Wednesday, September 9, 2015

শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজে মন্তব্য



আরো পড়ুনঃ "স্বতন্ত্র স্কেল চাই, অন্য কোন দাবি নাই!!"

অর্থমন্ত্রীর নয়া জ্ঞানদান


 অর্থমন্ত্রীর নয়া জ্ঞানদান
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনি যথার্থই বলেছেন দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছে। তাদের জ্ঞান এতই কম যে রাতারাতি একজন সচিব মর্যাদার অধ্যাপককে যুগ্ম সচিবের মর্যাদায় নামিয়ে এনেছেন সেটা তারা বুঝতে অনেক সময় নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যকে দাবড়ে বেড়াবেন একজন অতিরিক্ত সচিব। সেটাও তারা সময়মতো বুঝতে পারেননি। শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব না থাকলে মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমলাদের সঙ্গে লড়বেন কেন? আর আপনি যে আমলাতন্ত্রের ফসল সেটাই বা তারা জানবে কোত্থেকে। তারাতো মূর্খ। তারা রাবিশ। 
মিস্টার আবুল মাল আবদুল মুহিত আমরা জানি আপনি জ্ঞানী। আপনি ছাত্রজীবনে মেধাবী ছিলেন। ১৯৫১ সালে সারা প্রদেশে আইএ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এমএ পাস করেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রিও নিয়েছেন। আপনার মতো কয়েকশ মেধাবী মানুষ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক। ওই শিক্ষকরা মাস্টারি ছেড়ে দিয়ে আমলাতন্ত্রে যোগ দিয়ে জি হুজুর জি হুজুর করা শুরু করলে তাদের অনেকেই আপনার মতোই স্বৈরাচারের বা গণতন্ত্রের মন্ত্রী হতেই পারতেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এটাই হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। তাঁরা অন্য যেকোনো পেশায় যোগ দিলে উন্নতির চরমে পৌঁছাতে পারতেন। যেমনটি পৌঁছেছেন আপনি। শিক্ষকতাকে একটি মহৎ পেশা মনে করেন বলেই সব বাদ দিয়ে একজন দরিদ্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন। 

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনি আপনার মেধা আমলাতন্ত্রে কাজে লাগিয়েছেন। জাতিকে কী দিতে পেরেছেন সে হিসেব ইতিহাস বিচার করবে। আপনার সময়ে কোনো কোনো মেধাবী দরিদ্র শিক্ষক হতে চাননি, সুন্দরী পাত্রীর লোভ হোক আর ‘উজ্জ্বল’ ভবিষ্যতের নেশায়ই হোক শিক্ষকতার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমলাতন্ত্রকে বেছে নিয়েছিলেন পেশা হিসেবে। সবশেষ পর্যন্ত সচিব হয়েছিলেন। আইয়ুব খানকে স্যার ডেকেছেন। ইয়াহিয়াকে স্যার ডেকেছেন। জেনারেল জিয়াকে স্যার ডেকেছেন। আপনার জ্ঞানের মাত্রা একটু বেশি ছিল বলে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারির সঙ্গে সঙ্গেই আপনাকে ডেকে নিয়েছেন। সব সামরিক জান্তাকে সেবা দিয়েছেন এরশাদকে কেন নয়? এরশাদ আপনাকে মন্ত্রীই বানিয়ে দিল। স্যার স্যার ডেকে ডেকেই আপনার জীবন গেল। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আপনার কেন ভালো লাগবে? তাদেরকে সবাই স্যার ডাকে। আপনার গায়েতো লাগবেই।  

মাননীয় মন্ত্রী আপনি বলছেন “শিক্ষকদের করাপ্ট প্রাকটিস নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।” তারা কি সবাই করাপ্ট? পাইকারি বলে দিলেন? সাংবাদিকরা জানতে চাইলো তাদের করাপশনের উদাহরণ দেন। বললেন, “যেমন প্রত্যেকটি শিক্ষক প্রফেসর হয়। অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, প্রফেসর (পদে) তাদের ইচ্ছেমত প্রমোশন দেয়। অসংখ্য প্রফেসর হয়েছে দেশে। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও লেকচারার। এদের মধ্যে লেকচারার সবচেয়ে কম। নিচে ১০ জন হলে উপরে এক হাজার। এটা কোনো সার্ভিস হল? শুধু উপরে পদোন্নতি হবে। এটা ঠিক করা দরকার।”

এটা ঠিক করবেন ভালো কথা। সবকিছুই যখন নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষকদের কেন নয়? তারাতো এরই মধ্যে আপনাদের নিয়ন্ত্রণে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনার বর্তমান দলের প্রতি আনুগত্য নেই এমন উপাচার্য কী বানিয়েছেন কাউকে? পদোন্নতি নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলছেন সেটা করেন। তার আগে যেসব নীতিমালার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি হয়ে থাকে; সেগুলো একটু পড়ে দেখবেন! বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এসব পদোন্নতি অনুমোদন কেন করে সেটাও খতিয়ে দেখবেন নিশ্চয়ই। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়েও মাঝে মাঝে দুর্নীতি হয় শুনি। আপনার দলের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কতোজনকে নিয়োগ দিতে চাপ দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন আশা করি। 

অর্থমন্ত্রী সাহেব আপনি বললেন শিক্ষকদের কোথায় মর্যাদার হানি হয়েছে তা আপনার জানা নেই। আপনি জানবেন কী করে? আমলারা না বললেতো কিছুই জানেন না দেখি! এদেশে যে দু টাকায় চকলেট পাওয়া যায় সেটাও আপনার জানা ছিল না। তাই এক টাকা দুই টাকা উঠিয়ে দিতে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করতে চেয়েছিলেন। শিক্ষকরা দুর্নীতি করে সেটা আপনি জানেন, আপনি আরো জানেন হলমার্ক ৪ হাজার কোটি টাকা চুরি করলেও দেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পরে না। আপনি এটাও জানেন দেশের শেয়ার বাজার লুটেপুটে খাওয়ার পরও দেশের কোনো ক্ষতি হবে না। আর বিসমিল্লাহ গ্রুপের হরিলুট বা বেসিক ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি কোনো ব্যাপারই না। আপনি শুধু জানেন না  সপ্তম বেতন কাঠামোতে বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সচিব, সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে মেজর জেনারেল এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক সর্বোচ্চ গ্রেডে (গ্রেড-১) ছিলেন। আর জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা গ্রেড-২ এবং অধ্যাপকরা গ্রেড-৩ এ বেতন পেয়ে আসছিলেন। অষ্টম বেতন কাঠামোতে অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের অবস্থান ঠিক থাকলেও সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপকদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি, যা নিয়ে শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনার কথায় শুধু শিক্ষকরাই নয় সরকারি কর্মচারিদেরও কষ্ট পাওয়ার কথা। আপনি বলেছেন “ প্রায়ই বলা হয়, সরকারি চাকুরেদের বেতন কম, এজন্য তারা একটু ঘুষ টুস খায়, যাতে এই জিনিসটা চলে যায়…। আশা করছি এখন সরকারি চাকুরেরা বেতন কম এই অভিযোগ আর করতে পারবে না।” 

সরকারি কর্মচারিরা ঘুষ খায় বলে তাদের বেতন বাড়িয়েছেন। একথা বলার পরেও তারা চুপ মেরে আছেন। জি হুজুররা সব সময় চুপটি মেরেই থাকেন। আপনি অনেকদিন সরকারি কর্মচারি ছিলেন। আপনার বিরুদ্ধে ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যে ঢালাওভাবে বলে দিলেন তারা জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছে এবং সব সরকারি কর্মচারি ঘুষ খায়, এখন কেউ যদি বলে রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ, তার মানে কী আপনিও দুর্নীতি করেন? এই যুক্তি কি আপনি মানবেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী। তবে আপনার সহকর্মী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথাটা উড়িয়ে দিয়েন না। সরকারি কর্মচারিদের উদ্দেশে যেমনটি তিনি বলেছেন ‘‘বেতন যেমন দ্বিগুণ হয়েছে, আপনাদের সেবা যেন চার গুণ হয়, আমরা তাই আশা করি। তবে ঘুষের পরিমাণ যেন চারগুণ না হয়।’’

মাননীয় জ্ঞানী মন্ত্রী শিক্ষকদের সম্পর্কে যখন আপনার এমনই ধারণা তাহলে ওইসব শিক্ষকদের দিয়ে প্রতিষ্ঠান  চালাচ্ছেন কেন? সব জায়গায়ইতো দলীয় লোক বসিয়ে দিয়েছেন। দলের নেতাদের সেখানে বসিয়ে দেন। নয়তো দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক যেমন একজন করে সেনা কর্মকর্তা তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপ সচিব, যুগ্ম সচিব বা ব্রিগেডিয়ার মর্যাদার কর্মকর্তাদের বসিয়ে দেন। এর উপরের কাউকে আবার ভুলে বসিয়ে দিয়েন না। কারণ আপনার পে স্কেল অনুযায়ী অধ্যাপকরা যুগ্ম সচিবের উপরে নন। যদি তা না পারেন তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধই করে দেন। কী দরকার মূর্খ দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর। দেশের ৩৭ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের কয়েকটিকে অনায়াশে ক্যান্টনমেন্ট বানাতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সচিবালয়ের এক্সটেনশন বানাতে পারেন। হলগুলোকে সরকারি কর্মচারিদের আবাসিক স্থান করে দেন। শিক্ষকদের বাসাগুলো আমলাদের নামে বরাদ্দ দেন। 

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পণ্ডিতের যে দরকার নাই সেটাতো এখন প্রতিষ্ঠিত। জি স্যার জি স্যার আর লেফট রাইট যদি খুশি থাকে তাহলেইতো চলে। সেখানে শিক্ষকদের দরকারটা কী? জ্ঞানহীন শিক্ষকেরাতো মূর্খ ছাত্রই তৈরি করবে। যে শিক্ষকেরা আপনাকেও তৈরি করেছে। দেশে সেই শিক্ষকের আদৌ দরকার আছে কিনা শুধু আপনার কনিষ্ঠপুত্রকে একটু জিজ্ঞেস করে নিবেন প্লিজ! কারণ তিনিও একজন শিক্ষক। 

জায়েদুল হাসান পিন্টু
গণমাধ্যম কর্মী

Published in: http://goo.gl/o1OKaT

বাংলাদেশ সরকার কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কি আদমজী জুটমিলের মত অকার্যকর বানাতে চাচ্ছে?


বাংলাদেশের দরিদ্র কৃষক, দিনমজুরের মেধাবি ছেলেমেয়েদের উচচ শিক্ষার একমাত্র আশ্রয়স্থল হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (সরকারী নয়, জনগনের বিশ্ববিদ্যালয় ) গুলো । দেশবরেণ্য, দক্ষ ও মেধাবি শিক্ষকদের কাছে জ্ঞ্যান লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা ভর্তি হয় এখানে। তাদের কেউ কেউ ভালো ফলাফল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করে, যায় পি এইচ ডি করার জন্য দেশের বাহিরে। ইতোমধ্যেই দূর্বল বেতন কাঠামো, গবেষণাকাজের অপ্রতুল সুযোগসুবিধা, ও সার্বিক সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের কারনে অনেক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় শিক্ষক/ গবেষক দেশে ফিরে আসছেন না । কেউ কেউ দেশে বা এশিয়ার ই অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ উচচবেতনে যোগদান করছেন। অষ্টম বেতন কাঠামো ও মন্ত্রীমহোদয়দের বক্তব্য শুনে বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্ন জাগছে মনে: ১. বাংলাদেশ সরকার কি মেধাবি শিক্ষকদের দেশত্যাগ করতে বলছে? মেধাপাচারকে উৎসাহিত করছে? ২. গরীব ছাত্র ছাত্রীদেরকে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা গ্রহনে বাধাগ্রস্থ করছে? ৩. শিক্ষাকে কি পরিপূর্ণ ভাবে বাণিজ্যিকিকরণ কে উৎসাহিত করছে? ৪. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কি আদমজী জুটমিলের মত অকার্যকর বানাতে চাচ্ছে ?

Md. Abdur Razzaque
Professor, University of Dhaka

মাননীয় অর্থমন্ত্রী, পাইকারী মন্তব্য করবেননা!

Rahman Nasir Uddin 

অষ্টম বেতন কাঠামো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অসন্তোষ এবং চলমান আন্দোলন নিয়ে অর্থমন্ত্রী যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাতে অত্যন্ত বাজেভাবে ক্ষমতার দাম্ভিকতা এবং ঔদ্ধত্যের শারীরীক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। উনি যেভাবে কথা বলেছেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হিসাবে অত্যন্ত অপমান বোধ করেছি। তিনি যা বলেছেন, তাতেই উনার জ্ঞানের দৌঁড় কতোটা পাতলা প্রকারান্তরে সেটাই প্রকাশিত হয়েছে। উনার বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে উনার ন্যূনতম কোন ধারণাই নাই। তাই বলি, মাননীয় অর্থমন্ত্রী, অন্যকে জ্ঞান দেবার আগে নিজের জ্ঞানটুকু একটু পরখ করে নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না-নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলবেননা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আপনার চাকুরী করেননা। তাই, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে আপনার অধিনস্ত কর্মচারী মনে করবেননা। কথা বলার সময় মেহেরবানী করে এ বাণীটুকু মনে রাখবেন। 

  
আবুল মাল আ. মুহিতআবুল মাল আ. মুহিত

বহু সার্কাসের পরে অষ্টম বেতন কাঠামো মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই বেতন কাঠামো ঘোষিত হয়েছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ জানিয়ে নানান প্রতীকি কর্মসূচির মাধ্যমে বিগত তিন বা সাড়ে তিনমাস ধরে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবিদাওয়া পেশ করে আসছিলেন, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আশা করেছিলেন যে, প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোকে কিছুটা সংশোধন করে তাঁদের দাবি দাওয়ার প্রতিফলন ঘটানো হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। বরঞ্চ তাঁদের বেতনগ্রেড দুই ধাপ নিচে নামানোর পাশাপাশি সিলেকশান গ্রেড তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নূন্যতম মর্যাদাটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। ফলে, স্বাভাবিক কারণেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজকে (০৮/০৯/২০১৫) কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী যেভাবে বললেন, ‘দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছেন।‌’ প্রথমে আমার হাসি পেয়েছে; পরে ভেতরে গভীর ক্ষত তৈরী হয়েছে। পৃথিবীর সব সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনকারী, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকারী বাংলাদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশটি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করেন। আর তাঁদের জ্ঞানের এতই অভাব পড়েছে যে, অষ্টম বেতন কাঠামোতে তাঁদের অবস্থানকে কোথায় রাখা হয়েছে সেটা তাঁরা বুঝতে পারছেননা। কেবল অর্থমন্ত্রীই বুঝতে পারছেন! তিনি নিজেকে এতো জ্ঞানী কীসের ভারে (!) মনে করেন আমি বুঝিনা। মাননীয় অর্থমন্ত্রী কথাবার্তা সাবধানে বলবেন। ক্ষমতায় গেলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরিত্র আমাদের জানা আছে। আপনার মতো সব সরকারের আমলে কীভাবে মধু খেতে হয়, সে জ্ঞান হয়তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের না-থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের অভাব কখনও পড়েনি। এখনও এদেশের জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার মূলকেন্দ্র হচ্ছে এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই।

তিনি আরো বললেন, ‘আমার জানা নেই, কোথায় তাঁদের মর্যাদার হানি হয়েছে।’ যদি আপনার জানা না-থাকে সেটা আপনার অজ্ঞানতা। তাছাড়া আপনি এতো সহজে কেন ভুলে গেলেন যে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ যখন আপনার সাথে দেখা করে তাঁদের দাবিদাওয়া আপনাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন, তখন আপনিই বলেছিলেন, আপনি তাঁদের দাবিদাওয়ার সাথে একমত কিন্তু এটা মানার ব্যাপারে কোন কথা দিতে পারবেননা। আর এখন বোল পাল্টে বলে দিলেন আপনি বুঝতে পারছেননা। আপনি ‘অবুঝ’ হতে পারেন; তবে আপনার এ-অবুঝত্বের কারণ কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকই বুঝেন! তিনি আরো বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের করাপ্ট প্র্যাকটিস নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।’ এ ‘করাপ্ট প্র্যাকটিস’ শব্দটি অত্যন্ত আপত্তিজনক। আপনি যদি মিন করে থাকেন ‘অনিয়ম’, তাহলে সে বিষয়ে খুব আপত্তির কিছু থাকবে না। কেননা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রমোশন বা আপগ্রেডেশনে কিছু অনিয়ম হয়, এটা সবাই জানে। কিন্তু সেটার পেছনেও আপনাদেরদের মতো রাজনীতিবিদদের বেপরোয়া নাক-গলানোই যে প্রধানত দায়ি, সেটাকেও অস্বীকার করা যাবেনা। তাছাড়া আপনারাইতো রাজনৈতিক বিবেচনায়, দলীয় লেজুড়বৃত্তির দৌঁড়ে যারা এগিয়ে থাকেন, তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনার দায়িত্ব দেন। আর তাদের দিয়ে আপনাদের অবৈধ আবদার আদায় করে নেন বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। কাজেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অনিয়ম হয়, তার দায়দায়িত্ব আপনাকে এবংআপনার মতো রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও নিতে হবে। সুতরাং হঠাৎ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের নিয়ে গণ-মন্তব্য করার আগে নিজেদের আমলনামাটা একটু দেখে নেয়াটাই ‘জ্ঞানী’র কাজ হবে।

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রত্যেকেই এখানে সহজেই অধ্যাপক হয়ে যান। সহযোগী অধ্যাপকদের তাঁরা খেয়াল খুশিমতো পদোন্নতি দেন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতির নীতিমালা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান থাকলে আপনি এরকম মন্তব্য করতেন না। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির নিজস্ব নীতিমালা আছে। এবং প্রমোশন দেয়ার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ বোর্ড থাকে সেখানে সরকার কতৃক নিয়োগকৃত বিষেশজ্ঞরাও থাকেন(চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে)। স্ব স্ব বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশ এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে একজন সহযোগী অধ্যাপক তার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, বিদেশী ডিগ্রী, পর্যাপ্ত গবেষণা-প্রবন্ধ নিয়েই অধ্যাপক পদে প্রমোশন পান। আর কিছু অনিয়ম যদি হয়েই থাকে, সেটাও হয় আপনাদের মতো কিছু রাজনীতিবিদদের অবৈধ না-গলানোর কারণে। নিয়মবহির্ভুত সুপারিশের কারণে। সুতরাং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে পাইকারী মন্তব্য করার আগে এগুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা উচিত বলে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, ‘দেখা গেছে, নিচে ১০ জন প্রভাষক; কিন্তু ওপরে এক হাজার অধ্যাপক। এটা কিছু হলো? শুধু ওপরে পদোন্নতি হবে, এটা ঠিক না।’ এ-ধরনের কথা বলার আগে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত ১৯৭৩-এর এ্যাক্টটি ভালো করে একবার পড়ার অনুরোধ করছি। আপনার এ-বাক্যটিই যথেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আপনার অজ্ঞানতা উপলব্ধির জন্য। এ-বিষয়ে সত্যিকার অর্থে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে, অর্থমন্ত্রীর যে কথাটি খুবই আপত্তিজনক সেটি হচ্ছে, ‘আমলাতন্ত্রকে আমরা যেভাবে ম্যানেজ (পরিচালনা) করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদেরও সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করব।’ পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়গুলো মগের মুল্লুক নয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আপনার অধিনস্ত কোন কর্মচারীও নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর সরকারী আমলা যে এক নয়, এসামান্য জ্ঞানটুকু যার নাই, তিনি যখন অন্যকে জ্ঞান দেন তখন সেটা তামাসায় রূপ নেয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে বেপরোয়া না-গলানোর বৃথা চেষ্টা করবেননা্। ১৯৭৩ এ্যাক্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে (বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে) নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার ক্ষমতা দিয়েছে। আলগা লোকের নাগ-গলানোকে প্রতিহত করার নজির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে। ইতিহাস একটু পাঠ করে নিলে ভালো হয়। আর যাকে ‘সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়’ বলে কতৃত্ব দেখাচ্ছেন, আপনার জ্ঞাতার্তে জানাচ্ছি যে, এগুলো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নয়; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। পাবলিকের বিশ্ববিদ্যালয়। জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়। জনগণের টাকায় চলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়। আর সত্যিকার অর্থে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ। তাই, নিজের জ্ঞানের সীমাহীন সীমাবদ্ধতা নিয়ে অন্যকে জ্ঞানহীন বলাটাও এক ধরনের অজ্ঞানতার লক্ষণ। পরিশেষে অনুরোধ করবো, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে পাইকারী মন্তব্য করার আগে নিজের জ্ঞানের পরিধিটা একটু মাপঝোঁক করে নিয়েন। এতেই সকলের মঙ্গল।  

অধ্যাপক, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
লালখান বাজার, চট্টগ্রাম
আট. নয়. পনের


পাকিস্তান শিক্ষায় যে গুরুত্ব দেয়, আমরা তাও দেই না

গোলাম মোর্তোজা॥
img
শিক্ষাকে যে জাতি গুরুত্ব দেয়নি, তারা উন্নতি করেছে- পৃথিবীতে এমন নজির নেই। আমরা উন্নতির গল্প বলছি, শিক্ষাকে গুরুত্ব না দিয়ে। শিক্ষকদের গুরুত্ব না দিয়ে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের ওপর আমরা ‘পিপার স্প্রে’ মারি। পশুর সঙ্গে আচরণেও মানুষ চিন্তা করে, শিক্ষকদের সঙ্গে নির্দয় আচরণে আমরা চিন্তা করি না।

১ জুলাই থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা নতুন স্কেলে বেতন পাবেন। এখন একজন প্রাথমিকের শিক্ষক চাকরি শুরু করেন ৪৯০০ টাকা বেতনে। নতুন স্কেলে বেড়ে কত হবে, নিশ্চিত নই। এবারের বেতন কাঠামোয় মূল বিতর্কটি তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন তিন ধাপ কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে।
পাকিস্তানের মতো প্রায় ব্যর্থ একটি রাষ্ট্র তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা বাড়িয়েছেন। একজন অক্সফোর্ড ফেরত শিক্ষককে দিয়ে সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ সুবিধা কী হওয়া উচিত, সে বিষয়ক একটি কমিশন করেছিলেন। সেই কমিশন উচ্চ বেতন ও সুযোগ সুবিধার সুপারিশ করেছিল। বেনজির ভুট্টোর গণতান্ত্রিক সরকার এসে আমলাতন্ত্রের সুপারিশে তা বাস্তবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়। এগিয়ে আসে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট। রায় দেয় শিক্ষকদের পক্ষে। ফলে পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতা আর্থিকভাবে তো বটেই, সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় পেশা।
শ্রীলঙ্কাও প্রায় একই রকম নীতি অনুসরণ করেছে। ভারত তো তার নীতিতে শিক্ষকতা পেশাকে লোভনীয় চাকরি ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতে প্রাথমিকের একজন শিক্ষক চাকরি শুরু করেন ২০ হাজার রুপি বেতনে। ২৫ হাজার রুপি বেতনে মাধ্যমিকের একজন শিক্ষক চাকরি শুরু করেন। কলেজের একজন শিক্ষকের শুরুতে বেতন প্রায় ৪০ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক চাকরি শুরু করেন ৫০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা বেতনে। একজন প্রাথমিকের শিক্ষকও প্রথম মাসের বেতন পেয়ে কিস্তিতে একটি গাড়ি কিনতে পারেন। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও সৎ আয়ে গাড়ি কেনা অকল্পনীয় ব্যাপার। স্বচ্ছল জীবনযাপন করাই কষ্টকর।

শেখ হাসিনা সরকার একজন আমলা ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিককে দিয়ে কমিশন করেছিলেন। সেই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন বাড়ানো হলো। এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে একটি ‘পণ্য’ হিসেবে দেখেছেন, ‘শিক্ষা’ হিসেবে নয়। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ‘শিক্ষা বিক্রি’ করে, তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘শিক্ষা বিক্রি’ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন, আয় বাড়াতে বলেছেন। বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য যা খুবই অনৈতিক একটি সুপারিশ।

ভারতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এক লাখ রুপির বেশি বেতন পান। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, গবেষণা-ভাতা মিলিয়ে সিনিয়র অধ্যাপকরা ৩ থেকে ৪ লাখ রুপির সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতনের পরিমাণ উল্লেখ করাটাও সম্মানজনক নয়। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক চাকরি শুরু করেছিলেন ৭ হাজার টাকা বেতনে। ১৫ বছর পরে এসে এখন তিনি সহযোগী অধ্যাপক, মূল বেতন মাত্র ২৯ হাজার টাকা। আগে সচিবদের সমমর্যাদায় অধ্যাপকদের অবস্থান ছিল। এখন তিন ধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা আগেই উল্লেখ করেছি।
২.
শেখ হাসিনা সরকার একজন আমলা ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিককে দিয়ে কমিশন করেছিলেন। সেই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন বাড়ানো হলো। এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে একটি ‘পণ্য’ হিসেবে দেখেছেন, শিক্ষা হিসেবে নয়। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ‘শিক্ষা বিক্রি’ করে, তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা বিক্রির ইঙ্গিত দিয়েছেন, আয় বাড়াতে বলেছেন। বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য যা খুবই অনৈতিক একটি সুপারিশ।

গরিব মানুষ বা কৃষকের সন্তানরা যাতে উচ্চশিক্ষা না পায়, প্রকারান্তরে তেমন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করেছেন এই সাবেক আমলা। এই আমলার নেতৃত্বে যে এমন কিছু ঘটছে, তা অজানা ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা এতদিন মিনমিন করেছেন। জোরালো কোনও অবস্থান নেননি, বক্তব্য তুলে ধরেননি। দলীয় রাজনীতির প্রতি আনুগত্য অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের মতো শিক্ষকদেরও মেরুদণ্ডহীন করে দিয়েছে। শিক্ষক নেতারা পদ-পদবি, নানা লোভের মোহে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। শিক্ষা বা শিক্ষকদের স্বার্থ দেখা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠায় এখন তারা আন্দোলন কর্মসূচি দিয়েছেন। তাদের আন্দোলন, রাগ, ক্ষোভ সব আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে নয়। তাদের ভাব দেখলে মনে হয়, সরকারের সম্মতি ছাড়াই আমলারা নিজেদের বেতন বাড়িয়ে নিয়েছেন। শিক্ষকদের এই আন্দোলন নিয়ে সবচেয়ে অসম্মানজনক মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী, ' আমার জানা নেই, কোথায় তাদের মর্যাদাহানি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের করাপ্ট প্র্যাকটিস নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। প্রত্যেকেই এখানে সহজেই অধ্যাপক হয়ে যান। সহযোগী অধ্যাপকদের তারা খেয়াল-খুশি মতো পদোন্নতি দেন। দেখা গেছে, নিচে ১০ জন প্রভাষক, কিন্তু ওপরে এক হাজার অধ্যাপক। এটা কিছু হলো? শুধু উপরে পদোন্নতি হবে, এটা ঠিক না... আমলাতন্ত্রকে আমরা যেভাবে ম্যানেজ (পরিচালনা) করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদেরও সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে।’
বাংলাদেশের দুর্নীতির প্রতিক স্বৈরাচার এরশাদ। সেই স্বৈরাচারি আমলের এবং এখনকার  মন্ত্রী বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের 'জ্ঞানের অভাব '! শিক্ষকরা ‘করাপ্ট প্র্যাকটিস’ করেন। সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা এতে অসম্মানিত বোধ করছি।
অবশ্য দলীয় শিক্ষকরা এই বক্তব্যে কতটা অসম্মানিতবোধ করেছেন, তা এখনও পরিস্কার করে বুঝতে পারছি না। তারা বিক্ষুদ্ধ হয়েছেন, বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু টকশোতে এসে যেভাবে বলেছেন 'মাননীয় অর্থমন্ত্রী বয়োবৃদ্ধ ' 'তিনি একেক  সময় একেক কথা বলেন '... ইত্যাদি বলছেন। তাতে বোঝা যাচ্ছে প্রতিবাদের 'মিনমিনে' ভাবটা এখনও পুরোপুরি যায়নি। সর্বত্র অন্ধ দল-দাসত্বের দৃষ্টান্ত দেখছি আমরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের এই সময়ে আর একটি বিষয় পরিস্কার হলো। আন্দোলনে তারা ছাত্র সংগঠনের সমর্থন বা সক্রিয় অংশগ্রহণ পাচ্ছেন না, পাবেন না। কারণ ছাত্রলীগ যে ক্যাম্পাসের একক ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়েছে, তার পেছনেও এই দলীয় শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অন্য ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের ক্যাম্পাস ছাড়া দৃশ্যমানভাবে ছাত্রলীগ করেছে, নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এসব শিক্ষকরাও। যা এখন বুমেরাং হয়ে সামনে এসেছে। বিপদের দিনে, শিক্ষকদের এই অসম্মানিত করার দিনে ছাত্র সংগঠনকে পাশে পাচ্ছেন না। বাম ছাত্র সংগঠনগুলো হয়ত পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন। ছাত্রলীগের কারণে তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন বলে মনে হয় না।
শিক্ষকদের এত বড় অসম্মান, অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন করছে না, করবে না! বিষয়টি ভাবা যায়!
৩.
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো ইতিবাচক। শিক্ষকদের অবদমন নিন্দনীয়। সমাজের অন্যান্য সেক্টরের কথা না ভাবাটা অন্যায়। বেতন বাড়লে বাজারের ওপর যে প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের জন্যে তা অসহনীয় হয়ে ওঠে। বেতন বাড়ানোর চেয়ে দাম স্থিতিশীল রাখার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া জরুরি হলেও আমাদের সরকারগুলো তা করে না। সচিবদের বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি দুর্নীতি কমানোর দিক নির্দেশনাও জরুরি ছিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেওয়া এবং এনজিওর কনসালটেন্সি নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। সবার ক্ষেত্রে ঠিক না হলেও অভিযোগটি একেবারে মিথ্যে নয়। কিন্তু আর্থিক নিশ্চয়তা না দিয়ে, গবেষণার জন্যে প্রায় কোনও বরাদ্দ না দিয়ে, শুধু দোষারোপ করলে পরিস্থিতির কোনও উন্নয়ন হবে না। আমাদের অন্যান্য সব সেক্টরের মতো শিক্ষা ব্যবস্থাও চলছে এডহক ভিত্তিতে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেওয়া এবং এনজিওর কনসালটেন্সি নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। সবার ক্ষেত্রে ঠিক না হলেও অভিযোগটি একেবারে মিথ্যে নয়। কিন্তু আর্থিক নিশ্চয়তা না দিয়ে, গবেষণার জন্যে প্রায় কোনও বরাদ্দ না দিয়ে, শুধু দোষারোপ করলে পরিস্থিতির কোনও উন্নয়ন হবে না। আমাদের অন্যান্য সব সেক্টরের মতো শিক্ষা ব্যবস্থাও চলছে এডহক ভিত্তিতে।

একজন শিক্ষামন্ত্রী আছেন, বই পৌঁছানোতেই তার সমস্ত মেধা ব্যয় হচ্ছে। শিক্ষা বিষয়ে তার কোনও কাজ নেই। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়মে এই শিক্ষামন্ত্রীর হাত দিয়েই শিক্ষার সবচেয়ে বড় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই। আমলাতন্ত্রে মেধাবীদের যাওয়া খুবই জরুরি। তার আগে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আসা জরুরি। মেধাবী শিক্ষক না হলে মেধাবী আমলা তৈরি হবে না। একজন মেধাবীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চেয়ে ব্যাংক বা মোবাইল ফোন কোম্পানির চাকরি লোভনীয় হয়ে গেলে, তা দুর্ভাগ্যজনক। প্রকৃত মানবসম্পদ উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদান শিক্ষা। আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিকল্পনা দরকার।
ভারত, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে কাজ করা যেতে পারে। এশিয়ার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় পাকিস্তানের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। স্থান পেয়েছে শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের তো অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেই তালিকায়। বাংলাদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ওই তালিকার ধারেকাছেও নেই।
সচিবদের বেতন বাড়ল বলে শিক্ষকদের বেতনও বাড়াতে হবে, বিষয়টি তেমন নয়। মর্যাদার অবনতি ঘটানোটা অন্যায়-অনৈতিক হয়েছে। সচিবদের বেতনের সঙ্গে শিক্ষকদের বেতনের তুলনামূলক আলোচনা করাটাও সঠিক নয়। ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কায় যা করা হয়নি। শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে স্বতন্ত্র পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে। দৃষ্টান্ত আমাদের চোখের সামনে আছে, অনুসরণ করলেই সমাধান মিলবে।
লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক
Published in: http://m.banglatribune.com/tribune/single/109720

তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিলো

তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিলো কারন তিনি ক্রীতদাস ছিলেন। তিনি কত ভাগ্যবান- তাঁর উত্তর পুরুষ তাঁর বেদনাকে অনুভব করেছেন, গভীর অনুভব থেকে তাঁর বেদনার কথা সবাইকে জানিয়েছেন।
আমার, আমাদের মনেও রক্তজবার মতো ক্ষত আছে......। আমরা শিক্ষক, মুক্তচিন্তার মানুষ। সারাবিশ্ব থেকে জ্ঞান আহরন করে কত মমতা দিয়ে আমরা আমাদের উত্তরপুরুষের হাতে জ্ঞান/আলোর দীপাবলী তুলে দিই। গভীর আনন্দে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে যখন দেখি- আমাদের উত্তরপুরুষেরা সেই দীপাবলী হাতে নিয়ে আলোর মিছিলে হাঁটছেন......জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতিতে দেশকে উত্তরোত্তর সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লাল-সবুজের পতাকাকে সম্মানের আসনে গেঁথে দিচ্ছেন। আমরা, শিক্ষকরা উত্তরপুরুষের এই সাফল্য-সমৃদ্ধিটুকু দেখেই খুশী। আমাদের, শিক্ষকদের মনের স্বর্গীয় এই অনুভবে ঈর্ষার কোন স্থান নেই; যেমন থাকে না বাবা-মায়েদের মনে-সন্তানের সাফল্য-সমৃদ্ধিতে । সেই শিক্ষকদের মনে রক্তজবার মতো এই যে একটি ক্ষত আছে, সেই ক্ষতের কথা আমাদের উত্তরপুরুষেরা কখনও কি কেউ অনুভব করেছেন? অনুভব করতেই হবে- এমন দাবী নেই। শিক্ষকদের মনের রক্তজবার মতো ক্ষতের কথা আমাদের উত্তরপুরুষেরা এখনও কেউ বলেননি......। বলতেই হবে- এমনও নয়। তবে শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চয়ই আছে- নিজেদের আত্মমর্যাদার কথা বলবার, নিজেদের সম্মানের জন্য দু-দন্ড কোথাও দাঁড়াবার। নিজেদের আত্মমর্যাদা, নিজেদের সম্মানের কথা বলাটা নিশ্চয়ই অন্যায় কিছু নয়। শিক্ষকদের যথাযথ সম্মানটুকু অন্ততঃ দিতে না পারলেও তাঁদের অসম্মান করার, অমর্যাদা করার অধিকার কেউ কি রাখেন? যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষককে দেখি- নিজের সম্মানের কথা বলতে এসে রাজপথে মার খান, বুকটা ব্যথায় মুচরে উঠে......মনে পরে যায় আমার নিজের শিক্ষক খালেক স্যার এর কথা। রাজপথে অনশনরত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের শীর্ণ মুখ দেখলে হৃদয়টা ভেঙে-চুড়ে যায়......মনে পড়ে যায় হরিপদ স্যার, সিরাজ স্যার, করিম স্যার, দেবনাথ স্যারদের কথা। আজ আমি, আমরা- রক্তজবার মতো ক্ষতকে বুকের ভেতরে আড়াল করে রেখে, বিষণ্ণ মন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমীক ভবনের বারান্দায়, বাইরে বসে থাকি......মাঝে মাঝে দলবেঁধে হাঁটি......নিজেদের সম্মানের জন্য, আত্মমর্যাদার জন্য...... আর এটুকু তো আমরা করতেই পারি......। নাকি তাও পারা যাবে না? আমার, আমাদের মনের এই রক্তজবার মতো ক্ষত কি কাউকেই স্পর্শ করে না, করবে না ????????

শিখা ফাতেমা হক
অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

Tuesday, September 8, 2015

শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব!


আবুল মাল একজন জ্ঞানী মানুষ। জ্ঞানী মানুষ সেই যিনি নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করেন। গতকাল তিনি তার এক বক্তৃতায় ঘুষের একটা নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন কারো কাজ দ্রুত করে দিলে কেউ যদি তাকে উপহার হিসেবে কিছু দেয় তবে তা অবৈধ নয়। wow!wow!!wow!!! তিনি আরো বলেন, উন্নত দেশে এটার বৈধতা দেওয়া হয়েছে ভিন্ন নামে। তারা এটার নাম দিয়েছে স্পিড মানি। অর্থাৎ যে টাকা কোনো কাজে গতি সঞ্চার করে কেউ যদি কাউকে উপহার হিসেবে কিছু দেয় সেটা ঘুষ নয় সেটা হলো "Speed money"। মনে হয় উনি "Speed" একটু বেশিই পান করে ফেলেছিলেন। আবুল মাল সাহেব বলবেন কি কোন দেশে এটার বৈধতা দিয়েছে?

গতকাল জ্ঞানতীর্থ, জ্ঞানরত্ন, জ্ঞানমবোধি, জ্ঞানচূড়ামণি আবুল মাল আরো বলেছেন শিক্ষকরা নাকি জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছেন। তার কথায় এবং body language clearly reveal করে উনি শিক্ষক সমাজকে কেমন চোখে দেখেন। উনি বললেন শিক্ষকরা নাকি corrupt প্রাকটিস করে। তারা নাকি শুধু অধ্যাপক হতে চায়। হ্যা চাই কিন্তু এর মধ্যে corrupt প্রাকটিসের সম্পর্কটা ঠিক বুঝতে পারিনি। ধরে নিলাম উনি বোঝাতে চেয়েছেন আমরা আমাদের প্রমোসন নীতিমালাকে অযৌক্তিকভাবে শিথিল করে দ্রুত প্রফেসর হয়ে যাচ্ছি। কথাটার পিছনে সত্যতা যে নেই তা কিন্তু না এবং আমি এই বিষয়ে বহুবার লিখেছি। সম্ভবত এই বিষয়ে আমার চেয়ে ভোকাল খুব কম মানুষকেই পাওয়া যাবে। কিন্তু এটাকি শুধু শিক্ষকদের বেলায়ই ঘটেছে? পার্থক্য আছে এক জায়গায়। আমরা আমাদের অনেক নিয়ম নিয়ে কঠিন সমালোচনা করি। কিন্তু কোন আমলা কি তা করে? উনি একসময় আমলা ছিলেন। আমাদের প্রশাসনে যে ভাবে কোন ধরনের নিয়ম নীতি না মেনে ঢালাওভাবে প্রমোসন হচ্ছে উনিতো সেই বিসয়ে একটি কথাও বললেন না। বরং আমলাদের ঘুষ খাওয়াকে বৈধ বললেন, আমলাদের অনৈতিক রাজনীতির সম্পৃক্ত হওয়া এবং আলোর গতিতে প্রমোসন পেয়ে স্বল্প সময়ে সচিব হয়ে যাওয়া নিয়ে উনার কোন বক্তব্যতো নেই।

আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকদের একটি অংশ সচিবদের সমপর্যায়ে ছিলেন। বর্তমান যে স্কেল তৈরী করা হয়েছে তাতে মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং সিনিয়র সচিব নামে দুটো নতুন ধাপ তৈরী করে তাদের ক্রম এবং বেতন শিক্ষকদের জন্য untouchable করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাত উনারা এখন ব্রাহ্মন বা untouchable। দেখা যাবে যারা সিনিয়র সচিব তাদের অনেক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সিনিয়র শিক্ষক। অর্থাত ছাত্র হবে শিক্ষকের উপরে। তাতে কোন সমস্যা নেই। আমরা তো চাই আমাদের ছাত্ররা আমাদের ছাড়িয়ে যাক। প্রশ্ন হলো এই সিনিয়র সচিবদের একাডেমিক ডিগ্রী, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা কোন ক্ষেত্রে কি তাদেরই এক সময়কার সরাসরি শিক্ষকদের ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন? বরং উল্টো হয়েছে। প্রশাসনে যোগ দেওয়ার ফলে অভিজ্ঞতা হয়ত বেড়েছে কিন্তু জ্ঞান খুব কম বেড়েছে। অন্যদিকে শিক্ষকরা অনবরত পড়ছে, পড়াচ্ছে, শিখছে, শিখাচ্ছে আবার জ্ঞান সৃষ্টি করছে এবং তা disseminate করছে। ফলে তারাতো আমাদের ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। শিক্ষা জীবনেও তারা পেছনের সারিতে ছিল আর চাকুরী জীবনেও তারা ওই gap পুরন করতেতো পারেনইনি বরং gap আরো wider হয়েছে। তাহলে কেন এবং কি যুক্তিতে তাদের উপরে তোলা হলো। আবার বলা হলো এখন থেকে প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী, তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেনীর কর্মকর্তা বা কর্মচারী বলতে কিছু থাকবে না। এখন রাষ্ট্রের কর্মচারীরা তাদের গ্রেড দ্বারা ক্লাসিফাইড হবেন। কি চাতুর্জ্যতার সাথে শিক্ষকদের অবমাননা করার চেষ্টা। এখন আমরা তাদের এই দুরভি চাতুরী বুঝে ফেলাতে বলে আমাদের জ্ঞানের অভাব!

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।