিফা হারুন তার পুত্র আমীনের শিক্ষককে ছাত্র প্রহারের যেমন অনুমতি দিয়েছেন, তেমনি মোগল বাদশা আওরঙ্গজেব তার পুত্র কেন শিক্ষককে নিজ হাতে পা ধুয়ে না দিয়ে শুধু পানি ঢেলেছে, তা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। কিন্তু এখন শিক্ষকের সেই সম্মানটুকুও যেতে বসেছে। ছাত্র কর্তৃক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটছে অহরহ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতার অবৈধ দাবি না মানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারের টাকা কাজ না করেও তুলে নিতে বাধা দেয়ায় অথবা পান্তা-ইলিশের আয়োজন না করায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। আর পরীক্ষার হলে নকল ধরায় প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কত শিক্ষককে যে বখাটে শিক্ষার্থীদের হাতে বেধড়ক পিটুনি খেতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।

উপযুক্ত সম্মানী ও যথাযথ সম্মান পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দায়িত্বও কম নয়। শিক্ষকরা যদি লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকারপন্থী আর সরকারবিরোধী পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েন, তবে শিক্ষকদের সম্মান দিন দিন কমবে বৈ বাড়বে না! আর স্বতন্ত্র পে-স্কেল প্রাপ্তির স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষকরা কখনোই সরকারের কাছে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর বিষয়টি উত্থাপন করবেন না। বরং নিজের ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের হিসাব কষে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টর, প্রভোস্ট, হাউস টিউটর, ব্যাংকের এমডি, পরিচালক হয়ে আখের গোছাবেন। সাধারণ শিক্ষকরা যে তিমিরেই ছিলেন, সেই তিমিরেই থেকে যাবেন। আর ওইসব লেজুড়বৃত্তিকারীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা ছাত্রনেতারা শিক্ষক লাঞ্ছিত করে পার পেয়ে যেতে থাকলে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারপন্থী এক শিক্ষকের মতো যদি অন্য দলবাজ শিক্ষকরাও ফতোয়া দেয়া শুরু করেন : পরীক্ষায় পাস করা লাগবে না, ছাত্রলীগ করলেই চাকরি, তাহলে সমাজের সাধারণ মানুষও শিক্ষকদের আর সম্মানের চোখে দেখবে না। তাই শিক্ষকদের সম্মানজনক সম্মানী পেতে ও সম্মান ধরে রাখতে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি পরিহার করে গবেষণায় নিয়োজিত হয়ে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেদের গড়তে হবে। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি উত্থাপন করতে হবে। ঢাবির ওই দলকানা শিক্ষকের মতো পাস না করলেও দলীয় বিবেচনায় চাকরি দেয়ার ফতোয়া বন্ধ করতে হবে।

প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় আনার জন্য সরকার যত উদ্যোগই গ্রহণ করুক না কেন, তাতে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন অসম্ভব। একজন ভালো মানের কারিগরের পক্ষেই উচ্চমানের শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একজন মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারেন। কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীরা তখনই অধিক হারে শিক্ষকতা পেশায় আসবেন, যখন তাদের উপযুক্ত সম্মানী প্রদান করা হবে। তাই সরকারের উচিত প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করা। সরকারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও সহকারী শিক্ষকদের কথাও ভাবতে হবে। উভয়ের সম্মানজনক সম্মানী নিশ্চিত করতে হবে।

২০১৪ সালের মধ্যে শিক্ষকদের উচ্চতর বেতন সুবিধা নিশ্চিত করার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্র“তির বাস্তবায়নই পূরণ করতে পারে শিক্ষকদের সম্মানজনক সম্মানী প্রাপ্তির দীর্ঘদিনের দাবি। এক্ষেত্রে বর্তমান পে-কমিশনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।


মোঃ আবুসালেহ সেকেন্দার : শিক্ষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়


salah.sakender@gmail.com

Published in: http://www.jugantor.com/sub-editorial/2014/04/24/91722

Tuesday, April 15, 2014

শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি

এম এম আকাশ, মোহাম্মদ তানজিমউদ্দীন খান, সেলিম রেজা নিউটন, মোহাম্মদ নাসের, সুস্মিতা চক্রবর্তী, মানস চৌধুরী, বখতিয়ার আহমেদ, আ-আল মামুন মেহের নিগার, মোশাহিদা সুলতানা, স্বাধীন সেন, কাজী মারুফুল ইসলাম, মাহমুদুল সুমন, রোবায়েত ফেরদৌস, সামিনা লুত্ফা ও ফাহমিদুল হক


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার এবং সান্ধ্য কোর্স বাতিলের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছে তাকে ঘিরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের ইস্যুটি আবার সচল হয়েছে। এটা একটা চলমান ইস্যু এবং তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদি চরিত্র অক্ষুণ্ন থাকবে না বেসরকারিকরণের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে—এই দুইয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্ব হিসাবে ক্রিয়াশীল থেকেছে।

নব্বই-পরবর্তী তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের স্রোতে ভেসে ভারী শিল্প, স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা সবকিছুর যথেচ্ছ বেসরকারিকরণ ঘটেছে। এই জোয়ারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাবন ঠেকানো যায়নি। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক বাস্তবতা। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচারে-কালচারে কেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচার করতে হবে? নব্বইয়ের আগে এইসব বাণিজ্যিক কোর্সের অস্তিত্ব তেমন ছিল না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এইসব সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা বা সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্সের আমদানি হয়েছে বা হচ্ছে, শিক্ষার সমপ্রসারণের উদ্দেশ্যে নয়, শিক্ষকদের আয়বৃদ্ধির বিষয়টিই এখানে প্রধান থেকেছে। 

একথা ঠিক, ক্রমবর্ধমান বাজারমূল্যের বিপরীতে শুধু শিক্ষকদের কেন, খোদ সরকারি বেতনকাঠামোই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ইথিওপিয়ার মত দরিদ্র দেশ, মাথাপিছু জিডিপি অনুসারে যাদের বিশ্বে অবস্থান ১৬৯তম, তাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকের সূচনা বেতনও ৮৬৪ মার্কিন ডলার, আর আমাদের ক্ষেত্রে তা ১৫০ ডলারের কাছাকাছি, যদিও জিডিপি অনুসারে আমাদের অবস্থান ১৫১তম। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের একজন প্রভাষকের সূচনা বেতন ৩৯৫৪ মার্কিন ডলার। পাকিস্তানের পরিস্থিতিও একইরকম। ইথিওপিয়া, ভারত-পাকিস্তান পারলেও আমরা পারি না। এই ধরনের বেতন কাঠামো দুর্নীতিকে উত্সাহিত করে। আর সান্ধ্য কোর্সে যুক্ত হওয়া শিক্ষকদের দিক থেকে দুর্নীতি নয়, তবে তাকে নৈতিক পতন বলা যায়, যেক্ষেত্রে একই শিক্ষককুল দিবা কোর্সে তাদের সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারেন না বলেই অভিযোগ রয়েছে। বাড়তি একটি পূর্ণাঙ্গ কোর্স চালু হলে দিবা কোর্স অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

শিক্ষকদের জন্য যদি পৃথক বা বর্ধিত বেতনকাঠামো দাঁড় করানো যেত, তবে শিক্ষকদের উপার্জন বৃদ্ধির জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে সার্টিফিকেট বিক্রয় কেন্দ্র বানানোর প্রয়োজন পড়তো না। শিক্ষকদের পৃথক কাঠামোর দাবিটিও পুরনো হতে চলেছে, কিন্তু এটা অর্জনের জন্য শিক্ষক নেতারা নতুন কোনো খবর দিতে পারেন না। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগে এটা ইস্যু আকারে আসে এবং নির্বাচনের পরে যথারীতি এটাকে ভুলে যাওয়া হয়। সর্বস্তরের শিক্ষকরাও এই দাবির প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগী না হয়ে বাজারের কষাঘাতে জর্জরিত তারা সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, সান্ধ্য কোর্স ইত্যাদির দিকে ছুটোছুটি করেন। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল বর্ধিত ফি প্রত্যাহার এবং বেশ কয়েকটি বিভাগে একইসঙ্গে চালু হতে যাওয়া সান্ধ্য কোর্সের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য। জোট সরকারের আমলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে ৫শ কর্মচারী এবং মহাজোট সরকারের আমলে প্রায় ২০০ শিক্ষক বাজেট বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। এই সঙ্কট কাটাতে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ফি বাড়াতে চাচ্ছে। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বর্ধিত ফি প্রথমে স্থগিত এবং পরে বাতিল করেছে, কিন্তু সান্ধ্য কোর্সের সিদ্ধান্ত বলবত্ থেকেছে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে গেলে তাদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ প্রায় একত্রে হামলা করে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। কয়েক দফা হামলার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কিছু ভাঙচুরও করেছে। অনেকেই বলছেন যে, এই ভাঙচুরের পেছনে সর্বত্র সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিল না, শিক্ষামন্ত্রী যেমন বলেছেন, ছাত্রশিবির যুক্ত হয়েছে। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, এই সহিংসতা দ্বিতীয় পর্যায়ের সহিংসতা, প্রাথমিক সহিংসতায় আক্রান্ত হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমেই পুলিশ বৈধ অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের উপরে হামলা চালিয়েছে, তাদের মদদেই ছাত্রলীগ অবৈধ অস্ত্র হাতে চড়াও হয়েছে। এখন প্রপাগান্ডা মেশিনারিজ সক্রিয় হয়েছে, শিবির জুজুকে দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবিকে নস্যাত্ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন এই পুরো ঘটনার জন্য একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, যার মাধ্যমে 'দুষকৃতকারী'দের বিরুদ্ধে 'যথাযথ' ব্যবস্থা নিশ্চয়ই নেয়া হবে। শতাধিক শিক্ষার্থীকে আসামি করে ছয়টি মামলা হয়েছে বিশ্বদ্যািলয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। যথারীতি আক্রমণকারী পুলিশ ও ছাত্রলীগের কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। এরকম শোনা যাচ্ছে যে, যেসব শিক্ষক আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাদেরকেও 'দেখে নেয়া' হবে এবং প্রয়োজনে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিও উচ্চারিত হচ্ছে। নৈতিকতা কোথায় নেমে এসেছে! 

জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকেই সান্ধ্য কোর্স বিরোধী আন্দোলন চলছিল। তবে বর্ধিত ফির ঘোষণায় আন্দোলন বেগবান হয়ে ওঠে গত সপ্তাহে। টানা চার-পাঁচদিন পাঁচ থেকে ১০ হাজার শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিল। কেবল ২ তারিখে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলার পর শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। বিচিত্র নয় যে, পরিস্থিতি ঘোলা করতে বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা জামায়াত-শিবির চক্র অন্তর্ঘাতী আচরণ করছে। কিন্তু শিবিরের উপস্থিতি ছাত্রলীগের সহিংসতাকে বাতিল করে না। অন্যদিকে যে জামায়াত-শিবির বিগত কয়েক মাস পেট্রোল বোমা নির্ভর আন্দোলন করেছে, তাদের পক্ষে সাত-আট হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে পথে নামানো অসম্ভব। 

আমরা মনে করি, বর্ধিত ফির পাশাপাশি সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্স চালু হবার বিষয়টি কেবল শিক্ষকদের একতরফা সিদ্ধান্ত নেবার বিষয় নয়, শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কী মনে করছে, তাকেও আমলে নিতে হবে। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জনগণের করের পয়সায় পরিচালিত হয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই এ বিষয়ে কথা বলার অধিকার আছে। যদি কোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসাবে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় তবে তা নিঃসন্দেহে পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। পাশাপাশি এই প্রশ্নটিও আমরা জোরেশোরে উচ্চারণ করতে চাই, রাষ্ট্র কেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দায় আর নেবে না, যা এতদিন তারা নিয়ে এসেছে? নব্বই দশকের শুরু থেকে গৃহীত নিওলিবারেল পুঁজিবাদী দর্শনকেই কেন একমাত্র অর্থনৈতিক দর্শন হিসাবে আমাদের মেনে নিতে হবে, যার প্রতিনিধি হিসাবে বিশ্বব্যাংক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেবার পরামর্শ ক্রমাগত দিতে থাকবে এবং সরকার তার আজ্ঞাবহ হয়ে সর্বাংশে পালন করার চেষ্টা করে যাবে? যদি তাই হয়, রাষ্ট্রের ভূমিকা তাহলে কী আসলে? সামষ্টিক কল্যাণ নিশ্চিত করা কি রাষ্ট্রের কাজ নয়? রাষ্ট্র যদি নিজেই 'লাভজনক বাজার' হয়ে উঠে, তাহলে এই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটির দরকার বা কী? 

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিদ্যাচর্চা ও গবেষণার দিকে মনোযোগী হবার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিবর্তনের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই দায়িত্ব পালন করেও এসেছে। কেবল ভাষা আন্দোলন বা স্বাধিকার আন্দোলন নয়, স্বাধীনতার পরেও যখনই একনায়কতন্ত্র বা মিলিটারিতন্ত্রের হাতে দেশ কুক্ষিগত হয়েছে, তা থেকে দেশকে উদ্ধার করার উদ্যোগ নিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এর ফল পুরো দেশই ভোগ করেছে, সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছেন সম্ভবত রাজনীতিবিদরাই, যারা পরে গণতান্ত্রিক সরকারের অংশ হয়েছেন। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ একজন অত্যন্ত গরিব কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীকেও উচ্চশিক্ষা নেবার সুযোগ করে দেয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তার চরিত্র নিয়ে যতদিন বাঁচবে, বাংলাদেশ ততদিন বাঁচতে পারবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের 'পাবলিক' চরিত্র নষ্ট হলে বুঝতে হবে, বাংলাদেশ সর্বাংশে বাজারমুখী-নিষ্ঠুর-দরিদ্রবিদ্বেষী এক দেশে পরিণত হবে। 

আমরা মনে করি, আমাদের মতো (উন্নয়নশীল) দেশে প্রাইমারি থেকে টার্শিয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা হবে ফ্রি। রাষ্ট্রযন্ত্র চালানোর জন্য মানবসম্পদ দরকার। সরকার নিজ উদ্যোগে নিজের প্রয়োজনে বিনিয়োগ করে সেই মানবসম্পদ তৈরি করবে। বিনিময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দেশকে নগদ অর্থ দেবে না, কিন্তু এমন এক মানবসম্পদ দেবে যারা দেশকে আর্থিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সমর্থ। তাই বাজারচরিত্র বা মুনাফার বিচারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচার করার মানে হলো, আমাদের নীতিনির্ধারকরা দূরের জিনিস দেখার দৃষ্টিশক্তি খুইয়ে বসেছেন। পশ্চিমা দেশের উচ্চ টিউশন ফির উদাহরণ এক্ষেত্রে টানার প্রয়োজন পড়বে কেন? আর ওদের ওখানেও স্থানীয়দের জন্য ফি অনেক কম, উচ্চ ফি তারা বিদেশির ঘাড়ে চাপায়। আর ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যে ফি বৃদ্ধির কারণেই প্রবল ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। উদাহরণ দিতে হবে শ্রীলঙ্কার, ফ্রি এডুকেশন সিস্টেমের কারণে একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গঠন করতে পেরেছে তারা। এখন প্রশ্ন উঠবে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তুকি দেবার অর্থ আসবে কোথা থেকে? উত্তর, বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সমরবান্ধব না হয়ে শিক্ষাবান্ধব হতে হবে সরকারকে। মিগ বিমান না কিনে তার অর্থ দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটা সেবা দেয়া যাবে, তার হিসাব করতে হবে। আর যে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর আমরা পাই কিছুদিন পর পর তাতে প্রমাণিত হয়, দেশের অর্থনীতির রিজার্ভ এরকম লুটপাটকে যদি প্রশ্রয় দেবার বিলাসিতা করতে পারে, তবে শিক্ষাখাতে বাজেটবৃদ্ধিও তার জন্য কঠিন কোনো বিষয় নয়। 

আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হলো, প্রকৃত শিক্ষাবিদদের দিয়ে স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে, যেই কমিশন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-রাজনীতিবিদ সবার সঙ্গে কথা বলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রকে পুনঃসংজ্ঞায়ন করবে। সমান্তরাল উদ্যোগ হিসাবে শিক্ষকদের পৃথক বেতন কাঠামো প্রবর্তন করতে হবে এবং শিক্ষকদের এ বিষয়ে অনেক সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাশাপাশি অর্থ নয়, মেধার যোগ্যতায় সব আর্থিক স্তরের মানুষ যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়, তার জন্য শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি ন্যূনতম রাখতে হবে। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্সসমূহ বাতিল করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়কে খুলে দিতে হবে। সকল মামলা প্রত্যাহার করে, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি দিয়ে সহিংসতার বিপরীতে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।

লেখকগণ: বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
Source: http://goo.gl/fGN3Iq

Sunday, February 23, 2014

আমরা কি এই বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছিলাম?

রাগিব আহসান, রুহিন হোসেন, বজলুর রশীদ, রাজেকুজ্জামান, আব্রাহাম লিংকন, বৃত্তা রায়, সাদাকাত হোসেন খান, কাফী রতন


ভাষা আন্দোলনের জঠর থেকে জন্ম নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৫-এর সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন প্রতিরোধ, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সূতিকাগার মতিহারের সবুজ চত্বর। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশকের সামরিক স্বৈরাচারী শাসনকে রুখতে সমগ্র উত্তরবঙ্গে লড়াকু প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। উত্তরবঙ্গের ৫০ লাখ কৃষক পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা-চেতনার প্রতীক এ বিশ্ববিদ্যালয়।
অথচ দিনকে দিন মুছে ফেলা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের আত্মপরিচয়। শহীদ জোহা ক্যাম্পাসকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বর্বর যুগে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ ফেব্রুয়ারির সহিংসতায় আমরা স্তম্ভিত, মর্মাহত, ক্ষুব্ধ। আমরা কখনো কল্পনা করিনি, ড. জোহার সমাধির সামনেই শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানো হবে। আমরা কখনো কল্পনা করিনি, শাজাহান সিরাজ, রিমু, রূপম, তপনের রক্তে ভেজা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের সব অর্জনকে এভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা হবে। যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী জ্ঞানপরম্পরার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কী করে প্রক্টোরিয়াল বডির উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হতে পারে? গণমাধ্যমে সহকারী প্রক্টরদের মুখ বাঁধা ছবি আমাদের বিস্মিত করেছে। উনসত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে ড. জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ছিলেন। কৃষকের রক্ত আর ঘামের মূল্য তিনি বুঝেছিলেন। তাই শিক্ষার্থীর বুক বুলেটে বিদ্ধ হওয়ার আগে তাঁর বুক ভেদ করতে হয়েছে। শহীদ জোহার এই বলিদান যুগে যুগে স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনের চেতনা হয়ে থেকেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বজনীন জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র। জ্ঞানের বিকাশে মুক্ত গবেষণা ও বিদ্যাচর্চা গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যৌথ প্রচেষ্টা তা সম্ভব করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ যেকোনো সংকট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন—এটাই যৌক্তিক, এটাই সবার কাম্য। গুলি চালানোর প্রয়োজন হবে কেন? গণমাধ্যমে যাদের প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করতে দেখা গেছে, তারা কারা? তারা যে ছাত্রসংগঠনেরই হোক, তারা গুটি কয়েক মাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্বশীল শক্তি তারা নয়। তবে কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? কেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রগতিশীল শিক্ষার্থী নেতাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করল? কেন বারবার অস্ত্রবাজির পরও তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা আন্দোলনের ন্যায্যতা অস্বীকার করেছেন, আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে ভ্রান্ত তথ্য প্রদান করেছেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষক দলের সত্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এর প্রকৃত চিত্র। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী-সংগঠকেরাই মূলত সাম্প্রতিক আন্দোলন সংগঠিত করেন। প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন একাডেমিক গ্রুপগুলোই ছিল এর প্রধান চালিকাশক্তি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে: প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল অহিংস। ২ ফেব্রুয়ারি প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সমাবেশও ছিল শান্তিপূর্ণ। আমাদের প্রশ্ন, ভ্রান্ত প্রচারণা কেন? পুলিশকে গুলিবর্ষণের বৈধতা দিতেই কি এই অপকৌশল? তেমনটা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির নিজস্ব কোনো তৎপরতার দরকার হবে না। সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী প্রগতিশীল শক্তিকে ক্ষেত্রশূন্য করতে পারাটাই তো তার জন্য যথেষ্ট!
আহত শিক্ষার্থীদের অনেকেই আমাদের ফোন করছেন। জানাচ্ছেন তাঁদের দুরবস্থার কথা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাজীব। তাঁর চোখ ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়েছে। ছররা গুলি এখনো ঢুকে আছে তাঁর মাথার ভেতরে। চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই আহত অসহায় শিক্ষার্থীর চিকিৎসা তো দূরে থাক, কোনো খোঁজ পর্যন্ত নেয় না। এমন পরিস্থিতি হলো কেন? শিক্ষকেরা অভিভাবকদের সামনে দাঁড়াবেন কেমন করে? শিক্ষকের উচ্চ নৈতিকতা, সংবেদনশীলতা—সবই কি মিছে হয়ে যাবে? আমরা শঙ্কিত।
বিশ্ববিদ্যালয়কে যে দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা কারও কাম্য নয়। সান্ধ্য কোর্স বাণিজ্যিক হোক আর অবাণিজ্যিকই হোক, যৌক্তিক হোক বা অযৌক্তিক হোক—তা আলোচনা সাপেক্ষ বিষয়। তারও আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্প্রসারণ ও তার অর্থায়ন আলোচনার একটি মৌলিক প্রসঙ্গ। একা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং সর্বোপরি রাষ্ট্র এর সঙ্গে জড়িত। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর প্রশ্ন সামাজিকভাবেই উত্থাপিত হয়ে থাকে, তবে তা সব পক্ষের মধ্যে আলোচনা করেই ঠিক করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ জ্ঞান পেটেন্ট হচ্ছে। বাণিজ্য অনুষদগুলো নতুন নতুন বাণিজ্য প্রকল্প হাজির করছে। এসব জ্ঞানের শুধু সামাজিক মূল্যই নয়, বর্তমান দুনিয়ায় আর্থিক মূল্যও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সে বিষয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহজেই যেন আলোচনা করা যায়, সে জন্য তাঁদের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে কার্যকর করা জরুরি। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনকাঠামো পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তবে শিক্ষক সমিতিকে সে দাবি উত্থাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের গুলির মুখে দাঁড় করানোর মতো পরিস্থিতি তো কাম্য নয়।

 লেখকেরা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক নেতা ও সাবেক জাতীয় ছাত্রনেতা।
Source: http://goo.gl/xG90sJ

Wednesday, February 19, 2014

বিচারপতির মর্যাদা পেলেন ফরাসউদ্দিন


বেতন ও চাকরি কমিশনের সভাপতি মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনসহ পূর্ণকালীন চার সদস্যের পদমর্যাদা ঠিক করেছে সরকার।
একইসঙ্গে তাদেরকে ছয় মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে বৃহস্পতিবার আলাদা আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আদেশে বলা হয়েছে, ফরাসউদ্দিনকে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদায় বেতন ও চাকরি কমিশনের সভাপতি (পূর্ণকালীন) হিসাবে ছয় মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে ১৬ সদস্যের বেতন ও চাকরি কমিশন গঠন করে সরকার।

তাদের মধ্যে কমিশনের পূর্ণকালীন তিন সদস্য সাবেক হিসাব মহা নিয়ন্ত্রক মো. সাহাদ চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব খুরশীদ আলম এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাবেক সচিব মুহম্মদ আবুল কাশেমকে সচিব পদমর্যাদায় ছয় মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বেতন ও চাকরি কমিশনের সভাপতিসহ চার সদস্যের নিয়োগ ভূতাপেক্ষভাবে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ধরা হয়েছে।

Published in: http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article746900.bdnews

Monday, February 10, 2014

পে কমিশনের' কাজ শুরু; পদমর্যাদার সিদ্ধান্তহীনতায় দেরী


সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গঠিত 'পে কমিশন' আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে।

কমিশন গঠনের দুই মাস পর গতকাল প্রথম বৈঠক করেছে কমিটি। শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে নেওয়া অফিসে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাসউদ্দিন। এ সময় কমিশনের সদস্যসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

গত ডিসেম্বরে পে কমিশনের গেজেট প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কমিশন গঠনের পর থেকে আগামী এক বছরের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিশন বর্ধিত বেতন নির্ধারণের সুপারিশ করে প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবে। ওই সুপারিশের আলোকে বেতন-ভাতা বাড়ানো হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সর্বশেষ বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন সর্বোচ্চ ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানো হয়। এর আগে গঠিত সব পে কমিশনের মেয়াদ ছিল এক বছর। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন পে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ফরাসউদ্দিন গতকাল সমকালকে বলেন, বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেসব ইস্যু বিবেচনা করা হবে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর সুপারিশ করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পে কমিশনের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এতদিন কাজ শুরু করা যায়নি। নতুন পে কমিশনের চেয়ারম্যানকে আপিল বিভাগের বিচারপতির সমমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর আগে সব পে কমিশনের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা ছিল মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সমান। নতুন পে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ফরাসউদ্দিন আগের পদমর্যাদা গ্রহণে আপত্তি জানান। পরে এ-সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করে ড. ফরাসউদ্দিনকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়। 

সূত্র জানায়, নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত ২০ শতাংশ 'মহার্ঘ ভাতা' পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। যখন থেকে বর্ধিত বেতন-ভাতা কার্যকর হবে তখন মহার্ঘ ভাতা সমন্বয় করা হবে। গত ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন।

Published in: http://archive.samakal.net/2014/02/11/38952

আরো পড়ুনঃ

জাতীয় বেতন কমিশন গঠন

Sunday, February 9, 2014

বিশ্ববিদ্যালয়: উচ্চশিক্ষার অভিমান ও আত্মপ্রতারণা

আবুল মোমেন 



বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা, খুব সাধারণ বিচারেও, বর্তমানে মানহীন ও উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়েছে। আমাদের চোখের সামনেই এই পতন ঘটে চলেছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর অবক্ষয় চূড়ান্ত রূপ পেয়ে চলেছে। এ পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে একথা স্পষ্টভাবেই বলা যায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল লক্ষ্য ডিগ্রি ও সনদপত্র বিক্রয়ের বাণিজ্য। এই খাতের সফল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাফল্য এসেছে মূলত ব্যবসায়িকভাবেই, অ্যাকাডেমিক সাফল্য এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ এর নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে পারেনি আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এগুলোতেও আয়-উপার্জন বাড়ানোর প্রবণতা ক্রমেই মুখ্য হয়ে উঠছে-শিক্ষক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উভয়ভাবেই। এ নিয়ে মাঝে মাঝে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করে থাকে, যার অনিবার্য পরিণতি দীর্ঘকালের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়া। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই একই নাটকের পুনরাবৃত্তি হয়ে গেল।


একটু বলা দরকার, যদি সমাজে কোনো বিষয় নিয়ে সঠিক পথে মুক্ত আলোচনা, যথার্থ কিংবা সুস্থ বিতর্ক না হয় তাহলে নানা রকম উড়ো/উটকো ধারণা/সিদ্ধান্তের ফলে সে বিষয়ে করণীয় ও সমাজের প্রত্যাশায় ফারাক হয়ে যায়। আমার ধারণা উচ্চশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের প্রত্যাশায় বিস্তর পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্র এবং সমাজ সত্যিই উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে ডিগ্রিধারী চাকুরের প্রত্যাশাই করে থাকে। এছাড়া ডিগ্রি, কাগুজে ভালো ফল ও সনদপত্রের প্রতি মোহগ্রস্ত  এ সমাজ। ফলে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সকলে মিলে নিষ্ঠার সাথে পরীক্ষা-ডিগ্রি-সনদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। কোর্সের পড়া, প্রয়োজনীয় টিউটরিয়াল, লাইব্রেরিসহ ছাত্রের প্রয়োজনীয় পঠনপাঠন মানসম্পন্নভাবে শেষ হয়েছে কিনা তা মোটেও বিবেচ্য বিষয় নয়। কয়েকটি বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে ক্লাস করার বিশেষ গুরুত্ব নেই, আসন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন পাওয়া ও তার উত্তর সংগ্রহ করে শেখার ওপরই ছাত্রের ভাগ্য ও ভবিষ্যত নির্ভর করে। কিন্তু প্রশ্ন হল উচ্চশিক্ষায় করণীয় কি এবং উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য কি?


২০০৯ সনের বহুল প্রশংসিত জাতীয় শিক্ষা নীতিতে এসব বিষয়ে কী বলা আছে তা দেখে নিতে পারি আমরা। এতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল -

* কার্যকরভাবে বিশ্বমানের শিক্ষাদান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসন্ধিৎসা জাগানো এবং মানবিক গুণাবলী অর্জনে সহায়তা দান।
* নিরলস জ্ঞানচর্চা ও নিত্য নতুন বহুমুখী মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার ভেতর দিয়ে জ্ঞানের দিগন্তের ক্রমপ্রসারণ।
* জ্ঞানচর্চা, গবেষণা, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী হতে জ্ঞানের নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি।
* মেধার বিকাশ এবং সৃজনশীল নতুন নতুন পথ ও পদ্ধতির উদ্ভাবন।
* জ্ঞান সৃজনশীলতা এবং মানবিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নাগরিক সৃষ্টি।
যে ল্যাটিন শব্দ থেকে ইউনিভার্সিটি শব্দটির উৎপত্তি তার সম্পূর্ণ অর্থ হল ‘শিক্ষা ও গবেষক সম্প্রদায়’। পরে শব্দটির আধুনিক ব্যবহার সম্পর্কে অভিধান বলছে: স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দানের ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রধানত ‘ non-vocational subjects’ এর চর্চা হয়।
এসব কথা বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাই চার ধরনের সম্পদের সমাহার -গবেষণায় আগ্রহী চিন্তাশীল জ্ঞানীর সমন্বয়ে শিক্ষকসমাজ, জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় উৎসাহী ছাত্রসমাজ ইন্টারনেট সুবিধাসহ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, আধুনিক উন্নত সরঞ্জামসহ গবেষণাগার। এ কথা বলা বাহুল্য তরুণদের চাই শরীরে মনে সুস্থজীবন। তাই জিমনেশিয়াম ও খেলার মাঠ, সুইমিং পুলসহ শরীরচর্চার ব্যবস্থা, নিয়মিত অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়া 
অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ হল সৃজনশীল সুকুমার কলা চর্চার উপযোগী পরিবেশ, ব্যবস্থা, অবকাঠামো, সরঞ্জাম ইত্যাদির আয়োজন। আমার জানা মতে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কিছুই ঠিকভাবে নেই, আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এ সবই আজ ধুলো-জমা স্মৃতির বিষয়।
এসব ক্ষেত্রে পরিস্থিতি গুণগত পরিবর্তনের জন্যে দ্রুত সংস্কার কাজে হাত না দিলে বিশ্ববিদ্যালয় - সব বিশ্ববিদ্যালয় - পতনের শেষ সীমায় পৌঁছাবে, উচ্চশিক্ষা তলিয়ে যাবে চরম নৈরাজ্যে।
সংস্কার বলতে আয় বাড়ানোর কৌশল নয়, দরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থবহভাবে কার্যকর করা। উচ্চ শিক্ষার মূল লক্ষ্য তিনটি - কোনো বিষয়ে উচ্চতর ও বিশেষজ্ঞীয় জ্ঞান অর্জন, শিক্ষানীতি ও প্রচলিত ধারণার ভিত্তিতে বলা যায়, সে বিষয়ে গবেষণা ও উচ্চতর ভাবনার ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন ও নতুনতর জ্ঞান সৃজন, এবং অর্জিত ও সঞ্চিত জ্ঞানের মাধ্যমে মানবসমাজের কল্যাণে অবদান রাখার যোগ্যতা অর্জন। এই সূত্রে রবীন্দ্রনাথের উক্তিটি স্মরণীয়। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাঁর মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞা কি ? কবি ছোট্ট উত্তরে বলেছিলেন - যেখানে বিদ্যা উৎপন্ন হয়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি চেয়েছেন নানা দেশের নানা বিষয়ের প-িতদের সমবেত করতে যাঁরা নিজনিজ গবেষণা চালিয়ে যাবেন আর ছাত্ররা সহযোগী হিসেবে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করবে। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটিই এ ধরনের লক্ষ্য ও করণীয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়টি বিভাগে কত ছাত্র (এবং শিক্ষক) এই লক্ষ্য-করণীয় পূরণ করেন তা আনুবীক্ষণিক অনুসন্ধানের বিষয় হতে পারে। তবে একদম হয় না একথা আমি বলব না। দেশে এখনও প-িত ব্যক্তি আছেন, ভালো গবেষকও আছেন, সত্যিকারের জ্ঞানী শিক্ষকও আছেন। ছাত্রদের মধ্যে গবেষণায় আগ্রহী, মৌলিক ভাবনায় পারদর্শী এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিক মানবহিতৈষী মেধাবী তরুণ-তরুণীর দেখা পাই এখনও। দুর্ভাগ্যের বিষয় এরকম শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্যে আমাদের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই কেবল একরাশ হতাশাই তৈরি করে থাকে। 
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং করণীয় যদি আমরা বুঝে থাকি তাহলে আমাদের বাস্তবতা ও প্রবণতাকে কী বলব? প্রথমেই আমাদের জানা এবং মানা দরকার শিক্ষা অধিকার বটে কিন্তু উচ্চশিক্ষা সংরক্ষিত থাকে শুধুমাত্র অধিকারীর জন্যে। অর্থাৎ যে উচ্চশিক্ষার অধিকার অর্জন করে তার জন্যে। এ কেবল মেধার বিষয় নয়, জীবনভর জ্ঞানার্জন, জ্ঞান অনুশীলনের এবং সেই সাথে ছাত্রদেরকে জ্ঞানচর্চার পথে উদ্বুদ্ধ করা ও পথনির্দেশ দানের মানসিকতা থাকা আবশ্যিক। 
যে কোনো দেশের মত আমাদেরও উদীয়মান তরুণ জনগোষ্ঠীর ৯০ ভাগ চাকুরি-প্রত্যাশী। কিন্তু একে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে খুব ধীরে এবং তার ওপর কর্মবাজারের চাহিদার কোনো নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য কারও হাতে নেই, ফলে কোনো ভবিষ্যত চিন্তা ও কৌশল ছাড়াই সবাই গড্ডলিকায় গা ভাসিয়ে দেয়। এদিকে চাকুরির অনিশ্চয়তা আর এখনও বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির সামাজিক মূল্য থাকার ফলে যে কোনো তরুণ উচ্চ মাধ্যমিক বা ডিগ্রি শেষ করে ¯স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চায়। লক্ষ্য করার বিষয় হল এভাবে অধিকাংশ ছাত্রের লক্ষ্যের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনের লক্ষ্যের কোনো সঙ্গতি থাকে না। অথচ তাদের জন্যে অন্য কোনো উপযুক্ত আকর্ষণীয় বিকল্প না থাকায় অনিশ্চিত বেকার জীবনের গ্লানি বহনের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্বকে অন্তত একটি সম্মানজনক বিকল্প পরিচয় ভাবে ছাত্র ও তার অভিভাবকরা। এভাবে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রমাগত এমন ছাত্রের চাপ বেড়ে চলেছে যাদের নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন ও চর্চার কোনো আগ্রহ থাকে না। তদুপরি বাজারের চাহিদা ও সামাজিক মূল্য বিবেচনায় নিয়ে যোগ্যতা-আগ্রহ-নির্বিশেষে ছাত্ররা নির্দিষ্ট কোনো কোনো বিষয়ে ভর্তি হতে চায়। স্বভাবতই সবার জন্যে সে সুযোগ থাকে না। ফলে সত্য হল, আজ পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র তার অপছন্দের বিষয়ে পড়াশুনা করে! এই বাস্তবতার কারণে যে কোনো বিশ্ববিদালয়ে অনিচ্ছুক ছাত্ররাই সংখ্যাগুরু হওয়ায় এদের প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরিবেশ ক্ষুণœ হতে বাধ্য। আর শ্রেণিকক্ষে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি হওয়ায় ক্রমে শিক্ষকও আন্তরিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ, ভালোভাবে ক্লাস নেওয়ার প্রণোদনা হারিয়ে ফেলেন। এ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকায় বা চলতে দেওয়ায় দেশের পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরিবেশ ও অর্জনে মারাত্মক অবনতি ঘটে গেছে। আজ আমাদের দেশের কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ই বিশ্বের মান-নির্ধারণী তালিকায় একশতের মধ্যেও নেই। এখানকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিই আর বিশ্বের উচ্চ মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমমর্যাদায় স্বীকৃত নয়। এ পরিণতি কি আমরা চেয়েছিলাম?
যদি তা না চেয়ে থাকি তাহলে এ হযবরল অবস্থা চলতে দেওয়া কি উচিত? উচ্চশিক্ষার নামে কেবল ডিগ্রি ও সনদপত্রের বাণিজ্য বা এগুলো বিতরণ করার জন্যে কেন বিশ্ববিদ্যালয়?
আমরা লক্ষ্য করছি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের কর্ম বাজারের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে কেবলমাত্র বিবিএ, এমবিএ, আইন, কম্প্যুটার প্রকৌশল মূলত এই ক’টি বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। এর পাশাপাশি উন্নয়ন, পরিবেশের মত সম্ভাবনাময় কিছু বিষয়ও চালু করছে। কিন্তু কোথাও মৌলিক বিদ্যা অর্থাৎ দর্শন, গণিত, বিভিন্ন শাখার ভৌত বিজ্ঞান, বিভিন্ন শাখার প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর জ্ঞান চর্চা ও ডিগ্রির কোনো আয়োজন নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বিষয় থাকলেও ভালো ছাত্রদের আগ্রহ এতে কম। ফলে কোথাও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি বা রবীন্দ্রনাথের  ভাষায় বিদ্যা উৎপাদনের কোনো পরিবেশ নেই। অনেক শিক্ষক এবং ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন যোগ দিয়ে আর অনেক শিক্ষক বিদেশ থেকে জ্ঞানে ও উদ্দীপনায় সমৃদ্ধ হয়ে ফিরে এলে সত্যিই কিছু করতে চেয়ে বিরূপ পরিবেশে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেন। এভাবে আজ একদিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হল হাল ভাঙা জাহাজ আর অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেন বাণিজ্যপোত। পরিণতিতে দেশে মেধাবী তরুণ প্রচুর থাকলেও মেধা লালনের অভাবে, আর লক্ষ্যহীন গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে সকলেই চলেছে হতাশার শেষ প্রান্তে।
সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা ও রাজশাহীতে ছাত্রসংখ্যা ত্রিশ হাজার ছাড়িয়েছে, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগরে পনের হাজারের মত। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা কুড়ি হাজারের বেশি। এমন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের কথাও শুনেছি যেখানে ছাত্র সংখ্যা অর্ধলক্ষের বেশি! আমাদের কেন্দ্রীভূত প্রশাসন ব্যবস্থায় এত ছাত্রের (এবং শিক্ষক-কর্মচারীর) প্রশাসনিক সকল দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা কিছুতেই সম্ভব নয়। খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবাসের যেসব কক্ষ একজন ছাত্রের জন্যে নির্ধারিত ছিল সেগুলোতে ৪/৫জন থাকছে, বারান্দায় বিছানা পেতে থাকছে, কমনরুমও ছাত্রদের দখলে চলে গেছে। যুদ্ধাবস্থায় সাময়িকভাবে গাদাগাদি করে দু:সময় পার করা যায়, কিন্তু সেটাই যদি স্থায়ী ব্যবস্থা হয় তাহলে এই অস্বাভাবিক জীবনের প্রভাব তো ছাত্রের শরীর-মনে পড়বেই। পড়ছেও। অধিকাংশের লক্ষ্য হয়ে পড়েছে কোনো মতে একটি ডিগ্রি ও সনদ জোগাড় করা। পড়াশুনার বাস্তব কোনো পরিবেশ না থাকায় এর জন্যে সহজ উপায় তাদের খুঁজতে হয়েছে, শিক্ষকদেরও এতে শরিক হতে হচ্ছে। ফলে অর্থহীন উদ্দেশ্যহীন কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত ‘তারুণ্যের অপচয়’ মঞ্চে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ কোনো খেলাধুলা নেই, লাইব্রেরির ব্যবহার নেই, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নেই, এমনকি ছাত্র-শিক্ষক মিলে সত্যিকারের শিক্ষা-সফরও হয় না (পিকনিক হয়)। কোনো একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে ঘাস গজিয়েছিল।
মানতে হবে রাতারাতি অবস্থা পাল্টানো যাবে না। তবে অদূর ভবিষ্যতে এই নৈরাজ্য ও অপচয় রোধ করে সঠিক অবস্থায় ফেরার কাজ এখন থেকেই শুরু করতে হবে। তবে একটি সহজ কথা হল,গুণগত পরিবর্তনের কাজটি শীর্ষ থেকে শুরু করার নয়, নিচের থেকে ধাপে ধাপেই তা হতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সবার অধিকার এবং এ বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকার ভর্তির বিবেচনায় তা পূরণ করেছেন, এখন মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে অন্তত অষ্টম শ্রেণি 
পর্যন্ত ভর্তি হওয়া সব ছাত্রছাত্রীকে ধরে রাখা যাতে একসময় এটুকু শিক্ষিত একটি জাতি তৈরি হয়। নবম শ্রেণি থেকে বিদ্যাচর্চার বিভিন্ন শাখায় ভাগ হয়ে যায় ছাত্ররা। আমার মনে হয় বাংলা-ইংরেজি-সাধারণ বিজ্ঞানের  মত অবশ্য পাঠ্য বিষয়ের সাথে সব শাখার বিষয়গুলো উন্মুক্ত রেখে তা থেকে ৪/৫টি বিষয় বেছে নিয়ে ছাত্ররা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়লে ভালো হয়। ততদিনে তারা ভালোভাবে বুঝতে পারবে জীবিকা এবং আগ্রহের বিচারে কার জন্যে কোন ধারায় শিক্ষাগ্রহণ ঠিক হবে। এভাবে এক সময় সমমানের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রাপ্ত জাতি গঠন সম্ভব হবে। এরপরে বৃত্তিমূলক ও পেশাগত বিদ্যা এবং বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে ডিপ্লোমা ও স্নাতক ডিগ্রির জন্যে কলেজ, ইন্সটিটিউট থাকবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের অধীনে এ ধরনের ডিগ্রি প্রদানের  কলেজ, ইন্সটিটিউট চালু করতে পারে। ধীরে ধীরে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করতে হবে যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শর্ত, চাহিদা পূরণ করবে। এই উচ্চতর জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠানের  ছাত্র সংখ্যা হবে কম, শিক্ষকদের বেতন হবে দেশে সর্বোচ্চ মানের।
আশা করি একে কেউ উচ্চশিক্ষা সংকোচনের দূরভিষন্ধি মনে করবেন না। আমার বিনীত নিবেদন হল উচ্চ শিক্ষার নামে যা চলছে তা বাস্তবে কোনা শিক্ষাই নয়, শিক্ষার পরিহাস। একটি জাতি এভাবে উচ্চশিক্ষার অভিমান পুষে বছরের পর বছর আত্মপ্রতারণা চালিয়ে যেতে পারে না। জাতীয় স্বার্থেই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত।

Source: http://abulmomen.blogspot.kr/2014/02/blog-post_10.html

Sunday, November 24, 2013

জাতীয় বেতন কমিশন গঠন


সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন, ২০১৩ গঠন করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কমিশন ২০১৪ সালের ১৭ জুনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিশন আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

যোগাযোগ করলে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর জন্য কিছু করা যাবে মনে করে অন্য কোনো দায়িত্বের পরিবর্তে আমি এটি গ্রহণ করেছি।’

বেতন কমিশন নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। নির্বাচনকালীন সরকার বেতন কমিশন গঠন করতে পারে না—একটি দৈনিক সংবাদপত্রে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইটস জাস্ট স্টুপিড। এখনো নির্বাচনের শিডিউল ঘোষিত হয়নি। সাখাওয়াত হোসেন একজন নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। তিনি এমন কথা বলতে পারেন না। শিডিউল ঘোষণার আগের সরকার নির্বাচনকালীন সরকার নয়।’ 

এবারের কমিশনে তিনজন সদস্য হলেন দুই সাবেক সচিব মুহম্মদ আবুল কাশেম ও শেখ খুরশীদ আলম এবং সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. সাহাদ চৌধুরী। ১২ জন খণ্ডকালীন সদস্য হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জাফর খালেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মমতাজউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুৎফুল হাসান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো বিনায়ক সেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ রুহুল আমীন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ, মেট্রো চেম্বারের সাবেক মহাসচিব সি কে হায়দার, ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে এম রফিকুল ইসলাম, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইমদাদুল হক, আইন বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ আমিনুল ইসলাম এবং সশস্ত্র বাহিনীর একজন প্রতিনিধি। তবে, কমিশন প্রয়োজনবোধে খণ্ডকালীন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। কমিশনের সদস্যসচিব হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এহসানুল হক। 

কমিশনের কার্যপরিধি: প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনাপূর্বক সরকারের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করবে কমিশন। 

সুপারিশ তৈরির সময় মা-বাবাসহ ছয়জনের একটি পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বিবেচনায় রাখতে হবে। এর আগে ২০০৮ সালের কমিশনে অবশ্য চারজনের জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনার কথা ছিল। 

একটি সময়োপযোগী বেতন কাঠামো ও অবসর সুবিধা নির্ধারণ; বিশেষায়িত চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ এবং বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, প্রেষণ, কার্যকর, মহার্ঘ্য, উৎসব ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নির্ধারণের কাজ করবে কমিশন। কমিশন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয়ের পদ্ধতিও নিরূপণ করবে। 

টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড এবং ইনক্রিমেন্টের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসংগতিও দূর এবং রেশন-সুবিধা যৌক্তিকীকরণ করা হবে। 

২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গঠিত বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০০৯ সালের ১ জুলাই সর্বশেষ সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ৭ অক্টোবর তাঁদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার, যা গত ১ জুলাই কার্যকর হয়েছে।

Published in: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/81928/

আরো পড়ুনঃ