Wednesday, June 10, 2015

বেতনের সঙ্গে পদের অবনমন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ

শরীফুল আলম সুমন ও রফিকুল ইসলাম


দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন সর্বনিম্ন। অর্থনীতির সূচকে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতেও শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি বেতন দেয়। বর্তমান (সপ্তম পে স্কেল) বেতন স্কেলে বাংলাদেশে একজন প্রভাষকের মূল বেতন মাত্র ১১ হাজার টাকা, অধ্যাপকের ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা
। প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন স্কেলে তা দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রভাষকের মূল বেতন ধরা হয়েছে ২২ হাজার টাকা এবং অধ্যাপকের মূল বেতন ধরা হয়েছে ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা। এর পরও সবার চেয়ে পিছিয়েই থাকছে বাংলাদেশ। অথচ নেপালে বর্তমানে প্রভাষকের মূল বেতন ২৮ হাজার ১৯২ টাকা আর অধ্যাপকের ৬৫ হাজার ১৮৪ টাকা।
অষ্টম বেতন স্কেলে মর্যাদার দিক দিয়েও আগের চেয়ে কয়েক ধাপ পিছিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন অধ্যাপক বলেছেন, শিক্ষকরা যদি মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েন তাহলে তাঁরা কিভাবে ক্লাসে পড়ালেখায় মন দেবেন? আর মানের উন্নয়নই বা কিভাবে হবে?
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, দেশে এখন ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এর মধ্যে অধ্যাপক আছেন প্রায় পাঁচ হাজার। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন পদোন্নতির ১২ থেকে ১৪ বছর পর, তাঁদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ২৫০ জন। সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এত দিন সর্বোচ্চ বেতন পেয়েছেন। অর্থাৎ তাঁদের বেতন সচিবদের বেতনের সমান। সপ্তম বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও সচিব উভয়েই ৪০ হাজার টাকা মূল বেতন স্কেল পান। কিন্তু নতুন বেতন স্কেলে (অষ্টম পে স্কেল) গ্রেড-১ এর আগেও তিনটি ধাপ রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপে ৯০ হাজার টাকা বেতন পাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবরা। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪ হাজার টাকা পাবেন সিনিয়র সচিবরা। আর তৃতীয় ধাপে পদায়িত সচিবরা পাবেন ৮০ হাজার টাকা। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে গ্রেড-১। এখানে রয়েছে সচিব (ওএসডি) ও অধ্যাপকরা (সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত)। বেতন কমিশন অবশ্য সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। তা করলে অধ্যাপকদের নেমে আসতে হবে গ্রেড-২ তে। যেখানে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা। অন্য পদের শিক্ষকদেরও এভাবে নিচের ধাপে নামতে হবে। সপ্তম বেতন স্কেলে গ্রেড-৪ এ থাকা সহযোগী অধ্যাপকরা মূল বেতন পান ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা। নতুন স্কেলে তাঁরা পাবেন ৫০ হাজার টাকা। তাঁদের গ্রেড ঠিক থাকলেও আগের একই মর্যাদার প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপরে উঠে যাচ্ছেন। আর সহকারী অধ্যাপকরা ১৮ হাজার ৫০০ টাকার মূল বেতনের বদলে পাবেন ৩৫ হাজার ৫০০। তাঁদের ক্ষেত্রেও সহযোগীদের মতো একই ঘটনা ঘটছে। শিক্ষকরা বলছেন, 'এত দিন আমরা সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন ও সম্মান পেলেও নতুন বেতন কাঠামোতে আমাদের দুই ধাপ নিচে নেমে আসতে হবে, যা আমাদের জন্য মোটেই সম্মানজনক নয়।'
বেতন বৈষম্যের কারণে গত সোমবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনেও নামেন। সেদিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালিত হয়। সরকার থেকে শিগগির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের মতো সুযোগ-সুবিধা আশা করি না। কিন্তু আমাদের কেন নিচে নামিয়ে দেওয়া হবে? মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্য পরিষদ সচিবরা আমাদের ওপরে থাকতে পারেন। কিন্তু এর পরের অবস্থানে তো আমাদের থাকা উচিত। আর আমাদের মূল দাবি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো। সেটা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আগের মর্যাদার অবস্থানে রাখতে হবে। নইলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।'
কর্মসূচির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা ১৯ জুনের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, শিক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও ইউজিসি চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেব। ২০ জুন সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করব। অনশনসহ আরো কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।'
জানা যায়, শিক্ষকরা সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর ব্যাপারেও আলোচনা করছেন। সেই কাঠামোতে প্রভাষকের বেতন হতে হবে অষ্টম বেতন স্কেলের গ্রেড-৬-এর সমান, ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। আনুপাতিক হারে সহকারী, সহযোগী ও অধ্যাপকদের বেতন বাড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সূত্র জানায়, কয়েকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন স্কেল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের শিক্ষকরা বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় যথেষ্ট পিছিয়ে আছেন। অধিকাংশ দেশেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রভাষকের পদ নেই। তাদের শুরু সহকারী অধ্যাপক দিয়ে। আশপাশের দেশগুলোতে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল রয়েছে। ভারতে সহকারী অধ্যাপকের মূল বেতন ৫৫ হাজার, সহযোগী অধ্যাপকের ৯০ হাজার এবং অধ্যাপকের এক লাখ ১০ থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। পাকিস্তানে সহকারী অধ্যাপকের মূল বেতন এক লাখ চার হাজার, সহযোগী অধ্যাপকের এক লাখ ৫৬ হাজার ও অধ্যাপকের দুই লাখ ৩৪ হাজার টাকা। শ্রীলঙ্কায় সহকারী অধ্যাপকের বেতন স্কেল এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৮০, সহযোগী অধ্যাপকের এক লাখ ৪০ হাজার ও অধ্যাপকের এক লাখ ৮৬ হাজার ৩৪৫ টাকা।
চীনে সহকারী অধ্যাপকের মূল বেতন ৯৬ হাজার ৩০৯, অধ্যাপকরা পান এক লাখ ৫০ হাজার ৩৩১ টাকা। মালয়েশিয়ায় সহকারী অধ্যাপকের মূল বেতন দুই লাখ ৫৩ হাজার ১৫৮, অধ্যাপকরা পান তিন লাখ ৬০ হাজার ৩০৫ টাকা। জাপানে সহকারী অধ্যাপকদের মূল বেতন দুই লাখ ৪২ হাজার ৭২৯, অধ্যাপকরা পান চার লাখ ৫১ হাজার ৮৮৮ টাকা। এর বাইরে আবাসন, যাতায়াতের জন্য গাড়িসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বাংলাদেশে অষ্টম পে স্কেলে যুগ্ম সচিব ও তদোর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের গাড়ি ক্রয়ে ২৫ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা ও মাসিক ব্যয় নির্বাহের জন্য ৪৫ হাজার টাকা বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এ সুবিধা দিতে হলে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ সংস্থানের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, 'এক দেশে তো দুই নিয়ম হতে পারে না। জনগণের করের টাকায় যুগ্ম সচিবরা যদি এ সুবিধা পেতে পারেন তাহলে আমরা পাব না কেন?'
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। আমি এ ব্যাপারে শিক্ষকদের সঙ্গেও বসব। তাঁদের সমস্যা ও মনের কষ্ট সরকারকে জানাব। আশা করি অবশ্যই সমাধান বের হয়ে আসবে। তবে আমার অনুরোধ, শিক্ষকরা যেন এই বিষয়টি নিয়ে পড়ালেখায় কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না করেন।'
বেতন ও চাকরি কমিশন-২০১৩ গঠনের পর একাধিকবার দেখা করেন শিক্ষক নেতারা। বেতন কমিশন থেকে শিক্ষকদের প্রস্তাব দিতে বললে গত বছরের ১৯ নভেম্বর একটি প্রস্তাব দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তাতে ছয়টি বিষয় উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে (সপ্তম পে স্কেল অনুযায়ী) প্রভাষকদের সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ষষ্ঠ গ্রেড থেকে উন্নীত করে নবমে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী সহকারী, সহযোগী ও অধ্যাপকদের বেতন স্কেল আনুপাতিক হারে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। গবেষণা ভাতা মূল বেতনের ৪০ শতাংশ করতে বলা হয়।
দুর্বল বেতন কাঠামোর কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষকতায় আসতে চাইছেন না। ইউজিসির সর্বশেষ (৪০তম) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০.০৫ শতাংশ শিক্ষকই নানা কারণে শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন। জানা যায়, ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের অধিকাংশই বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি শেষে আর দেশে ফেরেন না।
ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক শিক্ষক একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় বেশি দেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষক নেতারা বলছেন, বেতন কম হওয়াতেই শিক্ষকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যান। ঢাকার বাইরের শিক্ষকদের সে সুযোগও নেই।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অধ্যাপকদের দুই ধাপ অবনমন হচ্ছে। আমার যে অবস্থান সেখান থেকে নামিয়ে দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। সরকার যদি শিক্ষকদের ইচ্ছা করে এই অবনমন করে তাহলে মুক্ত মন নিয়ে পাঠদান করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। বেতন কমানোর সঙ্গে অপমান করলে শিক্ষকরা চাকরি কেন করবেন? তাঁরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বিদেশে চলে যাবেন। এমনিতেই উচ্চশিক্ষায় দৈন্যদশা। এরপর এই অবস্থা চলতে থাকলে মান আরো পড়ে যাবে।'
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বেতন কাঠামো নিয়ে ইউজিসির করার কিছুই নেই। এটা সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।'
Source: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2015/06/10/231737

পে স্কেলে কমেছে শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন

মো. আবুসালেহ সেকেন্দার

দীর্ঘদিন পর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে। এই বেতন বাড়ার তালিকায় প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্র্যায়ের শিক্ষকরাও রয়েছেন। অন্যদের মতো শিক্ষকদেরও বেতন বাড়ার সংবাদে খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু সচিব কমিটির সুপারিশ অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করার পর ঢাকা, জগন্নাথ, রাজশাহীসহ একের পর এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বেতন স্কেল প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি প্রদান ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী

শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে, শিক্ষকসমাজ এই পে স্কেল গ্রহণ করেনি। কারণ টাকার অঙ্কে প্রতিটি স্তরের শিক্ষকদের বেতন বাড়লেও সচিব কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে প্রতিটি স্তরের শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন স্কেল তুলনামূলকভাবে দুই-ই কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। সচিব কমিটির যে সুপারিশ অর্থমন্ত্রীর কাছে রয়েছে, তা যদি হুবহু বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন স্কেল বর্তমানের চেয়ে তিন ধাপ কমে যাবে। আর এই বেতন কমার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সামাজিক মর্যাদাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকদের সচিব পদমর্যাদায় অর্থাৎ গ্রেড-১ বা ৪০ হাজার টাকা স্কেলে বেতন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়োজ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের এক-চতুর্থাংশ অধ্যাপক এই বেতন স্কেল পেয়ে থাকেন। কিন্তু প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোয় সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সেই সুযোগ আর থাকছে না। ফলে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সর্বশেষ বেতনের ধাপ হবে যুগ্ম সচিব সমমর্যাদার গ্রেড-৩ বা ২৯ হাজার ৫০০ টাকার স্কেল।

সাদা চোখে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোয় সচিব কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে গ্রেডের হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও বেতন দুই ধাপ নিচে নামবে। কিন্তু পে স্কেলে সচিব কমিটির সুপারিশের দিকে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে যে প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে দুই ধাপ নয়, তিন ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ সপ্তম জাতীয় পে স্কেলে সিনিয়র সচিব বলে আলাদা কোনো পদ ও বেতন স্কেল ছিল না। তখন মন্ত্রিপরিষদসচিবের পরেই ছিল সচিবদের বেতন (গ্রেড-১)। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা এই সচিবের সমমানের পে স্কেল অর্থাৎ গ্রেড-১ স্কেলে বেতন পাওয়ায় তাঁদের বেতন ও মর্যাদা উভয়ই মন্ত্রিপরিষদসচিবের পরে ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত পে স্কেলে মন্ত্রিপরিষদসচিবের পরে সিনিয়র সচিব পদ এবং তাঁদের বেতন সচিবদের ওপরে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদায় আরো এক ধাপ অবনমন ঘটেছে। অর্থাৎ বর্তমান বেতন কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা মন্ত্রিপরিষদসচিবের পরেই বেতন পান। কিন্তু প্রস্তাবিত পে স্কেলে সচিব কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে তাঁরা মন্ত্রিপরিষদসচিবের পরে সিনিয়র সচিব, সচিব, অতিরিক্ত সচিব অর্থাৎ তিন ধাপ পরের স্কেলে বেতন পাবেন, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদারও অবনমন হবে।

এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবনমনের ধারাবাহিকতায় সরকারি কলেজের শিক্ষক, এমপিওভুক্ত কলেজের শিক্ষক, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদেরও আর্থিক অবনমন ঘটবে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের নিয়োজিত সরকারি কলেজের শিক্ষকদের নানা জটিলতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমপিওভুক্ত কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তবে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, এমন নয়। কারণ প্রতিবছর যে পরিমাণ শিক্ষকের পদোন্নতি পাওয়ার কথা, পদ না থাকায় তা সম্ভব হয় না। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষকদের কথা যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে বর্তমানে দুই শতাধিক শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির যোগ্য। কিন্তু এই বিভাগের অধ্যাপক পদের সংখ্যা সারা দেশে মাত্র ১৩টি। ফলে এই বিভাগের বেশির ভাগ সহযোগী অধ্যাপককে অধ্যাপক না হয়েই অবসরে যেতে হবে। পদোন্নতি না পেলেও বর্তমান বেতন কাঠামোয় তাঁরা অধ্যাপকদের স্কেলেই বেতন পান। কিন্তু প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোয় টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় তাঁরা সেই সুবিধাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অন্য বিভাগগুলোর শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

এমপিওভুক্ত কলেজের শিক্ষকদের বেশির ভাগই যে প্রভাষক পদে চাকরিজীবন শুরু করেন, শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে ওই পদে থেকেই তিনি অবসর নিচ্ছেন। খুব কম ক্ষেত্রে তাঁদের পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও তা সহকারী অধ্যাপক পদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ না থাকায় তাঁদের বেতন বৃদ্ধিও টাইম স্কেলের ওপর নির্ভর করে। বর্তমান বেতন কাঠামোয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক গ্রেড-১১ বা ৬ হাজার ৪০০ টাকা স্কেলে নিযুক্ত হন। তিনি বিএড শিক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পর গ্রেড-১০ বা ৮ হাজার টাকার স্কেলে উন্নীত হন। অতঃপর আরো আট বছর চাকরি করলে টাইম স্কেলের মাধ্যমে সম্মানিত শিক্ষক গ্রেড-৯ বা ১১ হাজার টাকা স্কেলে বেতন পান।

মাধ্যমিকের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থাও প্রায় একই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তিন লাখ সহকারী শিক্ষকও টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হবেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক গ্রেড-১৫ বা ৪ হাজার ৯০০ টাকা স্কেলে শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। পিটিআইয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তাঁর বেতন স্কেল পাঁচ হাজার ২০০ টাকা বা গ্রেড-১৪তে উন্নীত হয়। মাধ্যমিকের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদগুলোয় পদোন্নতির কোনো সুযোগ না থাকায় তাঁদেরও বেতন বৃদ্ধির জন্য টাইম স্কেলের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক টাইম স্কেলের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে আট বছর পর পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা স্কেলে বা গ্রেড- ১৩, ১২ বছর পর পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা স্কেলে বা গ্রেড-১২, ১৫ বছর পর ছয় হাজার ৪০০ টাকা স্কেলে বা গ্রেড-১১তে বেতন পান। কিন্তু সচিব কমিটির সুপারিশকৃত বেতন কাঠামোয় টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় তাঁদের এই আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তির ধাপগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তাঁরা স্থায়ীভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুুখীন হবেন।

এ ছাড়া সুপারিশকৃত বেতন কাঠামো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে এই বেতন কাঠামোয় নিম্নতর পদ থেকে উচ্চতর পদে আনুপাতিক হারে বেতন বেড়েছে বেশি, যা নিম্নপদের সঙ্গে উচ্চপদে নিযুক্তদের বেতন বৈষম্য বাড়াবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সুপারিশকৃত বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বেতন বাড়বে ৫৮.২৩ শতাংশ। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন সহকারী শিক্ষকের বেতন বাড়বে ৫২.২৪ শতাংশ।

পরিশেষে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকদের সচিব কমিটির সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করার ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিক্ষকরা যদি বেতন কাঠামো পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামে নামেন, তাহলে শিক্ষাব্যবস্থা অস্থির হয়ে পড়বে। তাই অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি থাকবে, সচিব কমিটির সুপারিশকে চূড়ান্ত না ধরে সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি গঠন করা হোক। আমরা আশা করব, প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কয়েক লাখ শিক্ষকের যৌক্তিক ক্ষোভের বিষয়টি আমলে নিয়ে ওই পর্যালোচনা কমিটি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ উপস্থাপন করবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা সিনিয়র অধ্যাপকদের বেতন সিনিয়র সচিব ও পদায়িত সচিবের অনুরূপ ও প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত বেতন কাঠামোর যৌক্তিক পুনর্বিন্যাসের যে দাবি উত্থাপন করেছেন, তা-ও তারা আমলে নেবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Source: http://www.kalerkantho.com/print-edition/sub-editorial/2015/06/10/231755

Tuesday, June 9, 2015

সম্মান ও সম্মানী

Kamrul Hassan

আমি যখনই শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো বা স্বতন্ত্র বেতন স্কেল সংক্রান্ত কিছু লিখি তখনই কেউ না কেউ লিখবেই যে, "বেতন বাড়ালেই সম্মান বাড়বে এই ধারনাটি সঠিক বলে আমি মনে করি না"। পদার্থ বিজ্ঞানে আমরা কোন ফেনোমেনা সম্মন্ধে জানতে অনেক সময় ওই ফেনোমেনার প্রধান কন্ট্রোল বা tuning parameter কোনটি তা প্রথমে নির্ণয় করি। তারপর কন্ট্রোল বা tuning parameter-এর দুই এক্সট্রিম value-তে ওই ফেনোমেনার আচরণ লক্ষ্য করি। কন্ট্রোল parameter-এর এক্সট্রিম ভ্যালুতে ফেনোমেনার আচরণ অনেক revealing। তেমনি এক্ষেত্রেও আমরা এক্সট্রিম কেস বিবেচনা করতে পারি।

ধরুন শিক্ষকদের বেতন শুন্য বা বেতন এতই কম যে এটা tends to শুন্যের মতই। তখন কেমন মানুষ শিক্ষকতা পেশায় আসবে তা সহজেই অনুমেয়। অর্থাত কিছু একান্তই ব্যাতিক্রম ব্যাতিত ভালো ছাত্র শিক্ষকতা পেশায় আসবে না বললেই চলে। কারণ কোন বাবামা-ই তাদের সন্তানদের এই পেশায় আসতে কখনো উদ্ধুদ্ধ করবে না। বরং সন্তান যদি কোন চায়ও বাবা এবং মা দুজনেই শুধু না আত্বীয় স্বজনেরাও নিরুৎসাহ করবে। তাই এই পেশাতে কাউকেই পাওয়া যাবে না। অন্য এক্সট্রিম কেস হলো বেতন যদি অসীম হয় অর্থাত অন্যান্য পেশার তুলনায় এত বেশি যে এই বেতনকে tends তো অসীম ধরা যায়। তখনও কেমন মানুষ শিক্ষকতা পেশায় আসবে তা সহজেই অনুমেয়। তখন বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের শিক্ষক বানানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে যাবে। ছেলেমেয়েরাও এই পেশায় আসতে উৎসাহিত বোধ করবে। ফলে শিক্ষক হওয়ার জন্য সবাইকে এক্সট্রিম competition-এর মধ্য দিয়ে জয়ী হয়ে আসতে হবে। ফলে ভালো ছাত্র শিক্ষক হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যাবে। ভালো ছাত্ররা ভালো কর্মের মাধ্যমে এই পেশাকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

কিন্তু উপরের দুই এক্সট্রিমের কোনটিই feasible বা বাস্তব সম্মত না। তাই আমাদের মাঝা-মাঝি কোন একটা যুক্তিসঙ্গত একটা অংকে দাড় করাতে হবে যেন অন্য পেশার মানুষগুলো বঞ্চিত বোধ না করে এবং একই সাথে শিক্ষকতা পেশাটিকে ব্যাতিক্রম এবং attractive করা যায়। বর্তমানে শিক্ষক সম্মন্ধে সমাজে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরী হয়েছে তা এক দিনে তৈরী হয়নি আর তা একজনের কারনেও না। অনেক দিন যাবত শিক্ষকদের বেতন কম এবং inflation এবং buying capacity বিবেচনায় শিক্ষকদের বেতন দিন দিন কমছে। এর ফলে ধীরে ধীরে খারাপ ছাত্ররা শিক্ষকতা পেশায় আসছে। আর তার সাথে যোগ হয়েছে mean রাজনীতি অর্থাত রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ। এর ফলে খারাপ ছাত্ররাই এই পেশায় আসছে। আর তারা এসে এই পেশাকে উচ্চতায় না নিয়ে বরং নিম্নে নিয়ে যাচ্ছে। এখনো বুঝেননি?

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Sunday, June 7, 2015

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতি


Kamrul Hassan

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে মোদি বলেন, এটি সেই বিশ্ববিদ্যালয় যা বাংলাদেশকে জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে। প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে জ্ঞান বৃদ্ধির কাজ এ বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। এ কথাটি বলেছেন নিজ দেশের রাষ্ট্রনায়ক না অন্য একটি দেশের রাষ্ট্রনায়ক এবং তিনি এমন একটি সময় বলেছেন যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্ম বিরতিতে যাবেন (আজ) তাদের হৃত সম্মান ফিরে পাবার জন্য আন্দোলনের একটি ধাপ হিসাবে। তাই এইদিনটিকে জাতীয় লজ্জা দিবস হিসাবে পালন করা উচিত। নিজ দেশের রাষ্ট্রনায়করা দিন দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পঙ্গু করে দিচ্ছেন। এমন অবস্থা করছেন যেন সেরা ছাত্র, অহমবোধ সম্পন্ন ছাত্র আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান না করে। এই প্রক্রিয়া অনেক দিন ধরেই চলছে। কারণ আমাদের রাষ্ট্রকে যারা পরিচালনা করেন তারা জানেন ভালো ছাত্র আর অহমবোধ সম্পন্ন মানুষ যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে তারা ভাঁড় হবেন না, দলবাজ হবেন না। তারা সত্য কথা বলবেন। আর এখানেইতো যত সমস্যা। একটু সার্ভে করলেই জানা যাবে ক্লাসের বেস্ট বা সেকেন্ড বেস্ট এমনকি থার্ড বেস্টকেও আমরা এখন আর শিক্ষক হিসাবে পাচ্ছি না। এটা ঠিক যে, ক্লাসে ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ড হলেই যে প্রকৃত মেধাবী হবে তার guarantee নেই কিন্তু statistically বলা যায় ওরাই বেস্ট। অর্থাত আমরা যদি থাম্ব রুল ব্যাবহার করে সব সময় ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ডকেই নেই ভুল কম হবে কারণ ক্লাসের বেস্টরাই ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ড হয় মাঝে মাঝে শুধু এর ব্যাতিক্রম ঘটে।

অনেকদিন যাবত শিক্ষকরা দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষকদের সতন্ত্র বেতন স্কেলের যেন সমাজে শিক্ষকদের মান মর্যাদা একটু বৃদ্ধি পায়, যেন ভালো ছাত্ররা শিক্ষককতা পেশায় আসতে আগ্রহী হয়। কিন্তু দেখছি সরকার প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের মাধ্যমে উল্টো শিক্ষকদের মান সম্মান সমাজে আরো নিচে নামাতে মরিয়া। আমি কদিন ধরে খুব করে বোঝার চেষ্টা করছি এর আসল কারণ উদ্ধার করার জন্য। অনেক ভেবে বুঝতে পারলাম শিক্ষকদের মান মর্যাদা একটু degrade করলে তুলনামূলক খারাপ ছাত্ররা শিক্ষক হবে। আর ওই খারাপ শিক্ষকদের sycophant বানানো, দলবাজ বানানো তুলনামূলক সহজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা সব বিশ্ববিদ্যালয় জাতির বিবেক এবং জ্ঞান তৈরির কারখানা। এখানে অন্যান্য কারখানায় যেমন CBA-এর নাম রাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল growth-কে বাঁধাগ্রস্থ করা হয় তেমনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সমিতির নামে রাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়ে শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশকে বিঘ্নিত করা হয়।

প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের মাধ্যমে শিক্ষকদের degrade করার প্রস্তাব আর নন্রেন্দ্র মোদীর বক্তব্যই পার্থক্য নির্ণয় করে দেয় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে। ভারতে শিক্ষকদের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাদি একটু খতিয়ে দেখলেও পার্থক্য পরিস্কার হবে! তুলনা করে দেখুন। এই দুই দেশে দ্রব্যমূল্য কিন্তু প্রায় একই। ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের দেশে অনেক কিছুর দাম বরং বেশি। হ্যা, সবারই বেতন বাড়ানো উচিত। কিন্তু শুরু করতে হলে শিক্ষক দিয়েই করা উচিত। কিন্তু এটা বুঝতে যে ভিশন দরকার সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যার্থ হয়েছে সেই ভিশনারী রাষ্ট্রনায়ক তৈরী করতে।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Saturday, June 6, 2015

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নতুন কমিটি গঠন

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দ্বিতীয় বারের মতো সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালকে মহাসচিব নির্বাচিত করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ২০১৫ সালের কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। গতকাল শুক্রবার (৫ জুন) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।

কার্যনির্বাহী পরিষদের অন্য সদস্যরা হলেন সহ-সভাপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরিফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল মনসুর, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. এহসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. খবির উদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহা. আলী নূর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান।
যুগ্ম-মহাসচিব ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড. অধ্যাপক এ এইচ এম আক্তারুল ইসলাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি-মেহেদি হাসান, কোষাধ্যক্ষ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মো. গালিব আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ- সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমান।
Source: http://goo.gl/Tn6Wc0

Friday, June 5, 2015

শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার মান


বাংলাদেশের প্রতিটি ঘড়ের, প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে বড় concern কি? নির্দিধায় বলা যায় এটা হলো ছেলেমেয়দের education বা শিক্ষা। বাংলাদেশের মানুষ ছেলেমেয়েদের শিক্ষার পেছনে কি পরিমান টাকা ব্যায় করে তা একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে বিষয়টির গুরুত্ব। শুধু কি টাকা খরচ? সাথে সময়ও। শুধু কি ছাত্রের সময়? অভিভাবকদেরও। আমার মতে আমাদের অনেকেই বরং প্রয়োজনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি খরচ করে ফেলি। প্রাইভেট টউটরের নামে, কোচিং সেন্টারের নামে, প্রাইভেট স্কুল, কলেজ বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফীর নামে প্রচুর অর্থ অভিবাবকরা ব্যায় করে। সমস্যা হলো টাকাগুলো সঠিক ভাবে এবং সঠিক খাতে ব্যায় করা হয় না। অর্থাত টাকা কিন্তু আমাদের অভিভাবকরা ঠিকই খরচ করছেন কিন্তু এই খরচের সুফল তারা পাচ্ছেন না। বলা যায় অনেক ক্ষেত্রে তারা বাধ্য হয়ে করছেন কিন্তু করছেন তো? করছেন কেন? কারণ এটাই তাদের সবচেয়ে বড় কনসার্ন। অধিকাংশ পরিবারই মনে করে সন্তানদের পেছনে শিক্ষা খরচই সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ সু-ইনভেস্টমেন্ট। অথচ এটাই সবচেয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। যেন অভিভাবকহীন। এখানেই সরকারী বরাদ্দ প্রযজের তুলনায় সবচেয়ে কম। এক্ষেত্রেই আমাদের কোন ভিশন আছে বলে মনে হয় না।

আমাদের অভিভাবকরা যেই টাকা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শুধু টিউশন ফী এবং অন্যান্য ফী হিসাবে ব্যায় করা হয় ওটা যদি বাংলা মিডিয়াম স্কুলে টিউশন ফী হিসাবে ব্যায় করা হতো তাহলে ভাবতে পারেন কি রকম শিক্ষক বাংলা মিডিয়াম স্কুলে নিয়োগ দেওয়া যেত? অথবা বাংলা মিডিয়াম ছাত্রের অভিভাবকরা যেই টাকা কোচিং সেন্টারে, প্রাইভেট tutor-এর পেছনে ব্যায় করে সেই টাকার একটা অংশ যদি স্কুলের টিউশন ফী হিসাবে ব্যায় করা হতো তাহলে কি রকম ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেত? ওরকম বেতন দেওয়া হলে ওরকম ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে শেষ বিচারে অভিবাবকদের আর বাড়তি টাকা কোচিং সেন্টারে ব্যায় করতে হত না। ছেলেমেয়েরা পেত মানসম্মত শিক্ষা আর বেঁচে যেত কিছু সময় যে সময় ব্যায় হত কোচিং সেন্টারে। ওই বেঁচে যাওয়া সময় ছাত্র ছাত্রীরা ব্যায় করতে পারত extra curricula একটিভিটিতে।

শিক্ষকদের কম বেতন দিলে ভালো ছাত্র ওই পেশায় আসবে না। আর ওই কম বেতনে খারাপ শিক্ষকরাও যেহেতু চলতে পারবে না সেহেতু তারা নানারকম ফন্দি ফিকির করে টাকা ঠিকই উপার্জন করবে এবং ওই অভিবাবকদের কাছ থেকেই। কিন্তু মাঝ খান থেকে ব্যাপারটা হবে অনৈতিক চিন্তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সামিল। এভাবেই আমরা চলছি। আমার এক আত্মীয় পড়ে ঢাকার স্বনামধন্য সরকারী স্কুলে। ও আমাকে কয়েক দিন আগে বলল ক্লাসে পড়ানো হয়নি এমন বিষয় পরীক্ষায় দেওয়া হয় যেন তার কোচিং সেন্টারে যারা পড়ে তারা ব্যাতিত অন্যরা না পারে। এটা একটা মারাত্মক অনৈতিক trick কিন্তু খোজ নিয়ে জানলাম এটা এখন বাংলাদেশের কমন ঘটনা।

চিন্তা করা যায় আমাদের অভিবাবকরা কি পরিমান অর্থ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে খরচ করে? আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে ওই একই অভিভাবক কোন টাকাই খরচ করতে চায় না। যে টাকা তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ করতে প্রস্তুত বা করছে তার কিয়দংশও যদি তারা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে করত তবে তাদের সন্তানেরা পেত ঢের বেশি ভালো শিক্ষা, ভালো ক্যাম্পাস। মাঝে মাঝে ভাবি সরকার যদি সরকারী তত্বাবশানে (PPP অর্থাত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের আন্ডারে) কিছু স্পেশাল বিশ্ববিদ্যালয় খোলে যার টিউশন ফী তুলনামূলক বেশি কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক কম তাহলে ছাত্ররা কম টাকায় ভালো education পেত। অর্থাত সরকারকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় নামতে হবে। যে যেভাবে খুশি সেভাবে, যেখানে খুশি সেখানে, যত খুশি তত, যে মানের খুশি সে মানের প্রতিষ্ঠান খুলতে দিলে শেষ বিচারে দেশের ক্ষতি। আর দেশের ক্ষতি মানেই হলো সবারই ক্ষতি।

কবে আমরা একটা শিক্ষা বান্ধব সরকার পাব? বড় দেরী হয়ে যাচ্ছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠির মানুষের পৃথিবীর মানচিত্রে একটি ছোট্ট ডট-সম দেশে শিক্ষাই যে একমাত্র অবলম্বন।

কামরুল হাসান
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Thursday, June 4, 2015

আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক…


ড. মোঃ মীর মোশাররফ হোসেন:

teacher
আমার এই লেখা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, রাজনিতিক দল বা সরকারের বিরুদ্ধে নহে, এটা একান্তই আমার মনের দর্শন থেকে অনুভব এবং উপলব্ধির প্রয়াসমাত্র।
এই দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কারা, যারা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম ১-৫% ছাত্র/ছাত্রীদের মধ্যে একজন। যারা সারাজীবন স্বপ্ন দেখে এবং বড় বড় স্বপ্ন দেখায় ছাত্র/ছাত্রীদের। যারা পৃথিবীর উন্নত দেশ থেকে শিক্ষা অর্জন করে ফিরে আসে দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরির নেশায়। যারা সমাজের মানুষের কাছে আদর্শ। যারা আজ এইদেশে দক্ষ জনশক্তি ও শিক্ষিত জাতি তৈরির কারিগর।
যে দেশে একজন অটোরিকশা, সিএনজি এবং বাসচালক মাসে গড় আয় করে ৩০,০০০ টাকা। একজন খুদ্র ব্যবসায়ী মাসে আয় করে কমপক্ষে ৫০,০০০ টাকা। সেই দেশে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এর মাসে বেতন শুরু ১১,০০০ টাকা দিয়ে। উল্লেখ্য যে, ২০০২ সালে আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে একটি এনজিও তে ২৬,২০০ টাকা বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাদিসহ মোট ৩৬,৫০০ টাকা বেতন পাই। আমিও স্বপ্ন দেখেছিলাম  উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হব; ২০০৩ সালে থাইল্যান্ড থেকে ট্রেনিং, ২০০৪-২০০৯ সালে জাপান থেকে মাস্টার্স ও পি এইচ ডি এবং ২০০৯-২০১০ সালে কানাডা থেকে পোস্ট ডক্টোরেট করে ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করি ১৮,৫০০ টাকা বেতনে। কেন এই দেশের মেধাবি সন্তানেরা বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে আসবে? এই দেশকি দিতে পারছে তাদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন? শুনিতে খারাপ লাগিলেও এটাই বাস্তবতা, আসলে আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা।
একজন উচ্চ ডিগ্রীধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ১১,০০০ টাকা স্কেলে থেকে শুরু করে ১০-১২ বছরে প্রফেসর হয় তখন তার বেতন স্কেল হয় ৩৩,৫০০ টাকা, যা কিনা একজন খুদ্র ব্যবসায়ী, অটোরিকশা, সিএনজি এবং বাস/চালকের মাসিক গড় আয়ের সমান। এতেই আমাদের সন্তুষ্টি, কারন আমাদের অনেক সন্মান, টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কি দরকার? উল্লেখ্য ১-২% শিক্ষকের দুর্নিতির দায়ভার তো বাকী ৯৮% শিক্ষক নিতে পারেনা।
beton_teacher
একবার প্রশ্ন ওঠে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কেন এসি মিনিবাস ব্যবহার করে? ৩০ লাখ টাকা দামের এই একটি এসি মিনিবাসে প্রায় ৩০-৩২ জন শিক্ষকগাদাগাদি করে বসে। অথচ আমার কিছু বন্ধু আছে যারা প্রতেকে সরকারী ও অন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে ২৫ থেকে ৬৫ লাখ টাকা দামের এসি গাড়ি নিয়ে মাঠ গবেষণায় যায়, ব্যক্তিগত ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আসলে আমরা এবং যাদের আমরা শিক্ষা দিচ্ছি, কেউ আমরা আমাদের অধিকার কি? তা জানিনা।
এই দেশে প্রথম শ্রেনীর মেধাবি ছাত্র/ছাত্রী এবং উচ্চ ডিগ্রীধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যারা সারাজীবনই ভাড়া বাড়িতে থাকিতে বাধ্য অথচ সেই বাড়ির মালিক হলেন একজন অর্ধশিক্ষিত খুদ্র ব্যবসায়ী, ঠিকাদার অথবা লোকাল রাজনীতিবিদ। যেই দেশে ঔষধ কোম্পানী, ফিড কোম্পানী, দেশী ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে একজন চার থেকে পাঁচ গুন বেশী বেতন পায় এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যাবহার করে, সেই দেশে এই উচ্চ ডিগ্রীধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যারা সারাজীবনই পাবলিক বাস, রিক্সা, অটো অথবা এক বাসে গাদাগাদি করে কখনো বসে বা কখনো দাঁড়িয়ে এক হাতে একটি ল্যাপটপ ব্যাগ আর অন্য হাতে পরীক্ষার খাতা নিয়ে ক্যাম্পাসে পৌছাঁর জন্য প্রতিনিয়ত মরণপাণ লড়াই করছে। কেন এ দেশে গাড়ি, এসি, ট্যাব, নোট এবং স্মার্ট ফোন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাতের নাগালের বাহিরে? কেন এই উচ্চ ডিগ্রীধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাদের বাবা, মা ও তার পরিবারের জন্য এক টুকরা বাসস্থানের ব্যবস্থা ও করিতে পারবেন না? বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই জীবনের সঙ্ঘে সংগ্রাম করে করে কোনোমতে বেঁচে আছেন।
প্রতিবাদহীন, মেরুদণ্ডবিহী্ন, সমাজের ক্ষমতাহীন ও অবহেলিত, পরিবারের কাছে জীবন যুদ্ধে পরাজিত এই উচ্চ ডিগ্রীধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এখন আর সন্মান ও নাই। কারন অর্থ ও প্রতিষ্ঠা তাদেরকে এমন অবস্তাই নিয়ে গেছে, তারা এখন শঙ্কিত ও লজ্জিত স্বপ্ন দেখাতে সেই কোমলমতি মেধাবি ছাত্র/ছাত্রীদেরকে এবং পরিবারকে। আমরা আর কতদিন আমাদের এই  মেধাবি কোমলমতি সন্তানদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখাব যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা অত্যান্ত সন্মানজনক ও মর্যাদার পেশা? অথচ পাসপোর্ট করিতে গেলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বাসায় পুলিশ আসে তার বিরুদ্ধে কোন দুর্নিতির অভিযোগ আছে কিনা?
সুস্থ ও উন্নত দেশ তৈরিতে শিক্ষকদের প্রতি প্রকৃত মর্যাদার বিকল্প নেই। উন্নতবিশ্বে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিবার এবং নিজের সকল চাহিদা (গাড়ি, বাড়ি, ও উন্নত চিকিৎসা মিটিয়ে, গবেষণায় মেধা ও শ্রম দিয়ে সমাজ ও দেশের সেবা করে যান। এছাড়া উন্নত বিশ্ব ও মধ্যম আয়ের দেশে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের উচ্চশ্রেণীর মানুষ। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের দেশে শিক্ষকদের অর্জিত মেধা ও জ্ঞান, সমাজ ও দেশের সেবায় কাজে লাগাতে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র পে-স্কেল প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। যেখানে নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জিডিপির পার্থক্য আকাশচুম্বী না হলেও শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর পার্থক্য এভারেস্ট সমান।
আমরা যাদের শোষন ও নির্বিচার থেকে বাঁচার জন্য লাখ লাখ মানুষের প্রানের বিনিময়ে এই সোনার বাংলাদেশ উপহার পেয়েছি, সেই পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চেয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন প্রায় ৬ গুন কম। আমাদের বিশ্বাস এবং আক্ষেপ, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে এ দেশের ঊর্ধ্বমুখী সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন পাকিস্তানের শিক্ষকদের বেতনের চেয়েবেশি পাওয়ার অধিকার ও সামর্থ্য রাখে।
লেখক, ড. মোঃ মীর মোশাররফ হোসেন
অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও ছাত্র উপদেষ্টা,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
Source: http://www.campuslive24.com/campus.127989.live24/